অসুস্থ হওয়া ঘৃণা করি। যতদিন বাঁচি, ফুল স্পীডে বাঁচতে চাই। হয় না। চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দ্ব এখানেও এসে বাগড়া দেয়। অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে হাসপাতালের কারাগারে এক সপ্তাহের জন্য বন্দী হয়ে যাই। নেট নেই, কম্পুটার নেই, পাশের বেডের জার্মান বুড়ো আপন মনে কিসব কথা বলে, শোনার ভান করি, হু হা দিয়ে চালিয়ে যাই।
চুপচাপ থাকতে পারি না। শার্লক হোমসের নাকি পুরা অস্তিত্বটাই ছিলো একটা মস্তিষ্ক, আমারও তেমন, তবে মস্তিষ্কটা প্রচলিত অর্থে অলস। অলস বলেই শয়তানে সারাক্ষণ গুঁতায়। শান্তিতে বসে থাকতে দেয় না। কোনো কামের কাজ করতে গেলে বেঁকে বসে; কিন্তু আকামে ব্যাপক উৎসাহে এগিয়ে দেয়। অলস মস্তিষ্ককে ধাপ্পা দিয়ে শায়েস্তা করতে বইমেলায় কেনা বইগুলো হাতে নিয়ে বেডের পিছনটা যতোটা সম্ভব উঠিয়ে আরামদায়ক করে বসে যাই। মস্তিষ্ক ভাবে, তেমন কামের কাজ কিছু করছি না, আমি ভাবি তাকে ভালোই বোকা বানানো গেছে।
অমিত আহমেদের গন্দম দিয়ে শুরু। দিন-তারিখ-সময় মেলানোর অতি সাবধানী অমিত যে শুধু ঔপন্যাসিকই নয়; বরং একজন কম্পু বিজ্ঞানী তা টের পাই। এত হিসাব করে কি সাহিত্য হয়? দেয়ালে বন্দুক ঝুলানো দেখালে সেই বন্দুকের ব্যবহার দেখাতেই হবে, আমি এ মতের ফ্যান না। আমাদের চারপাশে আমরা এত না দেখার ফাঁক-ফোঁকরে কত কিছুই তো দেখি। তার কত ভগ্নাংশের মুখোমুখিই বা হই অন্য সময়ে? চলমান জীবনে বোমারু বিমানরা আসে, বন্দুকেরা তো হারিয়েই যায় প্রায়শঃ, যদিও সেই দেয়ালে ঝোলানো বন্দুকটা সময়ের সেই ক্যানভাসে যথেষ্ট জ্বলজ্বলেই ছিলো। এত হিসাব করে আমি লিখতে চাই না। তবে এর যতোটা ড্যাম কেয়ার ফিলোসফি, ঠিক ততোটাই হয়তো লেখক হিসেবে আমার অপারগতা। অনুভূতিকে ভাষায়, ভাষাকে অক্ষরে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটা আমি সার্থকভাবে করতে পারি না। অমিত, শিমুলদের সেই সমস্যা নেই। তারা এত হিসেবের মাঝেও গতি ধরে রাখে, মাঁকড়সার মত সাবলীলভাবে বুনে যাওয়া নেটের সুঁতোগুলোও একই বিন্দুতে এসে চমৎকার মিলে যায়। অমিত আহমেদের চুলচেরা হিসেব-নিকেশের গন্দম তাই পাঠক হিসেবে আমাকে গল্পের নৌকোয় ভাসিয়ে নিয়ে যায়, এত চমৎকার সাবলীলতায় হিসেবের কথাটা হিসেবে আসে না আর।
আরিফ জেবতিকের ধূলি মাখা চাঁদ হাতে পেতে মুখিয়ে ছিলাম। এরপর সেটা দিয়েই শুরু। গল্পের বিস্তারে এটাকে উপন্যাস মনে হয় না কিছুতেই, চরিত্রগুলোর ঠিক গভীরেও হয়ত যাওয়া হয় নি তেমন। এটা একটা গল্পই। গল্পটাকে ভাষার কারুকার্যে টেনে লম্বা করার চেষ্টা তেমন ভালো লাগে না। তবে বিন্দু থেকে যারা মহাসাগরের সন্ধান দিতে পারেন, আরিফ জেবতিক তেমনই একজন শক্তিশালী লেখক। সাবলীল লেখনিতে ধরে রাখেন পাঠককে, 'এরপরে কি হবে' পাঠকের আগ্রহটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে। এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলি। আর শেষ করে ভাবি, যে মেসেজটি লেখক দিতে চেয়েছিলেন, তা অতি চমৎকারভাবেই তো দিয়েছেন। চরিত্রগুলো? গভীরতা? হ্যাঁ, এই মেসেজের জন্য এরচেয়ে গভীরে যাওয়ার তো তেমন দরকারও নেই। আরিফ জেবতিকের পরিমিতিবোধে মুগ্ধ হই।
নজমুল আলবাবের বউ, বাটা, বলসাবান পড়ে অনেকক্ষণ ঝিম মেরে আধশোয়া হয়ে বসে থাকি। এত পিচ্চি গল্প! তারপর একে একে ভাবতে থাকি, এই গল্পে আর কি যোগ করা যেত, আর কি যোগ করে এই বক্তব্যটাকে আরো ভালোভাবে প্রকাশ করা যেত। আর কিছু খুঁজে পাই না যে! নাহ! পরিমিতিবোধের কারণেই গল্পটা সিম্পলি সুপার্ব। এরপর একে একে বাকি গল্পগুলো পড়ে যাই। ঝর ঝরা, ছোট ছোট বাক্যের সহজ ছন্দের সাথে ঘটনাগুলো যেন চোখের সামনে ঘটতে দেখি। আমি নিজে যেমনটা লিখতে চাই; কিন্তু পারি না, নজমুল আলবাব ঠিক সেই কাজটিই করেছেন। ঈর্ষান্বিত হই। তবে ঈর্ষাটা তার অনেক গল্পেরই নায়িকা বিদেশ ফেরতা ছোটবেলার বান্ধবী শাহানাকে নিয়ে নয়। শাহানা কেসটা কি তাকে একদিন সচল আড্ডায় বেশ চেপেচুপে ধরে বের করে ফেলতে হবে।
এরপরে ধরি, এস এম মাহবুব মুর্শেদের সম্পাদনায় আরিজোনা বাঙালি কম্যুনিটি থেকে বের করা 'সিঁড়ি'। বেশ ক'জন সচলও ওখানে লেখা দিয়েছেন। শিমুল আর হিমু দেখলাম খুব দূরদর্শী। আজকের শিশুই আগামীদিনের ভবিষ্যত। তাদের সমস্ত দৃষ্টি ভবিষ্যতের দিকে। ছোটবেলায় শোনা মেছো ভূতের গল্প বলে শিমুল আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে শিশুদেরকে ভয় দেখিয়ে ইমপ্রেস করার। হিমু আবার এককাঠি সরেস। সে ছোট্ট মিতুনকে দিয়ে ডাল রাঁধার মত কঠিন কাজ করাতে চেয়েছে। ছোট্ট মিতুন যখন ফেল মারে, তখন সে মনে মনে ভাব নিয়েছে, হে হে, মিতুন তুমি কিছু পারো না, আমি ডাল কেন, পিজাও ওভেনে রান্না করতে পারি! মাহবুব মুর্শেদের রম্য গল্প আছে। সচলে বেচারা ডেভেলাপমেন্টের কাজ করতে করতেই হাপিয়ে ওঠে, এত চমৎকার রম্য গল্প থেকে আমরা বঞ্চিত হই। জ্বিনের বাদশা একটি রাজনৈতিক লেখা দিয়েছেন। তার সাথে আমার এই বিষয়ে মত মিলে না। তিনি আশা করতে চান। আমি যুক্তি দিয়ে বিচার করে আশা না দেখলে সন্দেহবাদী মানুষ। ডঃ ইউনুস বা জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা তত্ত্ব সরকার নিয়ে তিনি আশায় ছিলেন, আমি সন্দেহবাদী ছিলাম, তবে তিনিও এদের নিয়ে সন্দেহবাদীদের একজন হচ্ছেন দিন দিন, তার লেখা পড়ে তাই ভালো লাগে, চিন্তার মিলই বন্ধুত্বের সবচেয়ে বড় অনুঘটক। কৌতুক পড়লাম, ধাঁ ধাঁ পড়লাম। অঙ্কের একটা ধাঁধাঁ গাধার মত ভুল, সোনার বার কাটা ধাঁধাঁয় তিন বার নয়, দুইবার কেটেই সাত দিনে সাত কেজি স্বর্ণ দেয়া সম্ভব। এসব ভুল চোখে পড়তেই সতর্ক হয়ে যাই। মস্তিষ্ককে অনেকক্ষণ ফাঁকি দিয়ে রাখা গেছে। তার অলস অংশের কারখানায় আবারও প্রোডাকশন শুরু হয়ে গেছে। কেন যে এত সব ভুল ধরতে যাই! মানুষের জীবনটাই তো এক অর্থে বিরাট ভুল।
এখন আর ভুল ধরে কাজ নেই। মস্তিষ্কের কাছে দাসখত লিখে দিয়ে চোখের বারোটার কাঁটা টুং টাং করার আগেই ঘুম দরকার। গভীর ঘুম।
মন্তব্য
ফুল স্পীডে চলা যায় সবসময়? ভাল করে ঘুমিয়ে নিন। যখন চলা শুরু করবেন, ও যতক্ষন চলবেন, ফুল স্পীডেই চলবেন।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ঘুম নিয়ে মহাসমস্যা। উইকএন্ডের সকালে ঠিকই ৭টায় জেগে উঠি। এখন দিন বড় হচ্ছে, ঘুমের সময়ও কমছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এখন কেমন আছেন??
---------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছি। ডাক্তারের কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে জান শেষ। এই টেস্ট সেই টেস্ট করতে করতে অবস্থা কাহিল। এমনিতে রক্তের সিরিঞ্জ দেখলে আমি ভিরমি খাই, আর এরা গত কয়েকদিনে টেস্টের জন্য অন্তত ৪/৫ বার রক্ত নিয়েছে। :(
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সুস্থ হয়ে উঠছেন/উঠেছেন নিশ্চয়ই।
শুভকামনা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই ;)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? :-?
অনেক ধন্যবাদ। এখন ক্রিকেট খেলাও শুরু করেছি; কিন্তু ফিটনেস ফিরে পেতে সময় লাগছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
-হাসপাতাল জিন্দাবাদ।
ইয়া হাবিবি (চলুক)
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কথা ঠিকই। হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে আরো বেশ কয়েকটা বই একটানা পড়ে ফেলেছি। অনেকদিন এমন বই পড়া হয় না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বেশ...
কিন্তু এখন সুস্থ আছেন তো এখন?
দেশ থেকে বইগুলো আসবার কথা, অপেক্ষা করেই আছি এখনও।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
সুস্থ হয়ে উঠছি।
আমি এখনও সচল সঙ্কলন হাতে পাই নি। হিমুকে ধরে মাইর দিতে হবে। :)
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মস্তিষ্কের সাথে লুকোচুরি খেলার দরকার নাই, শরীরের যত্ন নেন। ভালো থাকুন। শুভকামনা ।
:)
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনার লেখাটা খুব ভালো লাগলো... বইগুলো পড়িনি। আপনি সুস্থ এখন পুরোপুরি?_________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক ধন্যবাদ। অবস্থা অনেক ভালোর দিকে। কিছুদিন টানা রেস্ট নিতে পারলে ভালো হতো। আপাতত সে কপাল নেই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ধন্য এ শাস্তি। :D
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
এই পোস্টটা সময়মত না পড়ে ভালই হয়েছে। নয়ত কত প্রশ্নের উত্তর দিতে হইত...
আল্লা যা করে ভালর জন্যই করে।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন