পূর্বের পাঠ : ছন্দে ছন্দে চলা ০১
গত পর্বে মাত্রাবৃত্ত নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। পর্যাপ্ত উদাহরণ দিতে পারিনি। পরে মনে হলো মূলপাঠের পর অনুশীলনীর মতো একটা কিছু না থাকলেও সমাধানকৃত সমস্যা (solved problems) তো থাকতে পারে। উপরি হিসেবে না হয় কিছু ভালো কবিতার রস আস্বাদনও করা গেল। তাই এই প্রচেষ্টা। তাই পড়ুয়াগণ (আমিও কিন্তু পড়ুয়াদের দলে, একই বেঞ্চে) আসুন, অক্ষর বৃত্ত নিয়ে আলোচনার আগে মাত্রাবৃত্তের যতটুকু শিখলাম তা একটু ঝালাই করে নিই।
মহুয়ার বনে মেতেছে যখন ফাগুনের ঝোড়ো হাওয়া
পাতায় পাতায় শিশিরের মতো ঝরে গেছে দিনগুলো
পাখিদের ভিড়ে উড়ে গেছে কারা ফেলে সব চাওয়া পাওয়া
ক্লান্তির ভারে কুঁজো হয়ে আছে হৃদয়ের ঋণগুলো
ধূসর মলিন স্মৃতির পালক পড়ে আছে আঙিনাতে
সে কি প্রেম নাকি বিরহ বিলাস সময়ের রূঢ় হাতে?
অবশেষে কবিতার ছন্দ ও মিল নিয়ে লিখতে বসলাম। শুরুতেই অকপটে বলতে চাই, এ বিষয়ে লিখবার জন্যে যে ন্যুনতম জ্ঞান থাকা প্রয়োজন তার চিলতেটুকুও আমার নেই। আমি জানি এই সচলায়তনেই অনেক বাঘা বাঘা ছন্দ বিশারদ আছেন যাঁদের কাছে এই লেখা নিতান্তই কৈশোরসুলভ ঠেকবে। তবু লিখছি। কারণ দুটো। প্রথমটি হলো, পাঠক ও লিখিয়েদের মধ্যে যারা এ বিষয়ে আগ্রহী তাদের জন্য একটা দিলখোলা মিথস্ক্রিয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর দ্বিতীয়টি হলো, যাঁরা এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন, অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যাঁদের সঞ্চয় পর্যাপ্ত, তাদের কাছ থেকে নিজের ভুল-ভ্রান্তিগুলো শুধরে নেবার একটা সুযোগ তো পাওয়া যাবে। তাই শুরুতেই সবার কাছ থেকে অভয় ও সহযোগিতা চেয়ে নিয়ে শুরু করছি।
কি করে লুকোই বলো তোমার দস্যুতা―
বিবশ স্তনের চুড়ো
শিহরণে থরো থরো
কি ভীষণ ভয় হয়,
যদি বলে দেয় সব?
খুব নিশীথে জলের তিয়াস পেলে
হাতড়ে ফিরি তীব্র কালাহারি
বরফ শীতল জলের গেলাস ফেলে
শুয়েই থাকি বিষণ্ন বিচ্ছিরি
প্রাত্যহিকের জটিল ফাঁদে আটকে পড়ার ধন্ধে
ঘরের ভেতর লুকিয়ে থাকি সকাল থেকে সন্ধ্যে
কপালে সে পরেছিল ভোরের সূর্যের মতো লাল টিপ
তিস্তার তীর, পা’দুটি ভেজানো জলে
কার কথা ভেবে দুপুরের রূপা রোদে
চোখে বুনেছিলি পলি মাখা মিহি সুখ!
জলে রেখেছিলি লাজরাঙা ছায়া ফেলে
সেই রেখা ধরে হেঁটেছে কে অবেলায়?
তুমি চলে গেলে
আরো খানিকটা নির্জন দিন পাবো
নিভৃত আঁধারে মসৃণ সুরে সত্ত্বাকে গড়ে নেব