নলটোনা ঘাস এর মত সবুজের একমুঠো দিয়েছিলে নোলকের তীব্র ঘ্রাণ;
উত্তুরে বাতাস তুমি, দখিনের হাওয়ার মত প্রকৃতির অফুরান অভিধান
জেনেছিলে, আর তার ভাজ খুলে নিরাকার বেঁধেছিলে কোন এক রমণীয় সুর;
মাধবীলতার বনে মাধবীর মত তুমি - তুমি আর তুমিময় একটি দুপুর
একসাথে কাটানোর পর - প্রজাপতি সময়ের ডানা জুড়ে এসেছিলো নীল রাত;
রঙ্গনের রঙ নিয়ে মেহেদীর আলো মাখা পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবতী হাত
সবকটা জানালা খুলে দাওনা .. ‘জানালা’ খুলে দেবার বিষয়টা আমাদের গদ্যে,পদ্যে বিভিন্নভাবে বলা হয়েছে, বলা হচ্ছে, আরো বলা হবে। কিন্তু এই শব্দগুলো একসাথে শুনলে যে গানের কথা আমাদের মনে পড়ে তার সাথে আমাদের নিরাকার বোধ জড়িত। এই জানলা খুলে দেয়ার সাথে একটা দেশের কতটা আবেগ জড়িত হয়ে যাবে তাকি জানতেন প্রয়াত নজরুল ইসলাম বাবু যখন তিনি অক্ষরে অক্ষরে গেঁথেছিলেন এই অবিনাশী গান; কতটা বুঝেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল যখন তিনি ভেতরের সবটুকু আবেগ নিয়ে জল ছাপিয়ে যাওয়া দু’চোখে প্রথমবার সুরে গেঁথেছেন, কিংবা সাবিনা ইয়াসমিন, তিনি যখন প্রথম তার কিন্নর কণ্ঠে গানটা তুলেছিলেন। আমাদের ভাগ্য ভালো এখনো এই গানটির ফিউশন করার চেষ্টা কেউ করেনি।
ঘুঘু নেই; ঘুঘু ডাকে কবিতার নাড়িছেঁড়া নীড় কবিতায়,
কবিতা পাঠের শেষে, কয়েকটি অ-বিরল ঘুঘু খুঁজে পায়
কোন এক ডানা তার ডানাহীন, তারপর উড়ে যেতে চায়
পথহারা পথ ধরে ফেলে আসা গাবগাছ, জামের শাখায় -
তবুও ঘুঘুরা ডাকে - সকাতর অন্ধচোখ - চোখের ভাষায় -
ব্যথাহীন হৃদয়ের নীরবতা সব তার, অকাতরে হায়
বলে যায় সব ব্যথা! অথচ ঘুঘুর কথা কাব্যের খাতায়
লিখে ফেলে যদি কেউ, তবু তার সবটুকু কথা থেকে যায়!!
বাঙ্গালী!!
বাঙ্গালী তর্ক চেনে, গর্ত চেনে, দোষ চেনে, মন্দ চেনে-
বাঙ্গালী সূর্যের চাইতে বালির উত্তাপ বোঝে
বাঘের মামা টাগ বোঝে
নাট-বল্টু-ইস্ক্রুপ ঢিলা বোঝে
মেদ-ভুঁড়ি, ইশারা-ইঙ্গিত, সুড়সুড়ি বোঝে
এমনকি মাগনা পেলে আলকাতরা খাওয়া বোঝে,
বাঙালী সব বোঝে, জ্ঞান বোঝে, গরিমাও বোঝে -
বাঙালী শুধু ‘বাঙালী’ বোঝেনা!!
(২৯.০৮.২০১১)
হতবাক জারুল পেয়েছে তৃষিত ঝিনুকের দেখা, সম্প্রদান বাকি -
প্রথমের যথাভাব, দ্বিতীয়ার প্রণতি স্বভাব - উপমায় এলো-কি!
যতটুকু বলা হলো, দ্যোতনা প্রকাশ পেলও সশব্দ অক্ষরে -
তাতে কার কতখানি, হয়ে গেলো জানাজানি, কবিতার হাত ধরে!
গেলো-কি জানা, দু’জনার কোথায় ঠিকানা অথচ দূরত্ব অতিক্রান্ত,
হলোকি খোঁজা- কতদূর জানাবোঝা, খুলেছে নিজস্ব সীমান্ত;
তারপর নীরবতা, বলে গেছে যতকথা, তার বেশি দিয়েছে শ্বাস-
১.
ব্যাকরণ অস্বীকার করলাম আজ আবার! আজ
অস্বীকার করলাম মানুষের হাতে তৈরি হওয়া সকল অভিধান; আজ থেকে
-সকল ধরাবাঁধা উপপাদ্য, গণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, নাম-ধাম, আচার-বিচার, ক্ষেত্রফল-রসকদম্ব- যোগ-বিয়োগ- গুণ-ভাগ, হরাইজন্টাল-মরাইজন্টাল, তত্ত্ব-তালাশ, কাঁটাতার-ব্যারিকেড;
এমনকি যাবতীয় রাক্ষস-খুক্ষস-দৈত্য-দানো-ভুত-পেত্নী-হুর-পরি, জহরত-মহরত, ইশারা-ইঙ্গিত, শান-শওকত;
এক.
তারপর আর কোন কথা বাকি থাকবেনা কোনদিন, তারপর নীরবতা থেকে গেছে পনেরো-আনা --
এক আনা মানুষ বুঝেছো - যতখানি অনুবাদ করেছো- তার বেশী প্রশ্রয় দেবোনা!!
(২৭.০৮.২০১১)
দুই.
ধরে রাখতে শিখিনি, নাকি জোর করলেই হতো?
নাকি অধিকার আদায় করে নিতে হয় নিজের মত---
এই “নিজের মত” বলেই বলে দিতে পারি এখনি-
১. উৎসর্গ: মিশুক মুনীর, তারেক মাসুদ এবং তাদের মৃত তিন সঙ্গী
আজকাল মানুষের ভিড়ে মানুষ খুঁজিনা, নিজেকেই খুঁজি!
মানুষ এখন দ্রব্যগুণে মানুষ হয়ে গেছে, তাই বুঝি
মানুষ নগণ্য এখন, হয়ে গেছে নতজানু, পঙ্গু ক্রীতদাস -
এ-শুধু অক্ষম সময়ে টিকে থাকার সক্ষম প্রয়াস।
আজকাল মনুষ্যত্বের দাবি নিয়ে আসিনা মানুষের কাছে -
জেনে গেছি - ’মনু’ থেকে ’হুশ’ বিভাজিত হয়ে গেছে;
এ-কোন সারমর্ম নয়, নয় তর্কের খাতিরে আলোচনা,
আশির দশকের একদম শেষ দিকে আমার মামাতো ভাই যাকে আমি ভয়াবহ ভালোবেসে "মাম্মা” বলে ডাকি সেই মিঠু ভাই আমাকে প্রথম শোনান নিলয় দাসের গান। তারপর খালাতো ভাই টুটুল ভাই, মাম্মা, আমি, আমাদের ভাগনা-বেটা তমাল আর তন্ময় সহ আমরা একসাথে হলেই যখন অন্তত একটা গিটার বেজে উঠা শুরু হলো, তখন থেকেই নিলয় দার গান আমাদের গানের ভিড়ে ঠিকই জায়গা খুঁজে নিত।
১. (উৎসর্গ: সুমন তুরহান)
অভিমানী হতে পারি, প্রতারক নই -
আলো নেই, কি করে সালোক-সংশ্লেষিত হই?
যান্ত্রিক পৃথিবীতে একরত্তি পিদিমের কতটুকু ঠাই -
তবুওতো আধপোড়া সলতের সুখ, প্রাণপণ জ্বলে যাই।
চাহিদার উপসংহার নেই, নেই দাড়ি, কমা, যতিচিহ্ন
কতদূর দিতে পারি? সুবিশাল আকাংখায়, সামর্থ্য সামান্য;
সব ধুপ শেষ হয়ে যায়, মৃদু হয় সবটুকু শ্বাস -
ফিরিয়ে দিতে পারো শেষ সহজ হাসি, সর্বশেষ উচ্ছ্বাস?