কয়েকদিন আগেও এটা ছিলো একটা স্কুল। এর মাঠে সকালে ঘুম ঘুম চোখে সারি বাঁধা ছেলেমেয়েদের সামনে দপ্তরীর হাতের দায়সারা টানে আকাশে এক মন্থর ভূবন চিলের মতো ডানা মেলতো সবুজের মাঝে লাল একটি বৃত্ত, সহকারী প্রধান শিক্ষকের গম্ভীর আদেশের পর অনেক বিপথগামী কণ্ঠের মাঝে পাশের আমগাছের পাতায় কাঁপন ধরাতো কী শোভা কী ছায়া গো কী স্নেহ কী মায়া গো।
রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনা আমাদের মনে একটি স্থায়ী ছাপ ফেলে রেখে গেলেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কী আর কেমন হবে, তা নিয়ে এখনই নীতিনির্ধারকদের জরুরি ভিত্তিতে হোমওয়ার্ক করা প্রয়োজন। আর এ ব্যাপারে উদ্ধারকাজে জড়িত পেশাদার ও স্বেচ্ছাসেবীদের ডেকে একটি গণশুনানি করা হলে তারা উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা আর অভাবের মুখোমুখি হয়েছেন, সেগুলোও সমন্বিত হবে।
শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে গণমাধ্যমের একাংশের প্রতিক্রিয়া ও আচরণ বুঝতে গেলে আরেকটু পেছনে যেতে হবে আমাদের। একাধিক বিবেচনায় দেশ পেছন দিকে হাঁটছে, সে যাত্রায় ক্ষণিকের জন্যে সঙ্গী হলাম নাহয় আমরাও।
নতুন বাংলা বছর জেগে উঠুক সকল মৌলবাদী ঘোঁৎকারকে চাপা দিয়ে নারীর গর্জনে।
যে বাংলাদেশের কৃষি অচল নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া, যে বাংলাদেশের শিল্প অচল নারীর শ্রম ছাড়া, যে বাংলাদেশের পরিবার অচল নারীর নিঃশব্দ আত্মবিসর্জন ছাড়া, সে বাংলাদেশে মাথায় ফেট্টি বাঁধা কতগুলি উন্মাদের কথায় নারীরা অন্তরীণ হয়ে থাকবে?
কখনোই না।
মাননীয় সরকার বাহাদুর,
সারাদেশ জুড়ে কয়েক মাস ধরে চলমান নাশকতার পরিকল্পনাকারী জামাত-শিবিরের ফেসবুক প্রোপাগাণ্ডা পেজ "বাঁশের কেল্লা" ও "ইসলামী ছাত্রী সংস্থা" বহাল তবিয়তে আছে। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা পুলিশ ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী কমিশন তাদের কিছুই করেনি, করতে পারেওনি।
হঠাৎ মনে হলো, সবাই মিলে কোরাসে জাতীয় সঙ্গীত গাইলে কেমন হয়?
হঠাৎ ঝড়ে জাহাজ ভোলে দিক
আকাশ মোছে তারার হাতের ছাপ
সাগর ফোঁসে গোখরো সাপের ছাও
ঢেউয়ের মেয়ে খলখলিয়ে হাসে
নাবিক তুমি একলা কোথায় যাও?
বাংলাদেশ আক্রান্ত।
দেশ মানে শুধু ক্ষেত নয়, পথ নয়, বাড়ি নয়, উপাসনালয় নয়, দেশ মানে মানুষও। সবকিছুর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ আজ আক্রান্ত।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা অপূর্ব গানটিকে প্রতি বছর কত মধুর করে গাই আমরা, খালি পায়ে প্রভাত ফেরীতে পুষ্পমাল্য নিয়ে শহীদ মিনারে যাই, সারা পৃথিবীতে এক একটা অঙ্গনে রাতারাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় আমাদের প্রতীক শহীদ মিনার, কিন্তু আমাদেরই দেশে আমাদেরই ভাইদের মুখের ভাষা ক্রমশ যেন পায়ের নিচে মাটি হারায়।
আমরা একুশে ফেব্রুয়ারির সন্তান, আমরা কি তা হতে দিতে পারি?