তাঁকে দেখি আমি কুয়াশার পথ হেঁটে হেঁটে
আবার এলেন ফিরে এই বাংলায়।
নিপুণ আতশি কাঁচ তাঁর বারবার
আদিগন্ত খুঁজে ফিরে সবুজ ফড়িং,
নির্মোহ তাঁর দুটি চোখে অজস্র নক্ষত্রের ঝাঁক
নির্জন রাতের কোলে রূপোলী ইলিশের মতো জেগে উঠে।
এই বাংলার মিহি ঘাসে, জলসিড়ি নদীটির পাড়ে শুয়ে
অশ্বত্থের সাথে কথা হয় তাঁর
ঘুমের শান্তির সাথে কখনো বা হয় অভিসার।
মাঝরাতে দেখি অদ্ভুত আঁধার ঠেলে
একুশের বইমেলায় ইত্যাদির স্টল থেকে কিনতে হবে বইটি। সাবধানে, সতর্কতার সাথে। পাছে কেউ আবার ভেবে না বসে ভীমরতি হলো নাকি। না, আদিরসের সেরা কাহিনী নয়, চটুল প্রেমের উপন্যাসও নয় কোনো, একগুচ্ছ সনেট। এবার প্রথম দিন যখন বইমেলায় গেলাম, আমার নয় বছরের মেয়েটিকে সংগে নিয়ে, ও যখন স্টলের সামনে দাঁড়িয়েই গোয়েন্দা ঝাকানাকাতে ডুবে গেল, সেই ফাঁকেই একনজর দেখে নিয়েছিলাম ওটা। ‘সোনালি কাবিন’ পড়ার পর তেমন মন লাগিয়ে সনেট আর প
সেদিন বিকেল ক্যাম্পাস নিরিবিলি
পাতায় পাতায় সোনালী আলোর মায়া
আলগোছে কেউ বুকে এঁকে দিয়ে ছায়া
ক্লাশ শেষ করে ফিরে যায় হোষ্টেলে
সারাটি দিনের মুগ্ধতা পিছে ফেলে।
আমি বসে রই বুকে নিয়ে শূন্যতা
একা একা সেই বুড়ো গাছটির নিচে
পড়ে থাকে বই, পড়ে থাকে খেরো খাতা
একটি দিনের সঞ্চয় খুলে দেখি―
কিছু ছেঁড়া আশা, কিছু প্রেম-ভালোবাসা।
শুধু চেয়ে থাকি এর বেশী কিছু নয়
তবু কেন তার মনে জাগে এত ভয়?
কবি রাইনের মারিকা রিলকে আমদের সবার কাছেই কমবেশি পরিচিত। “The Landscape of Love” তাঁর একটি নিটোল প্রেমের কবিতা। স্বল্পদৈর্ঘ এই কবিতাটির অনির্বচনীয় সুরেলা আবহ আমাদের মনে বিষণ্ণতা মাখা মুগ্ধ আবেশ ছড়ায়। নান্দনিক স্বচ্ছতায় স্নাত প্রথম চরণটিতে কবি যথার্থেই ‘Landscape’কে প্রেমের রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ‘Again and again’ পুনরুক্তির মাঝে প্রেমের চিরচেনা রূপটিকে নতুন করে নতুন রূপে চিনে দেবার মাদকতাময় আহ
বহুদিন বাদে আমরা আবার বসলাম কবিতার আড্ডায়। নিত্যদিনের ব্যস্ততা ঠেলে এই ধরণের আড্ডায় সচরাচর বসা হয় না আমাদের। কিন্তু একবার বসলে সময়ের তশতরীতে চুমুক দিয়ে আমরা আকণ্ঠ শুষে নেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মধুরতম আলাপনে কেটে যায় প্রহরের পর প্রহর। মৃন্ময় স্বপ্নেরা একদল সবুজ শিশুর বন্ধনহীন আনন্দ ছড়িয়ে ছুটোছুটি করে আমাদের চোখের ভেতরের মধু-কুপি ঘাসের চত্ত্বরে।
রাতের নিকষ গায়ে বুনে দিতে পারি যদি আমাদের ভালোবাসা সব
আমদের কিছু গান, কিছু কিছু ছেঁড়া সুখ, মায়াময় প্রিয় অনুভব
কিছু ম্লান মুখ যদি ফের ভাসে মাঠে মাঠে দুপুরের বিরহী বাতাসে
ফিকে রোদ নিভে এলে সুর তুলে ঝিঁ ঝিঁ ডাকা পুকুরের চেনা চারিপাশে
যখন তারারা এসে অচেনা দিনের মতো ভিড় করে আকাশের গায়
নিভে আসে ছায়াপথ আলো জ্বেলে দিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে দূর নীলিমায়
১
আমাদের নদী মরে গেছে সেই কবে
দোলে না সেখানে রূপালি ঢেউয়ের ঝাঁক
জারি-ভাটিয়ালি হারিয়েছে আজ সব
বুক জুড়ে শুধু দখলের মচ্ছব
বর্জ্যের বিষে ভরে গেছে প্রতি বাঁক।
এই তো সেদিন বুক ভরা ছিল জলে,
মাছরাঙা আর সোনালি চিলের দলে।
এখন সেখানে ড্রেজারের ঘড় ঘড়
ধু ধু বালিয়াড়ি—নিষ্ফলা মরা চর
শুনেছি এখানে নতুন শহর হবে।
আমাদের ছিল কাব্যের সুপ্রভাত—
ঝিঁ ঝিঁ ডাকা সাঁঝ, মধুচন্দ্রিমা রাত
ধীরে ধীরে গভীর হয়ে আসছে রাত, ফুটছে চাঁদের আলো,
আকাশের নীল নদীতে রুপোলী ইলিশের মতো ভাসছে
অনেক তারার ঝাঁক। আমার মেয়ের চোখে নেমে আসছে
স্বপ্নীল ঘুমের নেশা, স্ত্রী ব্যস্ত আরেকটি দিনের ক্লান্তিকে
আপাততঃ ছাইচাপা দেবার জন্য বিছানাকে প্রস্তুত করতে।
এমন সময় আমার বুকের ভেতর খুব অস্ফুটে মাগো তুমি ডেকে উঠ
বহুদূর হতে সেই সুর শুনে আমি ডুবে যাই অনন্ত নদীর মতো
মাসাই পল্লী থেকে যখন ফিরছি, রাত্রি তখন নিগ্রো যুবতীর মতো পূর্ণযৌবনা। বয়ঃসন্ধির দেয়াল পেরিয়ে ফিকে অন্ধকারের সাঁঝ শলমা আঁকা ঘন কালো শাড়ি পড়ে হঠাৎ যে কখন মোহিনীর বেশে অভিসারিণী হয়েছে বুঝতেই পারিনি। পথের ধারে অফুরন্ত নাম না জানা ঝোপের সারি, সেখানে ফুটে থাকা কত নাম না জানা বুনো ফুল। ঝোপের ঝাঁঝালো গন্ধ, অল্পজলে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ, রঙিন ধুলোর গন্ধ, বুনো ফুলের মাতাল করা গন্ধ, সবমিলিয়ে জঙ্গলের একটা নিজস