কবিরাজ কাহিনি-১
শুয়ে পড়েছি যে যার বিছানায়। কিন্তু লাইট নিভাইনি তখনো। সাম্যের মাথায় চিন্তার ঝড় তখনো বয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারছি। আমার মাথাও থেমে নেই।
'এই আসিফ ওঠ...ওঠ! কটা বাজে দেখেছিস?'
ধুড়মুড় করে উঠে বসলাম। সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। সাম্যের ডাকে ভেঙে গেল সেটা। কোথায় আছি প্রথমে মাথায় ঢুকল না। একে একে সব মনে পড়ল। আমরা এখন মেহরেপুরে কাটাখালি গ্রামে। আসিফের ছোটমামার বন্ধু ডা. একরামূল হকের বাড়ি। দরবেশপুর এখান থেকে মাইল তিনেক দূরে।
ঝিম ধরে হয়ে বসে আছে এক সময়ের মুক্তিযোদ্ধা খালেক। নির্মম পৃথিবীর রূঢ় বাস্তবতা তার পিঠে 'এক সময়ের মুক্তিযোদ্ধা' খেতাবটা সেঁটে দিয়েছে।
বসে আছে, কারণ তার কাজ নেই। কাজ নেই কারণ, কাজ করতে ইচ্ছে করে না। শরীর দুর্বল। শরীর দুর্বল কারণ, ভাত পায় না নিয়মিত। গাঁজার নেশাও আছে। ভাত পায় না তো গাঁজা পায় কোথায়? সেটাই তো কথা। সেটাই আমরা জানতে চাই।
৯ এপ্রিল
আজ আমি উথলীর নিজ বাড়িতে বসে ডায়েরি লিখছি। গত দু'দিন যে ঝড় আমার ওপর দিয়ে গেছে- বেঁচে ফিরতে পেরেছি এটাই আমার জন্য বড় পাওয়া।
হাঁটছি তো হাঁটছিই। ঘোলা পানির উৎসটা আর পেলাম না। জায়গাটা ভুতুড়ে রকমের নীরব। এমনিতে সুন্দরবন এলাকা বলে জনবসতি কম, তার ওপর আতিকায় ব্যাঙের মতো ভয়ংকর দর্শন প্রাণীটার ভয়ে কেউ একা একা বাইরে বেরোতে সাহস করছে না। তাই বলে ভর দুপুরে আশে পাশে কোনো বন্যপ্রাণী কিংবা পাখ-পাখালীর দেখা পাওয়া যাবে না- এ কেমন কথা!
৭ এপ্রিল সকাল ছটা
এখন আমি সাতক্ষীরার কৈখালী গ্রামে আফজালের বাড়িতে বসে ডায়েরি লিখছি। এখানে এসেছি গতকাল বিকেলে।
কাল সকালে ডায়েরি লেখা শেষ করে উঠতে যাচ্ছি, এমন সময় জগমোহন এসে জানাল, কে একজন আমার সাথে দেখা করতে চায়।
২ এপ্রিল
১ এপ্রিল রাতটা ছিল আমার জীবনের সফলতম রাত। এখনো আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করছে; বয়সের জন্য পারছি না। কাকতালীয়ভাবে ঘটে যাওয়া একটা রহস্যময় ঘটনার জের ধরেই রহস্যময় পাণ্ডুলিপিটার পাঠোদ্ধার করে ফেলেছি।
কম্পিটারের সামনে বসে একটা রিপোর্ট সম্পাদনা করছি, এমন সময় আমার মুঠোফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রীনে চোখ রেখে দেখি, বন্ধু তারেকের কল-
'হ্যালো তারেক কেমন আছিস?'
'ভালো, তুই কেমন আছিস?'
'ভালো, তারপর...অনেক দিন পর হঠাৎ মনে পড়ল...'
'হ্যাঁ, একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখাব তোকে। যদি সময় দিতে পারিস বিকেলে তোর অফিসে চলে আসি?'
'অবশ্যই, অবশ্যই। পাঁচটা থেকে ন’টা পর্যন্ত অফিসেই আছি। তুই যেকোন সময় চলে আয়।'
হঠাৎ করেই আমাদের লাল কুররটা বদহজমে মরে গেল। কুকুরটা সবার এতো প্রিয় ছিল সিদ্ধান্ত হলো- আবার কুকুর পুষলে সেটা লাল রংয়েরই হবে। তো আমি আর আমার ছোট ছোট সব চাচতো ভাইয়েরা শীতকালের অপেক্ষায় রইলামÑ- শীতকালে নেড়ি কুকুরগুলো বচ্চা দেয় কিনা।
'হ্যালো, শফিক!' মোবাইলের অন্যপ্রান্তে রাণুর উৎকণ্ঠিত কণ্ঠস্বর।
বিচলিত শফিক। 'কী হলো রাণু? কোনো সমস্যা?'
'নবীনকে...' কথা শেষ করতে পারে না রাণু। শফিক ওর দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ অনুভব করে।
'কী হলো রাণু? 'নবীনকে' কী? কী হয়েছে নবীনের?' উত্তেজনা ভর করে শফিকের কণ্ঠেও।
উত্তর পায় না শফিক। রাণু ফোঁপাতে শুরু করেছে। শফিক বোঝে একমাত্র সন্তান নীবনের বড় কোনো অঘটন হয়েছে।