অতি ভদ্র আর আত্মকেন্দ্রিক হিসেবে আমাদের চিকিৎসক সম্প্রদায়ের সুনাম গগনচুম্বী !
আমার জন্ম হয়েছে এক হিন্দু পরিবারে অথবা বৌদ্ধ অথবা খ্রিষ্টান অথবা কোনও এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে । এটা কি আমার কোনও অপরাধ ? হয়তোবা আমি কখনো মসজিদের পথ মাড়াইনি , গির্জার ঘণ্টা ধ্বনি আমাকে কখনো বিচলিত করেনি ,মন্দিরে কোনও প্রতিমার সামনে হাত জুড় করে দাড়াইনি কোন দিন । তাই বলে কি আমি এই ধর্মীয় উপাসনালয়গুলকে সম্মানের চোখে দেখব না । হয়তোবা আমি কোনও ধর্মেই বিশ্বাসী নই । অথবা ধর্মভীরু । তাতে কী ?
গাছে যে অনায়াসে উঠতে পারে তার জন্য বাসের ছাদে উঠা একেবারে নস্যি । তাইতো চ্যাংড়া ছেলেটাকে আছড়ে পাছড়ে উঠতে দেখে মজিদ মিয়া না হেসে আর পারল না । ছেলেটা অবশ্য তার হাসি দেখতে পায়নি । দেখতে পেলে মজিদ মিয়ার পাশে সে বসত না । খুব সহজ হিসেব এটা । মজিদ মিয়া ছেলেটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে । গায়ে লাল রংয়ের হাফ শার্ট আর চাপা প্যান্ট। চেহারাটা ..... এবার তার দেখার মাঝে ছন্দপতন হলো । হঠাৎ শুনতে পেল ....''আমি হলাম রোমিও,লেডি কিলার রোমিও....''। বুক পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করল ছেলেটা । তারপর গদগদ গলায় কথা বলতে শুরু করল । মজিদ মিয়ারও খুব শখ একটা মোবাইল ফোন কেনার । ছেলেমেয়ে আর বউটার সাথে মাঝেমধ্যে একটু আধটু কথা বলতে পারবে । মেয়ে দুটো অবশ্য খুব বকবক করতে পারে । কিন্তু তার বউ কথাবার্তা বলে একবারে কম । দোকান থেকে যখন সে ফোন করে ওপাশ থেকে বউ শুধু 'হ্যালু' বলে চুপ করে থাকে । তবুও ভালো লাগে মজিদ মিয়ার । পেশায় সে রিক্সাচালক । আয় একবারে খারাপ না । তবে মাঝেমাঝেই পেটের পীড়ায় ঘরে শুয়ে থাকতে হয় । তা না হলে সংসার তার খারাপ চলতো না ।
গায়ের রং নিয়ে তীব্র মাথাব্যথা না থাকলেও ইদানিং বিভিন্ন কারণে কেমন জানি একটা চিনচিনে অনুভুতি মনের ভিতর উঁকিঝুকি দিয়ে যাচ্ছে । এই চিনচিনে অনিুভুতিটাই হঠাৎ সেদিন কিছুটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে কাজের মেয়েটার কথায় । বেশ কয়েক বছর ধরেই মেয়েটা আমাদের এখানে আছে তবে তার কোনো কিছুর জন্য আবদার খুব একটা নেই । দিন কয়েক আগে টিভি দেখছিলাম । হঠাৎ একটা বিজ্ঞাপন দেখে আমাকে বলল, আমার না খুব শখ এই জিনিসটা কেনার । আমি তার দিকে তাকালাম সে তা ভ্রুক্ষেপ করল না । কারণ গভীর মনোযোগের সাথে দৃষ্টি তার টিভির পর্দায় নিবদ্ধ ।
‘সুবেহ্ সাদিক’,শব্দ দুটির জোর এত বেশী যে সমস্ত অশুভ শক্তি পরাভূত এবং পরাজিত হয় তার কাছে । আর ঊষার পূর্বাভাস মানেই সমস্ত অন্ধকার দাপিয়ে আলোর জগতের আমন্ত্রণ । তবে সবার কাছে ঊষার পূর্বাভাস হয়তো সবসময় আনন্দবার্তা বয়ে নিয়ে আসে না । বিশেষ করে নাইট ডিউটিরত কোন চিকিৎসকের কাছে আর সেটা যদি হয় এডমিশন নাইট তাও আবার নিউনেটের মতো জায়গায় ।
আবির বলল,আপনারা যান,আমি এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাব,ওর বাসা কাছেই ।
দাঁত ব্রাশ শেষ করেও বাথরুমের আয়নার সামনে বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল আবির। তারপর পুরনো অভ্যাসমতো মনে মনে বলল,‘শুভ জন্মদিন।’ এই অভ্যাসটা তার সেই ছোট্টবেলার যখন সে ক্লাস ওয়ান কিংবা টু’তে পড়ে তখন থেকেই। তখন একদিন বাবা বলেছিলেন,‘বুঝলি আবির,নিজের জন্মদিনে সবার আগে নিজেকে উইশ করার মজাই আলাদা।’ ব্যাপারটা আবির তখন বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারে এবং বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে । কারণ তার জন্মদিনটা শুধু একজন মানুষই এখন মনে রাখে আর তিনি হচ্ছেন মা। আর বাবা নামীদামী ব্যবসায়ী হওয়ার চাপে এইসব ছোটখাটো বিষয়গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। আর ঝেড়ে না ফেললেও একদিন ঠিকই বড় বড় বিষয়গুলোর আড়ালে এইসব ছোটখাট বিষয়গুলো হয়তো ঢাকা পড়ে যেত !
২০০৮ সালের কথা আমি তখন মেডিকেল কলেজে চতুর্থ বর্ষে পড়ি। আমার এক সহপাঠী বন্ধু আমাকে বলেছিল,কি বিয়ে টিয়ে বসবি না ?
আমি তার দিকে প্রশ্নপূর্ন দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বলল,বয়স তো আর কম হয়নি ?
আমি বললাম,তোর প্রথম প্রশ্নটাইতো ঠিক মতো বুঝতে পারিনি আবার দ্বিতীয় প্রশ্ন করছিস কেন ?
সে বলল, বুঝতে পারছিস না কেন ? আমি কি হিব্র“ ভাষায় কথা বলছি ?
তন্বী চা বানাবে আর জাহিদ ওর পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবে।তন্বী তাকে সরতে বললেও সে ওখান থেকে একচুলও সরবে না।এটা ওদের নৈমিত্তিক রুটিন। শুধু দুজনের জায়গাটার পরিবর্তন হয়েছে।প্রথম দিকে জাহিদ চুলার পাশে থাকত আর তন্বী একটু দূরে দাঁড়িয়ে তার রন্ধন শৈলী দেখত। আর এখন তার উল্টো ।
তন্বী আবার বলল,কিভাবে ?
জাহিদ অফিসে চলে যাবার পর তন্নী রাদিফ কে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো । বাইরে বের হলেই রাদিফের চোখেমুখে একটা খুশিখুশি ভাব লেগেই থাকে । আজও তার ব্যতিক্রম হলো না ।মুখে হাসি থাকলেও সে কিন্তু বেশ শক্ত হাতে তন্নীর শাড়ির আঁচলটা ধরে রেখেছে ।ছোট খালার বাসা বেশি একটা দূরে না ।তাইতো একটা রিক্সা নিল তন্নী ।আর অল্পকিছুক্ষণ পর সেখানে পৌছেও গেল ।তবে এতো তাড়াতাড়ি তাদের রিক্সা ভ্রমন শেষ হওয়াতে রাদিফকে বেশ বিরক্তই দেখাল ।