রাজনীতি এবং প্রশাসন একদম বিপরীতধর্মী দুইটি আর্ট।
একটির মূলে আছে গণসংযোগ, আরেকটির জননিয়ন্ত্রণ। একটিতে ক্ষমতাহীন অনেক মানুষ মিলে, অনেক শ্রমের বিনিময়ে, সমাজকে অনেক জোরে নাড়া দিয়ে ছোট্ট একটু পরিবর্তন ঘটায়। অন্যটিতে খুব সীমিত কিছু মানুষের সিদ্ধান্তে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে, স্বল্পতম প্রয়াসে অনেক বড় পরিবর্তন ঘটানো হয়। একটি মেঘের মতো বিশাল ও গম্ভীর, অন্যটি বজ্রপাতের মতো তীব্র ও ধারালো।
পৃথিবীর সবচেয়ে মৌলিক ও অবধারিত ব্যাপারগুলোর মধ্যে বিদায় একটি। মন না চাইলেও তাই সব বিদায়ই এক সময় সয়ে যায়। আমার নিজের কাছে এই দিক থেকে বিশাল এক ব্যাতিক্রম আমাদের জুবায়ের ভাই। এই মানুষটা নেই, সেটা মন মানতে চায় না। শেষবার কথা হওয়ার সময় যেই কণ্ঠ শুনেছি, সেটা আজও কানে বাজে। জালাল ভাইয়ের ফোনে যখন জুবায়ের ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাই, আমার মনের একটা অংশ ঠিক সেই মুহূর্তটাতে আটকে আছে। জুবায়ের ভাই তাই আমার কাছে স্মৃতি নন। আমি ওনার জন্ম-মৃত্যু এলে স্মরণ করি "আহা, অনেক দিন জুবায়ের ভাইয়ের সাথে কথা হয় না" বলে। আজও denial-এর পর্বই পার হতে পারি নাই, তাই জুবায়ের ভাই সম্পর্কে লিখি না তেমন একটা। তাঁকে যে ব্যাক্তিগত ভাবে চেনে না, সেই অভাগাকে বোঝানোর মতো ভাষাশৈলী ঈশ্বর আমায় দেননি।
গতকাল (মে ০২, ২০১৩) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন CNN-এর ক্রিশ্চিয়ান আমানপুর-কে। সাক্ষাৎকারের বিষয় ছিলো সম্প্রতি সাভারের ভবন ধ্বস। সাক্ষাৎকারটি প্রচার হওয়ার পর থেকে খুব স্পষ্ট বিভাজন দেখতে পাচ্ছি প্রতিক্রিয়ায়। দলীয় আনুগত্যে অন্ধ এই প্রতিক্রিয়াগুলোর ভিড়ে আমার নিজের কিছু প্রশ্ন রেখে যাওয়ার জন্য এই পোস্ট। কিছু প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই, কেউ সেই বিষয়ে আলোকপাত করতে পারলে আগাম ধন্যবাদ রইলো।
সময় এসেছে গণআন্দোলনকে Twitter-এ নিয়ে যাওয়ার। আগ্রহীদের জন্য কিছু প্রাথমিক তথ্য লিপিবদ্ধ করছি এখানে। এটি খুব, খুব সহজ একটি মাধ্যম। কয়েক মিনিটের বেশি লাগবে না বুঝে নিতে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে অগণিত মানুষ দিন-রাত সময় কাটাচ্ছেন শাহবাগের মোড়ে। তাঁরা পথে থাকবেন, সত্যিকার রায় নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। জীবনের তাগিদে দূরে বসবাস করলেও আমরা আত্মিক ভাবে তাঁদের পাশে আছি।
প্রশ্ন হলো, আমরা কি কিছুই করতে পারি না? পারি। খুবই জরুরী একটি কাজ করতে পারি। এই কাজটি দেশের মানুষগুলোর পক্ষে করা দুষ্কর, কিন্তু আমাদের জন্য সহজ।
জামায়াত-শিবির ও মুসলিম বিশ্বের নিরলস প্রচারণার ফলাফল হিসাবে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে যাচ্ছেতাই সংবাদ প্রচার করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বিভিন্ন ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আপনারা যাঁরা সশরীরে শাহবাগে যেতে পারছেন না, তাঁরা অনুগ্রহ করে নিচের তালিকা দেখুন, চেষ্টা করুন কিছুটা সময় খরচ করতে।
কাদের মোল্লার রায়ে বিচারের নামে প্রহসন করায় আওয়ামী লীগের সমালোচনা করায় অনেকে নাখোশ। মূল সুর একটাই -- আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করছেন কেন, এটা তো আদালতের এখতিয়ার?
[সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ইহা একটি হাতি-মার্কা লেখা]
সবাই বলে সময়টা অন্ধকার, সামনে পথ বন্ধুর, হতাশা আর গ্লানিতে মানুষ আকণ্ঠ নিমজ্জিত, ইত্যাদি। আমি অতটা নিরানন্দ চোখে দেখি না। হাজার রকম মতবাদ, মতামত, এবং বিপদ-আপদের মধ্যে এরকম আশার কথা বলায় সমালোচিত হতে হয় অনেক। সমালোচনা খুবই যৌক্তিক, কারণ যে-মানুষ পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে তার কাছে পুকুর এবং মহাসাগরে কোনো তফাৎ নেই। আমরা যারা পাড়ে বসে নুড়ি কুড়াচ্ছি, তাদের এখনও আশাবাদের বিলাস আছে। আমি নিজে একটু বেহায়া এবং অনেকটা অলস কিসিমের মানুষ, তাই আশা এবং আশার বিলাস দুইটাই আছে। আমার আশার ভিত্তিটা খুবই বৈষয়িক। হতাশার অংশে যাওয়ার আগে এই আশার কথাটুকু বলে নেই।
গানের মধ্যে গল্প খুঁজে পাই না আজকাল। সুর আছে, কথা আছে, যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি যন্ত্র আছে, কিন্তু গল্প নেই। কথায় সুর লেগে গান হওয়ার বদলে সুরের বেঁধে দেওয়া দৈর্ঘ্য-প্রস্থের সাথে খাপে খাপ মিলে কথাগুলো বসে থাকে যেন। মন থেকে কিছুটা আবেগ কর্জ করে গানের আবেদন পুরো করতে হয়।
দেশ, খুঁটি, মাটি। খুব অদ্ভুত রকম শক্তিশালী এক ধারনা। দেশ ছেড়ে দূরে সরে যাওয়া যায়, দেশের সাথে সকল সংস্রব ত্যাগ করা যায়, শুধু যায় না দেশের সাথে জড়িয়ে থাকা অস্তিত্বটুকু অস্বীকার করা। যত দূর পথ হাঁটি না কেন, যত উচ্চতায় আরোহণ করি না কেন, শিকড় তো আমাদের ছোট্ট দেশেই পড়ে আছে। বিদেশে এসে এই বোধটুকু প্রায় সবার মাঝেই অনেক গভীর হয়। বিশেষ করে আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায়গুলো এলে।
১. গোলামের রাজত্বঃ
আমি হতভাগা প্রজন্মের প্রতিনিধি। আমার জন্ম ১৯৮০-র দশকের শুরুতে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে আমার জন্মের ১১ বছর আগেই। এমন তাৎপর্যবহ যুদ্ধ শত বছরেও একবার আসে না। সেই যুদ্ধ দেখতে না পাওয়ার চেয়েও দুর্ভাগ্য আমাদের প্রজন্মের। আমি ও আমার প্রজন্ম হতভাগা, কারণ আমাদের যুগে এসে যুদ্ধের শিক্ষা হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে।