২৭ মার্চ, ১৯৭১
দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ
সম্পাদকীয়
জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলমান রাষ্ট্র পাকিস্তান নিয়ে অনেকদিন ধরে যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা আজ বাস্তবে পরিণত হল; পাকিস্তানের দু’অংশ গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে শান্তি আলোচনা অসমাপ্ত রেখে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগের পর রাতে বাঙালীদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ভারতের মত বিশাল রাষ্ট্রকে মাঝখানে রেখে ভৌগলিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তান হতে হাজার মাইল দূরে থাকা পূর্ব পাকিস্তানের মাঝে অর্থনৈতিক, সামাজিক, ভাষা ও সংস্কৃতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক অমিল।
পূর্ব ও পশ্চিম-পাকিস্তানের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বৈষম্য দৃশ্যমান। পাকিস্তানের জনসংখ্যার ষাট শতাংশ পূর্ব-পাকিস্তানে বসবাস করে এবং মোট উৎপাদনের সিংহভাগ পূর্ব-পাকিস্তানে উৎপাদিত হলেও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন, উচ্চপদস্থ সরকারী পদ, সামরিক, ব্যবসায়, বিদেশী সাহায্য, আমদানী ও উন্নয়নে পশ্চিম পাকিস্তানকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয় অসমতার শিকার পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালীরা তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কর ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন শুরু করে।
গত (সত্তরের) ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা অর্জনের মধ্য দিয়ে পূর্ব-পাকিস্তানীদের মনে আশার আলো সন্ঞ্চারিত হয়। তারা ভেবেছিল, এতদিনের রাষ্ট্রীয় বৈষম্য এবার ঘুচবে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় বাঙালীদের সব আশা গুঁড়েবালি হয়ে যায়।
পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী বাঙালীদের উপর যতই সহিংস আচরণ করুক না কেন, অখন্ড গণতান্ত্রিক পাকিস্তান এখন শুধুই দুরাশা।
পেপার কাটিং:
অনুবাদ করেছেন: সাব্বির
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন