হাতে আজো রক্ত লেগে আছে
এই হাতে, আঙুলের সমষ্টিতে
আমি তাকে শ্বাস রোধ করে মেরেছি যৌবনে
বেহালা বেচেছি - বোনের কলেজে ভর্তি
বউয়ের বালা বেচেছি - বাসা ভাড়া তিন মাস বাকি
থিয়েটার স্কুলে আর যাইনি - চাকরিটাই দরকারি ছিলো বেশি
এক মধ্যরাতে
চারফর্মার লিটল ম্যাগাজিনটাকেও
গলাটিপে হত্যা করলাম - ‘জলছবি’ তার নাম ছিলো
এসব মৃত্যুর মিছিলের ছায়ায় পেয়েছি পূনর্জন্ম এক
এ জীবন আসন পেতেছে সূর্যশিখরে
আমি হারানের সেই হারানো হাড়ের বাঁশি
যাকে হারিয়েও তুমি ফিরে পেয়েছিলে
পরিত্যাক্ত ঝোপের পাশে - সোনালি রোদ্দুরে
আমি সেই পলাশী-প্রান্তর, পাঠ্য বইয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায়
ছেঁড়া পৃষ্ঠায় যার মুখ চিনেছিলে
মাঠের ধূলোয় যাকে তুমি হারিয়েও
ফিরে পেয়েছিলে ফের, স্কুলের টয়লেটে
আমি জানি - তুমি ধ্যানমগ্ন অন্যমনস্ক মাছরাঙা হলেও
আমার প্রতিটি বর্ণের তীর তোমার হৃদপিন্ডের
প্রতিটি ধ্বণিকেই বিদ্ধ করছে
তখন গভীর রাত -
মহাসড়কের সাদা দাগ টানা কালো অন্ধকার পথ;
কুয়াশা কুন্ডলী পাকায়ে দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলে রেখেছে সারা উত্তর-বঙ্গে;
গাড়ি আর চলছে না।
আমরা কিছুটা পথ যাই, কিছুটা দাঁড়াই, চা-পানি খাই, সিগারেট ফুঁকি
আমরা ভাবতে থাকি, প্রকৃতির এ কী খেলা!
এত শীত, কুয়াশার এ্ত প্রতিরোধ কখনো দেখিনি!
সিগারেটের টুকরো পায়ের তলায় পিষতে পিষতে ভাবি -
বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে এবারের থিম,
সময় কখনো এমন অস্থির হয়ে ওঠে
বাতাসের শীষ বাজে
শীষের শব্দেরা ঘুরপাক খায়
দরজা কপাটে বারান্দায়
আমাদের পোড়াঘরে
ছাইকয়লার অন্ধকারে
সময় কখনো এমন মন্থর হয়ে ওঠে
স্তব্ধ পাতালের গহীন নৈশব্দে
থমকে দাঁড়ানো পদধ্বনি
ফিরে ফিরে পেছনে তাকানো
আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যুময় পথে
সকলের সাথে একা একা নিঃসঙ্গ যাত্রায়
মরুঝড় সময়ের আঙুল ধরে
হেঁটে যাই অসীমের অন্ধপথে!
স্বার্থের সমান পৃথিবীতে আর কিছু আছে?
বন্ধুর সংজ্ঞাতো সকলেই জানি
ঘুড়ির আকাশ কখনো অসীম নয়
বারবার বলা কথা তবুও বক্তব্য পাল্টায়
আড়ালে আবডালে
প্রাণ খুলে যে-কথা কোকিল বলে গেলো
কতজন কাক তার গূঢ়ার্থ বোঝে?
সৌজন্যবোধের শেকলে বাঁধা পড়ে থাকে ভদ্রসাধুজন
বাক্য-প্যাঁচ পিছলে বেরোয় বন্ধু-উকিলেরা
তোমার গলায় জড়ানো কী দারুণ ফাঁস!
তুমি বোঝো ব্যথা - দিকহারা সমস্ত কম্পাস।
বার্তা আসে
আসে সংকেত প্রবাহ
আমিও কুঠার হাতে
অরণ্যের গহীন ধাঁধায়
কথা ছিলো যাবো - যাইনি সেখানে
উড়ালের স্বপ্নে বিভোর বিস্তর ডানা
গুটিয়ে নিয়েছি দেহের ভেতর
পাখা ঝাপটানোর আকাশ থেকে
দিনান্তের অবশেষে...
তবুও তো পালকেরা উড়ে চলে
সূর্যের রশ্মি ঠোঁটে বয়ে
ঢলে পড়া কোন দিগন্তের খোঁজে
মেঘ..মেঘান্তরে..
স্বপ্ন-সে অদ্ভূত অক্লান্ত অসীম এক পাখি পৃথিবীর
নতুন চরের খোঁজে তবুও সে বসে থাকে
আকাশের কিনারে প্রতিদিন -
নতুন ভোরের খোঁজে, প্রতিরাতে, অন্ধকারে
এক. প্রশ্নবোধক
সব কিছু বলে দিতে হয়!
বোঝ না?
এত চিৎকার এত প্রতিধ্বনি
কিছু কি শোন না?
রাজনীতি শিখে গ্যাছো, তাই না?
বাতাস বলে, আমি বইতে চাই
পাল বলে, বইতে দেবোনা, এই ফুলে দাঁড়ালাম
এ হেন দ্বন্দ্বে মাঝি বড়ই আহ্লাদিত!
পৃষ্ঠা ওল্টাচ্ছে, বাতাস বদলানোর দিনের নিরিখে
টের পাই বদলাচ্ছে লোডশেডিংয়ের রাত
জোয়ার-ভাটার প্রহর গণনা, বীজ-বোনা তিথির তারিখ
কাপড় পাল্টাই, চিরুনীর ফলা চাষ করে নতুন ফ্যাশন
কাঁপে বটের শেকড় কনকনে শীতের কুয়াশা
দ্রুত ধূলি ঝড়ে চাপা পড়ে যাচ্ছে সব দিনলিপি
আমাদের দাঁড়ভাঙা নাওয়ের পরিণতি, এদিকে
পাড়ার শিশুরা বড় হচ্ছে লাল নীল বেলুনের দিনে
অলি গলি তোলপাড় করে বখাটে হাওয়া, লক্ষ করি