খবরে দেখলাম, প্রয়াত লেখক শেখ আব্দুল হাকিম-কে মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের স্বত্বাধিকারী বলে ঘোষণা করেছে দেশের কপিরাইট কর্তৃপক্ষ।
মাসুদ রানা, কাজী আনোয়ার হোসেন এবং শেখ আব্দুল হাকিম, এই সবগুলো নামই বাংলাদেশী পাঠকদের আবেগের সাথে এমনভাবে জড়িত যে, এই মামলা, অভিযোগ এবং তা থেকে আসা সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক রকমের মতামত দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন শেখ আব্দুল হাকিম-ই বইগুলোর ন্যায্য দাবীদার, আবার কেউ বলছেন কাজী আনোয়ার হোসেন এগুলোর প্রকৃত স্বত্বাধিকারী।
স্বল্পজ্ঞানে যতটুকু বুঝি, কপিরাইট কর্তৃপক্ষের ঘোষণায় কোনও ভুল নেই; আইন অনুযায়ী এগুলোর স্বত্বাধিকারী শেখ আব্দুল হাকিম। আবার একই সাথে আমি মনে করি, এই বইগুলোর স্বত্ব আসলে কাজী আনোয়ার হোসেনের হওয়া উচিত, হাকিমের নয়।
ওয়ার্ড ফাইলে কীভাবে বাংলা ইবুক ফরম্যাট করি সেটা নিয়ে একটা টিউটোরিয়াল ভিডিও বানাবো অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম, সময় করে উঠতে পারছিলাম না।
অবশেষে সেটা করা হলো। ইউটিউবে তুলে দিয়েছি টিউটোরিয়ালটি। আশা করি ইবুক প্রকাশে আগ্রহী লেখক ও প্রকাশকদের এটা কাজে আসবে।
আমি যেখানে আছি-
-----------------
আমি কিন্তু এখানে এখন নেই,
বরং রয়েছি সুদূর অতীতে,
এই ঘরের কোণেই চুপটি দাঁড়িয়ে আছি,
কিন্তু কাঁপছি বহু আগের শীতে।
ক্রিকেটে মাঝে মাঝে কিছু অদ্ভুত ধরণের রেকর্ডের কথা শোনা যায়।
ধরা যাক নতুন একজন বোলার কোনও এক ম্যাচে খেলতে নেমে এক উইকেট নিলো, সাথে সাথে জানা গেলো, এই উইকেটের মাধ্যমে আজ একটা বিশ্ব-রেকর্ড হয়ে গেছে! কী সেটা?
মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, বলছি।
ক্রিকেট ইতিহাসে যে সব বোলাররা ১০ মিটারের বেশি দৌড়ে, তারপরে একটু থেমে, আকাশের দিকে তাকিয়ে আড়াই মিটার হেঁটে আবার এক মিটার দৌড়ে এসে উইকেটের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম হাত ঘুরিয়ে বল করেন, তাদের মধ্যে আবার যাদের বয়স ২১ এর কম কিন্তু সাড়ে বিশের বেশি, তাদের মধ্যে আবার যারা ডান পায়ে দৌড় শুরু করেন, কিন্তু শেষ করেন বাম পায়ে, এবং তাদের মধ্যে যারা ডান হাতে ব্যাট করেন কিন্তু সিঙ্গারা খান বাম হাতে, সেই সমস্ত বোলারদের মধ্যে ইনিই প্রথম যিনি ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে পঞ্চম স্লিপে ক্যাচ ধরিয়ে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যানের উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছেন!
সুতরাং, পরের ম্যাচে এই বোলারকে যদি পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় - একজন রেকর্ডধারী বোলার হিসেবে, আগে পিছের সমস্ত শর্ত বাদ দিয়ে, আপনি কিন্তু বলতে পারবেন না এটা সঠিক নয়। কারণ রেকর্ড কিন্তু হয়েছে। কিন্তু কী করে কী হয়েছে এত খোঁজ কে-ই বা নিতে যায়!
পরিতাপের বিষয়, এমাজন বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকা অনেকটা এই ক্রিকেট রেকর্ডের মতই।
বাংলা সাহিত্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জায়গা আমার কাছে এক নম্বর। তাঁর পরে কুড়ি পর্যন্ত আর কেউ নেই, বাকি সবার নম্বর শুরু একুশ থেকে।
লেখকের অগ্রন্থিত লেখার সংকলনে ‘আমার প্রথম বই’ নামের এই লেখাটি প্রথম পড়ি। এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ব্যক্তিগত রচনা শিরোনামের অংশটিতে।
এখানে তিনি লিখেছেন তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’ নিয়ে। বইটির গল্পগুলো লেখাকালীন ভাবনার কথা খানিকটা এসেছে, তবে বেশি এসেছে সেটির বই হয়ে প্রকাশকালীন কর্মযজ্ঞের ঘটনাগুলো।
ইলিয়াসের গল্পের ঝিম ধরানো বর্ণনা-ভঙ্গি তাঁর অন্য গদ্যগুলোয় সাধারণত থাকে না, এখানেও তাই হয়েছে। তবে বাড়তি পাওনা হিসেবে এ লেখাটায় চলে এসেছে একটা আমুদে টোন।
এখন পর্যন্ত এ বছরে আমার পড়া সবচেয়ে চমৎকার বাংলা বই এর নাম- ‘বানিয়ালুলু’। ইচ্ছে হচ্ছে লোকেদের ডেকে এনে ধরে ধরে পড়াই বইটা।
(যে কোন বইয়ের ভূমিকা পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। লম্বা দৌড়ের আগে খানিকটা ওঠবস করে গা-গরম করে নিতে হয় যেমন, বইয়ে ঢুকবার আগে লেখকের নিজের লেখা ভূমিকাটুকু অনেকটা সেরকম আমার কাছে। বইয়ের মূল লেখার চেয়ে কোন অংশেই কম উপভোগ করি না আমি সেটা। তারচেয়ে বড় কথা, এগুলোকে আমার কাছে অনেকটা, ঠিক কৈফিয়ত বা কনফেশান নয়, বরং ‘সত্যকথন’ শব্দটাই ভালো মানাবে হয়ত, সেরকম লাগে। অল্প কিছু পছন্দের বইয়ের ভূমিকা এরকম অনুবাদ করেছি আমি। সেগুলোর কিছু কিছু ঝালাইমতন করে ব্লগে দিব ঠিক করলাম। অনুবাদের ব্যাপারে আমি এখনো দ্বিধায় আছি। ভাষান্তর নাকি রূপান্তর, এই দ্বন্ধে ভুগি সর্বদাই। সেবা প্রকাশনীর মত রূপান্তর ভালো লাগে, কিন্তু ভাষান্তরে মূলের যে স্বাদটুকু থাকে, সেটার লোভও কম নয় আমার। এই সব কিছু মিলিয়ে মিশিয়ে কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা সহজ নয়। এগুলো তাই কোনটাই ঠিক অনুবাদ হবে না হয়তো, বরং অনুবাদ-প্রচেষ্টা নাম দেয়াই ভালো হবে এদের।)
সমর কুমার চাকমা আমার কাছের কেউ নয়। বলা যায় পাশের বাড়ির মানুষ। পাশের বাড়ির মানুষেরা তো আমার নিজের বাড়ির মানুষদের মত আপন কেউ নয় আসলে। ওয়াইফাই আর ফোরজি সিগন্যালের কল্যাণে আমরা পুরো বিশ্বের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করে ফেলেছি ঠিকই, কিন্তু একই সাথে শত ফুট উঁচু দেয়াল তুলে দিয়েছি নিজের চারপাশে। এই দেয়াল টপকানো সহজ কোন কাজ নয়।
কিছু বিষাদ হলো পাখি। সম্ভবত প্রতিটি বাঙালি কিশোরের প্রথম ঈশ্বর দর্শন হয় জীবনানন্দের কবিতা পড়ে।
বছর কুড়ি বা তারও বেশি আগে, কোন এক মেঘলা মফস্বলের চুপচাপ দুপুরে, প্রায় হঠাতই হাতে আসা নিউজপ্রিন্টের দুর্বল কাগজে ছাপা একটা বইয়ের ভেতর আমি প্রথম চোখ মেলে দেখি, সেখানে অলস গেঁয়োর মত এক টুকরো ভোরের রোদ মাথা পেতে শুয়ে আছে ধানের উপরে। একটা ইগনরেন্ট দানবের মত অবহেলাভরে সেই যে জীবনানন্দ আমাকে ছুঁয়ে দিলেন, সেই ঘোর আমার আজও কাটেনি, মনে প্রাণে চাই, কখনও যেন না কাটে।
ভূমিকাতেই লেখক জানিয়ে দিয়েছেন, এই বইটি মুখ নয়, মুখোশও নয়, বরং একটা ‘কথামুখ’ এর আদল তৈরি করা হয়েছে কেবল।
শেষ পৃষ্ঠার নম্বর ৪৫ হলেও, সব মিলিয়ে আট ন’হাজারের বেশি হবে না শব্দ সংখ্যা। না গল্প, না উপন্যাস, একটা বড় গল্প বরং বলা যেতে পারে এটিকে। তাই বইটির এই ক্ষীণ আকৃতির কারণেই যে লেখকের এই ভূমিকা, তা বলাই বাহুল্য।
তবু এর মাঝেই একাধারে সব করকম মুনশিয়ানা দেখালেন হাসান আজিজুল হক। কী দুর্দান্ত সূচনা। আবারও মনে হলো, গল্পের শুরুটা যদি পাঠককে অপেক্ষায় রাখতে পারে শেষটুকুর জন্যে, তাহলেই কেবল সেটা সার্থক গল্প হয়ে উঠতে পারে।