...............
ছোট্টবেলায় সাপ্তাহিক বিনোদনের অন্যতম প্রধান উৎস ছিলো দুই হাটবারে মজমা। 'লাগ ভেলকি লাগ/ চোখে মুখে লাগ!', 'খা খা খা, বক্ষিলারে খা!' আরেকটু কম বেয়াড়া টাইপ পাবলিক হইলেই সর্প বাবাজির আক্রোশ হইতে নিস্তারের লাগিয়া তাবিজ খরিদ না করিয়া পয়সা জমানো যে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কত রিস্কি তাহা চিন্তা করিয়া চরমাশলিল অস্থিরতায় ভুগিতাম। তবে মজমাবাজ যাদুকরের হাতসাফাই দেখিয়া অনভিজ্ঞ চোখে ঠিকই ভেলকি লাগিতো, গোল গোল মার্বেল কিভাবে যেন গোল গোল মিষ্টিতে পরিণত হইয়া যাইতো, ৫০ পয়সার একটি মুদ্রা হইতে কেমনে ঝুর ঝুর করিয়া পয়সার পাহাড় তৈরি হইতো। যাদুকর তাহার লোভনীয় গোপন যাদুটি দেখাইবার প্রতিশ্রুতি দিয়াই শুরু করিতেন আসল ব্যবসায়িক কর্ম। সর্বরোগের ধন্বন্তরি মহৌষধ কোম্পানীমূল্য ২০ টাকা হইতে লেস-মাইনাস-কনসেশান করিয়া তিনি কিভাবে মাত্র ৫ টাকায় দিয়া দিতেছেন, তাহার মহানুভবতার কথা ভাবিয়া আবারও মুগ্ধ হইতাম। লোভনীয় শেষ জাদুটি পরবর্তী হাটবারের জন্য মুলতবি রাখিয়া তিনি সেদিনের মত মজমা ক্ষান্ত করিতেন।
মজমাবাজদের বক্তৃতা হইতেই বলা যায় আমার যৌনবিষয়ে প্রথম পাঠ নেয়া। কেঁচো কিংবা শিয়ালের তৈল যে যৌনশক্তি বৃদ্ধির মহৌষধ - এ পাঠ তাহারাই প্রথম দেন। পদ্মমধু খাইলে পুরুষ যে আদতেই পুরুষ হইয়া উঠে, মোরগের বিঁচিবাটা গোপনাঙ্গে মাখাইলে আধাঘন্টার মধ্যেই লৌহদন্ড হইয়া যায় - কামরূপ-কামাক্ষার সিংহের প্রবল গর্জনেও নপুংসতারোধে সফল হওয়া যৌনবীরগণ তাহা সবিস্তারে বর্ণনা করিতেন। প্রস্রাবেকৃত মাটিতে গর্তের গভীরতার ক্রমশঃ হ্রাস ছিলো যৌবনের অসময় অপচয়ের ফলে যৌনশক্তি দিন দিন হ্রাস পাইবার সমানুপাতিক। আগামোটা-গোড়াচিকন, দুই অন্ডকোষের আকৃতির বৈষম্য, এক নালের প্রস্রাব দুই-তিন নালে হওয়া - এগুলো ছিলো ব্যর্থ যৌনজীবনের আগাম নির্ধারক। তবে হ্যাঁ, হতাশ হওয়ার কিছু নাই। পাবলিককে এ সমস্যা হইতে উদ্ধার করিতে না পারিলে মজমাবাজ ভাইয়েরা আছেন কি করিতে! তাহারা এমন পাতার একটি পাতার খোঁজ রাখেন, যা জিহবার নিচে রাখিয়া আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা পবিত্র কর্মটি করিয়া যাইতে পারবেন কোনরূপ দুর্ঘটনা না ঘটাইয়াই! শর্ত হইলো, পাতার কোন পিঠ উপরে থাকিবে, তাহা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাতার পিঠ উলটা হইলেই আপনি চিরতরে নপুংসক হইয়া যাইবেন। পাতাসহ এসব জ্ঞান লাভ করিতে আপনার খরচ হইবে ৫ টাকা মাত্র!
তবে মজমা ভাইয়েরা এক্কেরে ভুয়া ছিলেন, এ কথা আমি কিরা কাটিয়া অস্বীকার করিতে পারি। একবার শ্রীপুরের বড়ি খাইয়া এক দোস্ত এমন গরম হইছিলো যে, খাড়া শীতের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা কোমর পানিতে দাড়াইয়া থাইকা তারপরে তার মুক্তি!
এইবার দেশে গিয়া যে হুল্লোড়ে সময় কাটাইয়াছি, তাহার অধিকাংশ জুড়িয়াই ছিলো সিএনজি-ট্যাক্সিতে বসিয়া বসিয়া রাস্তার জ্যামে আটকাইয়া মনে মনে অস্ট্রিচ অ্যালগরিদমকে ধন্যবাদ জানাইয়া মানসিক সুখ লাভ করিবার খড়কুটোশ্রেণীর শান্ত্বনা পাইবার প্রবল আকাঙ্ক্ষায় কালাতিপাত। তবে সময় এক্কেরে বিরস কাটে নাই। সিগনালে থামিলেই প্রিচবিহীন পপকর্ন আর হাওয়াই মিঠাই হাতে ছুটিয়া আসিতেছিলো জীবনের শুরুতেই মানবাধিকার বঞ্চিত শ্রেণীর নগ্ন-পা বালক-বালিকারা। তবে তাহারাই একমাত্র সৈনিক নহে। কত মোড়ে মোড়ে - এমনকি মৃদু চলন্ত সিএনজিতে - বিজ্ঞাপন ছুড়ে মারা জীবিকানির্বাহী মানুষের সাথে মোলাকাত হইয়াছে তাহার ইয়ত্তা নাই। আমি অবাক হইয়া দেখি, বিজ্ঞাপনগুলির প্রায় সবই যৌনরোগ বিষয়ক। রোগীর প্রতি সেই পুরোনো প্রশ্নমালা, তারপরে জীবনের শেষ চিকিৎসাস্বরূপ তাহাদের হারবাল কমপ্লেক্সের ঠিকানা। ভায়াগ্রা এখনও দুর্লভ; তাহা যৌনরোগের মজমীয় চিকিৎসাকে রিপ্লেস করিবে ইহা কোনো দিবাস্বপ্নেও ভাবি নাই। তবে দেশে এতদিন এই যে ইয়াবা-ইয়াবা কেলেঙ্কারি শুনিলাম, ইহা কি এখনও তেমন প্রবল জনপ্রিয় হইয়া পড়ে নাই!
এক মোড়ে সিএনজি দাড়াইয়া আছে, পাশে বউ বসা, সামনে ট্রাফিক পুলিশের লাঠিধরা হস্ত তখনও উদ্ধত। এক ষোড়শী কোনো এক হারবাল চিকিৎসালয়ের বিজ্ঞাপন বিলি করিতেছে। সিএনজির সামনে আসিলে সরাসরি চোখের দিকে তাকাইলাম। নাহ, সে একটু ভ্যাবাচেকা খাইয়া গেলো হয়তো, বিজ্ঞাপন দেয়ার সাহস কিংবা উৎসাহ কোনোটাই দেখাইলো না। আমি ডাকিয়া বলিলাম, "দেন, আমাকেও একটা দেন!"
মন্তব্য
ব্রাদার, গত লেখাতেও অস্ট্রিচ অ্যালগরিদমের ব্যাপারে জানতে চাহিয়াছিলাম।
এই লেখাতেও চাহিলাম। বিস্তারিত বলিলে, রস আস্বাদনে কিঞ্চিত সুবিধা হইতো।
লেখাখানা অতি সুমিষ্ট হইয়াছে। তবে বুঝিলাম না, লিফলেট কেন চাইলেন !
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সবজান্তা ভাই, কোনো সমস্যার অস্ট্রিচ সমাধান হলো, সমস্যা যে আছে, এইটা পুরো ইগনোর করা।
উইকি লিংক
লিফলেট চাইলাম মজা কইরা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ঝাকানাকার একটা গল্পের আইডিয়া পেলাম। নেট ঠিক হলেই নামাবো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ব্রাভো!!!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অরিজিনাল লিফলেটের ছবিই দেখছি। লেখাটা ভালো হয়েছে।
হ, লিফলেটগুলা গুছায়া রাখছিলাম। পোস্টের আইডিয়াও তখন থেকেই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
হা হা মজা হইছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ঢাকা শহরে বাসে ভ্রমণ করা আমার অনেক দিনের অভ্যাস। জানালা দিয়ে ছোড়া এরকম লিফলেট আগে বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। ..সর্বরোগ নিরাময়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঠিকানার বাহার দেখতাম। এখনও পাই, তবে পড়া হয় না তেমন।
...লেখার বিষয়বস্তু নির্বাচন ও কলেবর ভালো লেগেছে।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
ধন্যবাদ, কাকু। লিফলেটের ভাষা এবং শব্দচয়ন মারাত্মক মজার।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
যাক আপনি তাহলে অন্তত ষান্ডার তেলের সাক্ষাত পাননি
ষাণ্ডা এমন এক প্রাণী যা শুধুমাত্র বাতাস খেয়ে বাঁচে
আর তার তেল মালিশ করলে বিল্ডিং বানাতেও রড লাগে না
নিজের ইয়ের উপরই পিলার খাড়া করা যায়
সূত্র: ষাণ্ডার তেলের প্রাপ্তিস্থান- সদরঘাটের ষান্ডা বিশারদগণ
(তবে পরিচিত এক বুয়েট পাশ ষাণ্ডা থেরাপি করে ১২ দিন হাসপাতাল ছিলেন পিলারের চামড়া অপারেশন করে সুস্থ হওয়ার জন্য)
০২
ডাহুক উড়ায়া দিয়া আবার ধরে না
সোনার মোহর তার পড়ে থাকে পথের ধুলায়
এ বড়ো দারুণ বাজি। তারে কই বড়ো বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরাণের গহীন ভিতর
- সৈয়দ শামসুল হক
লীলেন ভাই, ষান্ডার তেলের কথা কোনো মজমাদারের কাছ থেকে শোনার সৌভাগ্য হয় নাই, তবে ষান্ডা জিনিসটা দেখতে ইচ্ছে করছে।
কবিতাংশের জন্য ধন্যবাদ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অছ্যুৎ বলাই মহাশয়, জনাব, হলফ করিয়া কহিবেন তো, লিফলেটের কি কোনোই ব্যবহার হয় নাই? ...
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
খাইছে! আগেরবার এই জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর অমিট হয়া গেছে। লিফলেটের ব্যবহার তো হইছেই। এই যে ফটুক তুইলা সচলে পোস্টালাম। তবে ঈমানে কই, খাজা ঔষধালয়ে যাওয়ার মত এনাফ টাইম পাই নাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এইটা আমিও দেখছি।
নিজের গ্রামে একবার এক গ্রামসম্বন্ধীয় মামা রে দেখছিলাম, কয়েকদিন ভুগতে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
আমি কিন্তু শ্রীপুর গ্রামেও গিয়েছি, কুমিল্লায়।
তবে উদ্দেশ্য ঔষধ সংগ্রহ নয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমি একটা লেখা প্রায় রিলিজ দেওয়ার কথা ভাবছিলাম, আপনে কামটা সেরে দিলেন।
ভালো হইছে।
লিফলেট টা যে নিলেন, কেউ দেখে নাই তো?! আমি তো সারাজীবন কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে লিফলেট পাওয়া মাত্র গায়ে কারেন্টের শক লাগছে- এমন ভাবে ছুঁড়ে ফেলতাম।
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
নেয়ার সময় তোমার ভাবী পাশেই ছিলো। তবে এগুলা সংরক্ষণ করতে হয়েছে একটু সাবধানতার সাথে। বাসার কেউ যদি দেখে ফেলে, তাইলে আমাদের দাম্পত্যজীবন নিয়া মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে যাবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
যদি বাসে একা থাকি তখন হাতে আসার সাথে সাথে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলতে হয় কেউ দেখে ফেলার ভয়ে, আর যদি সাথে কোন বন্ধুবান্ধব থাকে তখন বেশ আয়েশ করে তাকে পড়ে শোনাই আর ঠা ঠা করে হাসি।
- এই পোস্টে কি গোধূ কোনো কমেন্ট করে নাই?
খাইলো কে?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন