ছায়া-প্রিয় গাছটার নাম ভুলে গেছি
সেই বেনামী গাছটা ছায়া-সর্বস্বই বটে
না-আছে পাতার ছিরি
না-ভালো গায়ের ডাল-পালা, শাখা-কাণ্ড;
ওই এক ছায়া -
ওটুকুই আছে তার -
ডালে-আবডালে।
গাছটা এখন বিশ;
কাহারোল গ্রামে ছায়া-খোঁজা মানুষের হাত ধরে হাঁটে
মাঠ-মাঠান্তরে,,,
বাড়ি যাচ্ছি
বরিশালের বরগুনায়
অথবা বরগুনা নয়, নামহীন কোন দ্বীপে
কমা, দাড়িহীন এক জলজ পথের টানে
স্রোতে ভাসা কচুরিপানার মতো, ভেসে ভেসে
স্রোতই এখানে কান্ডারির ভূমিকায়
এমন কখনো নিয়ন্ত্রনহীন হয় মানুষ অথবা
হতে হয় তাকে বেলা-অবেলায়
বাড়ি যাচ্ছি
একটা লাশবহনকারী-এ্যাম্বুলেন্সে
এখন অনেক রাত
শেওলা-সবুজ-পথটা অসীম অসীম অসীম,,,
ভালো করে তাকালেই মনে হবে
দিঘীটার জলে জোছনার ফুল ফুটে আছে
তখন অনেক রাত, তখন জোছনা পরিপক্ব
তখন জোছনা হীরার কুচির মতো
কথার-খেই-হারিয়ে-ফেলা-কোন-বৃদ্ধের চোখের মতো জোছনা তখন...
অথবা-সে জোছনাই নয়,
নগ্ন কোন যুবতীর মৃত লাশ জোছনার মতো
দীঘিটার এপাড় ওপাড় জোছনার মতো
তখন অনেক রাত, তখন জোছনা পাগলপারা
অথবা আপনি জীবনের সব অভিজ্ঞতা হাতের মুঠিতে
নিয়ে সসংকোচে দাঁড়াতে পারেন দীঘিটার ঘাটে
ধরেন আমার বাড়ি নাই
অথবা বাড়িতে আমি নাই
তাতে কার কী যায় আসে?
তার মানে দায়-স্বীকার করাটা দরকার?
ধরেন পঁচিশে মার্চ রাতে যদি শেখ মুজিব বাড়িতে না থাকতো?
অথবা হেমলকের পেয়ালায় লাথি মেরে সক্রেটিস চলে যেত বাড়ি?
অথবা জন্ম-বাড়িটা রক্ষা করবে বলে যারা যুদ্ধে গেলো, আর বাড়ি ফিরলো না
কোনদিন
অথবা জন্ম-বাড়িটা রক্ষা করতে না পেরে যারা ওপাড় পালিয়ে বাঁচলো
আর ফিরতে পারলো না কোনদিন
- আমিও একটা নৌকা বানাইছি, কী দিয়া - কমু না
(নৌকার প্রসঙ্গ উঠতেই সুশীলরা নড়েচড়ে বসলেন
কথাবার্তা কোনদিক দিয়া কোনদিকে যায় বোঝা চাই
আজকাল টকশোগুলা সব লাইভ, কাট-ফাট বাদ
ঝলসানো আলো;
কী কইতে কী কইয়া পরে আদালত অবমাননার মামলায় পড়া যায়)
- হাজার বছর ধরে আমি খাল খুঁজিতেছি এই বাংলার প্রান্তরে
(খালের প্রসঙ্গ উঠতেই আবার উসখুস চারপাশে
নিরপেক্ষ থাকাটাই আজকাল জ্বালা, ব্যাবাক পক্ষেই কালি
তোমার কথাই ঠিক।
তুমি যা যা বলো;
আমি মাথা-ঘাড়-লেজ নাড়ি...ঠিক...ঠিক...
তুমি বললে - ওড়াও ঘুড়ি
আমি মাঞ্জা দেয়া সূতা আর লাটাই নিয়ে তৈরি ততক্ষনাত
ঘুড়িবাজ, মাঠ-ঘাট, গাছ-গাছালি, লাটাই-সূতা
সব্ই উড়লো
হালায় খালি ঘুড়িটাই উড়লো না...
তুমি বললে - বড়শি ফেলো
আকর্ষনীয় খাবার (টোপ) আর ছিপ নিয়ে আমি তৈরি নিমিষেই
মাছ ধরা নৌকা স্থির; বড়শি ফেল্লাম -
অনন্ত তারার মাঝে এখন তোমার মুখ স্থির
চোখের গভীরতর মৌনতায় পাথরের ঘুম
তাকাই আকাশ মুখে আচ্ছন্ন অতীত কাতরায়
অন্ধকার ছায়াপথে রজনীর শুকতারা নিঝঝুম
উন্মুখ বিষাদ স্মৃতি বিষের ফলার মতো বেঁধে
রণ-উত্তাল সংসার, কখোনো উচ্ছল চারপাশ
কী পেয়েছি কী পাইনি - সবকিছু যায় রসাতলে
মুখে গণিতশাস্ত্রের পাঠ, চোখ ভরা আদিম উল্লাস
অতীতের দাবদাহ আজ রক্তাক্ত মেঘের মতো
বজ্রের আঘাত হয়ে বুকের ওপর ধেয়ে আসে
আ ...
জেগেছে বাতাস তোলপাড় উত্তর জানালা
উঠেছে আকাশ ফুঁসে ঝরাপাতা-ঘূর্ণিমালা
ছুটে চলে ফেলে আসা পথের স্মৃতিতে, যেন
মাঠের সবুজ ওড়ে উদ্ভ্রান্ত মেঘ-ছায়া হয়ে
বুকের প্রান্তরে পাখিদের বর্ণিল পালক
অগণিত পাখনায় অকারণ উচ্ছ্বল উড়াল
নদীর ডিঙিরা মেতেছে মাছের উতসবে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে মাঝিদের গাঙচিল সুর
অসীমে হারাবো পথ, খেপেছে পাগলা নাও
বুক ভরা আকাশ আমার, গাঙচিল দুহাত বাড়াও
ফুঁসছে প্রেমের শিখা, কাশ ...
এই তবে সেই প্রেমের সোপান
এই তবে সেই গোলাপের স্তম্ভ
যেখানে দাঁড়িয়ে তুমি শুনেছিলে কোকিলের শীষ-বার্তা
মানবিক পতাকার ছায়াতলে যেদিন আমরা রচনা করেছিলাম সভ্যতা
এই তবে সেই যুদ্ধের প্রাঙ্গন
এই তবে সেই মৃত্যুফাঁদ
যেখানে বাড়িটা ফাঁকা মাঠ
পুকুরের জল শ্যাওলা-সবুজ
ঢেউয়ের বুক ফুঁড়ে মেছো সাপ তড়িত পালায়
ঘাটে মরা মাছরাঙাটার নীল পাখনায় শেষ সূর্যের আলো
এই তবে সেই গানের অন্তরা
এই তবে সেই ম ...
সেই কবিতাটি কি আর লেখা হবে না এই বাংলায়?
এখনো কি সময় হয়নি আমাদের -
আরেক বার পদ্মার গর্ভ-তলদেশ থেকে গর্জে ওঠার?
ভাত-ডাল-মাছের বুভুক্ষু বাঙালির কান্না গিলে খায় নদী ভাঙনের গ্রাস
অবলা নারীর তাতের শাড়ি প্যাঁচ খায় বাদাম গাছের ডালে
অসহ যাতনা সুখের আশ্রয় খুঁজে নেয় শ্রান্ত আকাশের গায়ে
কত কোটি বাঙালী পুরুষ কত কোটি নারী?
কোথায় কিভাবে তারা বেয়ে ওঠে সভ্যতার সিঁড়ি?
নাকি ধাবমান সভ্যতার চাকা ...