শহর থেকে মাইল কয়েক দূরের এই নারকেল গাছ ঘেরা কলেজ আর কলেজ-ক্যাম্পাসটি বড়ই মনোরম। এখানে ক্ষণ-অনুক্ষণ, দিন-রাত, মাস-বছর জুড়ে শান্তির হাওয়া বয়। নীল নীল আকাশ, সাদা সাদা মেঘ ভালবাসায় পেলব। ঝিরঝিরে বৃষ্টি, দামাল বৃষ্টির ধারায় কালো কালো ময়লা ধুয়ে জমা হয় বসতির বাইরে। নারকেল গাছগুলির লম্বা চেরা পাতায় সবুজ সবুজ প্রশান্তি, পেয়ারা গাছের ঈষৎ মোটা ডালগুলি দামাল বাচ্চাদের ভারে পড়ো পড়ো, তবে সামলে নেয় শেষপর্যন্ত - এরা অভ্যস্ত এসবে; বর্ষাকালে যত্রতত্র কদমগাছগুলি ফুল সাজিয়ে অপেক্ষায় সদ্য তরুণ-তরুণীদের; মসৃণতায় গর্বিত সরু রাস্তার পাশ ঘেঁষে ছোট বড় মাঠগুলিতে রকমারি সবুজ ঘাস প্রবল ঔৎসুক্যে বেড়ে ওঠে এদের সঙ্গী হতে।
এই রাজত্বের এক পড়তি সকালে তিরু ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়। একটানা গান প্র্যাকটিস করতে বিরক্ত লাগে। কতক্ষণ আর একা একা ঘ্যানঘ্যান করা যায়। তিনতলা বাসার বারান্দা থেকে দেখা যায় ওর মাকে। টমেটোর ক্ষেতে পানি দিচ্ছে একটা লাল রঙা পানির পাইপ দিয়ে। সবুজ গাছে সবুজ টমেটো। ধূসর, কালচে মাটি পেঁচিয়ে লাল পাইপ। এককোণে দাঁড়িয়ে দিলশাদ আন্টি। অজান্তেই গালে হাত বুলালো একটু তিরু। দিলশাদ আন্টিকে দেখলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। এই বয়সেও এত সুন্দর আন্টি! ফিগারটা কী ! দেখলে মনে হবে বয়স পঁচিশ কি ছাব্বিশ। বুকটা একটু জ্বলে তিরুর। কী মাখে মুখে? বলে তো কিছুই না! উঁহু! হতেই পারে না। ফর্সা পানপাতা মুখটাতে দাগ নাই একটুও - হিংসা করার মতো। সমস্যাটা হলো দিলশাদ আন্টিকে ঈর্ষা করা যায় না একফোঁটাও। আন্টি এত ভালো, এত আদর করে ওদের সবাইকে। ও যদি দিলশাদ আন্টির মত সুন্দর হতো, তাহলে কি এত ভালো আর সরল থাকতে পারতো! না বোধহয়। আনমনে হেসে ফেলে তিরু। আন্টি আর ওর মা গল্প করছে চুটিয়ে। এই উঠতি দুপুরে, হালকা হাওয়ায় খোলা বারান্দায় থামের গায়ে অয়েশী হেলান দিয়ে এই ছবিটা দেখতে ওর ভালো লাগে।
স্কুলফেরত রনি বাসায় না গিয়ে বাঁধানো পুকুরঘাটে বসে পড়ে খানিক জিরিয়ে নেবার আশায়। শান্ত পানি। বদ্ধ, নিস্তরঙ্গ, গভীর, কালো পানি। এই পানির ধারে চুপটি করে বসে ওর কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যায় রোজ রোজ। বসে বসে ভাবতে থাকে রনি, আর কত ক্লাস পাশ করলে ও জিতু ভাইয়ের সমান হতে পারবে। একলা একলা কাছের শহরটাতে যেতে পারবে। ও তো মোটে তিন ক্লাস শেষ করলো। জিতু ভাইয়ের বারো ক্লাস ধরতে আর কত সময় লাগবে! রনি জলদি বড় হতে চায়। এই শান্ত, বদ্ধ লোকালয় ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে চায় - দূরে কোথাও, যেখানে ওর কল্পরাজ্যের মানুষেরা থাকে।
ডাল সিদ্ধ হতে আরো মিনিট পাঁচেক লাগবে আন্দাজ করে জানালায় দাঁড়ায় তানিয়া । এই জানালা দিয়ে দূরের কলেজটা দেখা যায় । হাসান কি এখন ক্লাসে? মাস ছয়েক হলো বিয়ে হয়েছে ওদের । ওর বাবাও এই কলেজের শিক্ষক। অনেক বছর হলো ওর বাবার। রিটায়ার করবেন খুব শীঘ্রি। হাসানের তো মোটে এক বছর। ওদের প্রেমের বিয়ে। বিয়ের তারিখ ঘোষণার আগে এই টিচার্স কলোনির কেউ আন্দাজও করতে পারেনি তানিয়া আর হাসানের কিছু একটা চলছে। এটা ছিল একটা পরম উপভোগ্য চমক। হাসান সুদর্শন, ভালো রেজাল্ট করে বেরিয়েছে বছর দেড়েক আগে, সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত তার। ভাবতেই একটা তৃপ্তির ঢেউ দোলা দেয় তানিয়ার বুকে। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত মানেই সুখী সংসার।
কলেজ প্রাঙ্গণে ছেলেদের কথা, হাসি, হুল্লোড় নেই এখন। ছেলেদের কলেজ এটা। প্রায় সবাই এখন ক্লাসে। গুটিকয়েক ছেলে আর কর্মচারীর ছোট ছোট জটলা এখানে ওখানে। এখানে সবকিছু নিয়মতান্ত্রিক, তাই সুশৃঙ্খল সবকিছু। একটা ক্লাস শেষ হলো। ছেলেরা বের হয়ে দেখলো কলেজ প্রাঙ্গণে এক আগন্তুক। নতুন একজন।
এই কলোনিতে ঝড় আসন্ন।
ময়ূরকন্ঠী রাতের নীলে,
আকাশে তারাদের ঐ মিছিলে,
তুমি আমি আজ চলো চলে যাই.....................ইচ্ছা করে চোখ দুইটা গেলে দিতে! রেবার চোখ দুইটা...অস্বীকার করা যায় না সত্যি অনেক সুন্দর আর বড় বড়ো........এমনভাবে কাঁপা কাঁপা চোখে তাকালে জিতু নিজেও কি না কেঁপে পারে! হিংসায় জ্বলে পুড়ে যায় তিরু। হারমোনিয়ামে পাতলা, শ্যামলা, লম্বা আঙ্গুল খেলিয়ে, ঘাড়টা ঈষৎ বাঁকিয়ে গান গাইলেও মনটা বেজায় খারাপ হয়ে যায়। স্টেজে দাঁড়িয়ে গলার কারিশমা না দেখিয়ে জিতুর পাশে বসে ইশারায়, চোখে চোখে কথা বলা যেত এতক্ষণ। সুযোগটা নিচ্ছে রেবা। রাগে গা জ্বলে যায়। তবে রেবার ওপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না তিরু। রেবা ওর সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী। এই ক্যাম্পাস এলাকায় ওর বয়সী আর কোনো মেয়ে নাই।
তাহমিনা এই কলেজে চাকরি করছে মাস ছয়েক হলো। অপূর্ব সুন্দর এই ক্যাম্পাসটা প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে গেছে ওর। তবে মাস না ঘুরতেই ওর মনটা দমে গেছে বেশ, যখন বুঝলো এক দল বাবার বয়সী কি মা-আন্টির বয়সী মানুষের সাথে দিনের পর দিন একঘেয়ে দিন কাটাতে হবে। আজব একটা জায়গা এটা। বয়সী মানুষ আর কমবয়সী ছেলেমেয়ের দল। এদের সাথে মন খুলে গল্প করা যায় না। আর আছে ওরই বয়সী কিছু মেয়ে, কোনোমতে বারো ক্লাস পড়েই কিংবা ডিগ্রি কি অনার্সটা পাস দিয়েই বিয়ে করে সংসারী, পরিতৃপ্ত। এদের সাথেও কথা চালিয়ে যাওয়া যায় না। বিরক্তিকর একটা জায়গা। কথা বলার মানুষ নাই একটা। ভুল হলো। আছে। অন্তত একজন আছে এখন। আড়চোখে মানুষটার দিকে তাকাতেই শরীরটা শিউরে উঠলো ওর । এত রূপবান কোন যুবককে ও দেখেনি কখনো।
রিতা গানের কথা ভুল করলো কয়েকবার। লজ্জায় মরে যাবার মতো অবস্থা। সবচে ভালো গায়িকার গানের যদি এই হাল হয় তো অনুষ্ঠান হবে কীভাবে! তাছাড়া আম্মা তো বাসায় গিয়ে দেবে চরম ঝাড়ি। মনটা নিমতিতা হয়ে গেল। সব দোষ রেবা আর জিতুর। তাই কী! উঁহু! চোখ বার বার পিছলে ডানে সরে যায় কেন! এই মানুষটা এত সুন্দর! মাগো। দম বন্ধ হয়ে আসে যেন।
রেবা উঠে যায় জিতুর পাশ ছেড়ে। এমনি এমনি না । পানি খেতে। পানির তৃষ্ণা সহ্য করা কঠিন এ কথা সবাই জানি। তবে পানি খেয়ে কী মনে করে রেবা আর জিতুর পাশে বসে না। চুপচাপ আলগোছে সুন্দর মানুষটার একহাতের মধ্যে গিয়ে বসে পড়ে। নিরুত্তাপ মুখভঙ্গী। দৃষ্টি স্টেজে - তিরুর মুখে।
ওপশে জিতু তাকিয়ে ওর দিকে, কখনো রিতার দিকে। ক্ষুব্ধ, বিচলিত। কোনোকিছুই আর ঠিকভাবে চলছে না। বাতাসে বাতাসে ইশারা পায় জিতু। বারবার অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসে। এছাড়া আর কীই বা করার আছে তার।
অর্থনীতির নতুন শিক্ষক দীর্ঘদেহী, সুদর্শন শাহজাদা সৈয়দ রাহবার প্রশান্ত ভঙ্গিমায় বসে আছে একপাশে, দৃষ্টি স্টেজে, গায়িকার মুখে। মনোযোগ কেন্দ্রীভূত গানে, গানে না হলে গায়িকাতে, কারণ এ দুই ছাড়া স্টেজে আর কিছু বা কেউ নাই।
মানুষগুলো অর্ধচন্দ্রাকারে বসে আছে। ছোট্ট স্টেজটাকে ঘিরে। মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে সবাই। আলো আঁধারিতে ছোট হলরুমটা ম্লান, মনোরম দেখায়। হলরুমের বাতাস জুড়ে খেলে বেড়ায় চাপা উত্তেজনা, ক্ষোভ, অস্বস্তি, রাগ, অনুরাগ।
এ সবই ঝড়ের পূর্বাভাস।
জিতু বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করে খানিক; কড়া নাড়বে নাকি নাড়বে না। মাসখানেকের মধ্যেই অতি চেনা এই শহরটা এত বদলে যাবে এমনটা কি বোঝা গিয়েছিল! নাহ্ । একটুও বোঝা যায়নি; অন্তত ও তো বুঝতে পারেনি। তবে একটুও কি আঁচ করতে পারেনি! ভুরু কুঁচকে চিন্তা করতে চেষ্টা করে জিতু, থামের গায়ে হেলান দিয়ে। হুম, পেরেছিলো তো! কিন্তু এতটা বদলে যাবে সবকিছু, ভাবেনি তো।
হাতঘড়িতে চোখ পড়তে চমকে উঠলো জিতু। এরিমধ্যে দশটা। তাহলে আধাঘন্টা ধরে বাইরের বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে আছে ও। এতটা সময় চলে গেল! অদ্ভুত ব্যাপার! এই সময়ের মধ্যে খুব কম করে হলেও দুইতিনবার কথাবার্তার আওয়াজ কি এক-আধবার হাসির শব্দ পাওয়ার কথা। শাহজাদা আংকেলের কাছে পড়ার সময় পড়ার চেয়ে হাসি ঠাট্টাই হয় বেশি। মানুষটা এত প্রাণখোলা হাসি হাসতে পারে আর এত সুন্দর কথা বলতে পারে যে ভালো না বেসে পারা যায় না। এমনকি জিতু লজ্জার সাথে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে শাহজাদা আংকেলের মতোই হতে চায় সে। মানুষটা তার আইডল!
যা ভেবেছিল তাই। দরজা খোলাই ছিলো। ভেতরে সোফায় আর চেয়ার জোড়া দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আহসান আর তমাল। শাহজাদা আংকেল নাই। একটা চিরকুট রাখা টেবিলে। 'বন্ধুরা তোমরা বিশ্রাম কর, টিভি দেখ, সম্ভব হলে বইটই নাড়াচাড়া করো, আমি আসছি কাজ সেরেই।' এই হলো শাহজাদা আংকেল। সমস্ত ঈর্ষা ভাসিয়ে প্রসন্নতায় মন ভরে ওঠে জিতুর। সেদিনও রাতে আংকেল বেরিয়ে যাবে একঘন্টার জন্য কোনো কাজে, তমালরা এলে অপেক্ষা করতে হবে বলে বেরিয়ে যাবে, যেতে যেতেই হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে -
'জিতু, আমি কিন্তু জানি তুমি কিছু পেতে চাও!'
জিতু চমকিত, লজ্জিত। শাহজাদার মুখে একটা রহস্যময়, সবজান্তা হাসি। আংকেল কি বুঝে ফেলল কিছু! ইস্, কী লজ্জার ব্যাপার।
'আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব কীভাবে পেতে হয়.......প্রমিস্। '
একইরকম হাসি মুখে, তবে হাসিটা এখন আন্তরিক। ওইমুহূর্তেই সব ক্ষোভ ভুলে গেল জিতু।
'তবে, তোমার আব্বাকে আবার বলো না যেন, আমি এসব শেখাচ্ছি! আমাকে ক্যাম্পাসছাড়া করবে তাহলে !'
কথাগুলো ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়েই বেরিয়ে গেছিল আংকেল।
আজকে আর পড়ার মুড নাই। বেরিয়ে এসে নির্জন রাস্তা ধরে আনমনে হাঁটতে হাঁটতে ছ'সাতটা বাড়ি পেরিয়ে ওদের গলিটায় ঢুকতে গিয়ে থমকে গেল জিতু। ইলেকট্রিসিটি নাই। বাড়িতে বাড়িতে মোমের আলো কাঁপছে জানালার পর্দায়, মৃদু বাতাসে। তানিয়া আপুর শোবার ঘরের জানালার পর্দায় কাঁপছে দুটো ছায়া। হাসান ভাই গ্রামের বাড়িতে গেছে গতকাল।
সেলিম সাহেব চিন্তিত। প্রাইভেট পড়ুয়াদের বিদায় করে দিয়ে টিভির সামনে আয়েশ করে বসলেও মনে মনে তিনি একটা জটিল হিসাব করছেন। ক্ষণে ক্ষণে তার চোখ জ্বলে উঠছে আশায়, আবার ক্ষণেই নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে হতাশায়। তিরুর মা এসে পাশে বসতে একটু ভরসা পেলেন। বরাবরই তিনি স্ত্রীর বুদ্ধির ওপর আস্থাশীল। সঙ্গত কারণেই।
'তোমার কি মনে হয় তিরুর মা? শাহজাদা ছেলেটা কি রাজি হবে?'
তিরুর মা কোনো উত্তর দিলেন না। পান চিবুচ্ছেন আরাম করে। রেহানা বেশ লম্বাচওড়া। বলিষ্ঠ, পুরুষালী শক্তি ধরে গায়। শ্যামলার ওপর একপোঁচ কালো মেশানো তিরুর মাকে সমীহ করে চলে না এমন কেউ নাই এখানে।
'শ্যামলা হলে কী হবে, আমার তিরুর মত সুন্দর মেয়ে আছে নাকে এই এলাকায়!'
'কেন, দিলশাদ ভাবীকে চোখে পড়ে না? নাকি আমার সামনে ভাব দেখাচ্ছ?'
'কীসের মধ্যে কী!' স্পষ্টত বিরক্ত সেলিম সাহেব। '' 'দিলশাদ ভাবীর কি আর বিয়ের বয়স আছে নাকি! বাচ্চাকাচ্চা আছে, একটা ভদ্রমহিলাকে নিয়ে...তোমার মুখেও আটকায় না!'
একটা ঝাঁঝাল উত্তর আশা করছিলেন সেলিম সাহেব। না পেয়ে অবাকই হলেন। রেহানাও স্পষ্টতই চিন্তিত। সত্যি, কী করবেন তারা! তিরুর জন্য এমন একটা সুযোগ্য, সুদর্শন ছেলে আর কবে পাবেন। হোক না তিরুর বয়স কম! কমই বা আর কত! ঊনিশে পড়বে দু'তিনমাস পর। সুযোগ হাতছাড়া করে বোকারা।
মসজিদের পাশে একফালি বাগান। তাতে সামান্য বেলী, গাঁদা ফুলের গাছ। নিতান্তই ছোট।
'মাথার এক একটা চুল সাপ হয়ে কামড় দিবে.........এইটাই উপযুক্ত শাস্তি.....বেলাজ মহিলার দলের......' মুখে থুথু জমে ওঠায়.... থুক....পড়লো গিয়ে বেলীর গোড়ায়......
তৌফিক রশীদ গাঁদার ঝোপের পাশে, বিড়বিড় করে ঠোঁট নাড়লে মৃদু শব্দ বের হয়.......
'তাহলে ঠিক থাকলো হুজুর...কষ্ট করে আপনার আর বাসায় আসার দরকার নাই...শুক্রবার শুক্রবার রনিই আসবে মসজিদে...'
সিদ্ধান্তটা পছন্দ হয় কিনা বোঝা যায় না তবে আরেকদলা থুথু........এইবার আচানক গাঁদার পাশে গিয়ে জমে।
আয়নার সামনে দিলশাদ। মনটা বিক্ষিপ্ত। বিরক্ত। হতাশ। হয়েছে কী এ জায়গার মেয়ে, মহিলাদের। এমনটা তো স্বপ্নেও ভাবেনি সে। সবকটা একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে শাহজাদা ছেলেটার ওপর। বাচ্চা মেয়েগুলির কথা নাহয় বাদ দেয়া যায়। এদের বয়সটাই এমন। কিন্তু বিবাহিত মহিলাগুলি। ছিহ্। একটু মানসম্মান বোধ নাই এদের। এইসব মানুষের সাথে ওর বন্ধুতা! হাতে গোণা কয়েকজন বাদে সবগুলি মহিলা তাদের চেহারা এমনকি গলার সুরটা পর্যন্ত পাল্টে ফেলে শাহজাদাকে সামনে পেলে। এরা কি কখনো সুন্দর পুরুষ দেখেনি! দিলশাদ অমন ঢের দেখেছে। অবহেলায়, তাচ্ছিল্যে মন গুড়িয়ে দিয়েছে কতজনের। কঠোর নীতিবান দিলশাদ। এই শাহজাদাকেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত একফোঁটা মনোযোগ দেয়নি সে। অবশ্য একথাও স্বীকার করতে হবে শাহজাদা ছেলেটাও বিন্দুমাত্র অসৌজন্য দেখায়নি ওর সামনে। একটা ইঙ্গিতও দেয়নি ঘনিষ্ঠ হবার। আচ্ছা, কেন দেয়নি! দিলশাদ কি যথেষ্ট সুন্দরী না! মনের ভেতরে কোনো এক কোণে লুকিয়ে থাকা চাপা ক্ষোভের স্ফূরণ টের পায় দিলশাদ। নিঃসন্দেহে দিলশাদ এই ছোট্ট লোকালয়ে সবচেয়ে সুন্দরী। অথচ শাহজাদার দৃষ্টি, কথা, কথার সুর কোনো কিছুতেই ওর কাছাকাছি আসার ইচ্ছা দেখতে পায়নি সে। কিন্তু কেন ? দিলশাদ আগ্রহ না দেখালেই বা কি! শাহজাদা তো আগ্রহ দেখাতে পারতো। দেখানো উচিত ছিল । আগ্রহ দেখালেই কি আর ও সাড়া দিত! নিশ্চয়ই না। তবুও! অপমান বোধ করলো দিলশাদ। ফর্সা, মসৃণ নরম গাল দুটো শক্ত হয়ে গেল আপনাআপনি।
সেলিম সাহেবের বোনের বাচ্চা হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক হলো। বোনটা অসুস্থ। তিরুকে নিয়ে বোনের বাসায় গেছেন দু'দিনের জন্য। মন খুলে তিরুর মা'র সাথে গল্প করা যাবে। দিলশাদ সিঁড়ি ভেঙে চারতলায় উঠতে উঠতে ভাবে, মোটা শালটা সাথে আনা উচিত ছিল। ভালোই শীত পড়েছে। কিন্তু রেহানা ভাবীর সাথে গল্প করার নেশায় শীতটা খেয়াল করেনি ঠিকমত। ওর মনটাও ভালো নেই অনেকদিন হলো। কেন যে ভালো নেই একথা কাকে বোঝাতে যাবে দিলশাদ! মাথা খারাপ হয়ে যায়নি এখনও। তিরুর মার সাথেই ওর বনে বেশি। সপ্তাহে অন্তত একবার আড্ডা দিতে না পারলে মনটা আরো স্যাঁতসেঁতে হয়ে যাবে ওর।
দরজা খুলে দিল কাজের মেয়েটা। এবাসায় দিলশাদের অবাধ যাতায়াত। ভদ্রতা করে বাইরের ঘরে বসার কোনো মানে হয়না। সোজা রেহানা ভাবীর শোবার ঘরে ঢুকে দোরগোড়াতেই থেমে যেতে হলো। ঢোকা আর হলো না। কেননা পা দাঁড়াল থমকে, চোখ গেল আপনাআপনি কুঁচকে, গলা আর কী করে, শুকিয়ে গেল শেষমেষ। ক'সেকেন্ড পর কী করবে ভেবে না পেয়ে ভেতরেই ঢুকে গেল দিলশাদ।
'আরে, দিলশাদ ভাবী যে! '
শাহজাদা সবসময়ই হাসিখুশী। রেহানা নির্বিকার, বসে আছে কালো কাঠের পালঙ্কে।
'দিলশাদ, দাঁড়িয়ে আছো কেন? চেয়ারটা টেনে বসো না। যা শীত পড়ছে এবার !'
ঠিক! খুব শীত পড়ছে এবার । স্বীকার করতে বাধ্য হলো দিলশাদ। এতটাই যে বিছানায় একই লেপের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে শাহজাদা আর রেহানা। কোমর পর্যন্ত লেপে ঢাকা দুজনেরই। দু'জোড়া পা বিপজ্জনকরকম কাছাকাছি। বিপদ আসে আগুন থেকে। ধোঁয়া সংকেত দেয় আগুনের। দিলশাদের চোখ জ্বলে ধোঁয়ায়। ভাবে, এটা সেটা কথা বলে একটা ভদ্রতাসূচক সময় কাটানো যাবে তো!
চাপ চাপ উত্তেজনার বিশ কি তিরিশ মিনিট। শেষ হয় অবশেষে। সিঁড়ি ভেঙে নামতে নামতে গায়ের শালটা খুলে ফেলে দিলশাদ। গরম লাগছে খুব। কী দেখতে হলো! শেষ পর্যন্ত রেহানা ভাবী! এ তো অবিশ্বাস্য। মোটা, কালো, অসুন্দর একটা মাঝবয়সী মহিলার মধ্যে কী পেল শাহজাদা? কে যেন বলছিল সেদিন - মনে পড়লো দিলশাদের - শাহজাদার নাকি কোনো বাছবিচার নাই। তাই বলে রেহানা ভাবী পারলো কীভাবে! বিশ্বাস হয়না এখনো দিলশাদের। ভুল হচ্ছে নাতো কোথাও? ছেলের বয়সী না হোক অনেক অনেক ছোট ভাইয়ের বয়সী তো। উদভ্রান্ত চেহারায় বাসায় ঢুকে কারো কথার কোনো জবাব না দিয়ে সোজা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় দিলশাদ। আয়নায় দিলশাদের সুন্দর মুখ। আয়না মুগ্ধ, দিলশাদ মুগ্ধ। মনের কোনো ছাপ পড়েনা এ মুখে।
একটা মোরগ ডেকে উঠলো কোথাও । পবিত্র, নরম ভোর। ফজরের নামায পড়ে দিলশাদ আর ঘুমায় না - অনেকদিনের অভ্যাস। জায়নামায গুটিয়ে বসে ছিলো আনমনে। এসময় কড়া নাড়লো কেউ। কে এলো এত ভোরে!
'ভাবী, আমি জানি, অন্তত আপনি আমাকে মিথ্যা বলবেন না। প্লিজ, আমাকে বলেন কিছু হয়েছিল কিনা!'
মানুষটা ভেতরে ভেতরে কাঁদছে, টের পায় দিলশাদ। সেলিম সাহেব বড় ভালমানুষ। মায়া জাগে মনের ভিতর।
'কিছুই হয়নি ভাই, বিশ্বাস করেন। জানেনই তো গুজব ডালপালা ছড়ায়। কারো কথায় কান দিয়েন না। '
'কিন্তু, গুজবের পিছনে সত্যিও তো থাকে কিছু। আমি সত্যিটাই জানতে চাই। আমি যখন ছিলাম না আপনি গেছিলেন আমার বাসায় - এটা তো সত্যি? '
'সত্যি।' একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিলশাদ।
'কী দেখলেন?' সেলিম সাহেব উদগ্রীব, আতংকিত।
উত্তর দেয়ার আগে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকে দিলশাদ।
'বসার ঘরে ভাবি আর শাহজাদা কথা বলছিল, আমি গেলাম , কিছুক্ষণ গল্প করে আমি আর শাহজাদা একসাথেই বের হয়ে আসি। এটাই সত্যি ঘটনা সেলিম ভাই। এখন ভাবেন কার কথা বিশ্বাস করবেন? আমার কথা নাকি আপনার ওই দুইদিন আগে আসা কাজের মেয়ের কথা নাকি ক্যাম্পাসের বাকি সবার উল্টাপাল্টা কথা ?'
'অবশ্যই আপনার কথা ভাবি !' পরম স্বস্তির ছাপ সেলিম সাহেবের মুখে।
স্বস্তি শান্তিতে রূপান্তরিত হয় সময়ে। সময় প্রলেপ বুলিয়ে ক্ষতে। ভুলিয়ে দেয় আঘাত। কিন্তু সবকিছু ভুলিয়ে দিতে পারে কি?
অস্বস্তিবোধটা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে তিরুর। এই এলাকার লোকগুলি এত জঘণ্য এটা আগে বুঝতে পারেনি কেন ভেবে অবাক হয় ও। ওর মার নামে কী বিশ্রী কথা বললো সবাই কিছুদিন, চুপে চাপে, আড়ালে আবডালে। ওর কানেও এসেছে কিছু। মরে গেলেও এসব বিশ্বাস করবে না তিরু। ওর মাকে ও ভালো করেই চেনে। তারপরও থেকে থেকে অবাধ্য মনটা ওকে খোঁচাতে থাকে অবিরাম। মন বড় জটিল বস্তু। কুটিলও। এত এত কথার পেছনে একবিন্দু সত্যি নেই কি! মিথ্যার সাথে মিশে সত্যির চেহারা গেছে বদলে। চেনার উপায় নাই। অপ্রিয় চিন্তা এড়াতে নিজের ঘরে এসে তিরু হারমোনিয়ামটায় হাত বুলায় আর ভাবে শাহজাদা এত তাড়াতাড়ি চলে গেল কেন এই কলেজ ছেড়ে! কিছুই তো করা হলো না। কত পরিকল্পনা ছিল মাথায়। সব মাঠে মারা গেল।
হাসান বিছানায় আধশোয়া। তানিয়া আয়নার সামনের ছোট টুলে। চারদেয়াল আর ছাদের ঘেরাটোপে কথা নাই....কথারা নিঃশব্দে বিচরণ করে বাতাসে বাতাসে। নিরীহ, দুষ্ট সব বর্ণ, শব্দ, ক্রমে বাক্য হয়ে অনুচ্ছেদে পরিণত, উড়তে উড়তে ভীড় জমায় হাসানের মাথায়। ভীড়ের চাপে মাথাব্যথা করে টিপটিপ...ব্যথার চাপে একটা দুইটা করে শব্দ, বাক্য গলে গলে নামে হৃদপিন্ডে....ভারী করে তোলে.....বিষাক্ত করে তোলে। এই ভার সইতে না পেরে হাসান পাথরের মত আধশোয়া হয়ে বিছানায়.......পাথরের মত চোখ তুলে তানিয়াকে দেখে। আয়নায় হাসে তানিয়া...হাসানের দিকে চোখ। হাসানের মুখ হাসে...চোখ হাসেনা। পাথরের চোখ হাসতে পারেনা।
টেবিলের মাঝখানটায় বসে দুধ-রুটি খাচ্ছিল রনি। ওর মা জানালার পাশে।
'আম্মু আরেকটা রুটি দাও।'
কোনো সাড়া নাই। রনি বিরক্ত। কী হয়েছে মার! এই এত বছরে ওর মাকে কখনো এমন করতে দেখেনি রনি। সব ঠিকঠাকই আছে, তবু মাঝে মাঝে মা কথার উত্তর দেননা। কথা কানে গেলে তো উত্তর দেবে ! ভাবে রনি। আবার ডাকতে হয়।
'আরেকটা রুটি দাওনা আম্মু।'
দিলশাদ এবারও কোনো সাড়া দেয়না।
ঝকঝকে সকাল। কাচের মত রোদ আভাস দিচ্ছে একটা তীব্র গরম দুপুরের। তিরু বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। ওর মা পাইপে করে পানি দিচ্ছে সবজি ক্ষেতে। দিলশাদ আন্টি পাশেই দাঁড়িয়ে, গল্প করছে দুজন। হাসলো একবার আন্টি। গালে টোল পড়লো । ওর মা, হাসিমুখে দিলশাদ আন্টি, সবজি ক্ষেত, নীল পানির পাইপ - ছবিটা খুব সুন্দর লাগে তিরুর। একটা সুখ সুখ অনুভূতি নিয়ে ছবিটা দেখে তিরু। তবে মনের গতিক বোঝা দায়। আচমকা ওর মনের ভেতর ফণা তোলে নীল সাপ - দিলশাদ আন্টি! শাহজাদা আংকেল! এই কথাটা এতদিনে একবারও মনে হয়নি কেন? এত সুন্দর দিলশাদ আন্টি। কিছু কি হয়নি ওদের মধ্যে? না হয়ে পারেই না। এবার আর ছবিটা সুন্দর লাগলো না ওর কাছে। সুখ সুখ ভাবটা মরে গেলো । ওর মার দিকেও কেন জানি আর তাকাতে পারলো না তিরু। বিন্দু বিন্দু মেঘ জমে মনটা হয়ে গেল ছায়া ছায়া - অন্ধকার, যে অন্ধকারে লুকানো যায় অনেক কিছু।
তিরু তাকাতে পারুক আর নাই পারুক ছবিটার কোনো ক্ষতি হলো না তাতে। সুন্দর ছবিটা দিলশাদের গালে টোল পড়া গোলাপী হাসি আর সবজি ক্ষেতের সবুজ বুকে নিয়ে গেঁথে রইলো উজ্জ্বল সকালের ফ্রেমে। প্রশান্তির বাতাস বইছে নারকেল গাছগুলির চেরা পাতার ফাঁক গলে। মানুষগুলি স্নান করে এই শান্তির সমুদ্রে। শান্তি পায় কিনা কে জানে।
মন্তব্য
অনে-কদিন পর লিখলে আপু...
চমৎকার!!!!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তোমাকে ধন্যবাদ আপু।
আপনার গল্পে নারী চরিত্রগুলোর মানসিক গড়ন বর্ণনা বেশ উপভোগ্য হয়...
সৌন্দর্য্য এত্তো গুরুত্বপূর্ণ না কি ?? !!!
_________________________________________
সেরিওজা
না তো! তারপরও প্রবল সৌন্দর্যের কাছে অনেক সময়ই মানুষের বিশ্বস্ততা, ভাল-মন্দ, নীতিবোধ...... পরাজিত হয়।
ধন্যবাদ সুহান।
সবমিলিয়ে বলতে চাই, এই রকম একটা গল্প এক নাগাড়ে পড়ে গেলেই বুঝে ফেলা যায় না, কিছুটা প্রস্তুত মন ও পাঠ-অভ্যাস থাকা প্রয়োজন। আমি মোটেও দাবি করব না যে আমি যথেষ্ট প্রস্তুত ও অভ্যস্থ তাই আশা করব আমার জিলাপি-মন্তব্য আপনি সদয় মনে পাঠ করবেন।
ishumia@gmail.com
এতবড় গল্প যে আপনি দুইবার পড়েছেন তাতেই আমি অনেক খুশি!
জটিলতা ঠিক ইচ্ছাকৃত না। চরিত্রের সংখ্যা বেশি হলেও চরিত্রগুলোর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ দেখানো হয়নি, হয়তো এজন্যই জটিল লেগেছে।
গল্প পড়ে আপনি যা মনে হয় তাইতো লিখবেন! আপনার মনে হওয়াটা খোলাখুলি বললেই না বুঝবো কোথায় কোথায় সমস্যা আছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
ক্যারেকটারের সংখ্যা বেশি কি? "এখানে ঝড়ের মুখোমুখি হতে চায়না কেউ" - এটাকে কেন্দ্রীয় ভাবনা বলে মনে হচ্ছে ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
হুম। ক্যারেকটারের সংখ্যা একটু বেশিই হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ভাবনা নিয়ে আপনার মনে হওয়াটাও ঠিক আছে যদিও আরো দু'একটা চিন্তা ছিল মাথায়, লেখার সময়। ধন্যবাদ আপনাকে।
বইখাতা - আপনার সবগুলো গল্প পড়েছি কিনা ঠিক নিশ্চিত হতে পারছি না, আর তাই যেটা বলতে যাচ্ছি সেটা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক, তাও বলি - আপনার অন্যান্য লেখা থেকে এটার ভঙ্গি একদম আলাদা মনে হলো। খুব ভাল লাগলো, গল্পটা। চরিত্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, অতিরিক্ত বর্ণনা ছাড়াই সেই সব সম্পর্কের জটিলতার আভাস, ঘটনার মোড় - সবকিছুই খুব ভালো লাগলো
ভাল লেগেছে বলছেন, সাহস পেলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
লেখার ভঙ্গি নিয়ে আপনি একদম ঠিক বলেছেন। লেখার সময় আমি কিছু বুঝতে পারিনি, কিন্তু টাইপো আর বানান ভুল আছে কিনা দেখতে গিয়ে আবার যখন লেখায় চোখ বুলাচ্ছিলাম তখন নিজের কাছেই লেখাটা কেমন কেমন লাগছিল। ঠিক স্বস্তি পাচ্ছিলাম না পড়ে।
নতুন মন্তব্য করুন