আমাদের ছোট্টো নদীটার চরে চখাচখীর মেলা বসতো। শুনেছি তারা নাকি প্রেমের পাখি। নদীতটের মাখনরঙের বালিতে রূপোরঙের ভোর থেকে কমলা সাঁঝ অবধি দিনজুড়ে ঠোঁট ঠোঁট মেলানো সখ্য! সাঁঝের তারা উঠলে তারা আলাদা হয়ে উড়ে যায় বিরহের রাত জুড়ে প্রেমের কঠিন তপস্যায়। কেজানে, এসব সত্যি না গল্পকথা!
তপতপে রোদ্দুরের চৈত্রদিনের শেষে মনকেমনিয়া দখিণা হাওয়া বয় শান্ত স্নিগ্ধ সন্ধ্যায়, ক্লান্ত শরীর এলিয়ে ছ...
এই পথ পাকদন্ডীর মত, ঘুরতে ঘুরতে পাহাড়কে বেড় দিয়ে চূড়ার দিকে উঠছে। সেখানে কী আছে? সেই গল্পের মিনার, সেই অলৌকিক জ্যোৎস্নাপক্ষী, লৌকিক গল্পে যার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা উত্তাল হয়ে উঠেছে? জানি না।
ঘুর ঘুর ঘূরণপথে চলতে চলতে কুয়াশা সরে গিয়ে চমকে ওঠে গুচ্ছ গুচ্ছ গাঢ় কমলা ফুল! সেই ফুল ছোঁয়ার আর্তি আঙুলের ডগায় নিয়ে বাতাস মাখা। কবে যেন এমন ফুলেদের দেখেছিলাম? সে কি কোনো শরতে নাকি বসন্তে? মনের ...
আমি জন্মেছিলাম চাঁদসদাগরের সময়ে, ওরই গাঁয়ে। তখন আমার নাম ছিলো জীমূতবাহন, আমি ছিলাম জাহাজ বানাবার কারিগর। চাঁদ আর ওর নাবিকেরা মিলে সমুদ্রে বাণিজ্যে যেতো, ওদের জাহাজ বানাবার বরাত পেতাম আমরা।
তখন মাসের পর মাস নদীতীরে পাকাপোক্ত তক্তা টক্তা নিয়ে খট খট আওয়াজে জাহাজ বানানো, আলকাতরার লেপ মারা--শয়ে শয়ে লোক কাজ করতো একসঙ্গে।
ওদের নৌবহর যখন সমুদ্রযাত্রা করতো শুভদিনে, তখন আমরা তাকিয়...
আজকাল শ্রবণের খুব শীত লাগে। শীতের দেশেই তো আছে অনেকদিন, কিন্তু এখন যেন বেশী বেশী লাগে শীত! অদ্ভুত কান্ড! তুষারে যদিও মাটি ঢাকা, ঝিরঝির করে পড়েও তুষার সময়ে অসময়ে, কিন্তু ন্যাড়া গাছভর্তি হাজার কুঁড়ি ধরেছে, ফুল ফুটতে দেরি নেই। তারপরে ফুলেদের সঙ্গ ধরে আসবে নতুন পাতার দিন। বসন্ত, আবার!
সময় একলা চলে নিজের মনোমতো, সে কখনো ফুল ফোটায়, পাতা জাগায় আবার কখনো সব শূন্য করে ধুয়েমুছে কোথায় নিয়ে ...
ছাদটা বেশ বড়। এখানে শুয়ে উপরে তাকালে অনেকখানি আকাশ ঝম করে ওঠে। ঋতি প্রায়ই রাতের খাবার পরে একবার ছাদে আসে। আর মাদুরটা পেতে শুয়ে পড়ে। চোখ মেলে দেখে আকাশভর্তি তারা কেমন ঝমঝম করে বাজছে! না, আসলে তারারা ঝিকঝিক করে জ্বলছে শুধু, কোনো শব্দ নেই। তবু ঋতির কানে আসে কেমন এক অপূর্ব সঙ্গীত যা আর কেউ শুনতে পায় না।
পুবের দিকে নারকেল বাগান। ওদিকে তাকালে গাছের মাথাগুলো দেখা যায়, সারি বেঁধে দিগন্...
ঘনকালো পর্দায় ঢাকা সেই রাতের কথা নাহয় একেবারে সমাধিস্থ হয়ে যাক, অনেক অনেক গভীরে, সূর্যতারাহীন অন্ধকারে। সব ক্ষত সব ক্ষতি সব প্রতিশোধবাসনা সব ভুল সব হিংসা চাপা পড়ে থাক সেখানে। বিপুল মৃত্যুর স্তর সরিয়ে জীবন ভেসে উঠুক তেজী রাজহংসীর মত। তার আলোর মতন পাখায় লেগে থাক নতুন আকাশের প্রতিশ্রুতি। এসো, চোখ মেলি বাউল ভোরে।
এসো আবার চোখ মেলি বাউল ভোরের হাওয়ায়-
অনিঃশেষ রাতের জলতরঙ্গ অন্ধকা...
সমুদ্রের তীর ধরে হেঁটে যাই, গভীর নীল ঢেউয়ে জ্বলজ্বল করে কীসের যেন দীপ্তি। আর আবহসঙ্গীতের মতন অবিরল ঢেউওঠা আর ঢেউপতনের শব্দ। আসে আর যায়, ওঠে আর পড়ে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মত, বিরতি নেই, ক্লান্তি নেই, অনন্তকাল উঠছে আর পড়ছে।
বাতিঘরের আলো এসে চোখে পড়ে, দূরে বাঁকের কাছে মিনারের মতন বাতিঘর। নগ্ন নির্জন একটি উত্তোলিত হাতের মতন আকাশে উঁচিয়ে আছে,মুঠোতে আলো। আলো ঘুরে যায়, দূর সমুদ্রের জল ...
তিতিয়া শুনেছে সে জন্মেছিলো সন্ধ্যেবেলা, সেদিন ছিলো পূর্ণিমা। পুবদিগন্তে মস্ত একটা রুপোর থালার মতন উঠে আসছে চাঁদ, তখন নাকি সে জন্মেছিলো আরেকখান চাঁদের ফালির মত, তাদের মাটির ঘর আলো করে। ঠাকুমা এসব বলতো।
ঠাকুমা ছিলো কবি-কবি স্বভাবের মানুষ, তার উপরে তাকে ভালোবাসতো চোখের মণির মত, ঠাকুমা তো বলবেই। আধুনিক যুগের হয়েও সে বাড়ীতেই হয়েছিলো, দাই এর হাতে। তাদের গ্রামের দিকে এখনও ওরকম চলে। ...
মস্ত বড় গোল চাঁদ উঠে আসছিলো পুব দিগন্তের ঘন নীল বৃক্ষরেখা থেকে, পশ্চিমের মেঘগুলো ততক্ষণে সন্ধ্যারঙে স্নান করে গোলাপীকমলা হয়ে গেছে। আর একটু পরেই ওরা রঙ হারিয়ে মিশে যাবে রাত আকাশের কোমল কালোয়। আরো রাতে জ্যোৎস্না তেজী হলে তখন মেঘগুলোকে দেখাবে ম্যাজিকদেশের মেঘের মতন।
আজকের সন্ধ্যাটা ভারী অদ্ভুত। ছাদ থেকে চন্দ্রোদয় দেখতে দেখতে মনে পড়ে চন্দ্রার কথা, সে এখন অনেক দূরের দেশে থাকে...
আমার কৈফিয়ৎ: অনেকদিন আগে এই ধারাবাহিক লেখাটি লিখতে শুরু করেছিলাম। পাঠসংখ্যা আর কমেন্টে পাঠকের সাড়া খুব কম পাওয়ায় লেখাটি বন্ধ করে দিই। সম্প্রতি এক পাঠক অনুরোধ করেছেন আবার লেখাটি দিতে, তাই আবার দিতে শুরু করলাম। সঙ্গে আগের পর্বগুলোর লিংক দিলাম। যারা পড়বেন বা পড়বেন না, মন্তব্য করবেন বা করবেন না, তাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ---
এখানে ১ ও ২
[url=http://www.sachalayatan.com/tuli1/25907]এখানে ৩...