শুষ্ক মরুপ্রান্তর জ্বলছে তীব্র দহনে। দিশাহারা কিশোর রাখাল তার বাঁশী হারিয়ে ফেলেছে, জ্বরে পুড়ে যায় তার অকরুণ দিনরাত, প্রলাপের ঘোরে সে বলে তার একাকী নি:সঙ্গ প্রহর পুড়ে যায় নিষ্ঠুর রৌদ্রে, ধূ ধূ করা শূন্যমাঠ পড়ে থাকে বৃষ্টির আকন্ঠ তৃষ্ণায় ছাতিফাটা হয়ে। তার রাতও নিঠুর, হিংস্র জন্তুর মতন ছিন্নভিন্ন করে তাকে ধারালো শ্বদন্তে । তার শরীর নিভে গেছে, সাহস নিভে গেছে, আশাও নিবু নিবু। হায়, ব...
আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথটার উপর দিয়ে সাবধানে গুহার সামনের পাথুরে চাতালে উঠে এলাম। মস্ত সেই ধূসর পাথরটা! দুখন্ড হয়ে ভেঙে আছে। পাথরটার সামনে গিয়ে বসে পড়লাম, ঝুঁকে পড়ে আমার লোমশ হাত বাড়ালাম ওটার দিকে। এখনো ওটার গায়ে লালচে-বাদামী দাগগুলো জেগে আছে। কুশ আর খুমানের গতকালের লড়াইয়ের চিহ্ন!
আমি ওদের যুদ্ধের সাক্ষী। আবছাভাবে মনে করতে পারি খুমানকে কুশ এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো, খুমান হুম...
ক'দিন ভীষণ গ্রীষ্ম চলেছে, রোদ ছিল একেবারে যাকে বলে চাঁদিফাটা, সব যেন শুকিয়ে যাবে, গলে যাবে। দুপুরের পিচরাস্তার দিকে তাকানো যেতো না, এত ঝিকঝিক রোদ ঠিকরে আসতো।
চাতকপ্রত্যাশায় আকাশের দিকে চেয়ে থাকতো সবাই, আসে কি মেঘ? আসে কি, সে আসে কি? কিন্তু কোথায় কি? এক চিলতা দুই চিলতা হালকাফুলকা মেঘেরা আসতো যেতো, বর্ষণসম্ভবাদের দেখা নাই।
তপতপে দিন আসে, তপতপে দিন যায়। সন্ধ্যার পরে লোকে পুকুরের ...
১।
শীতের সন্ধ্যা, ঝপ করে আলো কমে অন্ধকার হয়ে আসে। আর পাহাড়ী হাওয়ায় মরিচের ধার। বাগান থেকে আমরা ঘরে চলে আসি, ড্রয়িং রুমের ওম-ওম আতিথেয়তায় ভালো লাগে, বাইরে এখন বেশ বৈমাতৃক শৈত্য। সোফা টোফা দেয়ালের দিকে ঠেলে দিয়ে ঘরের মাঝখানে মস্ত এক মাদুর পেতে এষা মাঝখানে রাখলো চানাচুর-মুড়ির বাটিগুলো। বললো চা আসছে।
আমরা কলেজবেলার মতন বসে গেলাম, একটা খবরের কাগজ পেতে মুড়িচানাচুর ঢেলে ফেলা হলো, এ...
সময়ের স্রোতে নিত্য আলোড়িত হতে হতে কত দূরের মানুষ কাছে আসে, আলো হয়ে যায় মনের ঘর। আবার কত কাছের মানুষ দূরে চলে যায়, বেদনার মতো বাজে চলে যাওয়া। কিন্তু আসলেই কি চলে যায় তারা? বাহিরে যে চলে গেলো, তার অশ্রুঝলোমলো মুখখানি ধরা থাকে স্মৃতিতে। বেদনার অর্ঘ্যে তার চিরদিনের অভিষেক। তাকে মুছবে কে?
"ভুলে যা" "ভুলে যা" "ভুলে যা" বললেই কি কিছু ভোলা যায়? কোন্ বহুদূরের পা...
প্রথম পাতায় নিবিড় এর লেখায় সচলচারণ সিরিজটার উল্লেখ দেখে স্মৃতিপুকুরের দুপুরজলে একটা ঢিল পড়লো, ঢিল পড়ায় যে আলোড়ন উঠলো সেই ঢেউয়ের বৃত্তগুলো ছড়িয়ে যেতে লাগলো একের পর এক। গোল হয়ে ছড়িয়ে যেতে থাকা কাঁপনের দিকে চেয়ে চুপ করে চেয়ে রইলাম। পিছিয়ে গিয়ে পুরানো পাতা খুলে সচলচারণ ৮ খুলে বসে রইলাম। সত্যি তো, আরো তো লেখার কথা ছিলো! আরো অনেক অনেক। ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪..... কত পর্যন্ত লেখার কথা ছিলো? আহ, স...
মনে পড়ে স্বপ্নের সেই মেঘমানুষকে, যে ভেদ মানতো না, বলতো পৃথিবী তার মা আর আকাশ তার পিতা, বলতো সে ভালোবাসে আলো, ভালোবাসে নদী যার মধ্যে কিনা পূর্বজ-পূর্বজাদের আশীর্বাদধারা বয়ে গেছে। বলতো, সে ভালোবাসে সবুজ গাছ, পশুপাখি। বলতো, সে ভালোবাসে অন্য মানুষদের। সে বলতো সে ঘৃণা করে নিষ্ঠুরতা আর ঘৃণাকে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- কে তাকে র
৩। পুতুলদের বাগানের লাউমাচায় বাসা করেছে এক ঘুঘু-মা। বেশী উঁচুতে না, একদম কাছে। লাউপাতার ছায়ায় বেশ অন্ধকার অন্ধকারমতন সেখানে যদিও। তুলি আর পুতুলের আগ্রহী চোখ সেই বাসায়, ভারী অস্বস্তির সঙ্গে বাসায় বসে ওদের দেখছে ঘুঘু, বাসা ছেড়ে একটুও যায় না, না-ফোটা ডিমগুলো রয়েছে তো! যাবে কিকরে?
ওরা চলে আসে, কিন্তু বারান্দা থেকে লক্ষ রাখে যদি একটু যায় মা ঘুঘুটা...
প্রান্তরশেষে অরণ্যের শুরু। সমন্তক চলতে থাকে। পথহীন বনে চলতে চলতে সন্ধ্যা হয়ে আসে। সমন্তক নদীতীরের টিলায় এসে পৌঁছায়।
সূর্য ডুবে যায় পশ্চিম দিগন্তে, সন্ধ্যাতারার জ্বলজ্বলে টিপ ফুটে ওঠে আকাশের কপালে। একে একে জ্বলে ওঠে অন্য তারারা, গ্রহেরা, নেবুলারা, গ্যালাক্সিরা ....অনাদি অনন্ত দেশকাল সন্তত হয়ে আছে এই মাটিতে ঐ আকাশে নদীতে অতীতে ভবিষ্যতে জন্মে মর...
মাইলের পর মাইল বালির সমুদ্র ভেঙে হেঁটে যাচ্ছি যাচ্ছি যাচ্ছি। কি তীব্র শুষ্ক গরম হাওয়া! মস্ত ঝোলা পোশাকে উড়ুনিতে মুখমাথা দেহ ঢেকে আমরা চলেছি চলেছি।