বিষয়: একতারার ফু
- এইবার এর বিষয় বাউল।
- হোয়াট?
গুগল করে বাউল দেখলাম।
- এক স্ট্রিংএর এইটা কি?
- একতারা।
- এটা কি গিটার? তাহলে কর্ড কিভাবে হয়? নাকি বাঁশির মতো?
হারমোনিয়াম কিছুকিছু বাজাতে জানলেও কর্ড/নোট এ আমি কঅক্ষর গোমাংস। তাই কথা ঘুরাতে বললাম:
- তুমি বাউল একটা পারবে?
- একতারা পারবো। বাউল হার্ড।
- বাউলের বদলে কি আঁকতে পারো?
- ফু ফ্রম কোডস্পার্ক!
তাই ফু (Foo) কে কমলা রং করে একতারা হাতে ছবি। সে এখনো ভালো বাংলা পড়তে, লিখতে বা অনেক ক্ষেত্রে বলতে পারেনা। একতারা লেখাটা তাই দেখে দেখে লেখা।
উত্তর আমেরিকার গ্রীষ্মে লঅঅম্বা বিকালের পর ঝপ করে মাঝরাত হয়ে যায়। হোটেল রুমে ফিরতে ফিরতে ঝিঁঝিঁ ডাকা রাত নেমে এলো। জানালার ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার দেখে মন কেউ নেই কিছু নেই লাগতে লাগতেই ঘুমের রাজ্যে ডুব দিলাম। পরের দিন সকালেও যথারীতি জানালায় উঁকি দিয়ে হরিণ খোঁজা; ওয়াশরুম এর ভেতর থেকে ওগো শুনছো বলে হাঁক দিয়ে দরজা খোলানো; কটকটে লাল লিপস্টিপ দিয়ে সকালের নাস্তা খেতে নামা; স্ক্রাম্বলড এগ, টোস্ট, জ্যাম জেলি, ফ্রুটস, জ্যুস,হোম ফ্রাই, আর মন মাতানো সুগন্ধের রোস্টেড কফি দিয়ে ঠেসে নাস্তা করে তোড়জোড় করে ল্যাগেজ নামানো শুরু করলাম। ঝকঝকে সকালের রোদে ফিরে যাওয়ার বিষন্নতা আর স্বস্তির চনমনে গন্ধ।
ইতিমধ্যে জ্যাস্পারের কাছাকছি এসে টোলগেট পার হওয়ার পরেই জিপিএস সম্বিত ফিরে পেয়েছে। তার দেখানো পথে আমাদের জ্যাস্পারের আস্তানা টেকারা লজে যখন পৌঁছালাম তখন রাত প্রায় দশটা। রিসিপশনের মেয়েটা তার জিনিস পত্র গোছাচ্ছে। আমাদের দেখেই খুবই স্বস্তি প্রকাশ করলো। ঘরের চাবি নিলাম এবং জিজ্ঞেস করতে ভুললাম না যে আসেপাশে ডিনারের ব্যবস্থা কি। ভদ্রমহিলা বেশ কিছু রেস্টুরেন্টের বিজ্ঞাপন ধরিয়ে দিয়ে বললেন আর্লে যাও, ওইটা এখনো খোলা আছে। ক্যারিওন ল্যাগেজ নামাতে গিয়ে বুঝলাম ক্ষুধা তৃষ্ণায় ক্লান্তিতে হাত পায়ের সমন্বয় পুরাই জোম্বি ধাঁচের হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে ব্যাগে রুমে রেখে রেস্টুরেন্টের দিকে রওয়া দিলাম। আধা কিলোমিটার রাস্তা যেতে পাক্কা পঁচিশ মিনিট লাগলো! এইবার অবশ্য জিপিএস কোন তেড়িবেড়ি করে নাই, মস্তিস্কের রেসস্পন্স টাইমের কারণে ঘটনা ঘটেছে। জিপিএস বলে ডাইনে যাও। আমরা দুইজন দুইজনের মুখের দিকে তাকাই। এরপর হাতের দিকে তাকাই। কোন হাত দিয়ে ভাত খাই মনে করতে করতে ডাইনের মোড় পার হয়ে যায়।
রাত গভীর হতে হতে পর্বতেরা অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। শুধু মাঝে মাঝে ট্রেন যাওয়ার ঝিকঝিক শব্দ। শেষ রাতে ঘন্টা দুয়েক মটকা মেরে পরে থাকার পরেও ঘুম আর আসলোই না! তাই ভোর পাঁচটার সময় থেকে আজকের ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করলাম। হোটেলের ওয়াশরুমে মিনিস্য মিনি কিছু সাবান তেল শ্যাম্পুর বোতল রাখা। অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ তাতে। কাঁচা হলুদের সাথে লেবুর রস মিশালে যেমন হয় তেমন। গায়ে লেখা ভারবেনা। ফিরে এসে ভারবেনা গন্ধী প্রসাধণী অনেক খুঁজেও পাই নাই। সব কিছু আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে ক্যারিওন ল্যাগেজ নিয়ে গেলাম কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট করতে। গিয়ে দেখি বাঙ্গালী একা না, সবাই মাগনা পেলে আলকাতরা খায়।
একটা মেগাসিটিতে থাকি আরেকটাতে অর্ধেক জীবন কাটায়ে আসছি, উঁচু বিল্ডিং মনুমেন্ট দেখছি। ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের তিরিশ তলা উঁচু বিল্ডিং দেখেছি, টরন্টোর স্কাই ক্র্যাপার, এমন কি এক সময়ের মানুষের তৈরী উঁচুতম দালান সিএন টাওয়ারও দেখা হয়েছে, হচ্ছে। সেইসব উঁচু বিল্ডিং সব জুড়ে দিলেও এই পর্বতের সমান হবে না। এরকম কিছু আমি বাস্তবে কেন, স্বপ্নেও দেখি নাই। অনুভূতির কোথাও লুকিয়ে থাকলেও থাকতে পারে। দৈর্ঘ্যে প্রস্থে উচ্চতা, গভীরতায়, অপ্রতিসমতায় কোনভাবেই কিছুর সাথে তুলনা আমি এই পর্বতের তুলনা করতে পারছিলাম না। ফেরার পথে অবশ্য এই পর্বতকেই রীতিমত টিলার মত লাগছিল!!!
ভ্রমণকাহিনী আর কাহিনীলেখক দুইটাই আমি খুবই অপছন্দ করি। কারণ আর কিছুই নাঃ আদি অকৃত্রিম ঈর্ষা। এইযে তারেক অণুর জন্য শতকরা ৯৯ ভাগ পাঠক হীনমন্যতায় ভুগি সেইটা কি কোন ভালো জিনিস? ভ্রমণের ব্লগগুলো আমি চটজলদি চোখ বুলাই, ছবি দেখে মনে মনে ভাবি আমিও যাবো। বেশিরভাগ সময় আমি হিংসায় পড়ে শেষ করতে পারি না। তাহলে আমি কেন ভ্রমণকাহিনী লিখছি? আবার কেন, প্রতিশোধের আশায়। জীবনে বহু সময় সচলায়তনে পার করেছি, করতেছি। সেইসব সময়ের দাম আছে না? এই লেখা পড়ার জন্য মডুদের সময় নষ্ট হবে। লেখা ছাপানোর যোগ্য হলে কথাই নেই! শিরোনাম পড়তে গড়ে তিরিশ সেকেন্ড লাগলেও হাজার লক্ষ পাঠকের সময়ের হিসাব করেই কেমন জানি দাঁতগুলো আপনিই বিকশিত হয়ে যাচ্ছে।
ঋতুপর্ণ ঘোষের নাম প্রথম শুনি চোখের বালি বের হবার পর। ক্লাসের ছেলেরা ঐশ্বরিয়ার পিঠ দেখতে পেয়ে খুবই আনন্দিত ছিল মনে আছে। তখনো আমার সেই সিনেমা দেখার সৌভাগ্য হয় নাই। ধরেই নিয়েছিলাম ঐশ্বরিয়ার রূপ দেখিয়ে সিনেমার হিট করার তালিকায় আরেকটা সিনেমা যোগ হল। আমি কখনই খুব সিনেমা বা টিভি দেখার পোকা ছিলাম না। কাজেই এরপর কয়েকবছর আর তাঁর কোন সিনেমা উপভোগ করা হয় নাই।
সোনালী ঝর্ণা থেকে রবিন যখন আলোর সংকেত দিচ্ছে ঠিক তক্ষুণি কলিং বেল বেজে উঠলো। বই বন্ধ করে চাবি হাতে নিচে গিয়ে দেখি আব্বু এসেছেন। ঘরে ঢুকে আব্বু হাতে নীল পলিথিন এর ব্যাগটা হাতে দিয়ে বললেন গামছাটা নিয়ে আসো তো বাপ। ব্যাগের বাইরে থেকেই বেশ বোঝা যাচ্ছে ভেতরে কমলা। আব্বুর হাতেও আর কিছু নাই। আব্বু কি ভুলে গেছেন?
দেশ থেকে ফেরত আসার একদিন পরেই মাঝরাতে বরের সাথে ঝগড়া হয়ে গেলো। ভুক্তভোগী মাত্রই জিজ্ঞাসা করবেন না কেন। ১৮-১৯ দিন বাবা-মা আত্নীয়স্বজনের সামনে আদর্শ দম্পতির মূর্ত প্রতীক হিসেবে অভিনয় করার পর এইটা অপ্রতিরোধ্য কন্সিকোয়েন্স। এতো দীর্ঘ সময় ঝগড়া না করে থাকা দাম্পত্যজীবনের জন্য খুবই অস্বাস্থ্যকর। আসল প্রশ্ন হল মাঝরাতে কেন?