[justify]পহেলা ফাল্গুনের পোস্টে ভেসে যাচ্ছে ফেসবুক। রঙের ছটা চারদিকে, স্ক্রল করে যত নিচে নামুন সর্বত্র রঙের ছড়াছড়ি। আমার এখানে রাত। দেশে দিন। বাইরে তুষারপার আর বাতাস। আর দেশে? জানি না। হয়ত রোদ, হয়ত শীত শেষের হাল্কা ঠান্ডা বাতাস। দিন রাতের এই পার্থক্য ব্যাপার না, কল্পনায় ভেসে আসছে সব- ফাগুনের টিএসসি, চারুকলা আর পরিচিত সব মুখ।
০।
একটু আগে বৃষ্টি হচ্ছিল, আসলে সারা দিন ধরেই হচ্ছে। রুমের জানালায় একটু পর পরেই জোরে জোরে বৃষ্টির ফোটারা এসে পড়ে। বন্ধ রুমের ভিতর থেকে সেই শব্দ আর ভারী শোনায়। জানালায় কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকালেই নিচের ঝাপসা হয়ে যাওয়া রাস্তাটার ব্যস্ততা চোখে পড়ে। পাশের মেডিকেল কোচিং থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় ছাত্র ছাত্রীদের দল গুলো বের হয়ে আসে। পাশের রুমে সামশাদ বেগমের গান বাজে, ষাটের দশকের হিন্দি গান।
০।
প্রতিদিন চলার পথে কত ঘটনা ঘটে, তার সব কিছু কী আমাদের মনে থাকে? সম্ভবত না। অবশ্য সব ঘটনা মনে রাখার মত না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনটা প্রায়ই একটা ধরাবাধা রুটিনে বাধা পড়ে যায়। এমনকী যে লোকটা সব নিয়ম ছুড়ে ফেলে বাউন্ডুলে জীবন যাপন করতে চায় তার জীবনটাও সব রুটিন কে ঝেড়ে ফেলার রুটিনে বাধা পড়ে যায়।
সারাদিন কাজ শেষে বিকেল বেলা ক্লান্তি ভর করে। কাজ শেষে তাই গান খুজি ইউটিউবে। সামনের ভলিবল মাঠ থেকে ভেসে আসে শব্দ। জয় পরাজয়ের শব্দের ভিতর হালকা স্বরে গান চলে। পাশের রুমে চলে নাটকের প্র্যাক্টিস। এই সময় ফোন করে এক বন্ধু। বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে শাহবাগের কথা আসে, অবাক হই, দীর্ঘশ্বাস বাড়ে
দুপুর বড় একলা। চারদিকে যখন সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা আর রাতের জয়জয়কার দুপুর তখন সৎ ভাইয়ের মত একলা দাডিয়ে। স্নিগ্দ্ধ সকাল, শেষ বিকেলের আলো, সন্ধ্যার আবছায়া আর রাতের রহস্য এইসব চমৎকার উপমা যখন বরাদ্দ বাকীদের জন্য দুপুরের ঝুলি তখন শূণ্য খাঁ খাঁ। লেখকেরা তখন ভয় দেখায় রৌদ্রদগ্দ্ধ তপ্ত, ক্লান্ত দুপুরের। তবুও কেন জানি এই দুপুর কে বেশ লাগে আমার। টুপ করে শেষ হয়ে যাওয়া শীতের দুপুর নয় বরং গ্রীষ্মের রৌদ্রদগ্দ্ধ, তপ্ত, অলস ঘড়ির কাটার ক্লান্ত দুপুর।
০।
ক্যাম্পাসে এই নিয়ে ছয় বছর হয়ে গেল। এই ছয় বছরের আগের আঠার বছর, তের ফেব্রুয়ারি মানে ছিল বছরের আরেকটা দিন। তাই ফার্স্ট ইয়ারের তের ফেব্রুয়ারি সকাল নয়টার ক্লাসে এসে যখন দেখলাম প্রায় সব মেয়েই রঙ্গিন সব শাড়ি পড়ে ক্লাসে বসে আছে
০।
এখনো বারটা বাজে নি কিন্তু বাইরে টুকটাক বাজি ফুটছে। ফেসবুকে হোম পেজের অধিকাংশ জুড়ে আছে বন্ধুদের নতুন বছর নিয়ে দেওয়া স্ট্যাটাস। এর মাঝে কেউ গত বছরের দেনা পাওনার হিসেব করছে, কেউ বা শুধু মাত্র শুভেচ্ছা জানিয়েই খালাস। একটু দূরে বিছানার উপর রাখা মোবাইল এর মাঝেই দুই তিনবার শব্দ করে নতুন মেসেজের অস্তিত্ব জানিয়েছে। ইনবক্স না খুলেই বলতে পারি শুভেচ্ছা জানিয়েছে কেউ না কেউ। আমি অবশ্য এত কষ্ট করে কাউকেই শুভেচ্ছা জানাই নি কারণ মায়ান ক্যালেন্ডার সত্য হইলে এইসব কিছুই মিছে
০।
এটা এই সিরিজের ১৩তম পর্ব। উপরের শিরোনামে ১৩ সংখাটা টাইপ করতে গিয়ে মনে পরল ছোটকালে এই সংখ্যাটা কে দারুণ ভয় পেতাম, অহেতুক। কারণ অবশ্য ছিল আশেপাশের সবার থেকে শোনা অদ্ভুত সব গল্প। স্কুলে একবার এক ছেলে দারুণ এক ভূতের গল্প বলে ঠিক ঠিক বিশ্বাস করিয়ে ফেলল যে ১৩ সংখ্যাটা ভূতড়ে সংখ্যা এবং অতি অবশ্যই শয়তানের প্রিয় সংখ্যা। কে কে আবার এরপর শুনে আসল কোন এক নামকরা হোটেলে নাকি ১৩ সংখ্যা দিয়ে কোন রুম নেই। সেটা আমরা সবাই সদলবলে বিশ্বাস করেছিলাম কারণ শয়তানের প্রিয় সংখ্যা দিয়ে রুম নাম্বার দেয়াতো আর বুদ্ধিমানের কাজ না।
০১।
প্রতিদিনকার মত টিউশনী শেষে মেইন রাস্তায় উঠতে বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ে। সাদা কাগজ, ভুল বানান, জড়ানো হাতের লেখা। প্রতিদিনের মত বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞাপনটায় চোখ বুলাই-
জরুরী বিজ্ঞপ্তী
উপযুক্ত মূল্যে একটি কিডনী বিক্রয় হইবে, ক্রয়ে আগ্রহি হইলে যোগাযোগ করুণ।
অ
স্বাস্থ্য সকল সুখের মূলে এবং স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য দুপুরের খাবারের পর একটু ঘুমানো উচিত এই কথাটা আজকে আমার মনে পড়ল বিকেল সাড়ে চারটায়। যদিও মনে ছিল সন্ধ্যা ছয়টায় গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও তার দলবল তাদের অভিযান শুরু করবে তাও হাতে মেলা সময় আছে ভেবে স্বাস্থ্য মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য একটা ঘুম দিলাম এবং ঘুম থেকে উঠে টের পেলাম সোয়া ছয়টা বাজে।