ফিসফিসিয়ে শীত এসেছিল, থেকেও গেল বেশ কিছুদিন। হিম কনকনে উত্তুরে হাওয়ায় কাঁপিয়ে- ঝাঁপিয়ে দিচ্ছিল, মাঝে মধ্যেই অবশ্য চলে যাচ্ছিল অন্য কোনোদিকে, অন্য কোথাও, কিন্তু আবার ফিরেও আসছিল। এবার যেন চলেই গেল দুম করে। মাঘের সবে চব্বিশ। বাঘ পালাবে কেন, শীতই পালিয়ে গেল।
-৪-
আমি এরকম কিছুই পাইনি, কমল পেয়েছে কড়ি,
শিশির পেয়েছে শঙ্খ, আর নীরা যা চেয়েছে তা-ই।
দেখে দেখে অবাক হয়েছি আমি,
এ যেন সমুদ্র নয়, স্রেফ কোনো পোষা হাতী,
কিংবা কোনো আলাদীন সার্কাসের বাঘ।
না কড়ি, না শঙ্খ, না শামুক,
আমার দু চোখে শুধু শস্যমগ্ন সমুদ্রের জল।
দ্যাখো- দ্যাখো কী সুন্দর অস্ত- বলতেই
পশ্চিমের সমুদ্রের ক্ষুধা গিলে খেলো পূর্বের সূর্যকে।
অমিত, শিশির, নীরা, আবছার, শাজাহান,
বন্দী হলো ...
-৩-
চাকমার পাহাড়ি বস্তি, বুদ্ধমন্দিরের চূড়া ছুঁয়ে
ডাকহরকরা চাঁদ মেঘের পল্লীর ঘরে ঘরে
শুভেচ্ছা জানাতে যায়, কেঁদে ফেরে ঘন্টার রোদন
চারদিকে। বাঁশের ঘরে ফালা ফালা দোচোয়ানি চাঁদ
পূর্ণিমার বৌদ্ধ চাঁদ, চাকমার মুখশ্রীমাখা চাঁদ!
নতুন নির্মিত বাড়ি সমুদ্রের জলে ঝুঁকে আছে।
প্রতিষ্ঠাবেষ্টিত ঝাউ, কাজুবাদামের গাছ, বালু
গোটাদিন তেতেপুড়ে, শ্রীতলে নিষ্ক্রান্ত হবে বলে
বাতাসের ভিক্ষাপ্রা ...
-২-
এখানে দাঁড়াও এসে চুপচাপ,
কান পাতো হাওয়ার গভীরে--
প্রাণ ভরে শোনো রুদ্র সমুদ্রের গান।
শ্যামের মুরলী আজি
কী লক্ষ্যে উঠিছে বাজি রাধার বিরহে,
কল্লোলিত সমুদ্র সমান।
এখানে দাঁড়াও এসে চুপচাপ,
বসো সমুদ্রবিরহী ভূমিতলে,
তারপর নেমে যাও, ধীরে ধীরে
নিজেকে নিক্ষেপ করো জলে।
ভেবো না আমার কথা,
সংসার- সমুদ্র থাক দূরে।
স্বার্থ-সঙ্কুচিত বন্দীজীবনের
প্রাত্যহি ...
এ যেন ঠিক কোনো নির্দিষ্ট সৈকত নয়, বালি-ফেনায় মাখা গর্জনের নির্জনতায় এক ফালি সময়। তা লেখাও হয়েছিল সে সমুদ্রতটের কিশোরীবেলায়, আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে, ফলে এখনকার সঙ্গে হয়ত কোন মিলই নেই সেই অর্জনটুকু ছাড়া। এই সমুদ্র গায়ে মেখে জলপরী হয়ে যাই আমি, এই প্রথমবার৷
---------
হাওয়ায় উড়ুক চুল
জলোচ্ছাসে দেহের বল্কল
হোক এলোমেলো।
অন্তহীন অপেক্ষার শেষে
না হয় সমুদ্র আজ
...
ঋতুবদলের সাথে এখন আর বদলায় না জলবায়ু। আশ্বিনে চৈত্রের গরমে পুড়ছে আমার ঘরের ছাদ, দেওয়াল আর আমি। বাইরে থই থই রোদ্দুর, নিস্তরঙ্গ দুপুর। কাক-পক্ষীও ডাকে না কোথাও। ফ্লাইওভারের মাঝখানে শুধু ক্রমশ উচ্চতায় বাড়তে বাড়তে অতিকায় এক দানবের চেহারা নেওয়া বাড়িটায় লোহা-লক্কড়ের ঠুক-ঠাক, যন্ত্রের ঘরর ঘরর ঘরর ঘরর শব্দ ভেঙে দিতে থাকে এই নৈঃশব্দকে। এই ক’দিন আগেও বারোমাস এখানে পাখিদের ডাক, তাদের গা ...
গোটা মাস একদিনের জন্যেও কেনাকাটায় না গিয়ে শেষ মুহুর্তে সারাদিন বাজার কলকাতায়। কলিন লেনের শামীম ভাইয়ের দোকানের মাংস, নিউ মার্কেটের কাশ্মীরি হোসেন ভাইয়ের দোকানের জাফরান আর আরো আনুষাঙ্গিক টুকটাক এটা সেটা। প্রচন্ড ভীড়ে ঠেলে এই দোকান ওই দোকান ঘুরে ঘুরে বাজার। সন্ধেবেলায় বাড়ি ফেরার পথে একে তাকে ফোন, চাঁদ উঠল কী! এপাতায় ওপাতায় খোঁজ। জানা গেল, মসজিদে তারাবীর নামাজ চলছে। তার মানে একট ...
সামনে আদিগন্ত সমুদ্র। বঙ্গপোসাগর। অবিশ্রাম ঢেউ এসে আছড়ে ভাঙছে বোল্ডারে, পান্থবিলাসের নিজস্ব বালুকাবেলায় আর বনবিভাগের এই বাংলোটির বীচের উপর দাঁড়িয়ে থাকা লাল, হলুদ, সাদা রং করা কাঠের রেলিঙে ঘেরা ছোট্ট কাঠের ডেকের তলায়। ঢেউ ভাঙে এক পায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ঝাউগাছগুলোর গোড়ায়। যদিও আকাশের রং ধূসর, কুয়াশা আর মে ...
মাঝে মাঝেই ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলবার জন্যে প্রাণ যখন আই-ঢাঁই কত্তে শুরু করে আমরা তখন বেরিয়ে পড়ি। এথায়-সেথায়, হেথায় বা হোথায়। এমনি এক দুপুরে ঠান্ডা মেশিনের হাওয়ায় যখন আমার খুব ঠান্ডা লাগতে থাকে আর পাখার বাতাসের অল্প গরম হাওয়ায় তার খুব গরম লাগে তখন আমরা বেরিয়ে পড়ি। কোথায় যাই? দিদিমনির কল্যাণে শহর স্তব্ধ। গাড়িও নাই ঘোড়া তো নাই ই। গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ ডাকছে ব ...
একদিন একরাত টানা ঘুমিয়ে আর তারপর গত দিনটিও আধো ঘুম আর জাগরণের মধ্যে কাটিয়ে গতরাতটি কাটল প্রায় নির্ঘুম। বহু বহুদিন নাকি বহু বহু কাল, কতদিন, কতকাল পর এমন বেভুল ঘুম সে আমার মনেও নেই আর তারপর এই চেনা জেগে থাকা। এই জেগে থাকাটাই নিত্যকার রুটিন কাজেই এ নিয়ে চিন্তা নেই। আমি বরং ব্লগ লিখি..
দীপান্বিতার রাত, কালো রাত আলোয় আলোয় ঝকমক ঝকমক। নানারকমের বাজি ফাটছে মুহুর্মুহু, বাড়িগুলো সেজে আছে ...