খবরটা পুরাতনও হতে পারে, কিন্তু আমার চোখে পড়লো গতকাল। বেশ অবাকই হলাম।
ড্রেক্সলমাইয়ার, জার্মানীর স্বয়ংক্রিয় মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাতা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তাদের টেকনিক্যাল ডিজাইন ল্যাব স্থাপন করতে যাচ্ছে। ডিজাইনাররা মূলত পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাসবহুল কয়েকটা ব্র্যান্ডের গাড়ির বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ব্যবস্থার মানোন্নয়নের উপর কাজ করবেন।
স্বাভাবিকভাবেই খুবই আগ্রহবোধ করলাম এমন খবরে। আগে কখনো নাম-না-শোনা এই প্রতিষ্ঠানটির খোঁজ নেওয়ার জন্য নেট ঘাটতেই জানতে পারলাম এর সম্পর্কে বেশ দারুন কিছু তথ্য।
জার্মানীর ভিলসবিবার্গ কেন্দ্রিক ড্রেক্সলমাইয়ার গ্রুপ দেশের অন্যতম বৃহৎ অটোমোটিভ কর্পোরেশন। ১৯৫৮ সালের মে মাসে ব্যক্তিমালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে লিসা ও ফ্রিৎজ ড্রেক্সলমাইয়ার-এর হাত ধরে। এর পর একে একে ৫০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রথম ৩০ বছরে জার্মানি ও এর বাইরে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠানটির মোট ১৫ টি কারখানা স্থাপিত হয়। আর গত ১৯ বছরে সাইট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে ৪ টি মহাদেশের ২০ টির মতো দেশে প্রতিষ্ঠানটির মোট ৫১ টি সাইট আছে। ২০০৭ শেষে এদের মোট রাজস্ব আয় প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ইউরো, আর সর্বমোট কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৩৮০০০— যার মধ্যে কেবলমাত্র ১৩ শতাংশের মতো জার্মান, বাদবাকি সবাই আন্তর্জাতিক।
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে, যেখানে সব বৃহৎ বানিজ্যিক সরবরাহকারীদের জয়জয়কার, সেখানে ড্রেক্সলমাইয়ার সেইসব অল্প কিছু পারিবারিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একটি, যারা কিনা গাড়ির অভ্যন্তর, সাজসজ্জা, স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, প্লাস্টিক, যন্ত্রপাতি তৈরি এবং লজিস্টিকস, ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে নিজেদের সুনাম বজায় রেখে চলেছে। এরা বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, ডিমলার ক্রাইসলার, পোর্শে, ফোর্ড, টয়োটা, মেবাখ, ভিডব্লিউ/অডি, বুগাত্তি, জাগুয়ার এর মতো সব যুগান্তকারী ও প্রসিদ্ধ মোটরগাড়ির জন্য কাঠ ও চামড়ার তৈরি অভ্যন্তরীন যন্ত্রাংশ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ নকশা, প্রস্তুত এবং সরবরাহ করে থাকে।
এভাবেই সুদীর্ঘ সময় ধরে ড্রেক্সলমাইয়ার, ধীরে ধীরে, স্বয়ংক্রিয় মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী হিসেবে নিজেদের নাম অত্যন্ত নির্ভরযোগ্যতা ও সুনামের সাথেই প্রতিষ্ঠা করেছে, এবং ভবিষ্যতের অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন চেহারায় সমৃদ্ধ করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
খবরটা জানার পর আমি চেষ্টা করেছি এটা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার, যাচাই করার। আশ্চর্যজনক হলো, নেট বা এমনকি ড্রেক্সলমাইয়ার-এর ওয়েবসাইট থেকে আমি বাংলাদেশে ওদের গবেষণাগার স্থাপনের ব্যাপারে কোন কিছু জানতে পারলাম না।
যদিও খবরটার কোন সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স আমি দেখাতে পারলাম না, রেফারেন্স বলতে আছে আমার কাছে শুধু একটা জব সার্কুলার; তারপরেও বলবো, যে কোন বিচারেই, এরকম একটা নামীদামী প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে গবেষণাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত একেবারেই অভিনব এবং আমাদের জন্য অত্যন্ত আশা-জাগানিয়া। আশা করা যায়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ও ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের মেধাবী সব ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিষ্ঠানটির সাথে যুক্ত হতে পারবে। নিঃসন্দেহে সেটা হবে এক দারুন ব্যাপার। প্রোফাইল থেকে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি এর সাথে জড়িত ডিজাইনারদের নিয়মিতভাবে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। পাশাপাশি পাওয়ার মিল, ক্যাটিয়া (ভি.৪, ভি.৫)-এর মতো থ্রী-ডি ডিজাইনিং সফটওয়্যার এর উপরও কাজ করতে শেখায়।
এই পোস্টের উদ্দেশ্য, এ সম্পর্কে কেউ যদি বিস্তারিত কিছু জানেন, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে খবরটার সত্যতা যাচাই করা যাবে। যদি আমার জানা তথ্যটায় ভুল থাকে, সে ক্ষেত্রে ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক পোস্টটি আমি সরিয়ে নেব।
মন্তব্য
দিলেন তো প্যাচ লাগাইয়া। ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেণ্টে ছাত্রীর বড়ই অভাব। সব দেখি খালি ছাত্র। বাংলাদেশের মেয়েদের এই সাবজেক্টের প্রতি এত অনীহা কেন খুঁজে বের করতে হবে।
যাউক গা- এইগুলা কী কইতাছেন? এই ফার্স্ট শুনলাম। খালি খেলার খবর ছাড়া দুনিয়ার আর কোন খবরই জানি না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ভাই রে, ইলেক্ট্রিক্যালে তো তাও মেয়ে কিছু পাবা, মেকানিক্যালে তো আরো কম! আসলে মেয়েদের মনে হয় ইঞ্জিনিয়ারিং-এই চরম অনীহা...
আমিও যখন শুনসি খবরটা, তখন "ফার্স্ট"-ই শুনসিলাম...
হাঃ হাঃ হাঃ
আমাদের ইউনিতেও বালিকাদের প্রযুক্তিগত বিষয়ে পড়বার আগ্রহ খুব কম দেখি। এইটা আসলে ইউনিভার্সাল ট্রুথ টাইপ বিষয় বলতে পারো। মনোবিজ্ঞানীরা তো তাই বলেন।
--------------------------------------------------------
ভাই ভূঁতের বাচ্চা, আপনি কোন ইউনি-তে ছিলেন? এখন তো অস্ট্রেলিয়ায়, তাই না? কোন সাবজেক্টে পড়াশুনা করতেসেন?
মনোবিজ্ঞানীরা মনে হয় ঠিকই বলেন
চমৎকার সংবাদ!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ল্যাবটা যদি আসলেই বাংলাদেশে বানায় ওরা, তাহলে চমৎকার একটা ব্যাপার হবে!
ড্রেক্সলমাইয়ার এর খবর শুনে ভাল্লাগ্লো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
নামটার উচ্চারণ নিয়ে খুব কনফিউজড ছিলাম। ড্রাফট লেখার সময় লিখসিলাম "ড্রাক্সলমাইয়ার"... পরে বদলায়া দিসিলাম আবার... যাই হোক, এখন ঠিক করে দিচ্ছি... লেখার সময় অবশ্য আপনার কথাই ভাবতেসিলাম যে উচ্চারণটা আপনিই ঠিক বলতে পারবেন
চরম খবর। আমিও ফার্স্ট শুনলাম। হলে খুব ভালো হবে। আমাদের লাভটা অবশ্য বেশী, বেকার থাকার সম্ভাবনা আরেকটু কমবে। বিস্তারিত জানার চেষ্টা করতে থাকেন। আমিও চেষ্টা করুম। পাইলে জানামু।
এর পর থেকে প্রতিবর্ণীকরণের জন্য এই পৃষ্ঠাটা দেখতে পারেন। উইকিপিডিয়া থেকে করা হইছে। বেশ কাজের জিনিস:।
http://bn.wikipedia.org/wiki/উইকিপেডিয়া:বাংলা_ভাষায়_জার্মান_শব্দের_প্রতিবর্ণীকরণ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
th এর উচ্চারণ কিন্তু ট এর চেয়ে ঠ এর কাছাকাছি বেশি (থ আর ঠ এর মাঝামাঝি)।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আসলেই চরম। তবে চিন্তা কইরো না, ওরা আসুক বা না আসুক, বেশিদিন বেকার থাকবা না। ঠিকাছে, জানার চেষ্টা করতেসি আমি, তুমিও জানতে পারলে জানায়ো।
লিন্কটা চরম তো! অনেক কাজের। ভাষা শেখার চিন্তা করতেসি- ফ্রেঞ্চ না জার্মান- সিদ্ধান্ত নিতে পারতেসি না
খুব ভাল খবর।
আসলেই...
ভালো খবর .... খালি ইলেকট্রিকালের লোক নেবে?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
হা হা হা... বস, আপনে মনে হয় ইলেক্ট্রিক্যালের (আমিও অবশ্য তা-ই)
ওরা সাধারণত ইঞ্জিনিয়ারিং প্রেফার করে, বিশেষ করে, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকাট্রনিকস, উডওয়ার্ক, অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইকোনোমিকস আর কম্পিউটার সায়েন্স।
তবে আমি যে সার্কুলারটা দেখসি, ওইখানে ওরা চাইসে ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক, মেকানিক্যালের পোলাপাইন।
এরা মনে হয় ধোলাই খালের কারিগরদের সন্ধান পেয়েই দখল নিতে এসেছে ....
খবর ভালো ... কোথায় চাকুরীর বিজ্ঞাপন দেখেছেন?
ওয়েবসাইটে খবর না থাকলে এমন হতে পারে - কোন স্বাধীন ফার্ম ওদের সাব-কন্ট্রাক্ট পেয়েছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
হইতে পারে
আমি সার্কুলার কোন পত্রিকায় বা ওয়েবে দেখিনি। তবে সার্কুলারটায় দেখলাম সিভি পাঠাইতে বলসে বনানীর এক কনসালট্যান্ট ফার্মের ঠিকানায়। ঠিকানা নাই, খালি পি.ও বক্স নাম্বার (৯০৭৪) দেওয়া আছে, আর ইমেইল অ্যাড্রেস-
হ্যাঁ, এই সম্ভাবনাও আছে... দেখা যাক...
জবর খবর ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হুমম...
আমাদের আমলে ইলেকট্রিক্যালে কিছু মেয়ে পড়ত। আর মেকানিক্যালে ১৪০ জন ছেলের মধ্যে ৮ জন ছেলের চেহারা একটু মেয়েদের মত ছিল। অবশ্য ওরা নিজেদের মেয়ে বলে দাবী করত। বাংলাদেশে মেকানিক্যালে পড়া মেয়েদের বিশেষ পদক দেয়া উচিত। তাদের সহপাঠী ছেলেদের স্কলারশীপের টাকা থেকে কিছু টাকা কেটে বিশেষ স্কলারশীপও দেয়া যেতে পারে।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তবে এতোকিছু করার পরও মনে হয় না মেকানিক্যালে কোন মেয়েকে পড়তে আগ্রহী করে তোলা যাবে। মেয়েরা মনে হয় সেলাইমেশিন ছাড়া আর কোন মেশিন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহবোধ করে না
আপডেট: শুনলাম ডিজাইন ল্যাব-টা নাকি চট্টগ্রামে হবে।
নতুন মন্তব্য করুন