ড্রইংরুমের একপাশের দেয়াল থেকে হামলে পড়ছে আগ্রাসী সমুদ্র। হামলে পড়লে কী হবে! ভেজাতে পারছে না কিছুই। কেননা তার রাজত্ব নির্ধারিত কেবল একটামাত্র দেয়ালে। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত – ব্যস এটুকুই। তীব্র নীল আকাশের একচিলতে মুখ। বাকিটা বিশাল সব ঢেউ আর ঢেউয়ের চূড়ায় ফেনার রাশি; এই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়লো দেয়াল ঘেঁষে রাখা সোফাটার ওপর। ওখানে ব'সে সুমিতা। ঢেউগুলি একমুঠ জায়গা ছেড়ে দিয়েছে বালুকাবেলার জন্যে, সাদা সাদা বালি চিক চিক করছে ওই কোণটাতে। সুমিতা কথা বলতে শুরু করলে মনে হয়, ওই বালির খানিক বুঝি ঢুকে গেছে ওর গলায়।
খুব আত্মবিশ্বাসের ছিলো কথাটায়, তারপরও গলা কেঁপে গেল সুমিতার, অনিশ্চয়তায়ই বুঝি।
মূলত এটা একটা মন্তব্যের উত্তর। একটু আগেই তাহমিনা বলছিল -
'তোর আব্বা কিন্তু তোকে খুন করে ফেলবে। '
একথা বলার সঙ্গত কারণ আছে তাহমিনার। কেননা সুমিতা ভালবাসে ওর ফুপাতো ভাই ফারাবীকে। কেননা সুমিতাদের পরিবারে চাচাতো-মামাতো-খালাতো ইত্যাকার সম্পর্কযুক্ত ভাইবোনদের মধ্য এ জাতীয় সম্পর্ক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কেননা সুমিতা শুধু চারবছর ধরে প্রেম করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, খুব শীঘ্রি ফারাবীকে বিয়ে করার চিন্তাভাবনাও করছে।
এটা সুমিদের বাসা। ওরা চার বান্ধবী ব'সে ওদের ড্রইংরূমে। আনুমানিক একঘন্টা আগে বোমাটা ফাটিয়েছে সুমিতা। খবরটা শুনে সুমি, তাহমিনা, দীপা ওর তিন বান্ধবীই ভাবছিল এটা স্রেফ একটা বেখাপ্পা রসিকতা। এ কি আদৌ সম্ভব যে টানা চার বছর ধরে সুমিতা প্রেম করে যাবে আর ওরা কিছুই টের পাবে না?!
এ মুহূর্তে ঘরভর্তি শুধুই নীরবতা। নীরবতা ক্রমেই বড় হতে হতে একটা চারকোণা দেয়াল বানিয়ে ওদের চারপাশে চেপে আসতে শুরু করলে অসহিষ্ণু কোনো একজন ভেঙে ফেললো একপাশের দেয়াল-
'সাদিয়া আপু আর জামাল ভাইয়ের কোনো খবর জানিস?'
সাদিয়া সুমিতার চাচাতো বোন আর জামাল ওর আর এক চাচার ছেলে। বছর ছয়েক আগে ওরা বিয়ে করে ফেললো। চাচা সাদিয়া আপুকে মারতে মারতে দোতলার সিঁড়ির মাথা থেকে নিচে ফেলে দিলে সাদিয়া আপুর মরার দশা; একথা মনে হতেই শিউরে উঠলো সুমিতা। যেকোনো মূল্যে পারিবারিক নিয়মনীতি অক্ষুণ্ণ রাখা পরম কর্তব্য। এই শিক্ষা কি তাকে দেয়নি কেউ? এই মানুষগুলো তাকে মেরে ফেলবে তবু ফারাবীকে বিয়ে করতে দেবেনা। কিন্তু যে করেই হোক ওরা বিয়ে করবেই; তবে লুকিয়ে কিছু করবে না, ওদের জানিয়েই করবে। ওরা তো কোনো অপরাধ করছে না, তাই না? সুমিতা এমন ভাবতে থাকলেও বুকের ধুকপুকুনি একটুকুনও কমেনা ওর।
'সাদিয়া আপুর মিসক্যারেজ হয়ে গেসে আবার, প্রায়ই অসুস্থ থাকে আজকাল। '
'তোর আব্বা কি জানে তুই ওদের সাথে যোগাযোগ রাখিস?'
'মাথা খারাপ! আমাকেও বের করে দিবে!'
''তাহলে! কীভাবে তুই এত সাহস করিস?!
এইবার চুপ সুমিতা। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস, আর কোনো জবাব নাই।
'ফারাবীর চাকরী হয়ে গেছে রেনাটায়, আমিও একটা কিছু করবোই! ওরা কত আর আমাদের ডিস্টার্ব করবে! ঠিক পেরে যাব আমরা।'
এইসময় বেরসিকের মত বলে উঠলো সুমি...
'তুই তোর আব্বা আম্মার একমাত্র মেয়ে সুমিতা।'
এই কথার যেহেতু কোনো উত্তর হয় না তাই সুমিতা সে চেষ্টা না করে ডুব দিল নিরবতায়। পাশের ঘরে বিজ্ঞাপনের আওয়াজ। কেউ টেলিভিশন দেখছে। রান্নাঘরে কাপ আর চামচের টুং টাং, মেঝেতে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার ঝন ঝন শব্দ। রাস্তায় মানুষের হাসি-ঠাট্টা, হই-হুল্লোড়, দোকান-পাট আর জোরে চটুল গান, গাড়ির হর্ন। এ ঘরে মৌন চারজন। সময়টা পড়ন্ত বিকাল।
২।
বিদ্যুতচমক তাদের দৃষ্টিকে কেড়ে নেওয়ার উপক্রম করে; বিদ্যুত চমকালে তারা পথ চলতে থাকে, আর যখন অন্ধকার হয় তখন তারা থমকে দাঁড়ায়.........
সুমিতার কণ্ঠরোধ হয়। এক ফোঁটা, দুই ফোঁটা , পর পর কয়েক ফোঁটা, এর পর ঝর ঝর করে গড়িয়ে প'ড়ে কোরান শরীফের পাতা ভিজে ন্যাতা ন্যাতা। কান্নার দমকে ভেজা কাগজের ওপর নুয়ে পড়ে সুমিতার কপাল, মাথা চেপে রাখা কাপড়ের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে থাকা একটা দুইটা চুল; ও কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করে প্রাণপণ; কিন্তু এ তো দমকা ঝড়ের মতো! তাই হাল ছেড়ে দিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে শেষে। মুখে হাত চাপা দিয়ে শেষ চেষ্টা করে আরেকবার, তবে শব্দগুলো অবাধ্য, ধরে রাখা যায় না। বুকের গভীর থেকে; যতটা গভীরে গেলে আর যাওয়া যায় না, সেই কূপ থেকে হা হা হাওয়ার মতো হাহাকার উঠে আসে, ভেজা পাতার কালো কালো হরফ জ্বল জ্বলে চোখে যেন কৈফিয়ত চায় সুমিতার কাছে - এ কি আক্ষেপের সময়! যখন পবিত্র গ্রন্থ তোমার সামনে! আহা সুমিতা! ......ফারাবী, তোমাকে কি আমি আমার সবকিছু দিয়ে দিতে চাইনি? ফারাবী, তোমাকে কি আমি আমার আল্লার ঠিক নিচেই জায়গা দেইনি? ফারাবী, তোমাকে কি আমি এই বিশ্বসংসারের সবকিছুর ওপরে স্থান দেই নি? ফারাবী, আমি কি আমার জ়ায়নামায ফেলে তোমার ডাকে সাড়া দিতে উঠে যাইনি? কান্নার দমকে দম আটকে মারাই যেত হয়তো, বাঁচিয়ে দিলো দরজার বাইরে পায়ের শব্দ।
ধীরে......খুব ধীরে শ্বাস নেয়ার প্রয়াস পায় সুমিতা। কেননা ওর গায়ে এখনো লেগে আছে সেদিনের দুপুরের ভাত, তরকারী, ডাল, প্লেট, বাটি, চামচের দাগ। সেদিন দাগ লেগেছিলো অনেকক্ষণ; যেদিন দেয়ালের এক কোণে জায়গা নিয়েছে সে, কারণ পেছনে যাওয়ার জায়গা নেই আর। আর কেনই বা যাবে! লাগুক গায়ে ভাত, তরকারী, থালাবাসন ইত্যাদি ইত্যাদি, এমনকি চেয়ারের হাত কি পা। .........'বের হয়ে যেতে বলো ওকে'......। 'এক্ষুনি বের হয়ে যেতে বলো'...। 'আমার রাগ উঠতে উঠতে বের হতে বলো...আমি আজকে খুনই করে ফেলবো'......। একটা কাঠের স্কেল হাতে ছুটে আসতেই পাখির ডানা মেলে সুমিতাকে আঁকড়ে ধরে মা পাখি......স্কেল লাফিয়ে পড়ে ডানায়।
অথচ এখন যখন সুমিতা ভয়ে আতংকে ম্রিয়মাণ, আহাদ করিম ক্লান্ত পায়ে এসে বসেন সুমিতার পাশে, আলতো হাত রাখেন পিঠে, হাতের আঙুল চুইয়ে সুমিতার শরীরের কনায় কণায় ছড়িয়ে যায় মায়া, স্নেহ, অসহায়তা, কান্না।
'তোর ফুপার সাথে কি আমি আরেকবার কথা বলবো মা?'
এতক্ষণে সুমিতা সশব্দ কান্নায় ভেঙে পড়ে, আকুল আবেগে চেপে ধরে ওর আব্বার দুই হাত......
'না, আব্বা, না......'
৩।
"আপনারা আর কোথায় কোথায় দেখা করতেন?”
এইবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। লোকটা এই নিয়ে তিনবার একই প্রশ্ন করলো। সে নিশ্চিত উত্তর দিয়ে লাভ নাই, আবারো একই প্রশ্ন শুনতে হবে, বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো প্রতিদিন একবার করে শুনতে হবে, নয়তো দুই দিনে একবার, নয়তো সপ্তাহে একবার, নাহলে দুই সপ্তাহে একবার, নাহলে মাসে একবার, নাহলে দুইমাসে একবার............মেঝেতে পা ঘষে মন অস্বস্তি জানায়। কাচের টেবিলে প্লাস্টিকের ফুল নিষ্প্রাণ হাসে। আর এই হাসিই বোধ করি ত্যক্ত করে সুমিতাকে। এই লোককে ও বিয়ে করবে না, কিছুতেই না।
ম্যারেজ মিডিয়ার অপরিসর ঘর থেকে বের হয়ে সুমিতার মনে হয় ও যেন আরেকটা দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পেলো। রাত আসি আসি করছে। এই ইট কাঠের জঙ্গলে কীভাবে যেন বেঁচে আছে কিছু চড়ুই, শালিক, নাম না জানা আরো কিছু পাখি। ওরা ওদের অস্তিত্ব জানায় কিচিরমিচির শব্দে, আসন্ন রাতকে স্বাগত জানায় নীড়ের উদ্দেশে পাখা ঝাপটে। ওদের কি কোনো বাসা আছে নাকি? ভাবে সুমিতা। যখন জায়গার এত সংকট এই শহরে?
একটা রিকশা নেবে ভেবেও শেষ পর্যন্ত নেওয়া হয়না। হেঁটে হেঁটেই বাসায় ফেরা যাক। একটু সময় পাওয়া যাবে তাহলে। নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়াটাও সেরে নেওয়া যাবে। আব্বাকে কী জবাব দেবে সেটাও গুছিয়ে নেবে নাহয়। এসব পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকলেও হঠাৎই কান্না পায় সুমিতার এবং এ কারণেই ওর ভীষণ বিরক্তি বোধ হয়। এই নিয়ে ক'বার হলো? ম্যারেজ মিডিয়ার লোকটাও হয়তো বিরক্ত ওর ওপর। তবে এজন্যে তাকে কোনোভাবেই দোষারোপ করা যাবেনা। আর কত! বার বার হয় সুমিতা, নাহয় থেকে ছেলেপক্ষ বিয়ের সম্ভাবনাগুলো নাকচ করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কী করবে সুমিতা!
অনেকটা হাঁটতে হবে। বেশি দেরি হয়ে যাবে কি বাসায় ফিরতে? বাইরের একবিন্দু বারান্দায় একাকী বসে আছেন হয়তো আব্বা। ওর ফেরার অপেক্ষায়। পা চালায় সুমিতা। এক পা দুই পা করে দশ, বারো, বিশ কি তিরিশ চল্লিশ পা যেতেই টের পাওয়া যায় ব্যাপারটা। ও জানতো এটা হবেই; তারপরেও, খানিক পরে সবসময়ের মতো আবারো একটা চেনা আতংক যখন গ্রাস করে ওকে, হতাশা চেপে রাখতে পারেনা সুমিতা। আবার! আবারো কল্পনায় ভেসে আসে সেই একই দৃশ্য। এই পুনরাবৃত্তি অনিবার্য।
কোনো হোটেলে? নাকি ওই মেয়েগুলির বাসায়? কোথাই ওইসব করতো ফারাবী? যেখানেই হোক, সুমিতা শুধু দেখতে পায় একটা এলোমেলো বিছানা, ফারাবী, কখনো চেনা, কখনো অচেনা একটা মেয়ে, বিছানায় ওরা দুইজন......বেশিদূর যেতে পারেনা অবশ্য। তীব্র বিবমিষায় আক্রান্ত হয়ে রীতিমত হাঁপাতে থাকে। ............ এ কী অসুখ দিয়ে গেল ওকে ফারাবী! ওর ভয় হয়। বিয়ের পরের রাতগুলিতেও যদি এইরকম বমি পায় ওর? কী হবে তখন! কেউ কি একটু বুঝবে ওকে? একটু সময় দেবে কেউ? কী করবে সুমিতা তখন?......ফারাবী, কী ছিলোনা আমার মধ্যে? ওটাই কি চাওয়ার ছিলো শুধু? আমাকে একবার শুধু বলে দেখতে! চার চারটা বছর কী মনে করে এতোটা পথ হাঁটলে আমার সাথে?!
আব্বার মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও বাসায় ফিরে আব্বার ঘরে গিয়েই বসে সে। অনিবার্য কোনোকিছু এড়িয়ে যাওয়া কাজের কিছু নয়। এটা সুমিতার নিজস্ব মতামত। আজকাল কীভাবে যেন আব্বা ওর মুখ দেখলেই বুঝতে পারেন কী হয়েছে আজ বা কী বলতে চায় সুমিতা। তাই আজও ও কোনো কথা বলেনা। অপেক্ষায় থাকে।
'বয়স তো থেমে থাকবে নারে মা!'
'তাতে কী আব্বা! বয়স হয়ে গেলে হবে! বিয়ে না হলে না হবে! বিয়ে না করলে এমন কী বা হবে আর!'
'আমার অবস্থা তো বুঝিস! আমার সময়ও তো আর বেশি নাই! তোকে কে দেখবে?'
'সময় বেশি নাই মানে কী! তোমার কিচ্ছু হয়নি! ঠিক হয়ে যাবে। আর আমার চাকরীটা তো আছে!'
এইবার আর কোনো জবাব দেন না আব্বা। নিস্তেজ চোখে সুমিতার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করেন শুধু। মাথাটা অনেকখানি ঝুলে যায় তাঁর। সুমিতা খুব সাবধানে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। একটা অদ্ভুত অনুভূতি টের পায় আজ। ওর কেন যেন মনে হয় আব্বাও হয়তো চান না সুমিতা বিয়ে করে চলে যাক। সুমিতা না থাকলে তাঁকে দেখে রাখবে কে!
খুব পাতলা, সূক্ষ্ণ একটা চাদরের মত সন্ধ্যা নেমে আসে ধীরে, একটা বিন্দুর মত নগণ্য বারান্দায় বসে থাকা মানুষ দুজনকে ঢেকে দেয় ধীরে ধীরে। ঘরমুখী মানুষের স্রোত কমে যায়, পাখিদের ফিরে যাওয়া শেষ হয় অবশেষে, ঘরে ঘরে আলো জ্বলে ওঠে, একটা একটা করে তারা দেখা দেয় এখনো-নীল আকাশের এদিকে ওদিকে, ওরা বসেই থাকে।
৪।
সাতসকালে রাস্তা থাকে একদম ফাঁকা। তাই শান্তি। একটানে পৌঁছে গেছে সুমিতা। শীত শীত বোধ হয়, আরাম লাগে তাই।
'সুমিতাপু! আমি জানতাম তুমিই সবার আগে আসবে......তুহিনের সাথে এইটা নিয়ে বাজি ছিলো আমার...কী ঠিক বলিনি?'
ঝলমলে হাসিতে তুহিনের দিকে মুখ ফেরায় তৃষা। সুমিতার মনটা এই নরম সকালের মতোই স্নিগ্ধ হয়ে যায়। তৃষা আর তুহিন বিয়ে করেছে সম্প্রতি। একই অফিসে কাজ করে দুজন। অবশ্য আজ কেউ একা আসবে না। স্পাউস এলাউড – বলে দেয়া হয়েছে। গন্তব্য শফিপুর।
এক এক করে দুজন, তিনজন, দুজন, চারজন, দুজন, একজন এমন করে ভর্তি হয়ে গেলো জায়গাটা। এবার রওনা দেওয়া যায়।
আর তখুনি। সুমিতা খেয়াল করলো ব্যাপারটা। এর আগের বছর, তার আগের বছরেও তো সুমিতা পিকনিকে গেছে। কই, তখন তো এভাবে খেয়াল করেনি! বাসে সীট একসারিতে দুইটা করে। গভীর ভাবে লক্ষ্য করে সে এবং একটা হিসাব করতে থাকে। যাদের সাথে সঙ্গী আছে, তারা হয়তো...... হয়তো কেন! নিশ্চিতভাবেই নিজ নিজ সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে বসতে চাইবে। অনুমান করতে কষ্ট হয়না। যারা এখনো একা, দুর্ভাগ্যবশত ওরা সুমিতার বেশ ছোট, নিজেরা নিজেরা একসাথে বসে আড্ডা দিতে দিতে যেতে চাইবে। সুমিতা ওদের সাথে বসলেও ওরা কিছুই বলবে না, তবে ওদের হয়তো.........হয়তো কেন! নিশ্চিতভাবেই ভাল লাগবে না। এখন সুমিতা কী করে! এ কী বিপদ! আচমকা ও টের পায় মারাত্মক মন খারাপ হয়ে গেছে ওর। এতটাই বেশি যে নিজেই অবাক হয়ে যায়। বুকের ভেতর ভীষণ ভারী দলা পাকানো কালো মেঘের চাপে সুমিতা এতটাই মুহ্যমান হয়ে পড়ে যে ওকে সবার সামনে ফোন কানে ধরতে হয়। ওপারে আব্বা। তিনি অসুস্থ। এইমাত্র খবর পাওয়া গেল। এ অবস্থায় কী করে পিকনিকে যায় সুমিতা?!
বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হয় না । এতটা বিষণ্ণ মুখ আগে আগেই বুড়িয়ে যাওয়া মানুষটাকে দেখাতে চায়না সুমিতা। এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে ভাবে, এই ছুটির সকালেও রাস্তায় এত মানুষ কেন? ব্যস্ত, বিরক্ত, অসহিষ্ণু, নির্বিকার, কোমল, কঠিন...হরেক রকম মানুষের মুখ। অথবা মুখোশ। এবং একসময় দেখে ও রুনু আপার বাসার কাছাকাছি চলে এসেছে। ভার্সিটিতে পড়ার সময় পরিচয়। আগে প্রায়ই আসা হতো দল বেঁধে। রুনু আপার রান্না, রুনু আপার গল্প দুটোই টানতো ওদের। এখনো টানে! এ বাড়িতে আসার পথটাই ভুলে ছিল শুধু। আজ কি যাবে একবার?
কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিলো রুনু আপা। সেই রুনু আপা! পুরোনো বই, পুরোনো অ্যালবাম, পুরোনো নরম শাড়ি আর রুনু আপা! সব যেন সমার্থক। মন আর্দ্র করে দেয়া একটা পুরোনো ঘ্রাণ। ভুলে থাকা মায়ার উঁকিঝুঁকি।
'কী রে! তুই সত্যিই সুমিতা তো!'
বুকের ভেতরের চাপটা অকস্মাৎ কমে যায় অনেকখানি। এ বাড়ির গন্ধটা অবিকল তেমনই আছে। যেমনটা ছিলো বহু বহু দিন আগে। সাদা দেয়াল, মেঝের কিছুটা ওপরে দেয়ালে মেটে রঙ। কাঠের সেই চেয়ারগুলি। রুনু আপা। আর রুনু আপার সেই ঘরটা। এ ঘরে ঢুকতেই কোনো এক ছায়াময় জগৎ থেকে একদল সদ্য তরুণীর ঘুঙুরের আওয়াজ তোলা কণ্ঠ স্বাগত জানায় সুমিতাকে। কেন সে ভুলে ছিলো রুনু আপাকে? এই ঘরটাকে?
ঘন্টাখানেক মাত্র। টের পায় সুমিতা, বুকের চাপটা বেড়ে যাচ্ছে আবার। তখুনি কেন যে নিষ্ঠুরের মতো ফারাবীর কথা তুললো রুনু আপা।
'ফারাবীর কোনো খবর পাস কারো কাছে?'
'নাহ'!'
আবার চুপচাপ বেশ কিছুক্ষণ, দুইজনই। হয়তো ওরা বুঝতে পারেনা কী বলা উচিত এখন। হয়তো ওরা নিজের নিজের জগতে ডুবে থাকাই নিরাপদ বোধ করে। যে জগত রঙিন অথবা সাদাকালো।
'ফারাবী কাকে বিয়ে করলো শেষ পর্যন্ত? বিছানায় নিতো যে মেয়েগুলিকে তাদের কাউকে?'
ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলালো সুমিতা। এ কেমন প্রশ্ন! কী করে একথা বললো রুনু আপা?!
'জানিনা। '
'একটু শক্ত হতে চেষ্টা কর সুমিতা। ওই জঘণ্য ছেলেটাকে ঘেণ্ণা করতে পারিস না তুই?'
জবাবে আপনাআপনি দুচোখ উপচে পড়লো জলে। মিনিট দশেক বিরামহীন কেঁদে যায় সুমিতা, নিঃশব্দে। ওকে কাঁদতে দেয় বিছানায় মুখোমুখি বসে থাকা অপরজন।
'এখনো এত ভালবাসিস ওকে?! এত জঘণ্য প্রতারণার পরও!'
'ভালবাসি না তো!'
'তাহলে কাঁদছিস কেন!'
হু হু কান্নায় এলিয়ে পড়ে এবার! বহুদিনের জমে থাকে কান্না, প্রশ্ন, ক্ষোভ গলে গলে পড়ে। হায়! মুখটা হঠাৎ নীল সুমিতার! এ কি অপমান? নাকি অন্য কিছু!
'আমি দেখতে কেমন বলতো? ...খুব খারাপ? ...........একটাদিনের জন্যেও......একটা দিনের জন্যেও ফারাবী আমার হাতটাও ধরেনি......অথচ...অথচ... '
অথচ কী, একথা সুমিতা যেমন জানে, রুনু আপাও জানে। কিছু একটা বলার চেষ্টায় পুনর্বার কান্নায় ভেঙে পড়লে একটা উষ্ণ হাতের তালু স্পর্শ করে সুমিতার গাল; একজোড়া হাত টেনে নেয় সুমিতাকে পরম যত্নে; কোমল আঙুল খেলে যায় চোখের নিচে, ভেজা গালে; উষ্ণ, নরম ঠোঁট ছুঁয়ে যায় সুমিতার কানের পাশটায়; ফিস ফিস করে কথামালা ভেসে আসে বাতাসে......'ওরা আমাদের কখনো বোঝেনি সু, কখনো বুঝতে পারবে না......';
সুমিতা আড়ষ্ট, সুমিতা শীতল, সুমিতা হতচকিত।
কোমল বেষ্টনীতে আবদ্ধ সুমিতা বিস্ময়ে শ্বাস নিতে ভুলে যায়; একটা হালকা সুগন্ধ ওর ইচ্ছা অনিচ্ছাকে তোয়াক্কা না করেই ঢুকে যায় বুকের ভেতর; 'তুই খুব সুন্দর সু...খুউব সুন্দর';......নিশ্চুপ সুমিতা বেষ্টনী ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইলে আরো জোরে ওকে আঁকড়ে ধরে বেষ্টনী......বেড়ে যায় নিঃশ্বাসের উত্তাপ...ঠোঁট বার বার ছুঁয়ে যায় ঠোঁটে, গালে; ''আমি তোকে ভালবাসি সু...। তুই আমাকে বাসবি না?'......সুমিতার অনুভূতির থই নিজেই খুঁজে পায়না সুমিতা...ভাল, খারাপ, উচিত, অনুচিত, পাপ, পূণ্য, ইহকাল, পরকাল কোনটা কী ভাবতে ভাবতে সুমিতা প্রচন্ড অনিচ্ছায় টের পায় ওর ভাল লাগছে!...এই উষ্ণতা ওর ভাল লাগছে! শীতলতায় সঞ্চারিত হচ্ছে পাল্টা উষ্ণতা। পাপবোধে কুঁকড়ে যেতে যেতে অবাক সুমিতা টের পায় ও অস্ফুটে বলে উঠছে ...'বাসবো!'......
২৩/০৯/২০১০
মন্তব্য
আপু,
'নীরার সাথে সকাল -সন্ধ্যা' গল্পে শিমুল ভাই কিন্তু যথার্থ মন্তব্য করেছিলেন!
নারীজীবনের নিঃসঙ্গতা, মানসিক টানাপড়েন, মনে নিতে না পেরেও মেনে নেওয়ার চেষ্টা-- এই ব্যাপারগুলো সবসময় খুব সহজভঙ্গিতে গল্পে তুলে আনেন আপনি...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তোমাকে ধন্যবাদ আপু। আমি আসলে একইরকম বিষয়ের বৃত্তের মধ্যে আটকে গেছি, কাজের চাপের ফাঁকে ঝটপট লিখতে গিয়ে আবারো ঐ বৃত্ত থেকেই বিষয় খুঁজে নিলাম। এর থেকে বের হতে হবে।
বইখাতা - আপনার গল্পের অনেক প্রশংসা আগে করেছি। আজকে প্রথম থেকে পড়তে পড়তে ভাবছিলাম দু'একটা জায়গায় একটু অন্যমনস্কতার ছাপ - হয়তো টাইপো, হয়তো বাক্যগঠনে সামান্য অসামঞ্জস্য (যেগুলো আগের গল্পগুলোতে ঠিক চোখে পড়েনি) - এরকম কিছু ব্যাপার মন্তব্যে লিখবো।
কিন্তু, শেষটায় এসে সব গৌণ হয়ে গেলো!
ভালো লেখার ক্ষমতার সাথে সাথে লেখকের সাহসকেও সাধুবাদ জানাচ্ছি
স্নিগ্ধাপু (আপু বললাম, আপনি আমার বড় হবেন), আমি যখন থেকে লিখতে শুরু করেছি তখন থেকেই লেখা নিয়ে আপনার মন্তব্য, প্রশংসা, উৎসাহ পেয়ে এসেছি, এজন্যে অনেক কৃতজ্ঞতা। সত্যি বলতে কি, লেখা নিয়ে আপনার মন্তব্যে আমি আমার আনাড়ি লেখালেখি নিয়ে অনেক সাহসও পেয়েছি।
লেখায় অনেক সমস্যা তো আছেই, তবে এই লেখা পোস্ট করার সময় একটূ ভয় পেয়েছিলাম শেষের অংশটার জন্যেই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
বইখাতা,
আপনার লেখা বরাবরের মতোই চমৎকার। ঝরঝরে গদ্যের কারণে পড়ে সুখ। শুধু একটা সমালোচনা করতে চাই, স্নিগ্ধার সাথে খানিকটা অসহমত হয়ে, যে কারণে তাঁর মন্তব্যের নিচে লিখছি। সাহসের প্রয়োজনীয়তার কথাটায় অবশ্যই সহমত। কিন্তু এই সমাপ্তিটা নিয়ে কিছু যুক্তিগত দ্বিমত পোষণ করি, যা দীপা মেহতার 'ফায়ার' ছবি নিয়েও ছিলো।
রুনুর প্রাককথন যেহেতু জানা যায় নি, তাঁর ওরিয়েন্টেশন কী তা জানতে পারি নি। তিনি সমপ্রেমী হলে ফারাবী তাঁকে কামনা না করলে তিনি দুঃখ পাবেন কেন বুঝলাম না (আর না হলেও দুঃখ পাবার কারণটা জোরালো হয় না, অনেক পুরুষই অনেক নারীকে কামনা করে না, এমনকি বহুগামী হলেই সর্বগামী হবে এমনটা নিশ্চয়ই নয়)। কিন্তু আসল বক্তব্য সুমিতাকে নিয়ে। ফায়ারে যেমন দুই জা স্বামীসোহাগবঞ্চিত হয়ে সমপ্রেমে দীক্ষা নেয় বলে মনে হয়, এখানেও তেমনটা লাগলো। আম না পেলে আনারস খাওয়া যায়, দুটোই গ্রীষ্মের ফসল, কিন্তু প্রেমিকের প্রতারণা থেকে এমন ডিগবাজি খাওয়াটা প্রায় অসম্ভব, এক যদি না সে উভগামী/প্রেমী হয় আগে থেকেই। ফায়ারে তবু তাঁদের কিছু সাংসারিক বাধাবন্ধন ছিলো, এখানে একটি সিঙ্গল হেটেরোসেক্সুয়াল মেয়ে কেন আরেক জন পুরুষকে বেছে না নিয়ে এমনটা করবে তার কারণ ভেবে পেলাম না। তবে কি আপনি ওরিয়েন্টেশনকে চয়েস মনে করেন?
মূলত পাঠক,
আমার মন্তব্যের উত্তরে যেহেতু লিখেছেন বললেন, আমিও তাই আমার বক্তব্য আপনার মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য হিসেবেই জানাচ্ছি। বইখাতা কী বলবেন জানি না তবে শেষটা নিয়ে আপনার যে মত, আমি তাতে ভিন্নমত
কখনও কখনও ওরিয়েন্টেশন চয়েসও তো হতে পারে, পারে না? অনেক সমকামি কিন্তু ঠিক এই ব্যাপারটাই প্রতিষ্ঠিত করতে চান - যে হেটেরোসেক্সুয়াল সমাজে যে 'চয়েস'টাকে বাই ডিফল্ট বিষমকামিতার গন্ডীতে বেঁধে ফেলা হয় সেটার বিরুদ্ধে। ওরিয়েন্টশন ছাড়াও যদি কারুর এটা 'চয়েস' হয়, তো তাইই।
আচ্ছা, ধরে নিলাম আমি ভুল। ওপরের কথাগুলো ঠিক নয়, এটা চয়েসের ব্যাপার নয়। যে জেনেটিক্যালি কিংবা বায়োলজিক্যালি hard wired, সেই শুধু সমকামি প্রেমে আসক্ত হতে পারে। গল্পের শেষে (আমি অন্তত পড়ে) এমন কিন্তু আভাস পাই নি যে সুমিতা সারাজীবনের জন্য লেসবিয়ান হয়ে গেলো, বা ফারাবীর কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সব পুরুষের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে নারীপ্রেমেই মনোনিবেশ করলো। রুনু'র আহ্বানে প্রাথমিক আড়ষ্টতা এবং ধাক্কা কাটিয়ে সাড়া দেওয়া - এটা একদম তাৎক্ষণিক, one time ও তো হতে পারে। সুমিতা ইমোশোন্যালি ভালনারেব্ল, নিঃসঙ্গ, শারীরিক দিক থেকেও অনাহারী - সুমিতা সাড়া দিতেই পারে। সব্বাই যে ঐ পরিস্থিতিতে দেবেই এমন কথা নেই, লেখক এই গল্পে সেরকমটা বলেনওনি। কিন্তু, কেউ দিলে আমার কাছে সেটা অবিশ্বাসযোগ্য নয়। তাছাড়া, আপনিও যে সম্ভাবনার কথা বললেন - সুমিতা যদি বাইসেক্সুয়াল হয়ে থাকে? নিজের এই দিকটার কথা এর আগে তার হয়তো জানারই সুযোগ হয় নি, কারণ সেরকম কোন পরিস্থিতিই উদ্ভূত হয় নি?
মিরা নায়ারের 'ফায়ার' এর সাথে এই গল্পের সেই হিসেবে খুব একটা মিল আমি পাই নি। মিরা নায়ার দুজন নারীর মধ্যে প্রেম 'গড়ে ওঠা'র কাহিনী বলেছেন, এখানে শুধু সুমিতার বিভিন্ন অনুভূতির রিফ্লেকশন দেখানো হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে।
পাঠকদা,
প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এই লেখা নিয়ে আপনার ভাবনা এবং ভিন্নমত প্রকাশ করে যাবার জন্য।
একটু ভুমিকা দিয়ে নিই। সমকামিতা/উভকামিতা গল্পে নিয়ে আসার চিন্তা আমার মাথায় এসেছে ব্লগে অভিজিৎদার "সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্বিক অনুসন্ধান" এই লেখাটা পড়ে। কিন্তু সমস্যা হলো এই যে - এই ব্যাপারটা নিয়ে লেখার মতো যথেষ্ট দক্ষতা আমার নেই, তারপরও সাহস করে লিখলাম।
রুনুর সাথে ফারাবীর তো কোনো যোগাযোগ নেই, গল্পে তেমন দেখাইনি (কোনো ভুল হয়েছে কি?!), সে ফারাবীকে শুধুমাত্র সুমিতার প্রেমিক হিসেবেই চেনে। তাই রুনুর ফারাবীকে বা ফারাবীর রুনুকে কামনা করার কোনো কারণ নেই। এ নিয়ে রুনু দুঃখিত, এমনটাও তো দেখাইনি। রুনুকে নিয়ে তেমন কোনো তথ্য দেয়া হয়নি কারণ গল্পের আকার বড় হয়ে যাচ্ছিল (এমনিতেই অনেক বড় হয়ে গেছে), আর এই গল্পের জন্য রুনুর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়ার প্রয়োজনও আসলে আমি অনুভব করিনি। রুনুর আচরণে আমি প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি যে রুনু সমকামী/উভকামী এবং এ নিয়ে সে সচেতন, তার মাঝে কোনো দ্বিধা নেই। সে যে কারো কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সমকামী আচরণ করছে এরকম কোনো ইংগিতও কিন্তু আমি লেখায় দেইনি। আর সুমিতার ব্যাপারটা অন্যরকম। এমনও তো হতে পারে সুমিতা নিজেও বাইসেক্সুয়াল, সে নিজে সেটা জানেনা, জানার মতো পরিস্থিতি হয়নি কখনো। সে নিজে এই আবিষ্কারে যে বিস্মিত এবং অপরাধবোধে আক্রান্ত, এটা গল্পে ইংগিত দিতে চেয়েছি (সফল হইনি বোঝা যাচ্ছে)। অথবা এমনও তো হতে পারে এটা ছিল চরম দূর্দশাগ্রস্ত মানসিক অবস্থায় হঠাৎ সমর্পণ! এইরকম যে সবক্ষেত্রেই/বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হবে এমন তো নয়। এমন কথা বলার উদ্দেশ্যও আমার ছিলো না। এটা নিতান্তই ব্যতিক্রম। তবে বাইসেক্সুয়াল/হঠাৎ-ঘটে-যাওয়া হলেও সে যে সবসময়ের জন্য শুধু একজন নারীকেই বেছে নিচ্ছে (মানে আম না পেলে আনারস ) তা কিন্তু নয়। হতে পারে ব্যাপারটা ওয়ান টাইম, বা আবারো হয়তো হবে। হতে পারে সে রুনুকেই বেছে নিচ্ছে সবসময়ের জন্য (এটা কিন্তু বোঝাতে চাইনি) অথবা সে বিয়ে করে সংসারী হয়ে যাবে একসময়, রুনুর ব্যাপারটা শুধুই স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে, বা বিয়ের পরেও হয়তো কন্টিনিউ করবে। অনেক সম্ভাবনাই থেকে যায়। তবে, সুমিতা নিজে যে বাইসেক্সুয়াল, হঠাৎ করে একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে সেটা সে অনুভব করেছে, মূলত এটাই ইংগিত করতে চেয়েছিলাম। সফল হইনি।
পাঠকদা, আপনার এই পর্যবেক্ষন, মতামত আমাকে সাহায্য করবে যদি একই বিষয়ে আবার কখনো লিখি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
এই ব্যাখ্যাটা আমার পাঠক হিসেবে খুব পছন্দ হলো।
গল্প চমৎকার লেগেছে বলেই এতো কূটতর্ক করলাম। আরো আসুক এমন লেখা, নানা ধরণের পরীক্ষানিরীক্ষা সমেত।
লেখাটা অন্যরকম, সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখা একটা উপন্যাসের কথা মনে করিয়ে দিল শেষ অংশটুকু।
গল্প পড়ছিলাম মনে হয়নি, মনে হলো কাহিনি শুনছি কোন- লেখার গুণেই হয়ত।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
তাই! সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখা তেমন পড়া হয়নি। আপনাকে ধন্যবাদ মর্ম।
ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনাকে ধন্যবাদ।
ভাল্লাগসে।
অনুভূতির দারুণ প্রকাশ। শুভেচ্ছা।
কুটুমবাড়ি
ধন্যবাদ কুটুমবাড়ি।
খুবই চমৎকার লেখা। ঝরঝরে, প্রবাহমান। ভাল লাগল।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
ধন্যবাদ অমিত্রাক্ষর।
এই গল্প পাঠকের চোখে না পড়াটা অন্যায় হচ্ছে। ...
আপনি পুনরায় নারীদের নিয়েই লিখলেন কিন্তু !! যাক, কাজের কথা হচ্ছে গল্পের শেষটা সত্যি ভালো লেগেছে।
খারাপ লেগেছে- স্থানান্তরগুলো। একের পরে দুই, তিনের পরে চার মনে হয় হঠাৎ করে এলো। আশা করি নাই আর কি...
_________________________________________
সেরিওজা
ধন্যবাদ সুহান । পাঠকের অন্যায় হবে কেন , এ গল্পটাই পাঠককে সন্তুষ্ট করার মতো যথেষ্ট ভাল হয়নি। আর লেখাটা আপনার এবং আরো কয়েকজনের যে চোখে পড়েছে এটাই কম কি!
স্থানান্তরের ব্যাপারটা বলি, এখানে সুমিতার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা পর্যায় থেকে শুরু করে চাকরিতে অনেকদিন কেটে যাওয়া পর্যন্ত সময় বিস্তার করেছে। এই বড় সময়টা পুরোপুরি তুলে আনা সমস্যা, ভাগ করে দেখাতে গিয়ে একটা সময় স্তর থেকে আরেকটা সময় স্তর এ যাওয়ার ব্যাপারটা মসৃণ করতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা।
প্রশংসা কিংবা নিন্দা কোনোটাই করলাম না এ গল্পে।
নতুন গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
আচ্ছা। গল্পটা তাহলে যাচ্ছেতাই হয়েছে বোধহয়!
আপনাকে ধন্যবাদ শিমুল।
হা হা।
এই গল্পটা মনে হয় আর বেশি পাঠকের পড়া উচিত ছিল
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
নিবিড় ভাল আছো তো?
গল্পটা ভাল লেগেছে। কিন্তু। মনে হল আরেকটু দীর্ঘ হলে ভাল হত। আরেকটু বিস্তার।
বাঁকগুলো পরিষ্কার হত তাহলে। আরো অনেক অনেক লিখুন। শুধু নারী জীবন নিয়ে লিখলেও কোন আপত্তি নেই, আপনার যা লিখতে ভাল লাগে, তাই লিখুন
ধন্যবাদ আনন্দী। গল্পটা এমনিতেই এত বড় হয়ে গেছে, আর বড় করতে চাইনি তাই। গল্প থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশ ছেঁটে ফেলার মত দক্ষতা হয়নি এখনো - এটাই সমস্যা।
খুব ভালো লেগেছে গল্প পড়ে।
সমালোচনা করতে হলে এইটুকুই বলবো রুনু আপার চরিত্রটা ঠিকমতো আসেনি।
মনে হয়েছে শুধুমাত্র সুমিতার জন্যই তার আগমন।
আরেকটা কথা বলি। কিছু মনে করবেন না।
লেখার বিষয় নির্বাচন একদম লেখকের।
তবু আপনার মতো সুলেখক শুধু নারী নিয়েই কেন লিখবেন?
সবার কথা লিখুন। আপনার হাতে সবাই/ গল্প হয়ে উঠুক।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি ঠিকই ধরেছেন, রুনু আপার চরিত্রটাকে সুমিতার জন্যই আনা হয়েছে। শুধু রুনু না, ফারাবীর চরিত্রও সুমিতাকে ঘিরেই। ফারাবী আর রুনু আপা - এই দুইটা চরিত্রের বিস্তার আরেকটু বেশি করতে গিয়েও করিনি গল্পের আকারের কারণে।
সুলেখক হওয়ার মতো লেখা কি এখনও একটাও লিখতে পেরেছি! ধন্যবাদ। নারী-চরিত্র প্রধান লেখা থেকে আমিও বেরোতে চাইছি। দেখি।
পড়ে ভালো লেগেছে...
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
ধন্যবাদ।
আমার বক্তব্যটা স্নিগ্ধা বলে দিয়েছেন
ভালো লেগেছে...নানান বিষয় নিয়ে লিখুন।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমি যে দীপা মেহ্তার জায়গায় দুই দুইবার মীরা নায়ার লিখলাম, সেটাতেও তাইলে আপনি একমত!! দেখলাম মূলত পাঠক মহাশয়ও ব্যাপারটা ধরিয়ে দিলেন না ...... এমনই হতাশ তিনি ...... (ফ্যাঁসসসস)
ধন্যবাদ তাসনীম ভাই।
কিছু জায়গায় মনটা খচখচ করছিল করছিল, তবে আপনার ক্ল্যারিফিকেশনের পর ও নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভাল ।
এ মওকায় বলে যাই, আপনার গল্পগুলো কিন্তু আমার বেশ লাগে। এ গল্পটাও লাগলো।
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
আচ্ছা তাই!
ধন্যবাদ অদ্রোহ।
প্রথমদিকের ছোটখাট অস্বস্তি শেষে এসে একেবারে উধাও৷ সবমিলিয়ে চমত্কার৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি এত সুন্দর করে লেখেন কিভাবে? দৃশ্যগুলো এত আশ্চর্য নিখঁতভাবে বর্ণনা কিভাবে করেন? আপনার সবলেখাগুলো একে একে পড়ে যাচ্ছি আর একারণে আমার মুগ্ধতার রেশও ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
--শাহেদ সেলিম
আপনাকে ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন