আরিফ জেবতিক ১৫ তারিখের সচল আড্ডায় ছিলেন না। এরপর তিনি যতবার ফোন করেছেন আমি হয় কোরবানীর গরুর হাড্ডি-চর্ম-মাংসের ওপর আমার কসাই প্রতিভা প্রয়োগ করছি, না হয় পোলাপাইনের লগে ক্রিকেট খেলায় বিজি। আবার তাকে যখন কলব্যাক করি, তিনি তখন মিটিংয়ে ব্যস্ত বা ফোনের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে কোন গোপন ডেটিংয়ে লাপাত্তা। অবশেষে যখন চারকর্ণের মিলন হইলো, তখন আমি হালকা রাগ মেজাজে থাকলেও কিছুক্ষণের আলাপেই রাগ পানি হয়া গেলো। কারণ, ২৬ তারিখে খাদকায়তনের দাওয়াত। সেই তলাবিহীন ফিগারও নাই, সেইরম ননস্টপ টানার ক্ষমতাও আর নাই, তবুও হাতি মরলেও লাখ টাকা ফর্মূলায় দাওয়াতের কথা শুনলেই কেমুন জানি একটা অন্যরকম লোভানুভূতি এখনও ইন্দ্রিয়গুলারে মবিলগ্রীজ দিয়া চাঙ্গা কইরা তোলে।
গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরেই জ্বর। দেশে এত অল্প সময়ের জন্য আইসা অসুস্থ হওয়া মানে পুরা প্রজেক্ট ফেইল। সবচাইতে মারাত্মক অবস্থা হইছিলো বিয়ার পর পর। বিয়ার ৩ দিনের মাথায়ই বমিদিয়া পেট খারাপ, সাথে ধুন্দুমার জ্বর। একএকবার বমি হয় আর একএকবার কইরা তওবা পড়ি, এইবারের মত আল্লা বাঁচায়া দাও, শ্বশুর বাড়ির চর্ব্য-চোষ্য-পেয়র ওপর অতি লোভ আর ইহজীবনে করুম না। সেবার আল্লা সপ্তাহখানেক জাতা দিয়া বাঁচায়া দেন; কিন্তু সেই তওবার কথা আর ভুলি নাই। এরপর থাইকা তাই খাওয়া-দাওয়ায় সাবধান। কিন্তুক অনিচ্ছাসত্ত্বেও ধুলা এবং কার্বনের যৌগ খাওয়া ঠেকানো যায় নাই। এই জিনিস হজম করতে গিয়া শইলের ইঞ্জিন গেছে গরম হইয়া। যাউকগা, ফাও প্যাচাল বাদ দিয়া আসল আলোচনায় ফেরাই উত্তম।
সচল আড্ডায় গিয়েছিলাম কাঁটায় কাঁটায়, এইবার আধাঘন্টা লেট কইরা ফর্ম্যাল একটা সরি কইরা যখন জ্বরের ওপর দোষ চাপানোর ডিসিশান ফাইনাল, তখন আরিফ ভাই জানালেন, আমরাই প্রথম! আরো প্রায় ৪০ মিনিট পরে অরূপ, অমিত হাজির। অমি পিয়ালকে ফোন করে জানা গেলো, তিনি আসার পথেই আছেন। তবে আরো আধাঘন্টা পরে তাকে আরো একবার ফোন করে ভাবীর সাথেও কথা হলো। অর্থাৎ এর আগে তিনি আড্ডা নয়; বরং নিজের বাসার পথেই ছিলেন। একে একে ভাস্কর, মৌসুম, লীলেন এবং ভাঙ্গাকন্ঠের হযবরল সবাই এলেন। রাসেল-অপালা তখনও ঢাকায় ফেরার টিকিট পেতে ব্যর্থ এবং কাজে আটকে গিয়ে অচেনা দম্পতির আড্ডামিসের ব্যাডনিউজ ছাপিয়ে সিলেট থেকে উড়াল দেয়া নজমুল আলবাব শেষ মুহুর্তে আড্ডায় হাজিরা দিলেন।
এরকম আড্ডায় সাধারণত সবাচাইতে মুখরোচক বিষয় হলো গীবত টাইপের আলোচনা। তবে গীবত ছাপিয়ে মাহবুব লীলেন তার সুললিতকন্ঠে দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার সুচনা করলেন। বিষয় জন গুরুত্বপূর্ণ হলেও মনে হলো, জনগণের ওপর তিনি এখনও পুরোপুরি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেন নি; 'এই মুহূর্তে' যেকোনো মূল্যে বেঁচে থাকাটাই তাঁর মতে জনগণের সবচাইতে ক্রাইং নিড এবং তার জন্য হাসিনা-খালেদার গণতন্ত্রকে লাথি মারাই উচিত। বাংলাদেশের ট্রাডিশন এবং প্রাকটিস উন্নত বিশ্বের সাথে মিলে না। অতএব, উন্নত বিশ্বকে মডেল ধরে বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান করতে চাওয়াটা ভুল। আরিফ-ভাস্করেরা আবার তাঁর সাথে একমত নন; তাদের বক্তব্য, একটি প্রাকটিস স্ট্যাবলিশড করতে আরো সময় দরকার। জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের ওপর অবিচারের জবাব দিয়ে দিয়ে একসময় ঠিকই একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবে। মাঝখানে সামরিক শাসনজাতীয় জিনিস গণতন্ত্রের প্রাকটিসে বাধা দিয়ে জনগণকে হয়রানিই করে শুধু, সামরিক সরকার চলে গেলে সবকিছু আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হয়।
আড্ডা আরিফের সুসজ্জিত ড্রয়িং রুম থেকে খোলামেলা ব্যালকনিতে স্থানান্তরিত হলো। আয়েশী ধুমপানের ফাঁকে ফাঁকে চললো জোরেশোরে গীবত। আগের বাসায় নাকি এখনো নতুন নতুন ছাগুর উপদ্রব ঠিকই হিট কামাচ্ছে, আগের ভুজ এখন পরলোকে গেলেও ভুজবিশিষ্ট নর্তন-কুদন নাকি থেমে নেই, সাথে নাকি যোগ হয়েছে এক খানদানি বংশীয় পেট্রোলিয়ামে হাবুডুবু ৩৬° সেলসিয়াসেও স্যুটটাইয়ের প্রতি বিশেষ আকর্ষণযুক্ত মাঝবয়সী অবুঝ। আমি নিরীহ বলাই, কারো গীবত-টীবতে নাই; জ্বরের অজুহাতে দুপুরে খাই নাই, প্যাটে ক্ষুধা লইয়া আর কতোক্ষণ পাবলিকের গীবত শুনা যায়! এই সময়ে আল্লাহর রহমতের দূত হিসেবে ভাবী এসে খবর দিলেন, বিকেলের নাস্তা রেডি! আমিও হালুম বেগে সরাসরি ডাইনিং টেবিলে। বসতে বসতে দেখি, এখানেও আমি সেকেন্ড ম্যান, অমি পিয়াল আগেই তৃতীয় চেয়ারের দখল নিয়েছেন। নাস্তার আইটেম বলা যাবে না, বিশেষ করে প্রবাসী ব্যাচেলর সচলদেরকে শত্রুতে পরিণত করার কোনো অহেতুক খায়েশ আমার নেই। অতএব, খাওয়াদাওয়া পর্বের বপুত্ব বিশাল হইলেও বর্ণনা খর্বকায় হইবে, যারা বুঝবেন, তাদের জন্য ইশারাই এনাফ।
খাওয়া-দাওয়ার পরেও সমানে গীবত চললো। আরিফ জেবতিকের নামের রহস্য দেখা গেলো কেউই জানেন না। তিনি খোলাসা করলেন। তার মাতার নাম জেবুন্নাহার (জেবুন্নেসা?) এবং পিতার নাম আতিকুল হক - এই দুইকে মিলিয়ে প্রত্যেক ভাইবোনের নামের সাথে যোগ করা হয়েছে জেব-তিক! এই নাম একবার শুনলে এর স্বাতন্ত্রের কারণেই কেউ সহজে ভুলে না। এদিকে বলাইভাবী আবার বায়না ধরেছেন, তিনি রাগইমনের সাথে দেখা করবেন। আরিফ তাকে ফোন দিয়ে তার এ বায়নাক্কার কথা জানালেন। রাগইমন অতিসজ্জন, তিনি রাজি হলেন। জানা গেলো, তার বাসা বড়জোর ১০ মিনিটের দূরত্বে। কিন্তু এই দূরত্বটুকু তিনি দুই ঘন্টায়ও যখন পার করতে পারছেন না, তখন জনমনে সন্দেহ দানা বাঁধলো, তিনি আসবেন তো? আরিফ জেবতিক সবার সন্দেহ উড়িয়ে দিয়ে বললেন, রাগ ইমন এক কথার মানুষ, তিনি আসবেনই, তবে মেকআপে একটু সময় নিতে পারে - এই যা!
রাগইমন অবশেষে এলেন; কিন্তু ততক্ষণে আমাদের ডিনার পর্ব শেষ। (ডিনারের মেনু বর্ণনা আবারও প্রবাসী ব্যাচেলর সচলদের রোষ থেকে বাঁচতে এড়িয়ে গেলাম। ) সবার ধারণা ছিলো, তিনি এসেই নিরীহ বলাইয়ের আগের পরিচয় অ্যাগ্রেসিভ চোরের ওপর আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়বেন; কিন্তু সবাইকে নিরাশ করে রাগ ইমন খুবই মিষ্ট ব্যবহার করলেন। নিরীহ বলাই আবারও মুগ্ধ হলো। এরমধ্যে অরূপ এবং অমি পিয়াল নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। ব্লগস্পটে ছাগুমিটার সম্বলিত একটি 'খারাপ' সাইট আছে। পুলিশি রিমান্ডের চাইতেও ভয়ঙ্কর আক্রমণে তারা প্রায় স্ট্যাবলিশড করে ফেলেছেন যে, ওই সাইটের উদ্যোক্তা আমি! আমার অসহায় প্রতিবাদ কোনো কাজেই আসছে না। এর মধ্যে হযবরল একবার বলে ফেললেন আসল উদ্যোক্তার কথা। আমি তাকে চেপে যেতে বললাম। নাহয় পাবলিক আমাকেই দুষলো; কিন্তু এমন একটি মহৎ ক্রিয়েটিভ জিনিসের আইডিয়াকারককে গোপনে থাকতে দেয়াই উত্তম!
মন্তব্য
আপনিতো দেখি আমাকে মাইনাস ২ ফর্মুলার সমর্থক বানিয়ে দিলেন
হাসিনা খালেদার গণতন্ত্র নয়
বাইরে থেকে আমদানি করা জাতিরাষ্ট্র কনসেপ্ট এবং সো-কল্ড ডেমোক্রেসিটা আমাদের ঐহিত্যের অংশ নয় এবং এখনও জীবনযাত্রায় খাপ খায়নি
আমার বলার ছিল এইটুকুই
আর এর লেজ ধরে আমি সাবইকে রিকোয়েস্ট করেছি যাতে কেউ দয়া করে বাংলাদেশকে কোনো ওয়েলফেয়ার কান্ট্রির সাথে তুলনা না করেন
আমরা এখনও আধাসামন্ত_ আধাক্যাপিটালিস্ট
বইয়ের পাতা থেকে কাটপিস ডেমোক্রেসি কিংবা জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা অর্জন করেনি এখনও
তাই বাঁচার জন্য যে কোনো পথ অবলম্বনকে আমি সমর্থন করি
বেঁচে থাকাটাই হলো বড়ো কথা। বেঁচে থাকার প্রশ্নে দুর্নীতি-সুনীতি বলতে কিছু নেই
সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখে
এবং টিকিয়ে রেখেছে
তাকে আমি বলি বাঙালির সার্ভাইভিং মেকানিজম
বইয়ে পড়া দুর্নীতি ফুর্নিতি নিয়ে কথা না বলে বাঙালির এই পদ্ধতিকে সবারই সমর্থন করা উচিত। এবং এই পদ্ধতি থেকেই বের করা উচিত এই জাতির জাতিরাষ্ট্রের আইন ও অধিকার
অনেক অনেক আলোচনাকে ঘনীভূত করতে গিয়ে গুবলেট করে ফেললাম না তো! জোর গলায় ক্লিয়ার করি, আপনি মাইনাস টু ফর্মূলার সমর্থক নন।
আসলে পুরো আলোচনাটাই ছিলো, যার যার দেখা থেকে পরিস্থিতির বিশ্লেষণ। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার ছিলো, একজন আরেকজনের ভাবনার দিকগুলোকে শেয়ার করা এবং নিজের ভাবনাকে ধ্রুবসত্য হিসেবে আঁকড়ে না থেকে অন্যের কথাকেও সবাই অ্যাকসেপ্ট করছিলেন। সবাই আমরা আলোচক ছিলাম, ঠিক সমর্থক নয় তো!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
হ
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
এইসব সমাবেশে দেখি খালি গোপন কথা ফাঁস হয়! ইশ, কতকিসু মিস করলাম!
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
এবারো আফসোস!!! লেখা জম্পেশ হয়ছে।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
হুম, অভিশাপ দিচ্ছি তোরা সব বিদেশে যাবি ।
আর আমি তখন দেশে গিয়ে তোদেরকে দেখিয়ে দেখিয়ে মজা করবো।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
পড়লাম। মানুষগুলা মনে একদম মায় মোহাব্বত নাই। আমাগো ফালাইয়া এতো মজা করতে পারলেন?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এত খাওয়ার গল্প শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি ক্ষিদায়!!
বন্ধের মধ্যে গত ৭ দিন রান্না নাই, এর মধ্যে এত খাবার গপ সপ!!
- রোষানল বাইর করুমহনে। আইয়া লন ফিরা...।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মিস করলাম মনে হয়!
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
নতুন মন্তব্য করুন