কবি তাকে ডেকেছিলো অতন্দ্রপ্রান্তরে
রতিদীর্ঘ রাতের রেশমী আবেশ ছিঁড়ে-
তাই সে বেরিয়ে এসেছিলো কৃষ্ণপক্ষ পথে।
ধারালো বাতাসের সাথে যুদ্ধ করতে করতে
সে এগিয়ে যাচ্ছিলো দেবদারু অরণ্যের দিকে।
কোথাও যুদ্ধ চলছিলো, শুভ ও অশুভের দ্বন্দ্ব-
আলো ও আঁধারের সংগ্রাম,
সমানে সমানে লড়াই, শেষহীন শক্তিপরীক্ষা।
সে ও লড়লো, ভুলে গেল কার পক্ষে লড়াই।
তারপরে সবকিছু ভুলে তার ভ্রমে চলে যাওয়া-
দূরে আরও ...
সোহিনীর মা-বাবা দুজনে ওকে পাহারা দিয়ে ইস্কুলে আনা নেওয়া করতেন পালা করে। সোহিনী নাকি প্রেমে পড়েছিল পাশের বয়েজ স্কুলের এক ক্লাস উপরের একজন ছেলের। আমাদের গ্রামাঞ্চলে কিশোরপ্রেম মানে বিকেলে একটু দেখা করা, গল্প করা, মাঝে মাঝে একসঙ্গে স্টেশনবাজারের দোকান থেকে ঘুগনি খাওয়া-এর বেশী কিছু না। তবু এই ব্যাপারটুকুও সোহিনী বাবা একেবারেই অ্যাপ্রুভ করেন নি। তাই এত বাধা-নিষেধ, মেয়েকে আটকান...
মায়ার কাছে যাবার জন্য তৈরী হয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। আমার ভাবনা বুঝতে পেরে স্বচ্ছ হয়ে যায় জানালা। বাইরে ঝকঝকে রোদ্দুরে হাসছে লাল পাতাওয়ালা গাছের বাগান। পৃথিবীর হেমন্তের কথা মনে পড়ে, যদিও এইসব গাছের পাতারা সবসময়েই লাল।
রাতে অজস্র তারাওয়ালা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রথম যেদিন আমাদের সূর্যকে দেখেছিলাম ক্ষুদ্র টিমটিমে একটি আলোকবিন্দুর মত, সেদিন কেমন একটা আশ্চর্য অনুভব হয়ে...
এখানে এসেছি মাসখানেক হলো। পার্থিব সময়ের মাসখানেক। এখানে মাস ব্যাপারটাই অর্থহীন, এ গ্রহের কোনো চাঁদ নেই। চাঁদের কমাবাড়া দেখে মাস গোণার ব্যাপারটাই বোঝানো যাবে না। এখানে দিন মাপার কৌশল যান্ত্রিক, নিখুঁত। অবশ্য পৃথিবীতেও আজকাল আর কে চাঁদ দেখে ঠিক করে দিনটা পূর্ণিমা না কৃষ্ণা প্রতিপদ না দ্বিতীয়া? বাচ্চা ছেলেপুলেরা তো অনেকে এই নামগুলো ও জানে না!
আমাকে থাকতে দিয়েছে এক আশ্চর্য ...
পকোড়ায় কামড় দিয়ে আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে জীশান বলছেন, " তখন আমি বছর বাইশ-তেইশের জোয়ান, সবে পাশ করে বেরিয়েছি, সামনে পৃথিবীটা পড়ে আছে যেন এক রহস্যময়ী রাজকুমারী, ধরা দিতে দিতেও দেয় না, জাগনডাঙা ভাঙনডাঙা পার করে জুড়নপুর পার করে কোথায় কোন্ রহস্যময় রাত্রিনগরীর দিকে টেনে নিয়ে যায়, পথের মাঝ থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় কোনো ঈশারা না রেখে। এবারে বার করো খুঁজে কতো খুঁজবে। জানি সে আছে কোথাও সেই রহস্য...
সন্ধ্যার আকাশ ভরে তারারা জেগে উঠছে। নির্জন দ্বীপের বাতিঘরে আলো জ্বলছে। আশমানি জলের ধারের পাথরে বসে আছে চুপ করে। সমুদ্রের ধারে কি প্রবল হাওয়া! ঐ যে দূরে জলদিগন্ত, পশ্চিমের সেই জলরেখার উপরে আকাশ, সেখানে আশ্চর্য রঙীন সূর্যাস্তের রেশ রয়ে গেছে এখনো।
দিনের আলো যতক্ষণ ছিলো আশমানি কথা বলেছে অনেক। ঝিনুক কুড়িয়ে কুড়িয়ে রেখেছে রুমালে জড়িয়ে। এখন সে চুপ, পাথরের উপরে বসে আছে একেবারে পাথর...
এইবারে মাইকেল অনেক সচ্ছন্দ৷ শীতশেষে নতুন বসন্ত এখন, চারিদিক অনেক বেশী ঝলমলে ও উজ্জ্বল৷ এপ্রিল-অর্থাৎ কিনা উন্মোচনের সময়৷ সমস্ত মাঠ ভরে গেছে ক্ষুদে ক্ষুদে ঘাসফুলে-সাদা, হলদে, বেগুনী, নীল, গোলাপী, আরো কত রকমের যে রঙ ওদের৷ হয়তো এই নতুন বসন্তের সানন্দ অনুভূতিই মাইকেলকে এবারে অনেক আশ্বস্ত ও সাহসী করে তুলেছে৷
ফুলেকিশলয়ে মঞ্জরিত উদ্যানভূমির মধ্যে মিশেল আর মাইকেল বসে কথা বলছে, ঝ...
চিলেকোঠা ঘরে একইরকম একটা নীল রঙের মোমবাতি জ্বলছিলো, শুধু জ্ জ্ জ্ জ্ জ্ শব্দ করে উড়ে বেড়ানো সেই পোকাটা নেই, এখন ঘোর শীত৷ গত গ্রীষ্মের শেষে প্রথম যখন এসেছিলো মিশেল, তখন অমন একটা পোকা উড়ে বেড়াচ্ছিলো মোমবাতির শিখাটা ঘিরে৷ তা ছাড়া অন্যসব একই আছে এই ঘরে-টেবিল, টেবিলের উপরে নানা আকৃতির রঙীন পাথর, মুদ্রা, পুরানো পুঁথি, হাড়, আরো কত চেনা অচেনা জিনিস এলোমেলোভাবে ছড়ানো৷
মিশেল খুব...
রিনরিন করে কানে বাজে করুণ একটা প্রশ্ন, "না গেলেই কি নয় ?" প্রশ্নটা কেউ উচ্চারণ করেনি, শুধু জোড়া জোড়া ভাষাময় চোখ নীরবে চেয়ে আছে, নিরুচ্চার প্রশ্নের ভার এত বেশী! ছটফট করে উঠি ভিতরে ভিতরে, মনে মনে উত্তর দিই, না গেলেই নয়। মন না চাইলেও যেতেই হয়। নিয়তি।
স্রোতের টানে ফেনিয়ে ওঠা জল নিয়ে ধলেশ্বরী বয়ে চলে যেমন। যেমন রাখতে চাইলেও ধরে রাখা যায় না কাজলরেখাকে। কীর্তিনাশার দিকে তেমনি করেই চলে গে...
ঘুম ভেঙে যায়, ভিতরে কোথায় যেন একটা ভোঁতা ব্যথা। সে কি শূন্যতার বেদনা? ছল্ ছল্ ছলাৎ শব্দ শুনি। নৌকায় কি এসে লাগে ঢেউ? এত ঢেউ? উঠে বসি, এগোই একটু, ছইয়ের ভিতর থেকে বাইরে হাত বাড়িয়ে ছুঁই ঝড়ের শিণ্ শিণ্ শব্দ, খুব ঝড় বাইরে। সূচের মতন ঠান্ডা বৃষ্টি বিঁধে যায় হাতে।
হাত ভিতরে টেনে নিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ি একপাশ ঘেঁষে। আয় ঘুম, আয়। তুই না এলে কীকরে এই ভঙ্গুর মানুষশরীর সইবে এত অমানুষিক আ...