বুয়েটের পাঁচ বছর মোটামুটি ঘোলাটে একটা সময়। কখন কী করেছি তার প্রায় কিছুই মনে নাই। তবে ফোর্থ ইয়ারে এসে মনে হয় আমাদের কম্পিউটার গ্রাফিক্স কোর্স নিতে হলো। সেইখানে গ্রুপ প্রজেক্ট দেয়া হলো আমাদের ক্লাসরুমকে ভেন্যু হিসাবে রেখে কলম খেলার একটা গেইম বানানো। সারভাইভাল টেকনিক হিসাবে আমি বরাবরই ভালো কাজ পারে এমন ছেলেপুলেদের গ্রুপে জুটে যেতাম। এবারো বাপ্পি আর অভির সাথে গ্রুপ করে ফেললাম।
আমি ততদিনে দুনিয়াবি সকল বিষয়ে নির্বাণ লাভ করে ফেলেছি। গ্রেড, প্রজেক্ট কমপ্লিশন, ভালো প্রজেক্ট করে প্রচুর "বস!" শোনার লোভ (লাইকপূর্ব যুগে এটা একটা বড় কারেন্সি ছিলো) ইত্যাদি কোন বিষয়েই বিন্দুমাত্র আগ্রহ না দেখিয়ে গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। আমাকে দিয়ে কিছু হবে না এই উপলব্ধি আর সাথে কম্পিউটার গ্রাফিক্স দিয়ে ম্যাজিক ঘটানোর উৎসাহে দুই গ্রুপমেটই আমাকে একদিন বললো, "তোর কিছু করা লাগবে না, আমরা দুই জন মিলে পুরা প্রজেক্ট নামায় দিবো।" ফেরেশতার মত দুই গ্রুপমেটের কথায় আমি একবারে আপ্লুত হয়ে রুমে ফিরে এসে ল্যান থেকে পাওয়া বাংলা নাটক দেখা শুরু করলাম।
প্রোলগ
শেষ বিকেলের সূর্য দিগন্তের দিকে ঝাঁপ দিচ্ছে মাত্র। ঝাঁকের সামনের পাখিটা বাতাসের ঝাপটায় কিছুটা কাবু হয়ে আসে, তাকে স্বস্তি দিতে পিছন থেকে এগিয়ে আসে অন্য একটা পাখি। জায়গাবদল সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই উত্তরের আকাশ থেকে ভেসে আসে এক পশলা আগুনের ঝড়। ভি-শেইপের ঝাঁকটা থেকে টুপটুপ করে ঝলসানো পাখি পড়তে থাকে নীচে। মাটি স্পর্শ করার আগেই তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য এগিয়ে আসে একটা বিশাল জিভ।
ড্রগনের পায়ের দুইটা বিশাল আঁশের খাঁজে হাত রেখে কোনমতে ঝুলে আছে খালিসি, পাখি পুড়ানো আগুন পুরোটাই বয়ে যায় তার উপর দিয়ে। ড্রাগনব্লাড বলে তার শরীর অক্ষত থেকে গেলেও সোনালি চুল আর ভ্রু কিছুটা কালচে হয়ে আসে। ক্লান্ত, ক্ষুব্ধ খালেসি অনুনয়ের চোখে উপরের দিকে তাকান, তার দৃষ্টি মিলে ড্রগনের পিঠে বসা হাইস্প্যারোর চোখে। ড্রাগনের আগুনে পুড়ে খালেসির পোশাকের কিছুটা পুড়ে গেছে, আর তা দেখে চমকে উঠে "শেইম, শেইম" বিড়বিড় করতে করতে সুদূর দক্ষিণে চোখ সরিয়ে নেয় হাই স্প্যারো।
অযুত-নিযুত গ্যালাক্সি পেরিয়ে একাকী এক সৃষ্টিস্তম্ভ (Pillar of Creation)। তার গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা তারারা নিমেষেই বাষ্পীভূত হয়ে অস্তিত্বহীনতায় বিলিয়ে যায়। কোটি কোটি বছর পেরিয়ে গেলে এক দিন কার্যত বন্ধ্যা এই সৃষ্টিস্তম্ভের গর্ভের অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় একটি তারা।
ভুসুকপাদের লজ্জা
চর্যাপদের কবি ভুসুকপাদ। এখনো যেমন কেউ কবিতা-টবিতা তেমন একটা কিনে পড়ে না, বারোশো বছর আগেও কেউ কিনে পড়তো না। পেটের দায়ে তাই ভুসুকপাদকে পাড়ি দিতে হয় দূর-দূরান্তে, পিছনে রেখে যেতে হয় বউকে। ফিরে এসে ভুসুকপাদ দেখতে পান তাঁর বউ আর তাঁর নেই, অবস্থাসম্পন্ন কোন চণ্ডালের হাত ধরে সে চলে গেছে। অনেক লজ্জা আর খেদ নিয়ে ভুসুক লিখেন,
আজি ভুসুক বঙ্গালী ভইলি
নিঅ ঘরিণী চণ্ডালে লেলি
২০১৫-২০১৬
০
বেদ্বীনি রিংটোনের আওয়াজে নীরবতা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায় কোহকাফ নগরীর। খেদমতরত পোষা জ্বিনটা ইনকামিং টেক্সট ভয়েসে কনভার্ট করে শোনায়, “আপনার একাউন্টে একুশ টাকা জমা হয়েছে”। নুরানী হাসিতে ভরে যায় শাফিউর রহমান ফারাবীর মুখটা।
ইদানীং "চাপাতি-খারাবি ইউনিট (চা-খাই)" এর ডিরেক্টর মাসুদ সাহেবকে বেশ তটস্থ থাকতে হচ্ছে, সবই অবশ্য মিডিয়া আর ব্লগারদের জন্য। তার মুখটা তিতা হয়ে যায়, দেশে গুলিতে মানুষ মরে, টেটা বর্শাতে মানুষ মরে, এমনকি রিকশা চাপা পড়ে মানুষ মরে। কই, সেইগুলা নিয়েতো জঙ্গিদের কাজ বলে কান্নাকাটি শুরু হয় না! যত দোষ চাপাতির! রাগ চেপে গণিতে চৌকস এনালিস্ট কুদ্দুসকে ডেকে সবগুলা খুনের মাঝের যোগসূত্র বের করার দায়িত্ব দেন তিনি।
সুপার ফ্রাইডে
নানাবিধ কারণে ব্ল্যাকসবার্গ থেকে সাময়িক পালানো জরুরী হয়ে পড়েছিলো, মাস দুয়েক আগে পাওয়া একটা ইন্টার্নশিপের অফার তার একটা চলনসই ব্যবস্থাও করে দেয়। এলিয়েন হয়ে অ্যামেরিকাতে ক্যাম্পাসের বাইরে কোন কাজ করতে যাওয়ার নানা আচার তন্ত্রসাধনার প্রস্তুতির চেয়ে অনেক জটিল আর সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। জব পারমিট পাওয়ার জন্য প্ল্যান অফ স্টাডি জমা দিতে হয়, তার জন্য বাচ্চা অবস্থায়ই পিএইচডির কমিটি তৈরি করে ফেলতে হয়। তার জন্য নানা প্রফেসরকে ইমেইল করে কি সামনাসামনি দেখা করে পটাতে হয়, তার জন্য রিসার্চ প্ল্যানের কল্পবিজ্ঞান লিখতে হয়। দিন দশেক সময় নিয়ে সব কিছু শুরু করে গ্র্যাজুয়েট স্কুলে সব কাগজপত্র জমা দিই মাত্র এক সপ্তাহ আগে। কোন কিছুই দ্রুত চলতে চায় না, খোঁচা খোঁচা দাড়ি মুখে ভয়ানক চেহারা নিয়ে সম্ভাব্য মধুরতম হাসি দিয়ে গ্র্যাজুয়েট স্কুলের নানা লোকজনকে পটানোর চেষ্টা করি। তেমন একটা কাজ হয়না এতে।
বেড়ে ওঠার গল্প
প্রচুর গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে তাকে। বিদেশি মুরগীর শরীর থেকে একটা রান আলাদা করতে গিয়ে যখন তিন-তিনটা কোপ দিতে হয়, তখন নিজের পক্ষে বলার মত তার কিছু থাকেও না তেমন। ব্যবহারে সব কিছুরই ধার বাড়ে। প্রথম প্রথম নাস্তিক আর ব্লগার কোপাতে কয়েকটা কোপ আর মিনিট দশেক সময় লেগে যেতো। তারপর ব্যবহারে শৃঙ্খলা আসে, সময় নেমে আসে মিনিট দুয়েকে। নাস্তিক কোপানোর কাজ সহজ হয়ে আসলে তার ধার পরীক্ষা হয় শিল্পী-অধ্যাপক কোপাতে। সেক্যুলার বিশ্বে তার আধিপত্য নিয়ে প্রশ্নের অবসান হলে এবার সে নামে মালাউন কোপাতে। কাজটার সহজতা দেখে সে নিজেই চমকে উঠে। এক ফাঁকে তার পরবর্তী কাজের লিস্টটা সে দেখে নেয়, সমকামী, কাদিয়ানী, আহমেদীয়া, সুন্নী মহিলা...
প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে অ্যামেরিকার নানা ল্যান্ডমার্ক বিজয়ের অভ্যাস আমার অনেক পুরোনো। তবে প্রচারবিমুখ বলে সেই বিজয়গুলার কথা কোথাও তেমন একটা বলা হয় না। সেই কবে অনেক বিনয়ের সাথে স্যান মিগ্যাল বিজয়ের কথা লিখেছিলাম, সেই বিজয় এতটাই কনভিন্সিং ছিলো যে সেটা নিয়ে কেউ কোথাও প্রশ্ন তুলেনি। সম্প্রতি অ্যামেরিকার অন্যতম বিখ্যাত দুইটা শহর ব্ল্যাকসবার্গ আর ক্রিশ্চিয়ানবার্গকে সংযোগকারী হাকলবেরি ট্রেইল বিজয়ের পর মনে হলো এর খুঁটিনাটি শেয়ার করে পুরো বাংলাদেশকে গর্ব করার একটা উপলক্ষ দেই।
খাল গিয়াকে বিয়ে করে খুশিতে আটখানা খালিসি। এসোসে এত বড় বীর আর একটাও নেই। দশাসই সব ছাগলের পিঠে চড়ে একের পর এক গ্রাসল্যান্ড জয় করে গিয়া নিজেকে খালদের খাল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার নতুন এলাকা জয় করার উপায় এত অনায়াস ছিলো যে স্বয়ং আলেকজান্ডার লজ্জা পেয়ে যেতেন। গিয়া নতুন এলাকার সর্বোচ্চ কোন ঢিবিতে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিবেন, "আজকে থেকে এই এলাকার বাপ মা আমি", আর সাথে সাথে সবাই দল বেঁধে তার অধিকার মেনে নিত। খালিসির খুশিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে তার বিয়েতে তিন তিনটা ড্রাগনের ডিম উপহার দেন ফালু মর্মন্ট।