[justify]
[ডালাসের সচলাড্ডার উপর ভিত্তি করে একটি প্রায় সত্য রচনা...]
।।১।।
জীবনটা আসলে একটা শিক্ষাসফর। এই ব্যাপারটা যত বড় হচ্ছি ততই পরিষ্কার হচ্ছে। ছোটবেলাতে ক্লাসে শেখানোর জন্য স্যারেরা খুব মারধোর করতেন। এতে ভালো কাজ হতো। সমস্যা হয়েছে যে এরপর থেকে মারধোর ছাড়া আর কিছুই শিখতে পারি না। মারধোরের অভাবে বড় হয়ে আর নতুন কিছু শিখতে পারি নি, দিনে দিনে স্পঞ্জববের বন্ধু প্যাট্রিকের মতো হয়ে যাচ্ছি। বাচ্চা পালতে গিয়ে বুঝলাম যে শিক্ষাসফর থেকে মারধোরকে দূরে রাখতে হয়, যেটা আমাদের স্যারেরা জানতেন না। এটা বোঝার পর থেকে আমার প্রতিটি কাজকর্ম শিশুদের উপযোগী করে করতে হয়।
[justify]
।।১।।
ইচ্ছে ছিল সচলায়তনের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটা লেখা দিব। বেশ কিছু লেখা শুরুও করেছিলাম। আশা ছিল কোনো একটা লেখা জুলাই মাসের এক তারিখের আগেই শেষ করতে পারব। কিন্তু লেখালেখি যেমন অভ্যাসের ব্যাপার ঠিক তেমনি লেখালিখি না করাও একই রকম অভ্যাসের ব্যাপার। কয়েক সপ্তাহ না লিখলে মনে হয় – কি দরকার আর এতো ঝামেলার? আর আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, লিখতে বসলেই ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়। অন্য সময়ে কম্পিউটারের সামনে বসলে কোনো সমস্যা হয় না, শুধু সচলের জন্য লিখতে গেলেই এই সমস্যা। এই বিষয়ে কৈরি ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে মনে হয়।
[justify]
“আব্বু পেঙ্গুইনের টামির রং কি?”
আমি ঘুম জড়ানো গলায় উত্তর দেই - “পিংক”। এটা মেয়ের প্রিয় রং, পারলে দুনিয়া সে মুড়িয়ে দেয় এই রঙে। ছেলেদের রঙ হচ্ছে নীল আর মেয়েদের রঙ হচ্ছে গোলাপি, এটাই এই দেশে প্রচলিত ধারণা। সবাই মিলে এই গোলাপী রঙের স্তুপ ঢুকিয়ে দেয় মেয়ে বাচ্চাদের মাথার ভেতর। ছেলে আর মেয়ের বিভাজন মার্কিনিদের চেয়ে বেশি কারো পক্ষে করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না।
[justify]
বার্ধক্যের সাথে নিজের বয়সের যোগসূত্র আছে কোথাও। সেদিন এক আড্ডায় বলে বসলাম...আরে ঝন্টু ভাই, উনিতো ইয়াং লোক আমাদের কয়েক বছরের সিনিয়ার, বয়স মাত্র ৪৬। সোভিয়েত রাশিয়ার পলিটব্যুরোর তরুণ নেতাদের বয়সই হতো ষাট। সাতচল্লিশ বেশ তরুণই বলা চলে। বন্ধুরাও সবাই একমত হলো তাতে। আমাদের বয়স যতই বাড়ছে, তারুণ্যের সিলিং ততই বেড়ে যাচ্ছে। চল্লিশ পার হওয়ার পরে মনে হয় ষাট পর্যন্ত মানুষ ছোকরা থেকে যায়। আর ত্রিশ বছর বেচে থাকলে হয়ত আশিকেও যুবক যুবক লাগবে। মনে মনে কেউ নিজেকে বুড়ো ভাবে না বোধহয়।
[justify]
আমি বহুদিন ধরেই মনে মনে লিখি। সেই ছোটবেলা থেকেই। বহু বিষয়েই অনেক মানসিক রচনা লিখেছি, কিন্তু আলস্য কাটিয়ে খাতায় আর তোলা হয় নি সেগুলো। অত্যন্ত বাজে হাতের লেখার কারণে লিখতেও বিব্রতবোধ হত। আমার শৈশব এবং কৈশোরের সেই লেখাগুলোর কোন পাঠক নেই – আমার বিশেষ মনেও নেই ওদের কথা । মাঝে মাঝে যদি একটু- আধটু মনেও পড়ে, তবে ওগুলোকে গতজন্মের স্মৃতি বলে উড়িয়ে দেই। ব্লগ ব্যাপারটার কথা মানুষ তখন জানতো না, সচলের নির্মাতার হাফ প্যান্ট পরা বালক, অভ্রের জনক হয়তো হামাগুড়ি দিচ্ছে। এখন লিখতে হলে আর লেখক হতে হয় না, লেখা প্রকাশ করতে গেলে পত্রিকার দ্বারস্থ হতে হয় না - এমনই এক সুসময় চলছে। হাতের লেখা নিয়েও কারুর কোন মাথা ব্যথা নেই।
[justify]
বাথরুমকে যে বাংলায় প্রক্ষালনকক্ষ বলে সেটা আমি আমেরিকায় না আসলে জানতে পারতাম না। একটু চিন্তায় পড়ে গেলেন কি? দাঁড়ান খুলে বলি। সারাজীবন ধরে মানুষকে এয়ারপোর্টে বিদায় জানাতে এসেছি - লোকজন চোখ-টোখ মুছে ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পরে আমিও বাসে করে ফার্মগেটে ফিরে গেছি। এয়ারপোর্টের ভেতরে জীবনেও ঢুকতে হয় নি। প্লেন ছাড়াও ওতে আর কি কি আছে সেটা জানা ছিল না। প্রথমবার ঢোকা হলো আমেরিকাতে আসার উছিলায়। এতোদিন পর্যন্ত আমেরিকা গমন নাটকের অবসান হতো এয়ারপোর্টের সামনে থেকে - এই প্রথম নিজে নায়কের চরিত্র পাওয়াতে ভেতরের ব্যাপারগুলোর খুঁটিনাটি সব চোখে পড়ল।
[justify]
সে এক শহর আছে। মাঝরাতে সে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে - জিজ্ঞেস করে “আমার কথা মনে আছে তো"?
আমি ঘুম জড়ানো গলায় তাকে তাড়াতে চাই। সে ফিরে আসে বারবার, দুষ্টু হাসি মুখে ঝুলিয়ে বলে - "আমার কথা মনে আছে তো?"
মাঝে মাঝে সাতসকালে আমি প্রাত্যহিকের ব্যস্ততা সামলাতে সামলাতেই সে হঠাৎই সামনে সেই পুরানো বেশ নিয়ে এসে দাঁড়ায়। একগাল হেসে বলে - "চলে এলাম”।
[justify]
"হ্যাঁ দোস্ত, নামটা আরেকবার বল দেখি..." ওপার থেকে মাসুদের গলা শোনা যায়।
মাসুদ আমার বাল্যবন্ধু। ওকে আমরা বলি “অনলাইন মাসুদ”। আমেরিকাতে একটা কোম্পানিতে আইটির কাজ করে। সারাদিন ল্যাপটপ নিয়ে নেটে ঘোরাঘোরি। ফোন করলে জবাব পাওয়া যায় না, ওকে ধরতে হলে নাকি আইএম অথবা ই-মেইল করতে হবে। কম্পিউটারে আমার বড়ই অনীহা, তাই ই-মেইল করে বলেছিলাম ফোন ধরতে। সেই কারণেই ওর গলাটা শুনতে পাচ্ছি। একটা কাজেই ফোন করেছি।
[justify]
১.
সিদ্দিকা কবীর আমাদের পরিবারে অচেনা নন। আম্মা তাঁকে অনেকদিন ধরেই চিনেন। রন্ধনশিল্পী হিসাবে তাঁর সুনাম ততদিনে পরিচিত মানুষের বাইরেও ছড়িয়ে গেছে। ১৯৭৮ সালে তাই ওনার লেখা “রান্না খাদ্য পুষ্টি” বইটা বের হলে আম্মা সেটা কিনতে দেরি করেনি। যেসব বইয়ের প্রচ্ছদ দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি, সেগুলোর মধ্যে এই বইটার নাম সামনের দিকেই আছে। দুঃখের বিষয় আর পাঁচটা ছেলের মতো আমিও ওই বইটার ভেতরে বেশি উঁকি দেওয়ার তাড়না অনুভব করিনি। প্রতিদিন টেবিলে খাবার আসছে, আমরা প্রায়ই সেই খাবারের সমালোচনায় মুখর – এই রান্না কি মুখে দেওয়া যায়? ইত্যাদি নানান অভিযোগ ছাড়া রান্না, পুষ্টি আর খাদ্য পরিবেশনা - এই সবই বিরাট রহস্য রয়ে যায় আমার কাছে। সকালের দিকে একজন বাজার করছে, দশটা এগারোটার দিকে রান্না ঘর থেকে ছ্যাৎ-ছ্যাৎ শব্দ আর রেশমি ধোঁয়া – দুপুর টেবিলে খাবার, আমার কাছে এই ছিল রান্না স্বরূপ।
[justify]
কঠিন প্রশ্নঃ
পৃথিবীর বাকি আর সব কাজের মতই শিশুপালন দিনে দিনে কঠিন হতে থাকে। প্রথমে এতে থাকে কায়িক শ্রম আর নির্ঘুম রাত। যতই দিন গড়ায় ততই মনে হয় যে “শারীরিক শ্রম মানসিক শ্রম অপেক্ষা অনেক উত্তম”। ওদের প্রশ্নগুলো প্রথম প্রথম সহজ থাকলে দিনে দিনে ওগুলো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের ভাইভার মত কঠিন হতে থাকে। যারা নিয়ত শিশুপালন করেন তারা জানেন যে এই চাকরির প্রশ্নগুলো কঠিন আর উত্তরগুলো আরো অনেক কঠিন।