বেশ ঘটা করে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর প্রায় ফুরিয়ে এলো। পিতিমির কোণা ঘুপচি থেকে নানান দেশের খেলোয়াড় সকল এসে বাতাস ভর্তি একটা নিরীহ গোলাকার বস্তুতে ঠেসে লাথি কষালো। মনের ভেতর ঘাপটি দিয়ে থাকা রাগ ঝারবার এই মোক্ষম ব্যাপার, ফাইন্যাল এবং তৃতীয় চতুর্থস্হান নির্ধারণী পর্যন্ত চলবে। ঝি কে মেরে বউ কে শিক্ষা দেবার কুমন্ত্রণাটি এখান থেকেই আগত কিনা তাহা আমার জ্ঞানী মনের প্রশ্ন। লাথালাথির এই হিংসুটে কর্মপদ
'স্লেভ' শব্দটা উচ্চারণের সাথে সাথেই কেন জানিনা অ্যালেক্স হ্যালির রুটসের 'কুন্তাকিন্তে' কথা মনে পড়ে যায়! যে মানুষটা মালিকপক্ষ আর কর্মক্লান্তির নির্মম পেষণেও নিজের শেকড় বিস্মৃত হন না কখনো। 'আই অ্যাম স্লেভে'র মালিয়া যেন কিন্তাকুন্তের পদচিহ্ন ধরে হেঁটে আসা একজন। যে দিনশেষে রোজ নিজেকেই শোনাতো সে কে! কোথায় প্রোথিত রয়েছে তার শেকড়। তার সে শেকড়ের টানে ফিরে যাবার একাগ্রতায় আশকারা পায়না আর্তনাদের হাহাকার; বরং ঢের বেশি একরোখা ইচ্ছে নিয়ে যুযতে থাকে বিরুদ্ধ পরিস্হিতি। সহানুভূতিশীল অনেক মন মালিয়ার সে যাত্রায় জুড়ে গিয়ে তাকে নিজস্ব ঠিকানায় পৌঁছে দেবার জন্য আর্দ্র হয়েছে হয়ত। তাকে বিজয়ী দেখবার জন্য প্রার্থনাও করেছে কায়মনোবাক্যে কেউ কেউ।
" জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড" বহু ব্যবহারে এত ক্লিশে করে ফেলেছি এই বাক্যটাকে!
মনে আছে একবার স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে এসেই ঘোষণা দিলেন- "আজ কোন পড়া হবে না। আমি ডিকটেশন দেবো। দেখতে চাই বানানে তোমরা কতটা পাকা।"
ডায়রীর পাতা থেকে:
'বিজয়ের মাস বিজয়ী থাকুক বাংলাদেশে। বিজয় দিবস অমানুষের বিরুদ্ধে মানুষের বিজয়ের প্রতীক হোক সমগ্র বিশ্বে।
বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও প্রতিটা মুহুর্তে বাংলাদেশে হৃদয় পেতে রেখেছে যে বন্ধু সেই বন্ধুর জন্য একটি সবুজ পতাকার ভালোবাসা। বাংলাদেশ তোমাকে ভোলেনি, যেমন তুমি ভোলোনি তোমার প্রিয় বাংলাদেশকে।
মাহির এই প্রথম এসেছে এদিকে। ঢাকা থেকে এতদূর কেউ পিকনিকে আসে না। কিন্তু মাহির আর ওর কিছু বন্ধু ছোট মামাকে ম্যানেজ করে এই ট্রিপটা বাগিয়েছে। বুদ্ধিমান ছেলে সে। বইতে পড়ে তার খুব ইচ্ছে জেগেছে এই জায়গাটায় বেড়াতে আসার। কিন্তু এখানে আসার পর তার নিজেকে বোকা বোকা মনে হচ্ছে। এই প্রথম তার মনে হচ্ছে পাঠ্যবইকে বিশ্বাস করাটা বিরাট ভুল। যে পাঠ্যবইতে টলটলে জল বুকে নিয়ে সবুজ বনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা এক নদীর
পেটের মধ্যে বিকট সাইজের জ্ঞান থাকলে তাকে বলে বিজ্ঞানী। বুঝলেন আমার জ্ঞানের কথাটা?
আমি এ যুগের হরিপদ কেরানী। আমার গ্রামের ঠিকানা আপনারা জানবেন না। কিন্তু আমার শহরের ঠিকানা আপনারা চেনেন। শহরে নিন্মবিত্তদের জন্য তৈরী অগুনতি খুপড়ির একটিতে আমি থাকি। আমি একা থাকি না, আমার সাথে মা থাকে, বউ থাকে, সন্তান থাকে, ছোট দুই ভাই থাকে। বাবা বেঁচে থাকলে তিনিও থাকতেন। সুমনের 'দশফুট বাই দশ ফুট' গানটি শুনেছেন?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে জামাই আদরে থাকা গোলাম আযমের খাবারের তালিকা দেখলাম আজ। ওটা দেখে ভীষণ রকমের অপরাধবোধ হলো। অপরাধবোধটা এলো তাদের কথা ভেবে, যারা অসহ্য কষ্টে দুবেলার খাবার যোগাড়ে হন্য হচ্ছেন। জন্ম সূত্রে তারা অপরাধী হয়েই জন্মেছেন। তাদের অপরাধ তারা হৃতদরিদ্র। দেশ- জাতি- ইতিহাস এসব বড় বড় বিষয়ের চেয়ে পেটের চিন্তাই এদের দিশেহারা করে রাখে সর্বক্ষণ। কিন্তু আশ্চ