ড্রইংরুমের একপাশের দেয়াল থেকে হামলে পড়ছে আগ্রাসী সমুদ্র। হামলে পড়লে কী হবে! ভেজাতে পারছে না কিছুই। কেননা তার রাজত্ব নির্ধারিত কেবল একটামাত্র দেয়ালে। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত – ব্যস এটুকুই। তীব্র নীল আকাশের একচিলতে মুখ। বাকিটা বিশাল সব ঢেউ আর ঢেউয়ের চূড়ায় ফেনার রাশি; এই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়লো দেয়াল ঘেঁষে রাখা সোফাটার ওপর। ওখানে ব'সে সুমিতা। ঢেউগুলি একমুঠ জায়গা ছেড়ে দিয়েছে বালুকাবেল ...
'না, আফসোস করবো কেন! ভাল মন্দ যাই হোক না কেন সিদ্ধান্তটা আমারই হওয়া উচিত। জীবনটা তো আমার, তাই না?' কাল সন্ধ্যায় বলছিল নীরা। তন্ময়দা তার নতুন বান্ধবী সোমাকে নিয়ে বসেছিল অমাদের উল্টোদিকের বেঞ্চে। নরম সরম পুতুলের মতো মেয়েটা। বার বার ফোনে খবর নিচ্ছিল বাচ্চা খেয়েছে কিনা। টু'তে পড়ে ওর ছেলে। আমাদের সবার হাতে ছিলো চায়ের কাপ। আমি তাকিয়ে ছিলাম নীরার হাতের তালুর দিকে। ঘামছিল। হলুদ আলোয় ওর চ ...
আচানক আমাদের আরিফকে কাফকায় পেলো। বলা ভালো কাফকার মেটামরফোসিসে পেল। এটা ছিল এক অভূতপূর্ব ব্যাপার। অবিশ্বাস্যও বটে! কেননা আরিফ বইটার, মানে মেটামরফোসিসের কথা বলছি, শেষ পাতা পর্যন্ত যেতে পারবে এটা কে ভাবতে পেরেছিল! আমরা যারা আরিফকে চিনি তারা কেউই এটা ভাবিনি। বইটা ও কার বাসা থেকে, আড্ডার কোন ফাঁকে নিজের ব্যাগে পুরে ফেললো এটাই তো কেউ খেয়াল করেনি। তবে বইটা ওকে নাড়াচাড়া করতে দেখা গেছ...
শহর থেকে মাইল কয়েক দূরের এই নারকেল গাছ ঘেরা কলেজ আর কলেজ-ক্যাম্পাসটি বড়ই মনোরম। এখানে ক্ষণ-অনুক্ষণ, দিন-রাত, মাস-বছর জুড়ে শান্তির হাওয়া বয়। নীল নীল আকাশ, সাদা সাদা মেঘ ভালবাসায় পেলব। ঝিরঝিরে বৃষ্টি, দামাল বৃষ্টির ধারায় কালো কালো ময়লা ধুয়ে জমা হয় বসতির বাইরে। নারকেল গাছগুলির লম্বা চেরা পাতায় সবুজ সবুজ প্রশান্তি, পেয়ারা গাছের ঈষৎ মোটা ডালগুলি দামাল বাচ্চাদের ভারে পড়ো পড়ো, তবে সাম...
(১)
আজকাল আমি হঠাৎ হঠাৎই কেমন বিভ্রান্ত হয়ে যাই। বিভ্রান্তিটা নিজেকে নিয়েই। এই যেমন সব কাজ শেষে লাইটটা নিভিয়ে শুতে যাব, চোখ চলে গেল বাইরের আঁধারে। পায়ে পায়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। নিস্তব্ধ রাত। জবা গাছটার ঝাঁকড়া জমাট ছায়ায় জোছনার জাফরি কাটা আঙিনা। ফিনফিনে বাতাস। কালচে জবার হাতছানি। রাতের প্রাণীদের চলাফেরার খস্ খস্ শব্দ। মনে হয় যেন বাইরের আলো-আঁধারিতে কিছু একটা আছে। প্রব...
নীলচে আগুনের দিকে আমি তাকিয়ে ছিলাম একমনে। হাজারটা চিন্তা জট-পাকানো মাথায়। কিছুই ভালো লাগছিল না। কী ভেবে হঠাৎ বাইরে আসতেই আমি তাকে দেখতে পাই।
হাসপাতালের করিডোরের এক প্রান্তে সিঁড়ি, সিঁড়ি দিয়ে উঠে ডানে ভি আই পি রুমগুলি । ওই প্রান্তে ঠিক সিঁড়ির মাথায় খুব মায়াময় মুখের একটা বাচ্চা ছেলে, বসে আছে একটা সাদা মোটাসোটা বিড়ালের সামনে, সতর্ক ভঙ্গিতে । মুখোমুখি বাচ্চা ও বিড়াল – সমান সতর্ক...
গভীর রাতে আচমকা ঘুম ভেঙে গেল। কোনো কারণ নাই, তবুও ঘুম ভেঙে গেল। শব্দ বলতে আছে শুধু বাতাসের সর সর শব্দ, আলো বলতে আছে শুধু ডুবে যাওয়া চঁদের রেখে যাওয়া প্রায়ান্ধকার আলো, তারপরও ঘুম ভেঙে গেল।
নাজনীন এমনভাবে চোখ মেলে যেন সে এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো না, কোনো কিছুর অপেক্ষায় চোখ বন্ধ করে ছিলো শুধু। ডান কাতে শুয়ে ছিলো সে। ডানদিকেই দরজা। খোলা। চাপা, ঝিম ধরানো আলো। বারান্দায় এসে পড়া গাছের বড় ডালট...
দিনের শুরু।
ভোর। বন্ধ কাঠের দরজার চিকন ফাঁক গ’লে, বন্ধ কাচের জানালা ঢাকা ক্লিপ আঁটা পর্দার কোণ গ’লে তরতাজা, নতুন আলো এসে ঘরের ঘন, চাপা অন্ধকার এখন পাতলা। ভেতরটা গুমোট। ক্ষীণ বাসি গন্ধ। মুখোমুখি দুই খাটে আর মেঝেতে - মোট তিনজন ঘুমন্ত এখনও। সাড়ে ছ’টা বাজল। আর সেই সাথে কর্কশ সুরে বাজলো অ্যালার্ম।
রাবেয়া সুলতানা।
অ্যালার্ম বন্ধ করে বিছানায় উঠে বসে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ঝিমান রাবে...
(শুরুতে আমার নিজের কিছু অনুভূতির কথা বলে নিই। এর আগেও ’গল্প’ ক্যাটাগরিতে লেখা দেয়ার সময় এই কথাগুলি আমি বলতে চেয়েছি, কিন্তু কথাগুলো কে কেমনভাবে নেবেন, কেউ বিরক্ত হবেন কিনা এই সংশয়ে বলা হয়নি। এবার হঠাৎ মনে হলো, বলেই ফেলি; এতে লেখা নিয়ে আমার মনের অস্বস্তিবোধ তো একটু কমবে !
’গল্প’ ক্যাটাগরিতে আমি লেখা দিলেও লেখাগুলো আসলেই গল্প হিসাবে দাঁড়ায় কিনা এ ব্যাপারে আমি খুব, খুবই সন্দিহান। এক...
১.
অনেক চেষ্টা ক’রেও জিনিয়া লোকটাকে খসাতে পারে না। কালো, মাঝারি লম্বা, মধ্যবয়স্ক, নীল-কালো ছাপা, চকচকে শার্ট গায়ে একটা লোক। লোকটা কখনো ওর পাশে পাশে - কখনো পেছনে পেছনে - কখনো সামনে সামনে হাঁটে - হাঁটতে হাঁটতে একটু পর পর জিনিয়ার মুখের দিকে তাকায়। জিনিয়া হাঁটার গতি কমালে সেও কমায়, গতি বাড়ালে সেও বাড়ায়। ’ভালো যন্ত্রণায় পড়া গেল ’ - জিনিয়া এইরকম ভাবে। এমনকি রাস্তা পার হয়ে এপাশে এলে একটু পর ...