নিজের একটা কুকুর থাকবে
কোলে বসে চাটবে টাটবে
লেজ নাড়বে-
লাথি দিলেও ছুটে আসবে
হাসবে টাসবে, কৃতজ্ঞতায় সারাটাদিন
চোখে রাখবে-
যা বলবো তাই শুনবে
সহস্রবার বল ছুড়লে লুফে আনবে
মাংস ছাড়া হাড্ডি দিলেও
প্রভূ মানবে-
গন্ধ চিনবে, অনেক দূরে গেলেও
কাছে খুঁজে আনবে, মান ভাঙবে;
মোদ্দা কথা আমি ছাড়া আর সব সে
বৃথা জানবে-
মিনু, টিনু কিংবা তুমি
একটা নামে আয় বললেই ঝাঁপিয়ে ডাকবে,
আমি চাই আমার ভালো লাগুক
এই ভেঙে পড়া শহর, নুয়ে পড়া
মানুষ, এবড়ো থেবড়ো রাস্তায়
ম্লান নষ্ট আলোর মতো তরুণী;
স্যানিটারি ওপচানো ডাস্টবিন, নোংরায়
গেড়ে যাওয়া শিশুটিকে পিষে খাবার
খুঁজে নেয়া কুকুর, তার পাশে ভুস করে
চলে যাওয়া গাড়ি, পোস্টারে আন্দোলনের
ডাক ঢেকে দেয়া চিত্রনায়িকার স্তন্যময়
হাসি- আমি চাই অন্যদের মতো
আমারো ভালো লাগুক;
পচা পটল আর পোকা বেগুনের ধারে
পায়ে পায়ে থেঁতলানো মরা ছোট মাছ,
বলো তুমি কেমন মানুষ?
ভেতরে কি পাহাড়, নদী
তার পাশে পথ; পথিক চাইলে হাঁটতে পারে?
আছে আকাশ? মেঘলা দুপুর—
গাছের ছায়ায় রাখালরা কি মনের সুখে বাঁশী বাজায়?
জানলা আছে? চুল ওড়ানো ফুলের বাতাস?
রোজ বিকেলে চিঠির আশায় কেউ কি বলো
দাঁড়িয়ে থাকে?
মানুষটা কি এমন তুমি?
পাল তোলা এক মনের মাঝে ‘বউ কথা কও’ পাখি পোষো,
যত্ন করে ছড়িয়ে রাখো সোনালী ধান উঠোন জুড়ে—
আমি তোমার কাছের মানুষ হবো।
এত্তো কাছে, মনে হবে বাড়ির পিছে
সরিষা ক্ষেত, মৃদু নদী- জলের সারস
অতীতে তার কোল ঘেঁষা পথ-
মনে হবে লতানো লাউ, জানলা খুলে
হাত বাড়ালেই পাখি পাখি গাছের ছায়া,
ঘাসের ঘাড়ে হেলেঞ্চাতে শুকনো পাতায়
মুখ ডোবানো রোদের আরাম-
উঠোন ভরা শাকসব্জি, পুঁইয়ের মাচা
পাটির ওপর ছড়িয়ে দেয়া চালতা আচার
মনে হবে, নিজেরই সব- বুনো ফুলের
ছোট্ট বাগান- কপাল থেকে চুল সরানোর
কথা কিন্তু কথার নিচে মুখোশ পরা,
মিথ্যা হয়ে লুকিয়ে আছে ট্রয়ের ঘোড়া।
দরজা খুলে আনছো তাকে ভেতর বাড়ি,
মিষ্টি হেসে রাখছো যেন বন্ধু ভারি।
কথার পেটে লুকিয়ে যারা ছদ্মবেশে,
খেলনা হয়ে আত্মহারা তোমায় ঘেঁষে।
একটু পরে রাজপ্রাসাদে কথার সুরে,
চাঁদের মতো যখন তুমি আকাশ জুড়ে-
গুপ্ত খুনি ওই কথারা হঠাৎ এসে,
তোমার জিভে আলতো করে পড়বে বসে।
তখন তুমি নিজের কথা হারিয়ে তাতে,
পেতে পেতে দুঃখ এখন
দিতেও পারি,
তবু আছি আগের মতোই
অসংসারী-
অগোছালো ছিলাম যেমন
ইচ্ছামতো-
ভেঙে গড়ে নতুন আবার
ভাঙাই যেতো,
সবকিছু আছেই তেমন
কেবল জানি,
ভালোবেসে দুঃখ দেয়ার
মন্ত্রখানি-
লোকে ডাকে দুঃখওয়ালা
যদিও আমি,
হেসে হেসে মিহিন আঘাত
কমই জানি-
দিতে পারি দুঃখ যেটুক
নিজের মতো,
আহা, যদি ওটুক শুধুও
তোমার হতো!
সিডনি, জুন- ২০১৬।
হে
কুকুর,
মিছিলের রাস্তা ছেড়ে
সুরম্য
পুঁজিপতির কাছে
চলে যাও-
এখানে একমাত্র
তারই আছে
মানুষ মাড়াইকল,
যেখানে নরোম আখ নয়
বরং
হাড় মাংস মন
সব গলে
বেরিয়ে আসে
উচ্ছিষ্ট অর্থের মতো,
তিন বেলা
পেট পুরে খেতে পারবে
চাও তো
চারবেলা-
পূত্রের ছুঁড়ে দেয়া হাড়
কন্যার চু চু চুমোয়
নাদুসনুদুস অনুভূতিতে
তারপর
লেজ নাড়তে নাড়তে
অল্পদিনেই
তুমি
হয়ে উঠবে
তার
কাছের সম্পাদক,
আবার যেদিন দেখা হবে
আমি কিন্তু হাত বাড়াবো,
আজকে যেমন ফিরিয়ে দিলে
সেদিন আমি তোমার হবো।
পথের পাশে লজ্জা ঘেঁষে
কৃষ্ণচূড়া লালের মতো
রোদ বিছিয়ে বসবো দু'জন
হিজল তমাল গাছের ছায়ায়
পাখির প্রতি পাখির কাব্য
পরান খুলে শুনতে শুনতে
হঠাৎ দেখায় প্রেমে পড়ার
মুহূর্ত এক বুনতে বুনতে
বয়েসটাকে কমিয়ে এনে
ষোলোর পরে সতেরো করে
খুনসুটি আর বাদাম ভেঙে
একটা দুপুর গড়িয়ে দেবো।
(অভিজিৎ রায় স্মরণে)
আমার কিছু মনে পড়ে না-
মায়ের মুখ, বাবার হাত ধরে
ইশকুলে যাওয়া- ভাসা ভাসা কিছুই
চোখে ভাসে না!
প্রেমিকাকে প্রথম চুমু খাবার স্মৃতি
আমি ভুলে গেছি, আসলে শরীরের কোথায়
ঠোঁট থাকে তা যদি জিজ্ঞেসা করো
খোদার কসম, আমাকে হাতড়াতে হবে!
আমার মেয়ে যখন ছোট্ট আঙুলে এসে
হাত ধরে টানে- বাবা?
আমি অবাক হয়ে ভাবি, কোথাও
কোন ভুল হচ্ছে নাতো!
এমন নয় যে,
সকালে একদিন
ঘুম থেকে উঠে দেখলে
তোমার ভেতর
ফুল ফল সমেত একটি গাছ !
বহুদিন ধরেই কিছু একটা হচ্ছিল,
ভেতর থেকে হাত পা ছড়িয়ে উঠে আসছিল কেউ,
আর তুমি ভেবেছিলে দুটো প্যারাসিট্যামল
বা অ্যান্টাসিড খেলেই
সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে!
কিন্তু হয়নি,
দিনের পর দিন ধরে
গাছটি বেড়ে উঠেছে- তোমার
নখ থেকে চুল, নিঃশ্বাস থেকে
কল্পনা পর্যন্ত তার আঁকাবাকা গভির শেকড়
তুমি এখন পরিপূর্ণ টের পাও-