দশ বছর আগের কথা।
সেদিন বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম ইউনিভার্সিটি থেকে... দ্রুত কাজ গুছাচ্ছিলাম তাই। অন্যান্যদিন এক্সপেরিমেন্ট চালাই রাত আট টা দশটা পর্যন্ত কিন্তু সেদিন এক্সপেরিমেন্টের পাম্প বন্ধ করে দিলাম সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে। তাড়াতাড়ি করে লগবুকে সেইদিনকার উল্লেখযোগ্য খুঁটিনাটি তথ্যাদি টুকে রাখছি... উদ্দেশ্য রাত সাড়ে আটটার মধ্যে বাসায় ফেরা যেন কম্পিউটারের সামনে বসে হাই ভলিউমে সেইদিনের বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠান "প্রভাতী" টা শুনতে পারি। তারিখ টা ছিল ইউএসএ তে ১৩ এপ্রিল আর বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল ২০০৪ অর্থাৎ ১৪১১ বাংলা সালের শুরুর দিন পহেলা বৈশাখ। না। বাংলাদেশের বিবিসি বাংলার নববর্ষের কোন অনুষ্ঠান শুনব বলে এত তড়িঘড়ি করছিলাম না সেদিন। তড়িঘড়ি করছিলাম কারণ সেদিন ছিল বিবিসি বাংলার চালানো "হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী" জরিপের সব চাইতে বেশী নাম আসা বাঙালীর নাম ঘোষণার দিন। ২৬ মার্চ ২০০৪ থেকে বিবিসি বাংলা প্রতিদিন যে একজন করে বাঙালী ব্যক্তিত্বের নাম ঘোষণা করে আসছে, আজ তার বিশতম এবং শেষ দিন। এরই মধ্যে উনিশ জনের নাম জেনে গেছি।
বাংলাদেশে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর ২৪ শে জানুয়ারীতে। নির্বাচন কালীন সরকার ব্যাবস্থা কেমন হবে তা এখনও নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচন কালীন সরকার কেমন হওয়া উচিৎ সে ব্যাপারে মতভেদ আছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বলছে তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে এবং নির্বাচনের সময় দেশ পরিচালনার জন্য একটি সর্ব দলীয় সরকারের রূপ্রেখা প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ জোট বলছে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না, এমনকি সর্বদোলীয় সরকারের অধীনেও তারা নির্বাচনে যাবে না কারণ ৯৫ থেকে ৯৯ ভাগ জনগন মনে করে বর্তমান সরকারের লোক জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদায় থাকলে ভোট চুরি করবে আর তাই এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তার ফলাফল যে শুধু জনগন মেনে নিবে না তা নয়, নির্বাচনই প্রত্যাখ্যান করবে। সরকার বা বিরোধীদল তাদের দৃষ্টি কোন থেকে নানান কিছু বলতেই পারে। কিন্তু আসলে জনগন কি বলছে বা ভাবছে?
ক: আপনার পলিটিক্সে এত আগ্রহ কেন? মেয়েদের মধ্যে তো পলিটিক্স নিয়ে এত আগ্রহ দেখা যায় না।
আমিঃ বলেন কি? কোন দেশের মেয়েদের কথা বলছেন? বাংলাদেশ নাকি আমেরিকার?
কঃ সব দেশের মেয়েদের কথাই। স্পেশালি বাংলাদেশের মেয়েদের কথা বলছি।
আমিঃ তাই নাকি? যে দেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী থেকে শুরু করে স্পীকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এমনকি কৃষি মন্ত্রীও মহিলা ...আর আপনি বলছেন রাজনীতি নিয়ে সেই বাংলাদেশের মেয়েদের আগ্রহ নাই?
কঃ আপনি তো যারা রাজনীতি করে তাদের কথা বলছেন। আমি বলছি আপনার মত রাজনীতিতে আগ্রহ নিয়ে যারা সময় নষ্ট করে তাদের কথা।
আমিঃ হুমম...তা যেই মেয়েরা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় সময় নষ্ট করে না তারা কিভাবে সময় কাজে লাগায়?
কঃ সংসার দেখা শুনা করে, কিম্বা ধরেন সোসালাইজেশান করে। যাই বলেন মেয়েদের রাজনীতিতে আগ্রহ থাকলে সংসারে অশান্তি হয়।
আমিঃ বলেন কি? কোন মেয়ের রাজনীতি বিষয়ে আগ্রহ থাকায় তার সংসারে অশান্তি হল?
কঃ আমি পার্টিকুলার কোন মেয়ের কথা বলছি না ... ইনজেনেরাল আরকি।
আমিঃ ও। বুঝলাম। কিন্তু আপনার মতে তো গুটি কয়েক মেয়ের রাজনীতিতে আগ্রহ, সে ক্ষেত্রে তো বাকি দের তাহলে সুখের সংসার হওয়ার কথা। তাকি হয়? আপনিই সেদিন বলছিলেন যে আপনার স্ত্রীর সাথে কথা বলার টপিক পান না কারন সে শাড়ি গয়না আর অন্যের সাথে নিজের অবস্থার তুলনা ছাড়া আর কিছু নিয়ে আগ্রহ দেখায় না। আর এইগুলার প্রতি আপনার স্ত্রীর ফ্যাসিনেশানের কারনে নানান অশান্তি সংসারে।
কঃ আপনি তো পার্সোনাল লেভেলে চলে গেলেন।
২৬ শে মার্চ ১৯৯৬ সালে ৩০০ আসন ধারী বিএনপি সংসদে একটি বিল এনে একরাতে পাশ করিয়ে ফেলে যাতে বলা হয় কোন রাজনৈতিক দলে অফিসিয়ালি নাম নেই (যাদের কে বলা হয়েছে নির্দলীয়) এবং মানসিক ভাবে কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি সহানুভূতিশীল নয় (যাদেরকে বলা হয়েছে নিরপেক্ষ) লোকজন দিয়ে নির্বাচন কালীন একটি প্রেক্ষাপট তৈরী করা হবে। এক্ষত্রে নির্দলীয় মানুষ খুঁজে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে নিরপেক্ষ মানুষ খুঁজে পাওয়া সম্পর্কে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর এপিক কথাটি বলেছিলেনঃ বাংলাদেশে একমাত্র শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয় (আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই মহান বানীটির খুব ভক্ত কারন দেশ নেত্রী এদেশের মানুষের মনজগতের কারসাজি যতটা ভাল করে বুঝেন, জননেত্রী সেই এঙ্গেল থেকে বুঝেন না বলেই মনে করি)
অগাস্ট ১০, ২০১৩ এর ইকনমিস্ট পত্রিকার একটি রিপোর্টে সজীব ওয়াজেদ জয় আর তারেক রহমানের মধ্যে তুলনায় তারেক রহমান কে wilier বলা হয়েছে যার মানে তারেক রহমান তুলনামূলক ভাবে বেশী crafty (skillful in underhand or evil schemes যার অর্থ "শয়তানী কর্মকান্ডে দক্ষ") আর cunning (ধূর্ত)/ ইকনমিস্টের তুলনা ঠিক কি বেঠিক সেই আলোচনায় আমি যাব না তবে wily বিশেষণটির কারনে তারেক রহমান সম্পর্কে বেশ আগ্রহ জন্মালো। বেশ কিছু পুরোন ভিডিও দেখলাম এবং গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বহুল আলোচিত টপিক "বিদ্যুৎ সমস্যা মোকাবেলা" সংক্রান্ত এই তারেক রহমানের একটি সাক্ষাতকার পেলাম (লেখার শেষে লিঙ্ক):
[এই লেখাটি পিনাকী ভট্টাচার্যের http://www.somewhereinblog.net/blog/pinaki007/29863349 লেখাটির পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। পিনাকী ভট্টাচার্য তার লেখাতে যে গ্রাফ গুলো দেখিয়েছেন সেগুলো আর নীচের লেখাতে ব্যাবহারকৃৎ গ্রাফ গুলো একই উৎস থেকে নেওয়াঃ http://www.indexmundi.com/g/g.aspx?v=29&c=bg&l=en। এই লেখার মূল উদ্দেশ্য গ্রাফের সত্যতা যাচাই নয়, মূল উদ্দেশ্য হল এটা বুঝানো যে একই উৎসে থাকা বিভিন্ন গ্রাফের মধ্যে থেকে নিজের হাইপোথিসিসের সাথে মিলে এমন তত্থ্য বেছে বেছে উপস্থাপন করেছেন পিনাকী ভট্টাচার্য তা ধরিয়ে দেওয়া.... Statistics এ এরকম নিজের সুবিধা মত বেছে বেছে উপাত্ত উপস্থাপন একটি Known Fallacy, যার পোশাকী নাম Confirmation Bias আর যাকে সহজ ভাষায় বলা হয় Cherry Picking]
আজকে সকালে উঠেই এক বড় ভাইয়ের শেয়ার করা একটি লিঙ্কের সূত্র ধরে পিনাকী ভট্টাচার্যের একটি ব্লগ পোস্ট পড়লাম যার হেডলাইন "বিলবোর্ড কাহিনী: শাসক দল হিসাবে আওয়ামীলীগের সাফল্য কোথায়?" বেশ কনভিন্সিং লেখা...অনেক ভারী ভারী শব্দ আছে, পুজিবাদী সমাজে সরকারের কোন টিকে সাফল্য হিসাবে দাবী করা উচিত আর কোনটিকে উচিত না ইত্যাদি নানা কথা। ব্লগ পোস্টটি এমন ভাবে লেখা যে এটি পড়লে আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়নের দাবীর ব্যাপারে প্রশ্ন উঠা খুবই স্বাভাবিক। আমার মনেও প্রশ্ন জাগল। তাইতো !! পিনাকী ভদ্রলোক যেই সেক্টর টিকে সার্ভিস সেক্টর বলছেন সেই সেক্টরে আওয়ামীলীগ যেগুলোকে সাফল্য বলে দাবী করছে তা কি আসলেই শুভঙ্করের ফাঁকি? এই সার্ভিস সেক্টার মডেলের বর্ননা পিনাকী সাহেব দিয়েছেন এইভাবে "এই সার্ভিস ডেলিভারি মডেলগুলো আসলে রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটির একটি ধারাবাহিক সাফল্য, সরকারের নয়। রাষ্ট্রের সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট বা সামাজিক চুক্তির যদি কোন পরিবর্তন না ঘটে তবে সেই ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়না।" এরপর পিনাকী সাহেবের দুটি গ্রাফের মাধ্যমে (এই লেখার শেষে সংযোজিত) দেখিয়েছেন যে "ইনফ্যান্ট মর্টালিটি" আর "পপুলেশান বিলো প্রোভার্টি লেভেল" নিয়ে আওয়ামীলীগ যে সাফল্যের দাবী করছে সেটি অযৌক্তিক কারণ এই দুই ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ সরকার শুধুমাত্র তার পূর্ববর্তী বিএনপি সরকার ও দুই বছরের কেয়ারটেকার/মিলিটারী ব্যাকড সরকারের রেখে যাওয়া ট্রেন্ডটি ধরে রেখেছে মাত্র ... আর কিছু না (যদিও আমার মতে ট্রেন্ড ধরে রাখা টিও একটি সাফল্য, তবে আমি সেই বিতর্কে যাব না)/ পিনাকী সাহেবের কথার সূত্র ধরেই শুধু তিনটি প্রশ্ন রাখতে চাইঃ ১/ যে যে ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ সরকার তার পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া ট্রেন্ড গুলোকে পুরোপুরি উলটো দিকে টেনে নিয়ে গেছে সেগুলো কে সরকারের সাফল্য বলা যাবে কিনা? ২/ যে যে ক্ষেত্রে বিএনপি সরকার তার পূর্ববর্তী আওয়ামীলীগ সরকারের (২০০১-২০০৬) ট্রেন্ড ধরে রাখতে পারে নাই সেগুলোকে বিএনপি সরকারের ব্যার্থতা বলা যাবে কিনা? ৩/ গ্রাফের স্লোপ উন্নত হলে তাকে সাফল্য বলা যাবে কিনা?
আসুন নিচের গ্রাফ গুলো একটু পর্যবেক্ষন করি (এই গ্রাফ গুলো সেই একই ওয়েব সাইট থেকে নেয়া যেখান থেকে পিনাকী ভট্টাচার্য তার লেখার গ্রাফ গুলো নিয়েছেন):
ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম সফল প্রেসিডেন্ট। ক্লিনটন এ্যডমিনিস্ট্রেশনের সময় আমেরিকা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছিল। আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে একটানা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ২২ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান যা কিনা কোন একক রাষ্ট্রপতির আমলে সর্বোচ্চ, সর্ব কালের সর্বোচ্চ বাড়ী বিক্রয় হার, আমেরিকার ইতিহাসের সর্বনিম্ন বেকারত্বের হার, শিক্ষা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সহ আরো ডজন ডজন সাফল্য গাঁথা ছিল ক্লিনটন এ্যডমিনিস্ট্রেশনের। কিন্তু তারপরও ক্লিনটনের পর কোন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেনি। ক্লিনটনের স্থলাভিষিক্ত হলেন রিপাবলিকান জর্জ বুশ (জুনিয়র)/ এই জুনিয়র বুশের আট বছরে আমেরিকা কোথা থেকে কোথায় গেছে তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু আমার সবচাইতে অবাক লাগত এই ভেবে যে কিভাবে আমেরিকার মানুষ ক্লিনটনের উত্তরসূরি হিসাবে বুশ কে নির্বাচিত করল?
১৯৯৭ সালের শুরুর দিকের কথা। বুয়েটের ক্লাস শুরু হয়েছে মাস দুয়েক হল। প্রথম সেমিস্টারেই পাঁচ টা কোর্স আর তিনটা সেশানাল নিয়ে অবস্থা কেরসিন... বিশেষ করে মেকানিক্স কোর্স নিয়ে তো রীতিমত হিমশিম অবস্থা। এর মধ্যে শুনলাম ইউকসু ইলেকশান হবে। বেশ একটা থ্রিল অনুভব করলাম। ডাকসু ইলেকশানের কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি, ডাকসু নেতাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা পেপারে পড়েছি, বিবিসি বাংলায় শুনেছি। তো আমি একে ওকে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলাম জানার জন্যে যে কে কোন দল থেকে ইলেকশান করছে, কে কেমন ইত্যাদি। জানতে পারলাম ইউকসু ইলেকশান হয় প্যানেল ধরে, সাতজনের একেকটা প্যানেল...ছাত্র দল একটা প্যানেল দেয়, ছাত্র লীগ একটা প্যানেল দেয়, ইউনিয়ন একটা প্যানেল দেয় ... এরকম। প্যানেল গুলো পরিচিত হয় ভিপি-জিএস-এজিএস প্রার্থীর নামে। যাই হোক ধীরে ধীরে প্যানেল ঘোষণা করা হল প্রায় সব দলের। তারেক-কামাল-কল্লোল প্যানেল হল ছাত্রদলের... জাহিদ-খালেদ-তুহিন হল ছাত্রলীগের প্যানেল। অন্য আরও প্যানেল বোধহয় ছিল কিন্তু আমার মনে নাই। প্রচারনা শুরু হল। সারা বুয়েট ছেয়ে গেল পোস্টারে পোস্টারে। এরকম একটা পোস্টারে একটা চেনা মুখ দেখে তো আমি অবাক...... আনোয়ার জাহিদ ভাই। জাহিদ-খালেদ-তুহিন প্যানেলের জাহিদ যে আনোয়ার জাহিদ তা দেখে তো আমি অবাক। বছর খানেক আগের বুয়েটে ভর্তির কোচিং সুত্রে আনোয়ার জাহিদ আমাদের অতি প্রিয় মানুষ। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় তখন পর্যন্ত ১০০% স্কোর করা একমাত্র পরীক্ষার্থী উনি। সান রাইজ কোচিং সেন্টারে স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে আমাদের নিয়মিত ক্লাস নিতেন ইনি। আনোয়ার জাহিদ আমাদের ভোটে সেরা টিউটরও নির্বাচিত হয়েছিলেন সান রাইজের। আমি তো মহা খুশী এমন একজন গুনী মানুষ ইলেকশান লড়ছেন দেখে। একটু আশা জাগল মনে যে না ছাত্র রাজনীতি মানেই নষ্ট ছেলে আর ক্যাডারদের তাণ্ডব না। আমরা যারা লেভেল ১ টার্ম ১ এর নতুন ছাত্র ছাত্রী তারা তো প্রায় নিঃসন্দেহ যে জাহিদ ভাই ই জিতে যাচ্ছেন।
এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক প্রধান বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আইরিন খান। শাহবাগের আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যানশনালের মনোভাব বিষয়ে ইন্টারনেটে একটু খোঁজাখুঁজি করছিলাম দিন কয়েক আগে। এই সুত্রেই জানতে পারলাম যে ২০০৯ এর শেষে আইরিন খান কে এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টি ছিল গোয়ান্টানা মোবে তে যেসব মুসলিম বন্দী ছিল তাদের উপর অত্যাচারের ব্যাপারটি অতিরিক্ত একপেশে ভাবে বিশ্বের সামনে আনা যেখানে ওই টেরোরিস্ট বন্দীরা যে কি পরিমান নাশকতা ও নৃশংসতা ঘটিয়েছে সে বিষয়টি এ্যমনেস্টি অতটা সামনে আনেনি। অর্থাৎ আইরিন খান গোয়ান্টানা মোবে তে আটক থাকা বন্দীদের মানবাধিকার রক্ষায় যে পরিমান সোচ্চার ছিলেন তার কিয়দাংশও ছিলেন না ওই বন্দীরা যে সব মানবতা বিরোধী কাজ করেছে সেগুলোর প্রতিকার করা বা অন্তত সেগুলোকে বিশ্বের কাছে জানানোর ব্যাপারে। এই অভিযোগে আইরিন খান কে সরাসরি অভিযুক্ত করা না হলেও জঙ্গীবাদের উত্থান ও বিস্তারের প্রতি নমনীয় মনোভাবাপন্ন বলে মন্তব্য করে তাকে সরে যেতে বলা হয়। মনে করা হচ্ছিল যে জঙ্গীবাদের জন্যে "অতি" মানবতা দেখানো আইরিন খান সরে গেলে জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রন সহজ হবে। আইরিন খান সরতে রাজি না থাকায় তাঁকে বিপুল অর্থের প্রস্তাব দেয়া হয় এবং আইরিন খান তাঁর বার্ষিক বেতনের চাইতে প্রায় পাঁচ গুন বেশী অর্থ নিয়ে নীরবে রফা করে সরে যান। এই বিপুল পরিমান অর্থ কেন আইরিন খান কে দেয়া হল এ নিয়ে এ্যমনেস্টির নিজেদের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়ার প্রেক্ষিতে বর্তমান প্রধান বলেন যে যেহেতু আইরিনের ভুমিকা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিল তাই অর্থের বিনিময়ে তাকে সরে যেতে বলা ছিল একটি আপোষ এবং একে "Least Worst Outcome" উল্ল্যেখ করে বলেন এব্যাপারে যেন এ্যমনেস্টি বা আইরিন কোন পক্ষই আর কথা না বলে তার জন্যেই এব্যাবস্থা।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যু দিবসে ৭১ টিভির একাত্তর মঞ্চের আলোচনা অনুষ্ঠানে মেজর জিয়াউদ্দিন (কর্নেল তাহেরের সাথে যার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল কিন্তু পরে অবস্থার প্রেক্ষিতে তাঁর ফাঁসি রদ করা হয়) নামে একজন প্রাক্তন সেনা সদস্য এসেছিলেন। উনি বলছিলেন যে "শেখ মুজিব কে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য মেরেছে তাঁর ব্যর্থতার জন্যে না, তাঁকে পছন্দ করত না সে জন্যে। সেনা বাহিনী স্যান্ডেল পড়া রাজনীতিবিদ দের কে অবজ্ঞার চোখে দেখত। রাজনীতিবিদরা এলাকার ছাপড়া চায়ের স্টলে চা খান...স্যান্ডেল পায়ে ধুলা মাখা পায়ে হেটে হেটে পাড়ার সবার সাথে হাত মেলান...এদেরকে সেনাবাহিনী তাচ্ছিল্যের চোখে দেখত।" কথা গুলো ভুলতে পারলাম না...কেমন যেন মনে গেঁথে গেল...মাথায় ঘুরতে থাকল। আবার ভারত পাকিস্তানের ইতিহাস টা মনে করার চেষ্টা করলাম............যা ভেবেছিলাম তাই। খাপে খাপে মিলে গেল। ৭১ পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে যারা ছিল তারা কখনই সিভিল গভর্নমেন্টের অধীণে ছিল না। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান খমতা দখলের পর থেকে ৭১ পর্যন্ত পুরটা সময়েই ছিল সামরিক শাসন। আর্মিরা উর্দি আর ভারী বুট পরা রাষ্ট্রপ্রধান দেখে ও তার অধীনতায় থেকে অভ্যস্ত। সাধারন সুতী কাপড়ের পাঞ্জাবী আর স্যান্ডেল পরা আটপৌড়ে এক নেতাকে সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়কের উপর ওইসব তরুন আর্মি অফিসারদের নাখোশ থাকাটা তাই অস্বাভাবিক না। পাকিস্তান ফেরত একদল সেনাবাহিনী তাই শুরু থেকেই শেখ মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত ছিল। সেই ক্ষোভ কে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটেছে কয়েকজন আর্মি অফিসার এবং নিজেদের আক্রোশ থেকে করা মুজিব পরিবার নিধন কে শেখ মুজিবের ব্যর্থতার ফলাফল বলে চালিয়েছে দিয়েছে। আসলে তারা আবার আর্মি শাসনই বহাল করতে চেয়েছিল।