নদী কি পারে- তার গহীন অতলে
জন্মান্তরের যত সঞ্চিত ব্যথা
উপচে দিতে ঢেউয়ের ছলাৎছলে ?
নারী কি পারে- এমনি অবহেলে
মুছে ফেলতে দেহের সন্তাপ
ঐ খরস্রোতা নদীর জলে ?
যদিও পূণ্যার্থী ছিলাম না কখনোই,
তবুও নদীকে নারী ভেবেই গিয়েছিলাম তীর্থস্নানে
ছুতেঁ চেয়েছিলাম জলের শরীর, মৃত্তিকা পলল,
অঞ্জলি পেতে নিতে বেহুলার খোঁপা থেকে খসে পড়া ভাঁটফুল-
হায়- সেখানে ভাঙ্গনের উল্লাস, শোনিতের ধারা ,
এইখানে নদী ছিলো, ছিলো করতোয়ার স্বচ্ছ সলিল-দুপুরবেলা বৃন্দাবন মাঝির উদাস কন্ঠের গান-পাঠশালা ছুট ফুলকিশোরীদের দুরন্তপনা। এই খানেই ছড়িয়ে ছিলো বট-অশ্বত্থের মায়াবতী শিকড়- প্রাগৈতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভের মতো তারা সগৌরবে দাঁড়িয়েছিলো আকাশকে আড়াল করে, বহু বহু নাগরিক ক্রুরতাকে উপেক্ষা করে। ঠিক পাদদেশেই ছিলো পরেশ সাধুর আস্তানা, আরো ছিলো সর্পকন্যা বিধুয়ার সাথে হাওয়ায় হাওয়ায় জড়ানো গোপ ...
ঝরে পড়াই প্রকৃতির নিয়ম -
আর সে নিয়ম মেনেই পাতারা ঝরে পড়ে বেলা-অবেলায়।
মেঘেদের বিবাগী করে বৃষ্টিও লুটিয়ে পড়ে ধূলির আঙিনায়।
ভোর রাতে তারা ঝরে....
দিন শেষে ফুল ঝরে....
ঝরে যাওয়া পালকেরাও ডানা মেলে চলে সুদূর দিগন্তে .....
পরাজিত স্বপ্নেরা ঝরে পড়ে নতমুখে, বলে- 'বিদায় বন্ধু বিদায়'।
কত জানালায় জমাট অভিমানগুলো জল হয়ে ঝরে পড়ে
রাত জেগে রাতকে পাহারা দেয়ার আত্মপ্রবঞ্চনায়।
কষ্টগুলো, ভুলগুলো কিংব ...
১.
দু'চোখের উত্তাপে পুড়ি,
ছুঁতে চাই যত,
মৌনতা ভেঙ্গে হেসে ওঠো তুমি
জলপ্রপাতের মতো।
২.
অনেকটা পথ হেঁটে এসে দেখি
দাঁড়িয়ে আছি পথের শুরুতে,
একি বিভ্রম!
তরুছায়া খুঁজে বেড়ানো শূন্য মরুতে?
৩.
তোমাদের শহরে
পরাজিত স্বপ্নদের আজ নিষিদ্ধ বসতি,
একটি বুনোফুল
ফোটে যদি প্রাসাদ প্রাচীরে, বলো কি ক্ষতি?
৪.
ও মন, কেন্ তুমি পক্ষী হইবার চাও?
দিবানিশি কেন্ তুমি দু:খের গান গাও?
যাইবা বুঝি এই অবেলা...
আজ শুধু বৃষ্টি চাই।
বৃষ্টিহীন নগরীতে প্রেম নেই কোনো।
তাই যত নাগরিক দালান, সবুজ উদ্যান বলিতেছে শোনো-
বৃষ্টি চাই, ভীষণ রকম বৃষ্টি চাই।
হাজার রাতের অস্ফুট কষ্টের সাক্ষী ল্যাম্পপোস্টটিও বলছে- " বৃষ্টি দাও" ।
বৃষ্টির প্রেমে মজে যাবে বলে ঠাঁই বসে আছে আজ পার্কের জংধরা বেঞ্চিটাও।
রংচটা বিলবোর্ডের একদা লাস্যময়ী মেয়েটাও বলছে শুধু বৃষ্টির কথা,
দিন দিন প্রতিদিন, বৃষ্টিহীন সময় গুনে ক্ল...
১.
হা ঈশ্বর! কেন তুমি আমায় মানুষ বানালে?
আমি তো পাখি জনম চেয়েছিলাম...
সেই সোনালি ডানার চিলের মতো ঘুম ঘুম চোখে
পালকে ভেজা মেঘের স্বপ্ন দেখেছিলাম...
২.
অনন্ত অম্বরে সম্মোহিত কালের পথিক,
বৃষ্টিছায়া খুঁজে ফেরে গোপন-গহীনে নি:স্ব কাপালিক।
৩.
ঘুম ঘুম রাত,
জল-জোছনায় তবুও স্বপ্ন বোনা।
হাত বাড়ালেই মেঘের ভেলা,
আকাশ ছুঁতে চাই, ছুঁতে পারি না।
৪.
পুঞ্জীভূত ক্ষোভ
যেন বেদনারও অধিক,
তারা কি পেয়...
মনজুর এলাহীর বাগানে,
ছায়াচ্ছন্ন সন্ধ্যায় বসেছিলাম আমরা
কয়েকজন। কথা হ'লো, অনেক ধরনের
কেউ বললেন বঙ্গবন্ধুর কথা,
সেই প্রসঙ্গে নিহত এ্যালেন্দে এবং
চিলিতে সামরিক উত্থানের ইতিহাসও
উল্লেখ করলেন কেউ কেউ। বলা বাহুল্য
ইরাক ইরানের কথাও উঠলো। ক্যাস্ট্রোর পর
কিউবার অনিশ্চিত ভবিষ্যত
বিশ্বব্যাপী অসৎ বণিকদের দাপট,
এবং বাংলার বিপন্ন মানুষ
নিরন্ন আজীবন- এইসব কথা বলাবলি
করলাম আমরা ...
নিত্য যে ফুল ফোটে
তার দিকে তুমি কখনো ফিরেও তাকাওনি।
তাই সে অবাঞ্ছিত ঘাসফুলগুলো
তোমার একটু স্পর্শের জন্য উন্মুখ থেকে থেকে
একসময় সারা জনমের হাহাকার বুকে নিয়ে
আপন অস্তিত্ব লুটিয়ে দেয় ধুলিগর্ভে।
তুমি কখনোই বুঝতে পারো না
তাদের হৃদয়ের গহীন গোপন আর্তি।
অবলীলায় দলে যাও সেইসব তৃষিত সজল চাহনি।
হৃদয়ের সবটুকু আবেগ, উচ্ছ্বাস আর বিহ্বলতায়
তুমি কেবল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখো নার্সিসাস, ক্রাইস...
অগ্রন্থিত শব্দেরা মিছিল করে-
ধূলি-ধূসর রাজপথে, অলিতে গলিতে।
দিনশেষে ঘরে ফেরা ঘর্মাক্ত মানুষের মুখে মুখে
ফেরী হয় তারা, মাঝে মাঝে কুঁড়ে ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে আঙ্গিনা ছেড়ে
আদিম আক্রোশে মাথা ঠুকে দুর্গম প্রাসাদের প্রাচীরে প্রাচীরে।
শব্দগুলি শানিত ফলার মতো ঝলসে ওঠে দুপুরের তপ্ত রোদে,
রক্তবীজের ঝাড়ের মতো তারা পালে পালে উঠে আসে
মহাকালের অতল গহ্বর থেকে, অজানা ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্য...
বিগত জন্মের ক্ষয়ে যাওয়া স্মৃতি আর
মৃত্তিকা-প্রেমের পলল সমভূমির মায়া ছেড়ে আজ
হাত বাড়িয়েছিলাম আকাশের দিকে।
তখনই আকাশ উঠলো কেঁদে,
মেঘে মেঘে সে দেখাল সহস্র বজ্রের ঝঙ্কার,
অতপর: ঘৃণাভরে একরাশ অবিশ্বাসী জল
ছুড়ে দিলো আমার পানে।
হায়, আমি তো একমুঠো নীল চেয়েছিলাম,
নীলকন্ঠের চেয়েও নীলাভ হবো বলে
বাজি ধরেছিলাম প্রেমিকার সাথে।