বিমলদা কে খুব মিস করছি বিগত দুই সপ্তাহ ধরে। মানুষটা কি এখনও বেঁচে আছে বাংলার কোন জনপদে? মহল্লার মোড়ের আলো ঝলমলে দোকানটা তো উঠে গেছে সেই কবে। দেয়ালে ছাঁটা পার্শ্বচিত্রের সেই সব সুকেশী রুপালি পর্দার নায়কদের অনেকেই আজ বয়সের ভারে কেশহীন।
যে শহরে আমার শৈশব কেটেছে সন্ধ্যে বেলায় শিয়ালের হুক্কাহুয়া শুনে, ছুটির দিনে ঘুম ভেঙ্গেছে লেসফিতাওয়ালার দরাজ কণ্ঠে তা বিশ্বায়নের মোড়কে কতটুকু ঢেকেছে তা হয়ত প্রতিনিয়তই অনুভূত হবে। তবুও ভাবি নিশ্চিত দেখতে পাবো আমগাছের ডালে বানানো কাকের বাসা, সিঁড়িকোঠার দেয়ালের খাঁজে চড়ুইয়ের বাসা। শুনতে পাবো আবার কাঁচা বাজারের কোলাহল, বন্ধু পরিবেষ্টিত হয়ে হাতে তুলে নিতে পারবো আবার টং ঘরের চায়ের পেয়ালা।
একরাশ গল্প নিয়ে আমি ফিরে আসবো বর্তমানে। হৃদয়ের বায়োস্কোপ খুলে দেখব আমি আমার আবাল্য প্রিয় ঢাকা, অসম্ভব ভালবাসার নগরী। কিছু সময়ের জন্য ভুলে যাবো শেকড়বিহীন প্রবাস জীবনের বেদনা।
ইতালির স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ সার্ডিনিয়া আয়তনে ভূমধ্যসাগরের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। উত্তাল সাগরের মাঝে একটি দ্বীপে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে যাব বলে মানসপটে যে ছবি এঁকে রেখেছিলাম তা সার্ডিনিয়াতে পা রাখা মাত্রই বিলীন হয়ে যায়। কোথায় সেই বালুচরে ছুটে বেড়ানো কাঁকড়ার ঝাঁক? নেই মাইলের পর মাইল সৈকতের কোলঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশছোঁয়া হোটেলের সারি। এক সপ্তাহের অবকাশযাপনে সার্ডিনিয়া দ্বীপের এক দশমাংশও ঘুরে দেখতে পারিনি তারপরও ক্যামেরার মেমোরি ফুরাতে সময় লাগেনি। অপরূপা সার্ডিনিয়া তাঁর বুনো সৌন্দর্যে মাখা সাগরতীর, পাহাড়ের ঢালে ছেয়ে থাকা ক্যাকটাসের ঝোপ আর কাঁটাযুক্ত লতাগুল্ম দিয়ে আমার মানসপটে এঁকেছে নতুন এক চিত্র।
নীল আকাশ তো এই অধমের কাছে শুধুই এক সীমারেখা, উড়তে যারা ভালবাসে আকাশ তাঁদের বিচরণক্ষেত্র........... ভাল থেকো বাতাসি।
ব্লগরব্লগর টাইপের এই লেখার শিরোনাম কি দিব তা নিয়ে বেশ দোটানায় ছিলাম। অনুভুতিকাতর বাঙালির আত্মসম্মানে বিন্দুমাত্র আঘাত দিয়ে মনঃকষ্টে ভোগার ঝামেলা এড়াতে তাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্বের আশ্রয় নিতে হল। জানিনা কতটুকু ক্ষোভমিশ্রিত হৃদয় নিয়ে উনি অবৈধভাবে বিদেশগমনেচ্ছু বাংলাদেশীদের ‘মানসিক সুস্থতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিগত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ আর ‘বাংলাদেশী-বংশোদ্ভূত’ শব্দ দুটি নিয়ে বেশ মাতামাতি হচ্ছে। জলপ্লাবন আর সাইক্লোনের দেশ নতুন করে বিশ্বমণ্ডলে রাতারাতি পরিচিতি পাচ্ছে ‘অবৈধ’ আর ‘জালিয়াতি’ শব্দযুগলের শিরোনামে। দুর্নীতির শীর্ষস্থান আমাদের হাতছাড়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু নৈতিক অবক্ষয়ের কালিমা মুছেনি আজও।
২০৬ নাম্বার ট্র্যাকিং পথ আমার সবচেয়ে প্রিয়। আসা-যাওয়া মিলিয়ে সর্বসাকুল্লে আড়াই ঘণ্টার পাহাড়ি মেঠো পথ। গ্রীষ্মকালের উইকএন্ডে ভোর ৫ টায় হন্টন শুরু করলে সকাল ৮ টার আগেই বাসায় ফিরে পরিবারের সাথে একসাথে প্রাতরাশ করার সুযোগ থাকে। শীতকালের প্রেক্ষাপট অবশ্য আলাদা। তুষারাবৃত পর্বতমালায় হেঁটে বেড়ানোর ঝামেলা অনেক। তারপরও তো রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ঘরে আটকে বসে থাকতে পারিনা। মাফলারটা গলায় জড়িয়ে আর পিঠে ঝোলা চাপিয়ে হেঁটে বেড়াই এক গুচ্ছগ্রাম থেকে আরেক গুচ্ছগ্রামে। পত্রহীন ধুসর বনের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া কাঠুরেদের গমন পথ ধরে এগিয়ে যাই অজানার পথে। সঙ্গী হিসেবে আবির্ভূত হয় নাম না জানা কতশত পাখির দল। গ্রীষ্মের চলার পথের প্রিয় সঙ্গী মারমোত্তার দল তো বেঘোরে ঘুমুচ্ছে পাতালপুরীতে, বসন্তের আগে সে ঘুম ভাঙবে না। কামোসসোর পাল হয়ত লুকিয়ে আছে গহীন পাইনের জঙ্গলে। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করেও প্রকৃতির মাঝে কিচিরমিচির শব্দে যে সরব উপস্থিতি জানিয়ে দেয় পাখির দল তাতেই বিমোহিত হই আমি, হৃদয়ে অনুভব করি বন্ধুত্বের উষ্ণতা।
সান্তাক্লজ কিন্তু আমার শৈশবেও ছিল একজন। বাসায় আসতেন সারাবছর, সপ্তাহে দুইবার। সারাবছর কাঁধে তাঁর অবিকল সান্তাক্লজের মত এক ঝোলা। খয়েরি রঙয়ের ইউনিফর্ম পরেই আসতেন বড়দিনে। কিন্তু সেইদিন থাকত তাঁর মুখে এক মধুর হাসি। দোতালার যে বারান্দায় বসে মন্থর দুপুর পার করতাম ফেরিওয়ালার ডাক শুনে, সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতাম বড়দিনের বিকেলে সান্তাক্লজের প্রতীক্ষায়।
৬ বছর বয়সী কেইতা বসে আছে স্কুলে ভর্তি-পরীক্ষার ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে।
প্রশ্ন: তোমার প্রিয় ঋতু কোনটি? কেইতা: গ্রীষ্মকাল প্রশ্ন: গ্রীষ্মের ছুটিতে কি করেছ তুমি? কেইতা: আমি বাবার সাথে ক্যাম্পিংয়ে গিয়ে ঘুড়ি উড়িয়েছি। প্রশ্ন: তোমার বাবা কি ভাল ঘুড়ি উড়াতে জানে? কেইতা: আমার বাবা সবার সেরা।
পাশে বসে থাকা গর্বিত বাবার মুখে ফুটে উঠে আনন্দের হাসি।(ভর্তি পরীক্ষার কোচিংয়ে ভালই মিথ্যে বলতে শিখেছে কেইতা)
টোকিওর বাসিন্দা সফল স্থপতি রিয়োতা(Ryota) পিতা হিসেবে কিন্তু অতটা খারাপ মানুষ না। পরিবারের সব অধিগম্য চাহিদাই তো মিটিয়ে এসেছে সবসময়। ক্যাম্পিংয়ে গিয়ে ছেলের সাথে ঘুড়ি উড়ানোর মত সময় তাঁর নেই কিন্তু ক্যারিয়ারের এই সুবর্ণ সময়ে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে উঠতে হলে অন্য বিষয়াদিতে এক-আধটু ছাড় তো দিতেই হবে। আজকের সিনেমা সেই রিয়োতার একটি বিশেষ ‘ছাড়’ দেবার গল্প যেখানে পিতৃত্বের দাবি আর রক্তের সম্পর্কের দোটানায় একজন সফল পিতা কি সে হতে পারবে?