সত্যপীর এর ব্লগ

আঁকটোবর ২০২২- প্রথম সপ্তাহ - ২

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বুধ, ০৫/১০/২০২২ - ৭:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছবি আঁকতে পারিনা নাইলে নিজেই এঁকে উল্টায় ফেলতাম। সুতরাং প্ল্যান বি - নয় বছরের মেয়েটাকে বললাম তার প্রিয় চরিত্রের একটা ছবি এঁকে দিতে।


মোগল রাজপুত্র বিষয়ক ফানা ফানা

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: সোম, ২৯/০৩/২০২১ - ২:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রচুর তো গালাগালি করলাম মোগল বাদশাদের। আওরঙ্গজেব তার ভাইগুলার কল্লা নামিয়ে নিল, ছেলেগুলিকে (কয়টা মেয়েকেও) গারদে পুরল বা নির্বাসনে মারল। বাপকে গারদে পোরা তো কবেই সারা। শাজাহান তার ভাই খসরুকে হাওয়া করে দিল (তাকে অবশ্য তার বাপ জাহাঙ্গীরই আঁধি করে রেখেছিল)। দুষ্ট লোক সব, নিঠুর হৃদয়।

আইসেন পাঠক মোগল রাজপুত্রদের ঘটনা বোঝার চেষ্টা করি। বাবুর থেকে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত সকল বাদশার তিন থেকে পাঁচটা করে ছেলে ছিল। জ্যেষ্ঠত্ব (বড় ছেলে গদিতে বসা) বিষয়ক কোন নিয়ম তাদের নাই, বিশেষতঃ আকবরের পরে। সুতরাং আপনার গদিতে বসার সম্ভাবনা ২০% হতে ৩৩% মোটামুটি। রাজপুত্র বড় হতে হতে ভাইদের কেউ শরাব খেয়ে ঢলে পড়বে, কেউ কম বয়সে মারা যাবে। বাকি যারা আছে, তারা ভাই নয় শত্রু! মারবে অথবা মারা খাবে।

শাজাহান/ আওরঙ্গজেব ও পরবর্তী মোগল জমানায় উচ্চভ্রাতানিধন নিয়ে গভীর ফানা ফানার প্রয়োজন আছে। ১৫৮৫ সালে একটা আপাতঃ সাধারণ ঘটনা যেখানে চালু ছেলে আকবর কাবুলে একটা পরিবর্তন আনেন, সেইটাও দেখা চাই।


দিন এখনো রঙিন

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: সোম, ১৫/০৩/২০২১ - ৯:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বছর পুরে গেল ঘরবন্দী জীবন। গত বছর মার্চের ১২ তারিখ বিষ্যুদবার আপিস থেকে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ডিক্সি রোডে পিড়িং করে ফোনে নোটিফিকেশন আসে এইচ আর থেকে। ঘরে এসে গাড়ি পার্ক করে চিঠি পড়ে দেখি কর্তাবিবির হুকুম পরদিন থেকে আপিস যাওয়ার দরকার নাই। দালান বন্ধ। দুই তিন সপ্তাহ পরে তারা আশা করছেন সকলই খুলে দেয়া হবে আর আমরা অন্তত আমাদের ডেস্কের জিনিসপাতি নিয়ে আসতে পারব। সেই তিন সপ্তা বেড়ে হল এক বছর, কবে আবার আপিসে ফিরত যেতে পারব কে জানে। মগে অল্প কফি রয়ে গিয়েছিল মনে হয়, কেউ কি সেটা ফেলে দিয়েছে? না ফেলে থাকলে হ্যাযম্যাট জামা পরে মগ উদ্ধার অভিযানে নামতে হবে এনশাল্লা।

বাসায় বসে কাজ করা বয়াম থেকে মুড়ি খাওয়ার মত। ঠিক কখন থামতে হবে ধরা কঠিন। আমি পিঠোপিঠি নানাবিধ মিটিঙের পরে বিকালে বসে দিনের নানা টুকে নেয়া নোট জড়ো করে কাজ করতে করতে দেখি একটা নীল ঝুঁটিওলা পাখি বসে জানালায়। ঠাণ্ডা কমে যাচ্ছে তাহলে। হেলান দিয়ে ভাবি পাখিটার মত বাইরে একটা চক্কর দিয়ে আসি। নাকি ইব্রাহীম আদিল শা’র নওরাসপুর নিয়ে আধা ফিনিস লেখাটা ধরব? দোনোমোনো করে বরঞ্চ বসি হিমু ভাইয়ের নতুন উপন্যাস আগুনি পড়তে।


তালাশ - শেষ পর্ব

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩১/১২/২০২০ - ১২:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(প্রথম পর্বের পর)

মাসখানেক পরের কথা। নিজাম শাহী সেনাপতি মালিক অম্বরের তাঁবু। ভোর।

সূর্য ওঠেনি পুরোপুরি। মশালের আলোয় মাথা ঝুঁকিয়ে ইয়াকুত খাঁ বললেন, পেশওয়াজি। তিমুরি বাহিনী বিজাপুর থেকে সরে গেছে, আর আদিল শাহী সিপাইরাও ভাটওয়াড়িতে মারা পড়েছে সব। দূর্গ দখলের এই ই প্রকৃত সময়!

পাশ থেকে শাহজি গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, হাঁ ঠিক কথা। মারাঠা ঘোড়সওয়ার সব প্রস্তুত। কেবল হুকুম দেন, এখুনি বিজাপুর আক্রমণে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

দীর্ঘদেহী মালিক অম্বর অল্প চুপ থাকার পর মাথা এগিয়ে হিসহিসে গলায় বললেন, তার সাথে অন্য কাজ আছে। শুয়োরের বাচ্চা ইব্রাহীমের সাধের নগরী ধুলায় মিশিয়ে দেয়া চাই, কমবখৎ বেঈমান। তিমুরির পা চাটা কুত্তা। গুঁড়িয়ে দে। তার নয়া শহরের একটা ইটও যেন খাড়া না থাকে। একটা গাছের পাতাও যেন বেঁচে না যায়। তার কবি গাতক সবগুলির পাছায় আগুণ দিয়ে বের করে দে। মাটিতে মিশিয়ে দে শহর রাতে। মাটিতে মিশিয়ে দে!


তালাশ - প্রথম পর্ব

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বুধ, ২৩/১২/২০২০ - ২:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্তুগীজ অধিকৃত গোয়া, ১৬২৪। ভোর।

ঢকঢক করে পাশে রাখা বাদামের শরবৎ অল্প যতটুকু বাকি ছিল খেয়ে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুখ মুছলেন জামশিদ খাঁ হামাদানি। আগের রাতে জাহাজ ভিড়ার পরে বন্দর এলাকা বেশ খালি ছিল, সারাদিন বৃষ্টির পরে কাদায় থিকথিক করছিল এলাকা। সহযাত্রী তারিক খুদাবন্দ গোয়াতে নিয়মিত আসেন, তার সাথেই এই সরাইতে আগমন হামাদানির। বেশ পরিচ্ছন্ন সরাই, নমাজের জায়গা একপাশে। ঘুমানোর বালিশের উপরে জানালা, ঝিরিঝিরি বাতাস দিচ্ছিল সারারাত।

হেঁটে বাইরে এসে বাগানে দাঁড়াতেই হামাদানি দেখলেন খুদাবন্দ দাঁড়িয়ে খোরমা খাচ্ছেন। হেসে বললেন, কী ঘুম হল?


চিত্ররেখার হীরার আংটি

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: রবি, ২৬/০৪/২০২০ - ৯:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটু চুপ থেকে চিত্ররেখা বলল, আমাকে বিয়ের সময় চেতন সিং ছোট একটা মণ্ডপ করেছিল গড়ের মাঠে। আমার বাবা পবন সিং রান্ধাওয়া আর দাদা পরাগ সিং বিয়ের পুরোটা সময় চোখ মেলে তাকিয়েছিল। একটা কথাও তারা বলেনি, এমনকি চোখের পলক ফেলতেও তারা ভুলে গিয়েছিল। কেন জানেন?

কেন?

চিত্ররেখা মাথা এগিয়ে ফিসফিস করে বলল, কারণ চেতন সিং তাদের মাথা কেটে বল্লমে বসিয়ে মণ্ডপে রেখেছিল। কাটা মাথা কি কথা বলতে পারে?


লড়াই ক্ষ্যাপা

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শুক্র, ০৩/০১/২০২০ - ১২:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মোগল সাম্রাজ্যের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট বাবুর বাদশার জানপহেচান নেতা ছিলেন তার পূর্বপুরুষ আমীর তৈমুর। তৈমুর সমরখন্দে রাজধানী করেছিলেন, তাই বাবুর বাদশারও স্বপ্ন ছিল সমরখন্দ চেপে বসার। তৈমুর দিল্লীজয় করে ফিরে গিয়েছিলেন তাই বাবুরেরও শখ ছিল দিল্লী লুটে ফের সমরখন্দ বুখারায় ঘরের ছেলে ঘরে ফিরত যাবেন। কিন্তু ম্যান প্রপোজেস গড ডিজপোজেস। সমরখন্দ থেকে সেইযে জুয়ানকালে চড় খেয়ে কাবুল পালাতে হয়েছিল আর ফিরে যাওয়া হয়নি। বাকী জীবন সমরখন্দ জয়ের টাকা ও সিপাই জড়ো করার উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে নানাবিধ যুদ্ধমুদ্ধ করতে করতে আঁৎকা অক্কা পেয়ে কাবুলে ঘুম গেলেন বাবুর। রেস্টিনপীস।

ফাস্ট ফরোয়ার্ড সোয়াশো বছর। নাতির নাতি শাজাহানের আমল। কাবুল তখন মোগল সাম্রাজ্যের পশ্চিম সীমান্ত, সেখান হতে তিনি পুলা মুরাদ বখশকে আরো পচ্চিমে বলখের দিকে পাঠালেন অভিযানে, রিজার্ভ ফোর্স নিয়ে তৈয়ার ছিল আরেক পুলা আওরঙ্গজেব। অপারেশন সমরখন্দ।

বুড়াদাদা বাবুরের স্বপ্নপুরুষ, আমীর তৈমুরের রাজধানী সমরখন্দ। হাঁটু চাপড়ে শাজাহান কইলেন রাজা বানকে আনা রে। ফির না জানা রে। ছম ছমা ছম ছম।


যমুনা অথবা সালসাবিলের তীরে

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: সোম, ২৮/০১/২০১৯ - ১২:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব

মনে করেন পরকালের বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্নিগ্ধ সালসাবিল ঝর্ণার তীরে গাছের ছায়ায় মাদুর পেতে দাদু-নাতি বাবুর আকবর বসে। কাছেই শুয়ে টাল বাদশা হুমায়ুন। পোড়া ভুট্টা খেতে খেতে ধীরকণ্ঠে পিতামহ বাবুর বলছেন, নাতিরে, বহোৎখুব। তিমুরিদ বংশের নাম উজ্জ্বল করেছিস রে বেটা। এমনকি ঘাড়ত্যাড়া রাজপুতগুলোকেও বশ করতে পেরেছিলি শুনলাম। উত্তম, অতি উত্তম। আকবর তখন বলবেন, হাঁ দাদুভাই। গুজরাতের বন্দর দরকারি জিনিস তাই রাজপুতানা কব্জা করে নিলাম। কেবল সিসোদিয়ার বাচ্চা প্রতাপ বড় যন্ত্রণা দিয়েছে।


অবাক হৃদয়

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: সোম, ২৯/১০/২০১৮ - ১২:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছুটির দিন সকালবেলা আমি সাধারণত লেখাটেখা নিয়ে ঘুটঘাট করি। মেয়েটাকে নিয়ে সকালে বাজার করেছি, তারপর নাস্তা নিতে থেমেছিলাম পথে। সেই নাস্তা খেতে খেতে মেয়েটা ঘুরঘুর করছে পায়ের কাছে। আমি আধাশোয়া হয়ে মোগল রাজপুত গুঁতাচ্ছি, অনেকদিন লেখা নামানো হয়না। অলস ছুটির দুপুর, পাশে জানালা দিয়ে দেখা যায় এক পরিবার বাড়ি পাল্টাচ্ছে, বিশাল চারকোণা একটা বিছানা দুই তিনজনে মিলে ট্রাকে ওঠাতে ব্যাপক কারিকুরি। ওপরে ছয় তলায় বারান্দায় এই ঠাণ্ডার মধ্যেও হাফপ্যান্ট পরে কফি খাচ্ছে এক দাড়িওলা যুবক। নিচে রিসেপশনের কাছে মোটা রঙচঙে জামা পরে এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে কয়টা ছোট বাচ্চা, পাশে বয়স্ক দুইজন কি কি আলাপ করছে।

এসবের মধ্যে খুটখাট টাইপ করতে করতে তবু মনে পড়ে গেল আইয়ুব বাচ্চু আর নাই।


কিভাবে মোগল হবেনঃ একটি সহজ পপি গাইড

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শনি, ২৬/০৫/২০১৮ - ৮:২৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিদ্রোহ পর্ব

মনে করেন বিকালবেলা চা আর মুড়ি নিয়া বসে আছেন। আরামে পড়ছেন সচলায়তন। এমন সময় কুথা থেকে এক জ্বীনের বাদশা এসে কইল ওরে সুনা। আছিস কেমন? কী কচ্ছিস? আপনি কইবেন এই তো বাদশা সায়েব। পপি গাইড পড়ছি। মোগল হওয়ার বাসনা। আপনি কেমন?

জ্বীনের বাদশা তখন খলখল করে হেসে ধরেন কইবে, দুত্তোর পপি গাইড। এই সব বাদ দে। মোগল হতে চাস? আকবর করে দিতে পারি, হতে চাস আকবর?

আপনি তো খুশিতে উত্তেজনায় লুঙ্গিতে পিশাব করে দিয়ে বলবেন, আকবর? ও আল্লা আকবর? অবশ্যই হতে চাই।

আবার খলখল করে বিশ্রী হেসে জ্বীনের বাদশা তখন কইবে, যা তবে হয়ে যা - মুহম্মদ আকবর। ফুঃ!!

মুহম্মদ আকবর?