নওগাঁ, জুলাই ২৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- পুলিশের সঙ্গে কথিত 'বন্দুকযুদ্ধে' শেষ পর্যন্ত সত্যিই নিহত হলেন নিষিদ্ধ সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-লাল পতাকা) শীর্ষ নেতা ডা. মিজানুর রহমান টুটুল। টুটুলের মা নভেরা খাতুন আগের দিনই তার ছেলের র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার কথা জানিয়ে তাকে 'ক্রসফায়ারে না মারার জন্য' সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের কাছে খোলাখুলি আবেদন জানান। ...
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি প্রসেস, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যার মূল উদ্দেশ্য জনগণের কল্যাণসাধন। রাষ্ট্রের প্রতিটি এনটিটিরই নিজস্ব রোল আছে, নিজস্ব কাজ ও তার পদ্ধতি আছে, অধিকার আছে, অধিকারের সীমাবদ্ধতা আছে, দায়িত্ব আছে, দায়িত্বেরও সীমারেখা আছে এবং এসব মিলিয়েই সুষ্ঠুভাবে চলে একটি আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। আমরা জনগণ ট্যাক্স দেই, ট্যাক্সের টাকায় চৌকিদার রাতে পাড়া মহল্লা পাহারা দিবে, পুলিশ শান্তি- শৃঙ্খলা রক্ষা করবে, রাইফেলস সীমান্ত পাহারা দিবে, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকবে সেনাবাহিনী, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের স্বার্থে চিন্তা ও পরিকল্পনা করবেন, দেশকে নেতৃত্ব দিবেন। প্রত্যেকের ভূমিকাই মোটামুটি ভালোভাবেই ডিফাইন্ড, যার ব্যতিক্রম ঘটতে পারে একমাত্র জরুরী ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায়। যেমন, বন্যা বা সাইক্লোনের সময় ব্যারাক ছেড়ে জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে সেনাবাহিনী। এর বাইরে একজনের অধিকার ও দায়িত্বের সীমারেখা লঙ্ঘন করা রাষ্ট্রে অরাজকতাই সৃষ্টি করে।
একটি রাষ্ট্র কিভাবে চলবে, প্রত্যেকের দায়িত্ব কি তা ডিফাইন করে রাষ্ট্রের আইন। রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ণের জন্যও যে উদ্দেশ্যটা মাথায় রাখা হয়, তাহলো জনগণের কল্যাণ। মানবাধিকার, জনগণের মৌলিক অধিকার, জনগণের চাহিদা, সন্তুষ্টি সবকিছুই প্রতিফলিত হতে হবে আইনে। এজন্যই সংসদ আছে, জনগণের রায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছে, এজন্যই জনগণ তাদেরকে নির্বাচিত করে, তাদের ব্যয়ভার বহনের জন্য কাজ করে। প্রণীত আইনের ভুলত্রুটি, সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে মত প্রদানের অধিকারও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অঙ্গীকারের অংশ। কারণ, জনগণের জন্যই আইন। কোনো ইস্যুতে মতানৈক্য থাকলে সংখ্যাধিক্যের মতের প্রতিফলন ঘটানোকেই নর্ম হিসেবে ধরা হয়। এভাবে আইনগুলো স্পষ্ট করে লিপিবদ্ধ করে সে অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব সরকারের।
স্বভাবতঃই আইনের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাশীল হওয়াই জনগণের পাশাপাশি সরকারেরও অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। এখন দেখা যাক, সন্ত্রাস বিষয়ে সরকারের কার দায়িত্ব কি ও সেই দায়িত্বের সীমারেখা কি হওয়া উচিত।
রাষ্ট্রের নাগরিককে আইন মেনে চলতে হয়, আইন ভঙ্গ করলে তার জন্য সাজা পেতে হয়। কোন আইন কোন মাত্রায় ভাঙ্গলে কি পরিমাণ সাজা পেতে হবে, তা নির্ধারনের দায়িত্ব আদালতের। অন্যদিকে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের। কোথাও যেন আইনভঙ্গ না হতে পারে, চুরি-ছিনতাই-সন্ত্রাস না হতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার দায়িত্বে থাকে পুলিশ। এরপরেও অপরাধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ থাকলে অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আদালতের।
উপরে যা বললাম, তা মোটামুটি পারফেক্ট সিনারিও। সভ্য দেশগুলোতেও পারফেক্ট অবস্থা অর্জিত হয় না, তবে এ অবস্থা অর্জনের চেষ্টা তাদেরকে পারফেকশনের খুব বেশি দূরে যেতে দেয় না। বাংলাদেশের মত দুর্ণীতিপরায়ণ রাষ্ট্রের দূরত্ব পারফেক্ট সিনারিওর সাথে ভয়াবহ রকমে বেশি। প্রথমত পুলিশ নিজেই দুর্ণীতিপরায়ণ। তাদের নাকের ডগায় অপরাধ ঘটে, উৎকোচের বিনিময়ে অপরাধী অপরাধ করার নিরাপত্তা কিনে। এরপরে মামলা না হলে তো কথা নেই। মামলা হলেও অপরাধীকে ধরতে মামুর জোর লাগে। অপরাধী ধরা পড়লেও আবার চলে উৎকোচের খেলা। মামলাকে দুর্বল করে সাজানো হয়, ফাঁক রাখা হয়, যে ফাঁক গলে অপরাধী বেরিয়ে আসে। এর ওপরে আছে অসৎ বিচারক ও বিচারপ্রক্রিয়ায় নানমুখী হস্তক্ষেপ। ফলে অপরাধী ব্যাকিং থাকলে অপরাধ করেও বেরিয়ে আসে।
এভাবে অপরাধ একটা কাস্টমে পরিণত হওয়ায় সাধারণ মানুষ যখন ক্ষোভে সাধারণ চোর, ছিনতাইকারীকেও গণপিটুনী দিয়ে মারা শুরু করে, সেই পরিস্থিতিতে গত সরকার RAB বাহিনী গঠন করে, কিছু সন্ত্রাসীকে ক্রসফায়ার নামে হত্যা করে জনগণের ক্ষোভকে প্রশমিত করার চেষ্টা চালায়।
কিছু সন্ত্রাসী খুন হওয়ায় জনগণ সাময়িকভাবে তৃপ্তি পেলেও ওভারঅল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয় নি, বছরাধিককাল ধরে জরুরী অবস্থা জারিই তার প্রমাণ। ক্রসফায়ারের মত একটা 'আইনের বাইরের সিস্টেম' কখনোই কোনো সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে না। সমস্যার মূলে না গিয়ে কিছু ডালপালা ছাঁটার চেষ্টা করে জনগণকে সাময়িক একটা লোকদেখানো সান্ত্বনার চেয়ে এর গুরুত্ব মোটেই বেশি নয়।
পুলিশের দায়িত্ব সন্ত্রাস রোধ করা। সে দায়িত্বে অবহেলার জন্য প্রথমেই জবাবদিহি করতে হবে পুলিশের। পুলিশের বেতন কম, তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র নেই - এসব ধুনপুন কারণ দেখানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। দরকার হলে পুলিশের বেতন বাড়ানো হোক, টাকা না থাকলে যুদ্ধহীন একটি দেশের সামরিক খাত থেকে বাজেট কমিয়ে সেটা শান্তিরক্ষায় ব্যবহৃত হোক। পুলিশের বেতন বাড়ুক, তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসীদেরকে মোকাবেলা করুক। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক। অবশ্য জবাবদিহিতার এ ধারাটা নিশ্চিত করা শুরু করতে হবে একেবারে টপ লেভেল থেকে। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হলেই তারাও তাদের অধঃস্তন কর্মী, শান্তিরক্ষাবাহিনী সবারই জবাবদিহিতা আদায় করতে সচেষ্ট হবে।
একটি আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমার আপনার দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের, সরকারের সেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কথা বলা, জনমত গঠন করা। অন্যায়কে মেনে নেওয়ার সর্বগ্রাসী কাস্টোম থেকে যত শীঘ্র আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো, ততোই মঙ্গল।
মন্তব্য
এই বিষয়ে দৃষ্টিপাত ব্লগে দেখুন আসিফের লেখা, জ্যোতির লেখা এবং রুমির লেখা। প্রখ্যাত সাংবাদিক আফসান চৌধুরীর মন্তব্যের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
লেখাগুলো পড়ে ডিটেলস অনুভূতি জানাবো। লিংকের জন্য থ্যাংকু।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আফসান চৌধুরীর মন্তব্য পড়লাম। উনি স্বাধীনতার পরে রাজাকার হত্যার রেফারেন্স টেনে বলতেছেন, আমাদের আইনের শাসন নেই, আমরা সন্ত্রাসীর মৃত্যুতে খুশী হচ্ছি। কিন্তু এটা যে একটা অসুস্থ ট্রেন্ড, তা পেলাম না। অসুস্থতাকে মেনে নিলে অসুখের তীব্রতা বাড়ে বই কমে না, আমাদের সুস্থ হওয়ার জন্য চিন্তা করা উচিত, সুস্থতার পক্ষে কথা না বললে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটবে না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসকদেরই আস্থা না থাকলে সাধারন মানুষ কি করে আস্থা রাখবে !!!
আস্থাটাই যদি না থাকে, তাহলে আইনেরই বা দরকার কি, সরকার পোষারই বা দরকার কি? উনারা জরুরী অবস্থা দিয়া রাখছেন, যাতে পাবলিক কথাও না বলতে পারে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অত্যন্ত দ্বিধা নিয়ে একটি প্রশ্ন সবার কাছে, যেহেতু আমি আইনের ছাত্র নই তাই আমি বিদ্যমান আইন বিশদ জানি না। যারা আইন জানেন তারা দয়া করে উত্তরটি জানাবেন। পুলিশ যখন কোন অপরাধীকে (আসলে সন্দেহভাজনকে) গ্রেফতার করে তখন পুলিশ সাধারণতঃ তাকে প্রহার বা শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে থাকে। প্রায়শঃই পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর খবরও আমরা সংবাদ মাধ্যমে পেয়ে থাকি। স্বীকারোক্তি বা তথ্য আদায়ের উদ্দ্যেশ্যে পুলিশ এই অত্যাচার করে থাকে বলে বলা হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ কোন অপরাধীকে বা সন্দেহভাজনকে শারিরীক বা মানসিক নির্যাতন করার আইনগত অধিকার রাখে কিনা। বিষয়টিকে Prerogative বলার কোন আইনগত ভিত্তি কি আছে? আসলে আইনে কি Prerogative বলে কিছু থাকতে পারে? বিদ্যমান আইনে আদালতে অপরাধ প্রমানিত হলে অর্থদন্ড, কারাদন্ড (সশ্রম বা বিনাশ্রম) বা মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত শাস্তি হতে পারে। শরীয়া আইন যে সব দেশে আছে সেসব দেশ ছাড়া অন্য কোন দেশে শারীরিক শাস্তির বিধান নেই বলেই জানি। শরীয়া আইনেও শারিরীক শাস্তির মাত্রা ও প্রকৃতি নির্ধারিত থাকে। পুলিশের মত বেধড়ক পিটানোর অবকাশ সেখানেও নেই। আর মানসিক নির্যাতন সম্ভবতঃ সব দেশেই আইন বহির্ভূত। তাহলে পুলিশের দেশ নির্বিশেষে এহেন আচরণ কি আইনের পরিপন্থী হয় না? এব্যাপারে মানবাধিকার সংস্থাগুলো, সচেতন আইনজ্ঞরা বা সুশীল সমাজ কখনো কোন কথা বলেন না কেন? এব্যাপারে (যদি আইন বহির্ভূত হয়ে থাকে) পুলিশের বিরূদ্ধে মামলা হয় না কেন? অপরাধ প্রমান বা বিচার হবার আগেই যদি শাস্তি দেয়া হয় তাহলে আদালতের গুরুত্ব থাকে কোথায়? সেক্ষেত্রে আদালতের এখতিয়ারও কি ক্ষুন্ন হয়না?
===================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার প্রশ্নগুলো তীক্ষ্নধার এবং স্পষ্ট। কিন্তু উত্তর যারা দিবে, তাদের জবাবদিহিতারই যে বালাই নেই। সুশীল সমাজই ভাড়া খেটে জবাবদিহিতার পথগুলো বন্ধ করার পক্ষে মহাবাণী দিয়ে যায়।
আইনের ব্যাপারটা আমি সঠিক জানি না। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন জনগণের অধিকার কতোটা রক্ষা করে আর কতোটা সরকারে থাকা মুষ্টিমেয়র ইচ্ছা জনগণের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া, এটা আইন বিষয়ে জানা ব্লগাররা ভালো বলতে পারবেন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
- বাংলাদেশে যতোদূর মনেহয় এখনো বৃটিশদের করা শ'দুয়েক বছর আগের আইনই অনেকক্ষেত্রে প্রযোজ্য আছে। তখন প্রেক্ষাপট আর বাস্তবতা ছিলো ভিন্ন। সেই ভিন্নমাত্রার প্রেক্ষাপটে প্রস্তুত আইনসমূহ দু'শরও বেশি বছর পরে কী করে একটি আধুনিক রাস্ট্র পরিচালনার খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এখনো!
এটা গেলো খাতাকলমের দিক।
আর আইনসমূহের প্রায়োগিক দিক নিয়ে বলাইদা হালকার উপর ঝাপসা বলে গেছেন। পুলিশ রাস্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের কতোটা সামাজিক অবস্থান বিদ্যমান আছে? তাদের এখতিয়ার, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা সর্বোপরি জব-স্যাটিসফেকশন কতোটা বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, এটাও বোধ করি ভেবে দেখার সময় এসেছে দশক আগেই।
যে ব্যাপারটা সিক্সথ পান্ডব টেনেছেন সেই ব্যাপারটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে পারে। বিশদ আলোচনা হতে পারে বলাইদা'র এই টপিকটা নিয়েও। বলাইদাকে ধন্যবাদ শুরু করার জন্য।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গোধু, আমি বাস্তবের আলোচনায় খুব একটা ডিটেলসে ইচ্ছে করেই যাইনি। আমাদের টার্গেট কি হওয়া উচিত, সেটা বুঝতে চেষ্টা করেছি। আইন সংস্কারে জনগণের অংশগ্রহণ, বর্তমান চাহিদার প্রতিফলন দরকার।
আইনের প্রায়োগিক বিষয়ে, রাষ্ট্র পুলিশ ডিপার্টমেন্টে উন্নয়ন ঘটাক। পুলিশের ওপরে যাতে মানুষের বিশ্বাস স্থাপিত হয়, তার জন্য পদক্ষেপ নিক। চেষ্টাটা দরকার খুব।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অছ্যুৎ
আপনাকে ধন্যবাদ যথেষ্ট সংবেদনশীল একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য।
১. যত সব নীতি আছে তাদের অতীত দোষ গুণ বিচারে সম্ভবত বামনীতি একটু এগিয়ে থাকবে। এ কারণে অনেকের মতো কিছুটা দুর্বলতা আমারও আছে, স্বীকার করছি। সে দুর্বলতার জন্যই কিনা আমরা কিছু অপমৃত্যু বা হত্যাকে ভিন্নভাবে দেখতে চাই।
২. মানবতাবাদী হিসাবে এখন অনেকে মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না। মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদ করার জন্য একাধিক সংগঠনও আছে। (ধর্মীয় গোড়াদের কথা বাদ দিলাম।) এসব মানুষ, বা গ্রুপ কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করে। যেমন ধরুন, মাদক পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে একজন অস্ট্রেলিয় মৃত্যুদন্ড পায় সিংগাপুরে। এর জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপুল জনমত তৈরী হয়। সিংগাপুরের পণ্য, এয়ারলাইনস, ফোন কম্পানি সব বর্জনের ডাক আসে। আবার, বালি দ্বীপে বোমা হামলার জন্য আমরোজি আর মুখলেসের ফাঁসি হলে, এমনেস্টি তা মওকুফের আবেদন জানালে এই মানুষগুলোই আবার এমনেস্টির প্রতি বিরূপ হয়ে উঠে। এমনেস্টির কথা ছিলো, তারা সার্বজনীনভাবে মৃত্যদণ্ডের বিরোধী, কিন্তু সাধারণ মানুষ তা মানে না। তাদের আলাদা হিসাব।
৩. আমরা বাংলাদেশেই একাধিক উদাহরণ খুঁজে পাব যেখানে সুযোগ বুঝে প্রতিবাদ করি। যেমন ধরা যাক, বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে নীরিহ মানুষ হত্যার কথা। এটা এত গা-সওয়া হয়ে গেছে যে, বিএসএফ-বিডিআর মিটিং চলাকালে বিএসএফ যখন প্রতীজ্ঞা করছে আর মারবে না, ঠিক তখনই হয়ত অন্য সীমান্তে কাউকে মেরে ফেলেছে- আমরা অনেকেই চেপে যাই।
রৌমারি আর বোয়ালির ঘটনা ধরুন। ভারতীয় মিডিয়ার প্রচারে আসল ঘনটা জানার কোন উপায় ছিল না। তার উপর আওয়ামী সরকার। সে সময় আবেদ খান প্রথম আলোতে বিডিআরের 'আস্পর্ধা' নিয়ে কলাম লিখেছিলেন। আবেদ খান কিন্তু বিএসএফের গুলিতে কারো মৃত্যুর কোন প্রতিবাদ করেননি। গত দশ বছরে প্রথম আলোর মত পত্রিকা এ সব খুনের ১০১টা রিপোর্ট করেছে, আর প্রতিবাদ করে সম্পাদকীয় লিখেছে মাত্র একটি।
৪. প্রসংগটা আরো কাছে টানি। কালা জাহাঙ্গীর কুখ্যাত। নিজে কয়েক ডজন মানুষ মেরেছে নিজেও হয়ত জানে না। সে যখন ধরা পড়ে, (শাইখ সিরাজের ভ্রমণসংগী অবস্থায়) তখন অনেকের ধারণা হয় তাকে মেরে ফেলা হবে। সত্যি সত্যি তা হয়ও। তার হত্যার বিশেষ কোন প্রতিবাদ হয়নি। কারণ, আমরা মনের মধ্যে বিচার করেই ফেলেছি যে তার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য- সেটা আদালত দিক, আর পুলিশ দিক। একই ঘটনা ঘটেছে বাংলা ভাইয়ের বেলাতেও। আমরা যদি প্রকৃত অর্থেই বিচার-বহির্ভুত হত্যার বিরোধী হই, তবে তা কোন বাছ-বিচার না করেই হওয়া উচিৎ।
একই ধরণের বোধ তপনের বেলাতেও কাজ করতে পারে। সে যত খুন আর অপরাধের জন্য দায়ী তার জন্য হয়ত তার ফাঁসিই হতে পারত। কিন্তু পুলিশ সে অকাজটা নিজে করেছে।
আরেকটা উদাহরণ দিই, আওয়ামি আমলে, টানবাজার উচ্ছেদ করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত জোড়-পূর্বক তাদের উচ্ছেদের দলে, কাজেই সেই অভাগীদের কোন আশ্রয় ছিলো না। রাতের অন্ধকারে কাজ হয়েছে, এবং পরে একাধিক সূত্রে জানা গেছে কয়েকজন নিতান্তই নিখোঁজ হয়ে গেছে। সে সময় তাদের পক্ষে কোন মিডিয়া, কোন সংগঠন (নারীবাদীরাও না) কোন কিছু বলেনি, পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা। একমাত্র, ফরহাদ মজহার একটা কলাম লিখেছিলেন, আক্ষেপ করে। সেসময় আমাদের প্রায় সবার বিবেক ধরেই নিয়েছিল পতিতাদের কোন অধিকার থাকতে নেই।
৫. রাষ্ট্র নিজের বা ভিনদেশের মানুষকে বিনা বিচারে মারছে না, তার উদাহরণ খুব কম। নন্দীগ্রামের কথাই ধরুন। শিল্পের বিরোধিতা করায় কত মানুষকে জীবন দিতে হলো, বাড়ী-ঘর ধ্বংস হলো, সিপিএমের কর্মীরা কত মেয়ের ইজ্জত লুটে নিল- এই বিংশ শতাব্দীতে। পাঁকা পাঁকা কমিউনিস্ট নেতারা সেটা জায়েজ করার জন্য কত ধরনের তত্বই না হাজির করল!
৬. শেষমেশ গণপিটুনিতে মানুষ মারার বিষয়টাই বলি। কাউকে এখনও তো তার প্রতিবাদ করতে দেখলাম না। ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, চোখ উপড়ে নিয়েছে, ইত্যাদি লোমহর্ষক খবর, ইদানিং ছবিও দেয়া হচ্ছে পত্রিকায়। এবস অপরাধীদের কি ভালমতো মারা যাওয়ার অধিকারও নেই। তাদের অনেকে অন্তত মানুষ খুনের দায়ে দোষী না।
এখন বলুন কোনটার জন্য মন খারাপ হবে, প্রতিবাদ করব আর কোনটার জন্য করব না, ধরে নিব ভালই হয়েছে।
আলমগীর ভাই,
সুন্দর ও গোছানো মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনি যে উদাহরণগুলো দিয়েছেন, তা অবশ্যই বাস্তবতা। একজন চোরকে আমরা নির্দয়ভাবে পিটাই, একজন ছিনতাইকারীকে গণপিটুনী দিয়ে মেরে ফেলি, কালা জাহাঙ্গীরকে ক্রসফায়ার দিলে মিষ্টি বিতরণ করি। সবই বাস্তব। কিন্তু এই বাস্তবতা একটা অসুস্থ সিস্টেমকে রিপ্রেজেন্ট করে। একটা সুস্থ রাষ্ট্রে এটা কখনোই কাম্য নয়।
আজ যদি পুলিশবাহিনী তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, তাহলে সন্ত্রাস একেবারেই নাই হয়ে যাক আর না যাক, ব্যাপকহারে কমে যাবে, এটা নিশ্চিত। সুতরাং আমাদেরকে আলো ফেলতে হবে সমস্যার মূলে। বিচ্ছিন্নভাবে আইনবহির্ভূতভাবে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে হত্যা করা রাষ্ট্রের জন্য কখনোই জায়েজ হতে পারে না। সাধারণ মানুষ কি এভাবে হত্যা চায়? রাষ্ট্র কি কখনো জানতে চেয়েছে? রাষ্ট্রের কনফিডেন্স থাকলে ক্রসফায়ার নিয়ে জনমত যাচাই করুক, দরকার পড়লে এটাকে আইনে পরিণত করুক। কিন্তু যতোদিন এটা আইনে পরিণত হচ্ছে না, জনগণের কথার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না, ততোদিন এটা প্রয়োগ করে সরকার যা করছে, তা নির্ভেজাল অন্যায়।
আমরা একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ চাই, ক্রসফায়ারের মত অস্থিরতা ও ভীতি উদ্রেককারী সিস্টেম কখনোই সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পক্ষে যাবে না। কি হওয়া উচিত, তার পক্ষেই কথা বলা দরকার। যেমন, ঘুষ খাওয়া এড়ানো যায় না বলে সেটাকে সেটাকে খারাপ জেনেও হালাল বলে জনমত সৃষ্টি করলে সেটা বাড়বে বই কমবে না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমি কোনটাই সমর্থন করিনি। কেবল বলতে চেয়েছি, আমাদের নিজেদের মতের মধ্যেই গলদ আছে আমারা কী চাই এ নিয়ে। ক্রস-ফায়ারের সমর্থক একময় বেশ ছিলো, এখন সেটা কমেছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু গণপিটুনি দিয়ে কাউকে মেরে ফেলা অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে। পত্রিকাগুলোর রিপোর্টিংএর ভাষা পড়লে সেটা স্পষ্ট হয়। (গণধোলাইয়ে/উত্তম মধ্যমে মৃত্যু)।
অপমৃত্যুবিহীন একটা সমাজ যদি হয়, খুশীই হব আমরা।
ঠিক। একজন সন্ত্রাসীর মৃত্যুর খবরে ভুক্তভোগীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটা হয় আনন্দের। মৃত্যুর প্রক্রিয়া নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না মানুষ। প্রক্রিয়াটার অসুস্থতা ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে পারে।
অপমৃত্যুহীন একটা সমাজ এমনিতে হয়ে যাবে না। তার জন্য চাই জনমত। অস্থির একটা চাপিয়ে দেয়া সিস্টেমের বিপক্ষে না বললে, সুস্থ সিস্টেমের প্রস্তাব না করলে কেউ আমাদেরকে একটা সুন্দর সমাজ দিয়ে যাবে না।
আপনার ফিরতি মন্তব্যের জন্য স্পেশাল থ্যাংক্স।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
শুধুই তর্কের খাতিরে বলা:
আলমগীর ভাইয়ের অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণটা লক্ষ্য করুন। একই সমাজের একই লোকজন একসময় মৃত্যূদন্ডের প্রতিবাদ করছে না (বালির অপরাধী) কিন্তু অন্য মৃত্যূদন্ডের প্রতিবাদ করছে (সিঙ্গাপুরের অপরাধী)। --- এখানে অস্ট্রেলিয়দের সিস্টেমটা তাহলে কেমন? সুস্থ নাকি অসুস্থ?
...... কারণটা সম্ভবত একটি ক্ষেত্রে মৃত্যূদন্ডের শিকার তাদের স্বদেশী আরেকবার বিদেশী + স্বদেশী হত্যাকারী। উভয়ক্ষেত্রেই কিন্তু আইনঅনুযায়ী বিচার হয়েছে -- একক্ষেত্রে তাঁরা আইনকে সমর্থন দিচ্ছে আরেকক্ষেত্রে প্রতিবাদ করছে !
সুতরাং সুস্থ-অসুস্থ বা সঠিক-বেঠিক ব্যাপারগুলোর আপেক্ষিক হয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছুই পরম হচ্ছে না। সবকিছুই অন্য কোন কিছুর সাপেক্ষে নির্ধারিত হচ্ছে।
ক্রসফায়ার সমর্থনের সময় যেটা রেফারেন্স, এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার সময় অন্য আরেকটা রেফারেন্স। অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন/অসমর্থন দুটোই সঠিক অপর একটি রেফারেন্সে (অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের জীবন)... ... ... ব্যাপার হল পরিস্থিতি অনুযায়ী রেফারেন্সগুলির ক্রম নির্ধারণ করা। .... প্যাঁচায় ফেললাম মনে হচ্ছে ...
(কিরা কাইট্টা কই ... সুশীল হওনের কুন ইচ্ছা নাইক্কা)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
শামীম ভাই, ডরাইয়েন না।
আমি আপনার মন্তব্য পুরা বুঝতে পারি নাই, দেখি আলমগীর ভাই কি জবাব দেন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাই দা
টানলেন যখন একটু সরল করেই বলি (বির্তক হলে মাফ চাই)।
১. ডা. টুটুলের খুনে আমার মনে খারাপ লেগেছে, আরো অনেকেরই হয়ত লেগে থাকবে। দেখুন, রাষ্ট্রের আইনে সে কিন্তু মৃত্যুদণ্ডযোগ্য একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত। আমরা ভাবছি, সেই মৃত্যুটাই যদি বিচারের মাধ্যমে হত তাহলে অতটা খারাপ লাগত না।
আমার বিবেচনায় সেটা আমাদের মনের দ্বন্দ্ব। এই একই অনুভুতি হওয়া উচিৎ ছিল আরো তিনশর বেশী মানুষের জন্য যারা বিচারের বাইরে খুন হয়েছে। এর বাইরেও খুন হয়েছে প্রায় সমসংখ্যক লোক বিএসএফের হাতে। (কেবল অধিকার ছাড়া অন্য কোন এনজিও/সংগঠন সেটার হিসাবই রাখে না।)
২. আগেও বলেছি, মানবিক বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডের যথার্থতা নিয়েই বিতর্ক হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াতে মৃত্যুদণ্ড নেই। আমারও নিজেরও মনে হয়, প্রাণ নিয়ে নেয়ার বদলে হয়ত আমৃত্যু বন্দী রাখা যেতে পারে। কিন্তু সেই আমি অবস্থা ভেদে মত পাল্টাই। ধরুন, অস্ট্রিয়া সেই পিশাচের কথা যে নিজের মেয়েকে ৪০বছর একটা প্রকোষ্ঠে রেখে যৌন নির্যাতন করেছে, ৭টি সন্তানের জন্ম দিয়েছে, সেই ছোট্ট প্রকোষ্ঠের মধ্যেই। তাকে রাষ্ট্র কী শাস্তি দেবে?
আবার মনে থাকবে হয়ত, কবীর চৌধুরী প্রমুখ মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে এমনেস্টির প্রোগ্রামে থাকেন। তারাই আবার বঙ্গবন্ধুর খুনের আসামীদের দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবী করেন। বৈপরীত্যটা দেখুন।
৩. আমি আমার নিজের অবস্থান নিয়েই অস্বস্তিতে থাকি। নিজেকে প্রশ্ন করি, কখন একটা অপমৃত্যুতে দুঃখ পাই, আর কখন মনে হয়, আচ্ছা এটা দরকার ছিল, বা অন্তত না দেখার ভান করা যায়। এ কাজটি অনেক বিখ্যাত লোক করছেন, সেটাও দেখতে পাচ্ছি। "বৃহত্তর লক্ষ্যে ক্ষুদ্র স্বার্থ" বিসর্জন মেনে নিই।
৪. আরো একটা ব্যাপার। মিলিটারি কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থারই অংশ। তবু বাংলাদেশে আমরা কারণে-অকারণে তাদের অপছন্দ করি। তারাও শুনেছি ব্লাডি সিভিলিয়ান বলে গালি দেয়। যত কালো আইন, আর এই প্যারা-মিলি বাহিনী আছে তাতো আমাদের নির্বাচিত সরকারের করা। সরকারই তাদের আইনের মাধ্যমে দায়মুক্তি দিয়েছে।
এমনকি, প্রথম তত্বাবধায়ক সরকার, বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের সময় যখন আর্মির অপারেশন চলে, অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয়, আমরা সবাই মিলে বাহবা দিয়েছি। ভিক্টিমের পক্ষে কেউ ছিল না, না কোন পত্রিকা, না কোন সংগঠন।
আমার সব কথার মূল: আমাদের নিজেদের বোধে সমস্যা আছে। শামীম ভাই মনে হয় সেটাই বলতে চেয়েছেন।
বিচার ব্যবস্থা তৈরি করে রাষ্ট্র। সেই ব্যবস্থার অধীনে পুলিশ ইত্যাদি বিভিন্ন বাহিনী গঠণ করে রাষ্ট্র। সেই বাহিনীগুলোকে মানুষ খুন করার অঘোষিত লাইসেন্সও দেয় রাষ্ট্র। সুতরাং সমস্যা রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্র যারা চালান তাদের। রাষ্ট্রচালকরা যখন আর তাকে চ্যালেন্জ জানানো শক্তিকে প্রতিরোধ করার যুক্তি খুঁজে পান না,শক্তি রাখেনা তখন রাষ্ট্র এবং তার চালকরা এধরণের হত্যাকে জাস্টিফাই করে,লিগালাইজ করে। এটা নির্ভেজাল বর্বরতা। কোন ধরণের বর্বরতাই ওয়েলফেয়ার স্টেট বা হার্মলেস সোসাইটি পয়দা করে না। হিংসা নিশ্চিতভাবেই হিংশার জন্ম দেয়। দেবে। দেবেই।
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
এইটা মনে হয় কালা ফারুক ছিলো ( চিন্তিত)
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সহমত জানাই। সবকিছুরই এমন পলিটিক্যালাইজড্ রুপ যে নাগরিক হিসেবে সন্দিহান হয়ে পড়ি! সে যাইহোক সকল অপরাধীরই স্বাভাবিক বিচার হোক এই প্রত্যাশাই করি।
আলমগীর ভাই
লগ ইন করলাম আপনার এই মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাতে
অফটপিক ঃ
অমি আজাদ সেদিন জানাল আপনি তার ইয়ারমেট ছিলেন শা বি প্র বি এ
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
A life unexamined is not worthliving.-Socrates
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
একদম একমত।
মূর্তালা রামাত
আপনার নামের সোর্সটা বেশ ইন্টারেস্টিং!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমরা বোধহয় সন্ত্রাসী আর বিপ্লবীকে গুলিয়ে ফেলছি। ডা.টুটুল একটি রাজনৈতিক দলের নেতা(অথবা কর্মি) সেই দলটির রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন হতে পারে। সেটা রাষ্ট্রের- সরকারের বিরুদ্ধবাদিতা হতে পারে। ডা.টুটুলের মত মানুষরা জানেন যে,যেকোন সময় তাকে হত্যা করা হতে পারে। এটা যেনেও যারা হত্যাকারীর বেয়োনেট,বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে মরার জন্য ,তাহলে ভাবতেই হয় কী সেই মন্ত্র যা মৃত্যুকে হাসি মুখে বরণ করে ?
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
সেটা নির্ভর করে বক্তার মনের কোণিক অবস্থানের উপর। ড. টুটুল কিন্তু মুরগী বা লুংগী চুরির দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন না। মানুষ হত্যা, তা রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য হোক আর আর্থিক সুবিধার জন্যই হোক, ঘৃণ্য হওয়া উচিৎ। রাষ্ট্রবিরোধী কাজ, আর সমাজবিরোধী কাজ কোনটা বেশী ক্ষতিকর? সে কারণে শাসকরা শর্টকাট মারেন।
যারা ক্রসফায়ারের নামে হত্যার প্রতিবাদ করছেন তাদের বড় একটা অংশ বলছে, জামাত-শিবিরের কেউ মরছে না কেন? তার মানে ক্রসফায়ারে তাদের কেউ মরলে সেটা গ্রহণযোগ্য?
আলমগীর ভাই, আপনার এই বক্তব্য মোটেই মানতে পারলাম না। যদি গণতান্ত্রিক দেশ হয়, তাহলে শর্টকাট মারার জন্য রাষ্ট্রের জনগণের রায় দরকার। এক্ষেত্রে দুইটা ধাপ। প্রথমত: আইন তৈরি, যাতে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বা সরাসরি জনগণের মত থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত সেই আইনের প্রয়োগ। বাংলাদেশে যেহেতু ক্রসফায়ার আইনেই নেই, সেহেতু শাসকরা এটা প্রয়োগ করে আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে। জবাবদিহিতাবিহীন ক্ষমতার এরকম অপপ্রয়োগের পক্ষে বললে ব্যাপারটা খুব খারাপ অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়, একটু ভেবে দেখবেন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
পোস্টের ভাষ্যের সাথে একমত। বাদবাকি যেটুকু বলার ছিল, বলে দিয়েছেন বাকিরাই। সময়োপযোগী পোস্ট। এই আলোচনাটি দরকার ছিল।
রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!
৪.১.২.১.১ র উত্তরে:
আলমগীর ভাই,
এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য -
১। ব্যক্তিগতভাবে আমি আনন্দ কষ্ট কোনোটাই তেমন অনুভব করি নাই। এভাবে নির্বিচারে হত্যার ট্রেন্ডটা খারাপ, সেটাই বলতে চাইছি। ডাঃ টুটুল, ব্যক্তি হিসেবে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। একই কারণে, বাকি ৩০০ নির্বিচারে হত্যার উদাহরণ টানারও প্রয়োজনীয়তা নেই বললেই চলে।
২। এই পোস্টে মৃত্যুদন্ড থাকবে কিনা, তার মানবিক আলোচনায়ও আমি নেই। জনগণ যদি মনে করে, মৃত্যুদন্ড থাকা উচিত, তাইলে থাকবে, না মনে করলে থাকবে না। মানবিক বিষয়ের সঠিক মানদন্ড নির্ধারণ করা খুব টাফ, এজন্যই দেশে দেশে মানুষের চিন্তাভাবনা ভিন্নতর হয়, আইনেও তার প্রতিফলন থাকে। আমি শুধু বলতে চাইছে, আমাদের আইনেও জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকুক, সরকারও আইন অনুযায়ী কাজ করুক, আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করার জন্য গুন্ডা দরকার, সরকার না।
৩। এখানে বৃহত্তর স্বার্থ ক্রসফায়ার হলে সেটাকে আইনে পরিণত করা হোক, নাহলে জবাবদিহিতা থাকে না। জবাবদিহিতাবিহীন ক্ষমতার পরিণাম ভালো হওয়া অসম্ভব।
৪। আমি প্যাঁচগুলো ঠিক জানি না, তবে মিলিটারী সম্ভবত সরকারের অংশ নয়। অংশ হোক বা না হোক, তাদেরও নির্দিষ্ট রোল থাকে, তাদের দায়িত্বের সীমারেখা থাকে। তার বাইরে গিয়ে কাজ করতে গেলে পাবলিকের গালি না খেয়ে উপায় কি? জিয়া, এরশাদেরা ক্ষমতার চেয়ার আঁকড়ে ধরেছে। বর্তমান মিলিটারী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে দেশশাসন করছে। তাদের দায়িত্ব কি দেশশাসন? অবশ্যই নয়। তাহলে তাদের গালি খাওয়ার জন্য দায়ি তারা নিজেরাই।
আমাদের নিজেদের বোধে সমস্যা ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে। তাই আর্মিশাসনের পক্ষে বলা লোকের অভাব হয় না, জনগণের কথা বলার অধিকার তাতে কোথায় যায় আমরা ভাবি না, এই ক্রসফায়ারের মত ঘটনা আমি-আপনি স্বাভাবিকভাবে মেনে নেই। নিজের ঘাড়ে এসে পড়ার আগ পর্যন্ত আমরা থোড়াই কেয়ার করি। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। আমরা কথা না বললে কেউ আমাদের অধিকার দিয়ে যাবে না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সঠিক হিসাবে তারা রাষ্ট্রের অঙ্গ, সরকারের নয়।
চুলচেরা হিসাবে সরকার বলতে কেবল শাসক/দল বুঝায়। পুলিশ, বিচার বিভাগ, সশস্ত্রবাহিনী রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশ- এই জেনে এসেছি। প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশেই মিলিটারির জন্য আলাদা আইন, প্যারালাল বিচার ব্যবস্থা বিদ্যমান।
আপনি আমি মনে হয়ে কাছাকাছি জায়গায় দাঁড়াতে পেরেছি তাই আর কথা বাড়াচ্ছি না।
@মানিক ভাই
অমি আজাদের সাথে আমার কখনও দেখা হয়নি। যা পরিচয় ইমেইল আর ফোনে। এক ইয়ার কিনা জানি না, ও সিলেটে পড়েওনি। তুমির সম্পর্ক আছে, প্রায়ই যোগাযোগ হয়- এটা বলতে পারি।
পোস্ট মন্তব্য সব পড়লাম মন দিয়ে।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
শুধু পড়লে হবে না, অন্যদের পড়ার জন্য নিজের অভিমতও বলতে হবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আলোচনার শুরু এবং মন্তব্যগুলোও মূল্যবান।
কিন্তু দেশে কে শোনে কার কথা
স্বৈরাচার, দুর্নীতি আছে যেথা...
মিলিটারী অবশ্যই সরকারের অংশ যেমন সরকারী অফিসের ঝাড়ুদার ও সরকারের অংশ ।
এবং রাষ্ট্রপতি থেকে সেনাপ্রধান হয়ে উক্ত ঝাড়ুদার পর্যন্ত পুরো সরকারই পাবলিক সার্ভেন্ট । সরকারের জব ডেফিনেশন হলো পাবলিককে সার্ভ করা,সাবার করা নয় ।
-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন