“অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না।“ এই কথা আগে শুধু বাসের ভেতরে লেখা থাকতো। আজকাল পার্কে বা খোলা রাস্তায়ও এই রকম সতর্ক বাণী লেখা প্ল্যাকার্ড চোখে পরে। বোঝা যায়, আমাদের দেশে ‘অপরিচিত’ ব্যক্তির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। ফেইসবুকের ভরপুর ‘সামাজিক’ যুগেও কিভাবে এত এত মানুষ অপরিচিত থাকে সেটা একটা বিস্ময়!
ছোটবেলায় বাৎসরিক পিকনিকে গেলে দুইটা কাজ আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে হত – এক, দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সর্বশেষ স্থান দখল করা এবং দুই, কর্কশ টিনের মাইকে মিহি গলায় সূরা এখলাস তেলাওয়াত করা। দ্বিতীয়টা কোন পরিকল্পিত ইভেন্ট না; বাবা আমার হাফেজি এলেম জাহির করতে মাইকের কাছে টেনে নিয়ে যেতেন। টেনশনের কারণে সূরা এখলাস মনে করতে না পারলে বাবা বলতেন ‘দুই লাইন আজান শুনায়ে দাও’।
: হুজুর ঐ লোক আসছে।
: একজন মাত্র?
: জ্বী না হুজুর, চারজন আছে। দুই পরিবার। খুবই গরীব।
: আশেপাশের না তো? বুঝই তো।
: না না ... সেই একেবারে বর্ডার এলাকার লোক এরা। ওয়াজ শেষ হইবো, সাথে সাথে ট্রেনে তুলে দেব। পরের বেলাতেই শহরের বাইরে।
: ঠিক মতন সব বুঝাইছো তো ওনাদের? বিষয়টা সুন্দরভাবে বুঝানোর জরুরত আছে।
: জ্বী হুজুর। বুঝানো হইছে।
আমাদের দেশে কি আর কোনওদিন বিপ্লব হতে পারে? যে জাতির একটা স্লোগান থাকে না, তারা কি কোনওদিন বিপ্লব করতে পারে? আমাদের আজকে কোন একক স্লোগান নাই। “রাজাকারের ফাঁসি চাই” এই স্লোগানের নিচেও আমরা বিভক্ত। এই স্লোগানটাও আমাদের জাতীয় স্লোগান হতে পারল না। ‘জয়বাংলা’র পরিণতি বরণ করতে হল একেও। আমার মনে হয়, ৭১ পর্যন্ত যা হবার হয়ে গেছে, এই বাংলাদেশে আর কোনওদিন কোনও বিপ্লব হওয়া সম্ভব নয়। হবেও না।
বিদেশ থেকে ট্যুরিস্টরা আমাদের দেশে এসে রিক্শা দেখে ‘ওয়াও’ বলে। বাস থেকে লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে নামছে, সেটা দেখে ‘ওয়াও’ বলে। কালো ধোয়া দেখে মুখ ঢাকা বাদ দিয়ে ‘ওয়াও’ বলে। আমি বন্ধুদের সাথে একবার কক্সবাজারে গিয়ে ভাবলাম, নতুন জায়গায় এসেছি আমারও টুকটাক ‘ওয়াও’ বলা উচিত। বার্মিজ মার্কেটে গিয়ে এই কারণে যা দেখি তাতেই ‘ওয়াও’ বলা শুরু করলাম। কাজটা যে বিরাট রকমের ভুল ...
আমি লুঙ্গি পরি না। কারণ, লুঙ্গি পরে কখনই আমার 'কাপড়-চোপর পরার' - আত্মবিশ্বাস হয় না। প্রথমবার লুঙ্গি পরার পরে মনে হয়েছিল, বিবস্ত্র হয়ে হাঁটছি কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটা কেউ খেয়াল করছে না! অনেকটা গুহামানবদের যুগের মতন - কেউ উলঙ্গ থাকল, নাকি কচুপাতার মিনি-স্কার্ট পরে থাকল, সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই! তবে নিজে না পরলেও বাবা, চাচা কিংবা মামাদের দেখেছি এই জিনিস খুব আনন্দ নিয়...
১.
আমি সাধারণত দেশে থাকতে মিলাদ মাহফিলে যেতাম না। এর মূল কারণ ছিল দুইটা - প্রথমতঃ আমি কখনই মিলাদের মূল ভাবনার সাথে একাত্ব হতে পারতাম না। কেউ হয়তো নিকটাত্মীয়ের মৃত্যূবার্ষিকীতে শোক পালনের জন্য মিলাদ আয়োজন করেছেন, সেখানে বসে আমার মন পরে থাকত তবারুকের প্যাকেটের দিকে। দ্বিতীয়তঃ আগরবাতি এবং গোলাপজল আমি সহ্য করতে পারি না। মশার সাথে কয়েলের যেই সম্...
কিছু মানুষের আনন্দ প্রকাশের ভালো ভালো কায়দা জানা আছে। আমি সেই দিক থেকে অজ্ঞ। টিভির রিয়েলিটি শো'গুলোতে দেখি অনেকেই আনন্দ প্রকাশ করার জন্য চিৎকার করে, সেজদা করে, লাফিয়ে উঠে অথবা অজ্ঞাত কারো উদ্দেশ্যে বাতাসে অনবরত ঘুঁষি মারে। আমি এগুলার কোনোটাই করতে পারি না। ভালো করে আনন্দ প্রকাশ করতে পারি না বলে আশেপাশের সবাই ঠিকমতন বুঝতেই পারে না, ঘটনাটা কি! তবে আনন...
১.
বৃষ্টির পর পর আরিচা ঘাটের যেই পিচ্ছিল এবং আর্দ্র চেহারাটা দাঁড়ায়, আমার বাবা গোসল শেষ করার পরে বাথরুমেরও একইরকম একটা চেহারা হয়। উনি বরাবরই একটু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গোসল করেন। উপরন্ত, সুগন্ধী সাবান এমনভাবে গায়ে মাখেন যে গোসলের পরপর ওনার চোখ, নাক, কান ইত্যাকার 'সাবান-অবান্ধব' অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো টকটকে লাল হয়ে জ্বলতে থাকে। শুধু সাবান নয়, যেকোনো প্রসা...
আমাদের বাড়িতে কখনও মুরগী ছাড়া অন্য কোনও হেভিওয়েট গবাদি পশু পালন হয় নাই। বাড়িতে এদের আগমন এবং অবস্থান বরাবর খুব ক্ষণস্থায়ী ছিল। ঈদের কদিন আগে একটা গরু ঢুকতো বাসায়। সাথে হয়তো কখনও সখনও একটা ছাগল (না খাশি, শিওর নই)। ফলশ্রুতিতে বেচারা নবাগত পশুকে বাড়িতে প্রবেশের পর থেকেই আমাদের আন্ডা বাচ্চাদের অপরিশোধিত কৌতুহলজনিত অত্যাচার খানিকটা করে সইতে হতো। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, কারো ছ...