সকালে ঘুম থেকে উঠেই ক্রিকইনফোতে ঢুকলাম। স্টাইন আর মরকেল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হাতে ঝুনা নারকেল ধরায় দিচ্ছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার আন্ডার টু হান্ড্রেড চেজ করতে গিয়ে শ্রীলংকার ব্যাটসম্যানেরা ভূমিকম্প তুলে ফেলছে। সাঙ্গাকারা আর জয়াবর্ধনে মিলে এই যায় সেই যায় অবস্থা হালকা সামাল দেওয়ার প্রাণপন চেষ্টা চালালেও তেমন যুইত করতে পারছে না। বাংলাদেশের নাকানি-চুবানি নিত্যদেখা বিষয়; তারচেয়ে শ্রীলংকার জানবাঁচানো লড়াই দেখায়ই মজা বেশি, অতএব কোনমতে হাতে-মুখে একটু পানি দিয়েই আয়েশ করে খেলা দেখা চললো। থ্যাংক্স টু সোপকাস্ট।
বেলা বাড়তে থাকে। অফিসে যেতে হবে। শুক্রবারের অফিস সাধারণত রিল্যাক্সিং। কিন্তু পুরা সপ্তাহ প্রেসার কুকারে সিদ্ধ হওয়ার পরেও আজ ভেজাইলা কাজকর্মের কমতি নাই। ইচ্ছার বিরুদ্ধেও উঠতে হলো। বাইরে বারাইয়া দেখি ট্রাম ধর্মঘট। পেপার-টেপার পড়ি না, স্ট্রাইকের কথা জানা নাই। ডয়েচে বানের গরীব পরিবহনের লাগাতার স্ট্রাইক চলছিলো কিছুদিন আগে; কিন্তু সেই ঝাপটা এই ট্রামে আইসা লাগবে কল্পনা করি নাই। ট্যক্সি-টুক্সিরও কোনো নমুনা দেখতে পাচ্ছি না, মেজাজ বিলা হইলেও সামলাইয়া রাইখা হাঁটা ধরলাম। ৪৫ মিনিটের ওয়ার্মআপ হন্টন শেষে অফিসে পৌঁছাইয়া আসল কামে ঝাঁপাইয়া পড়লাম। দুপুরের পর এক ভেজাইলা টেলিফোন মিটিং। আর আমি হলাম গিয়া লাস্টমিনিট ম্যান।
নিজে মেইন উদ্যোক্তা না হইলে এইসব মিটিং মোটামুটি চামের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কানে হেডফোন লাগাইয়া খালি শুইনা গেলেই চলে, মাঝে মাঝে কোনো কোনো ব্যাপারে সম্মতি-অসম্মতিতে সীমাবদ্ধ থাইকাই টাইম পাস কইরা দেওন যায়। আইজ সেই কপাল নাই। এই টপিকের মেইন রেসপন্সিবিলিটি আরেকজনের হইলেও পূর্বাভিজ্ঞতা থাকার দোষে আমাকেই বেশি কথা খরচ করতে হইলো। মিটিং শেষ হতে হতে বিকাল সাড়ে চারটা। শুক্রবারের সাড়ে চারটা মানে ফুরফুরে মেজাজে মনে মনে শিষ দিতে দিতে বাসায় ফেরার আয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই আয়োজনের চিন্তা করাও কবিরা গোনাহ। একটা পেপার রিভিউর ডেডলাইন আইজকাই।
পেপার পড়ে মোটামুটি পছন্দ হইছে। ভালো লিখেছে। কিছু কিছু আইডিয়া আমার কামেও লাগানো যাইবো। রিভিউ রিপোর্ট লিখার আগে মনে কি বদ মতলব জাগলো, ভাবলাম এই পাবলিকদের রিলেটেড আরো কিছু মাল সার্চ মাইরা দেখি। এই উৎসাহই কাল হইলো। দেখা গেলো, মাস দুয়েক আগেই উনারা এই মালের প্রায় জমজ একখান পেপার পাবলিশ করেছেন এবং কোনো আসমানী আশীর্বাদ না পাওনে পাবলিশড কাজের চেয়ে এতে আহমারি কিছুই যোগ করতে পারেন নাই। অতএব, রিজেকশন সাজেস্ট করতে হইবো। পেপার অ্যাকসেপ্ট করা অনেক সহজ, রিজেক্ট করতে গেলে হাজারটা ফ্যাকড়া। তখন দুনিয়ার কারণ দেখাইতে হইবো রিজেকশনের পক্ষে। সুতরাং পেপারের খানা তল্লাশী করা শুরু হইলো। যত ভুল, দুর্বলতা পাওয়া যায়, সব এক কইরা রিভিউ রিপোর্ট লিখ্যা যখন ইমেইল কইরা দেই, তখন ঘড়ির কাঁটা রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই।
বিকেল থেকে আবার ট্রাম চলা শুরু হয়েছে। তাই এই ঠান্ডা রাইতে আবার হেঁটে বাসায় ব্যাক করা থেকে রেহাই পাওয়া গেলো। প্রচন্ড ক্ষুধা। কিন্তু সেই ক্ষুধাকে ছাপিয়েও বিছানায় নিজেকে আছড়ে ফেলার প্রয়োজন অনেক বেশি আকর্ষণ করছে। শর্টকাটে হাতের কাছে যা পাই খাইয়া ঘুমানোর আয়োজন করছি, এর মধ্যেই মনে পড়লো সকালবেলা মাছ ভিজাইয়া বাইরাইছিলাম। মাছ বলতে কেজি আড়াইয়ের এক রুইটাইপ মাল, রাশান দোকান থেকে গত উইকএন্ডে কেনা, পুরা সপ্তায় এইটারে সাইজ করার চান্স পাই নাই।
অতএব, ঘুমের প্রতি মায়াদয়া ত্যাগ কইরা কিচেন অ্যাপ্রোন পরতে হইলো। মাছকাঁটার সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ হলো আঁষটে ছাড়ানো। এই কর্মে আমি বিশেষ পারদর্শী হইলেও ব্যাপারটা সময়হন্তারক এবং যথেষ্ট ধৈর্যখাদক। ধৈর্যের পরীক্ষায় দাঁতে দাঁত চেপে পাস করলাম, একসময় রান্নাও হয়ে গেলো। ঘড়ির কাঁটায় ২টা।
মৎস্য প্রসেসিংয়ের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো এর গন্ধ। এই ঠান্ডার মধ্যেও কিচেনের জানালা দরজা খোলা রেখেও পার পাওয়া গেলো না। পোশাক-আশাক ধোয়াতব্য বাস্কেটে জমা দিয়াও শেষ রক্ষা নাই। হাতের মৎস্যগন্ধ তখনও সৌরভ ছড়াচ্ছে। হ্যান্ডওয়াশ দিয়া আরো কয়েকবার ঘষাঘষি করেও এই মাল হতে নিস্তার নাই। সেইরম একটা গোসল ছাড়া এই সুবাস থেকে মুক্তি সম্ভব না।
সেই গোসল আর দেয়া হলো না। সারাদিনে ধৈর্যের সাথে অনেক অবিচার করা হয়েছে। এখন তার লাগাম ছেড়ে দেয়াই ভালো। ঘড়ির কাঁটায় সোয়া তিন। বিছানায় এখনই না গেলে একটু পরেই শুরু হবে আরেকটি ভিন্নধর্মী ব্যস্ততার দিন।
মন্তব্য
কি মাছ গো বলাইদা যে এত্তো সুবাস ছড়ায়?
আহারে... মাছও নিজে কুটতে হয়! এই হইল গিয়া বৈদেশ
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
হ, বৈদেশ খুব খারাপ দেশ।
তবে মাছ রান্না ফাটাফাটি হওয়ায় পরিশ্রমের দাম উঠে গেছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সেইরকম
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
হুমম
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
(নি)দারুণ দিনপঞ্জি!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
নি'টা বাদ যাবে।
'শ্রমের মর্যাদা' রচনা পড়েছিলাম, এখন প্রাকটিক্যাল দিচ্ছি। তবে বিজি থাকতে খারাপ লাগে না, শুধু ঘুমের ওপর টান না পড়লেই হলো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
- মৎসরন্ধনবিশেষজ্ঞ।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মৎস্যরন্ধন বিশেষজ্ঞ অনেকেই, মাছ কাটার ঝামেলার জন্যই পাবলিক সহজ সরল পাইয়া আমার ওপরেই মৎস্য ম্যানেজের দায়িত্ব চাপায়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
- ঐটাইতো! মৎসকর্তনবিশেষজ্ঞ!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
করলেন কি? ক্রিকেট থিকা পুরা ইউ টার্ণ মাইরা রান্না-বান্না
এরাম ভেজালের দিন লাইফে কম আসুক, না কি কন?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
নতুন মন্তব্য করুন