প্রিয় মা'মনি,
আজ হঠাৎ মতির কথা মনে পড়ল। ক্যাডেট কলেজে মতি আমাদের স্কুল জীবনের সহপাঠী ছিল। আমাদের সাথে মতির সহপাঠ কলেজের শেষ দিনটি পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয় নি। গ্রাম্য প্রকৃতির মতির নিতান্ত গোবেচারা চেহারায় রূপোর টাকার মতো তেমন উজ্জ্বল কোন বৈশিষ্ট্য আমার চোখে পড়ে নি। আমরা ছিলাম ভিন্ন ভিন্ন হাউসের বাসিন্দা। আমার তিনতলার খোলা তলোয়ার হাউস, মতির নিচতলার বীরশ্রেষ্ট হাউস। মাঝখানে বাঁশের কেল্লা হাউসের গা বেয়ে নামা প্রশস্ত সিঁড়ির দু-দু'টি স্তর। সে বয়সে স্তর পেরুবোর ক্ষেত্রে ঘাম ঝরাবার কায়ক্লেশ হয়ত একেবারেই গা করতাম না, তবে খুব সূক্ষ্ম হলেও ভিন্ন হাউসে অবস্থানের একটা মানসিক বাধা ছিল। সেই বাধা পেরিয়ে জ্যোতিষ্কের সাহচর্য হয়ত কামনীয় হতে পারে, কিন্তু নিতান্তই সাধারণ একটি ছেলের সাথে বন্ধুতা ঘটবার তেমন আগ্রহ মনে জাগে না।
তোমাকেই লিখছি, তবু তোমাকে জানাতে নয়
হয়তো এ লিখা নয়—
স্মৃতির দোলচেয়ারে বসে
এলোমেলো ভাবনার আঙ্গিনায়
একটু আধটু ঢেউ তোলা...
অনিমেষ চেয়ে দেখা ভাঙনের বিদীর্ণ বুক।
১
গোধূলির পথে হাঁটতে হাঁটতে কুড়িয়ে পেলাম
সূর্যের কিছু রেণু;
ইচ্ছের গভীরে ডুবি
কত কিছু পেতে চায় মন!
কত সুর, এলোমেলো কত আলাপন…
১
ধর্মগড়ের প্রকৃতিতে তখনও ভোরের রেশ কাটে নি। কুয়াশার লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা শীতের মলিন দিনটিকে সদ্যজাত ভোর ভেবে পাখিরা তখনো কাকলিমুখর। মাঝে মাঝে ঘুঘুর প্রলম্বিত উদাসী ঢাক। সকালেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তবু চোখে লেগে ছিল আবেশী আলস্য। গতরাতে পড়ে শেষ করা ‘উয়ারী-বটেশ্বর শেকড়ের সন্ধানে’ সিথানের পাশে পড়ে আছে। এক বিলুপ্ত নগরী আবিষ্কার ও উৎখননের রোমহর্ষ আমাকে অধিকার করে রেখেছিল গতরাতে।
চুপি চুপি ঘড়ির কাঁটা কখন যে অনেকদূর পথ পরিভ্রমণ করেছে বুঝতে পারিনি। সকাল নয়টা বেজে ছয় মিনিট। ফোনটা তখনি এলো। জানালা দিয়ে ভেসে আসা ঘুঘুর স্বর ছাপিয়ে সেলফোনের ভেতর থেকে ভেসে আসা কোকিলের মতো স্বর আমাকে সচকিত করে তোলে। “আমি ডঃ শাহনাজ বলছি, ডিসি সাহেব আপনার ফোন নম্বর দিয়েছিলেন...”
কেমন আছো, প্রিয়তা? সেলফোন, স্কাইপ, ভাইবার... কতকিছু আছে
তবু কথা নেই বহুদিন, নেই আসা কাছে।
অনেকদিন পর নির্জন অবসরের শান্ত কোন প্রহরে তোমায় কিনে দেয়া বইটির এই পাতাটিতে হয়ত তুমি আবারো চোখ রাখবে, তোমার আচ্ছন্ন স্মৃতিমেদুর চোখে সেদিন কি ভাষা ফুটে উঠবে তা আমি জানি না, হয়ত কিছুটা অনুমান করতে পারি; ১৬ আগস্ট ২০১৩ এর সেই সন্ধেবেলাটি তখন হয়ত সুদূর অতীতের দিকে হেঁটে গেছে অনেকটুকু পথ, তবুও তোমার স্মৃতিতে আবার কি সে ফিরে আসবে?
বেশ কদিন ধরেই খবরের কাগজে দেয়া বইয়ের বিজ্ঞাপনগুলো রোদেলার চোখের ঘুম কেড়ে নিচ্ছিল। গতবার মনের সাধ মিটিয়ে বই কেনা হয়নি ওর। বাপরে বাপ, কী ভিড় স্টলগুলোর সামনে!