সত্যপীর এর ব্লগ

বন্দুকচি তকীউল্লার ট্যাঁকঘড়ি - প্রথম পর্ব

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: মঙ্গল, ০১/০৭/২০১৪ - ১১:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একগাল মুড়ি মুখে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেলিম গম্ভীর গলায় বলল, বন্দুকচি কি তবলচির মতন?

আমি একটু চিন্তা করে বললাম, হ কাছাকাছিই। দুইজনেই আওয়াজ বাইর করে। তবলচি তবলা বাজায় আওয়াজ করে আর বন্দুকচি মনে কর যুদ্ধেমুদ্ধে বন্দুক ফুটায় আওয়াজ করে।

বন্দুক ফুটায়? সেলিম আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, তইলে এক হইল কেমনে? আমাগো তবলচি আলী নকী তো কাউরে মারত না।

আমি হেসে বললাম, বন্দুকচিও কাউরে মারে না রে ব্যাটা। আওয়াজই বাইরায় খালি। হাতিঘোড়া ভয় খায় এই আর কি।


ওয়ারিশ - শেষ পর্ব

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৬/২০১৪ - ১১:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(দ্বিতীয় পর্বের পর)

লালচরী মাঠের উপর সুলতান মহব্বত জং এর তাঁবু। সকাল।

বড় একটা গাছের গুঁড়ি মাঠে পোঁতা, তাতে পিছমোড়া করে বাঁধা মধ্যবয়েসী হাসিন বানু। একটু দূরত্ব রেখে তাকে ঘিরে গোল হয়ে দমবন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর মানুষ। ভীড় ঠেলে কসাই জমির আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল তার দিকে, হাতে ছুরি। প্রতিদিন বিশটার উপর গরু জবে দেয় সে, চিকন ছুরি দিয়ে পশুর ছাল ছাড়িয়ে আনা তার জন্য কোন ব্যাপারই না। তবে জ্যাতা মানুষের ছাল ছাড়ানো তার এই প্রথম।

খুব সাবধানে হাসিন বানুর ঘাড়ের পিছনে ছুরি দিয়ে পোঁচ দিতে শুরু করল জমির, আর হাসিন বানুর আর্ত চিৎকার শুনে ভয়ে ডানা ঝটপট করে উড়াল দিল পাশের ডালে বসা দুইটা পাখি।


ওয়ারিশ - দ্বিতীয় পর্ব

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: সোম, ২৬/০৫/২০১৪ - ১২:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(প্রথম পর্বের পর)

অম্বর নদীর তীরে সুলতান মহব্বত জং এর তাঁবু। মধ্য দুপুর।

তাঁবুর বাইরে দাঁড়িয়ে পত্রবাহক ফরহাদজান ফতেপুরী জামার খুঁটে কপালের ঘাম মুছে নিল একটু। খবর ভালো নয়। একেবারেই ভালো নয়। খবর শুনে সুলতান রেগেমেগে তার কল্লা নামিয়ে দেবার সমূহ সম্ভাবনা।


ওয়ারিশ - প্রথম পর্ব

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: মঙ্গল, ২০/০৫/২০১৪ - ২:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গ্রীষ্মকাল, ১৭০৫ সাল। ফিরোজগড় দূর্গ।

গুদামঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে বাবুর্চি নাজিমুদ্দিন জামার খুঁট দিয়ে কপাল মুছল একটু। ঘটনা কি সে ধরতে পারছে না ঠিক, সকাল সকাল খানসালার তাকে ডাকবেন কেন? সে তো প্রতিদিনকার মতই ভোরে পাকশালায় বাসন মাজতে লেগে গিয়েছিল, এমন সময় খবর এল খানাসালার মুস্তাকিম উস্তাদ তাকে ডেকেছেন। কিন্তু ডাকার কারণ? সে মনে করতে চেষ্টা করল গতকাল সে কী রেঁধেছিল, কারো পেট খারাপ করল নাকি?


পাদ্রী মানুয়েলের বিপদ

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শনি, ১০/০৫/২০১৪ - ৭:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সরাইওলা আমার চোখে চোখ রেখে গম্ভীর স্বরে বলল, কবুতর খুব ভালো পক্ষী। আমি প্রত্যেক বিষ্পতিবার কবুতর পাক কইরা খাই।

তন্দুর রুটি চাবাতে চাবাতে আমি আতকা বিষম খেলাম একটু। শালা বলে কি?!


বিজয় মিনার

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৪/২০১৪ - ৩:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নভেম্বর, ১৫৫৬। উত্তর ভারতবর্ষ।

টানা কাটাকাটিতে ক্লান্ত মকবুল একটু জিরিয়ে মাথার পাগড়িটা ঠিক করে নিল। বাতাস দিচ্ছে, ঠাণ্ডা তেমন নাই যদিও। সূর্য একবারে মাথার উপরে।

পাশেই হাত চালিয়ে কাজ করতে থাকা আলী তাড়া দিল, এই উঠ। খালি কাম ফাঁকি। সবমিলায় দুইশো বত্তিরিশখান লাগব।


রাজা চমন সিং এর পাগড়ি

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: রবি, ০৬/০৪/২০১৪ - ১২:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাজা চমন সিং আমার দিকে তাকিয়ে কৌতুকের স্বরে বললেন, তোমার নাম কবুতর ফারুক?

আমি ঘাড় নাড়লাম। আমিই কবুতর ফারুক।

দামড়া পুরুষমানুষ পায়রা কবুতর নাম নিয়া ঘুরো তোমার লজ্জা নাই?


কিল্লা মুবারক

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শনি, ২২/০৩/২০১৪ - ১১:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নবনির্মিত ফতে জং কিল্লার সামনের বাগান। মধ্য দুপুর।

শান্ত পানির নহরের সামনে দাঁড়িয়ে কিল্লার মূল কারিগর ওস্তাদ আলি খাঁ ধীরে ধীরে ডান হাত তুলে সঙ্কেত দিলেন। আশপাশের সকলের চোখ কপালে তুলে দিয়ে সেই শান্ত নহর থেকে ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ ভুসস শব্দ করে ঠান্ডা পানির ফোয়ারা ছিটিয়ে উঠল। খুব কাছে যারা দাঁড়িয়ে ছিল তাদের কামিজে পানির ছিটা লেগে গেল অল্প, তাই দেখে দাঁত বের করে তাদের সে কী হাসি! পুরো এলাকা যেন হঠাৎ বেহেশতের মত ঠাণ্ডা হয়ে উঠল। ছোট একটি ছেলে পানির খুব কাছে গিয়ে আনন্দে লাফ দিল দুইবার।

কিল্লার মালিক সুলতান বুরহানউদ্দিন তৃপ্ত চোখে পানির খেলা দেখতে দেখতে গাঢ় কণ্ঠে বললেন, মাশ্-আল্-লাহ্! মাশ্-আল্-লাহ্!


কবুতর ফারুক

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: রবি, ০৯/০৩/২০১৪ - ১২:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছেলেটি ডান হাতের তর্জনি দিয়ে নাক খুঁটতে খুঁটতে আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপনের নাম কবুতর ফারুক?

আমি খেয়াল করলাম নাকের ময়লা সে তার পিরানে মুছল। ভেজাল। আমি উত্তর না দিয়ে বললাম, পাকশালায় তোর কি কাম?

ছেলেটি বলল, আমি ময়দা মাখি। নান রুটির ময়দা।


বদ বখত

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/০২/২০১৪ - ৮:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগস্ট মাস, ১৬৫৯। দিল্লী।

নাজিরের কথাঃ

জিনিসটা ধরে আমি মুখ কুঁচকে বললাম, এহ দুনিয়ার রক্ত। এইটা দেখে কিছু বুঝার উপায় আছে নাকি?

আছে, মোতালিব ঘাড় নেড়ে বলল, যে চেনার সে ঠিকই চিনবে। সময় অল্প, বাহাসের সময় নাই। ধুয়ে পরিষ্কার করি আয়। বাইরে পানি আছে না?