লিপি তখন ক্লাস নাইনে পড়ে, সম্পর্কে খালা। ছোট চাচার শালী। চেহারা-সুরত ভালো। গায়ের রঙ ফর্সা। উঠতি বয়স। লম্বা। গ্রামের মাইয়া। তবু শুদ্ধ কইরা কথা কয়। আমি তখন ভার্সিটি সেকেন্ড ইয়ার। শুকনা। মাকুন্দাটাইপ। হাতেগোণা দুয়েকখান গোঁফদাড়ি। তাও মহা উৎসাহে মাত্র শেভ করা শুরু করেছি। তখনো চেহারায় বদ বদ ভাব আসে নাই, চক্ষু সরল, মাইয়া দেখলে শক্ত না হইলেও ভেটকি হাসি দেই না, চোখ টিপি না, অনেকটা উদাস ভাব লইয়া বইসা থাকি।
লিপির সাথে এর আগে কোনোদিন দেখা হয় নাই। ছোট চাচার বিয়ের সময় আমার এসএসসি আর তারপর থেকে আমি বিদ্যাশিক্ষার্থে ঘরছাড়া, এলাকা ছাড়া। গ্রামেও যাই খুব কম। দুই ঈদে। মিডটার্মের ছুটিতেও হলে থাকি, ছাত্রী পড়াই, টাকা কামাই। এবার কাজিন ফারুক ভাইয়ের বিয়ে ঈদের পরপর হওয়ায় অ্যাটেন্ড করতে পারি। লিপি খালাও সেই বিয়ের দাওয়াতের অতিথি।
তাকে দেখেই মনে বদ মতলব জাগে। "যেমন তেমন খালা, আল্লার নামে চালা" বলে একটা কথা আছে। তবে সেই চালাচালি সম্ভবত আরো র অর্থে। আমি বরাবরই ভালো ছেলে, অতো কুচিন্তা অবশ্যই করি নাই। তবে সে আমার ওপর ঝাপসা আগ্রহ দেখাইতেছিলো, সেইটা হালকা মালুম হওয়ায় ভাবলাম, অল্পস্বল্প ফাজলামি করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হইবো বাংলা সিনেমার 'ফাজলামি হইতে প্রেম' দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। আমি তখনও শিমুর প্রেমে দিওয়ানা। শিমু অবশ্য আমারে তেমন পাত্তা দেয় না। তবে আশায় আছি, একদিন সে প্রেমের মর্যাদা বুঝবে। এই আশায়ই আমি কুদৃষ্টিতে অন্য মেয়ের দিকে তাকাই না। প্রেম না হইলেও কেমন একটা দায়িত্ব অনুভব করি। শিমুর সাথে যখন প্রেম হবে, তখন আমার সততা আর তার প্রতি একাগ্রতা নিয়ে কতো গল্প করা যাবে, সে কতো অবাক হয়ে ভাববে আমার প্রেম কতো গভীর, মনে মনে এইসব আঁকিবুকি কাটি। সুতরাং লিপি খালা যতোই কলজে কাঁপানো সুন্দরী হোক, তার প্রেমে পড়া যাবে না। তবে একটু ভাব ভাব ভাব করা যায় নিশ্চয়ই। দেখি পাখি কী করে!
'খালা কোন ক্লাসে পড়ো?'
- 'ক্লাস নাইনে।' লিপি জবাব দেয়। সুন্দর কন্ঠ। শুদ্ধ ভাষায় কথা কয়।
আমি বয়স চুরি করি। কিছুতেই বলা যাবে না আমি ভার্সিটি পড়ুয়া বুইড়া। মাইয়া ডরাইবো। গোঁফদাড়ি কম থাকাটা কাজে দেয়। খুব গর্বের সাথে বলি, আমি এবার এসএসসি পাস করেছি। সাইন্স। চারটা লেটার। ভূগোলে লেটার পাই নাই ২ মার্ক্সের জন্য। পাশে ২ কাজিন ছিলো। ওদের চোখ গোলাকার হওয়া শুরু করতেই ইশারায় থামাইয়া দেই। ওরাও গুমর ফাস করে না। লিপি শুধু একবার জিগায়, সে শুনেছে এই বাড়ির ছেলে নাকি ভার্সিটিতে পড়ে। আমি বলি, সেইটা আমার ভাইয়া। সামনে পরীক্ষা থাকায় এই ঈদে বাড়ি আসতে পারে নাই।
লিপি সহজ হয়। চার জনে মিলে আড্ডা দিতে থাকি। ২ কাজিন, লিপি আর আমি। কত রাজ্যের গল্প। আমি মিথ্যাটা অনেক সময়ই ভালো বলতে পারি। মিথ্যা বলাটা অনেকটা অভিনয়ের মত। অভিনয়ের চরিত্রের সাথে মিশে যেতে পারলে আর কিছু করতে হয় না। আপনা আপনিই সব চলে আসে। কথা, চলন-বলন। আমি বিশ্বাস করতে শুরু করি, আমি সদ্য এসএসসি পাস। আমার প্রতিটি কথাই এই সুন্দরী মেয়ের চোখের তারায় ঝলক এনে দেয়। কথা চলে আসে, উৎসাহে ঘাটতি পড়ে না, শব্দভান্ডার ফুরায় না, রাত গভীর হয়।
বাড়ির উঠানে মাদুর পাতা ফাল্গুনের আড্ডা আরো জমে। আকাশে পূর্ণ চাঁদ। কাজিনেরা একসময় উঠে যায়। আমরা কথা বলি। কত শত কথা! সব কি মনে থাকে? শুধু স্বপ্নেরা পাখা মেলে কোনো মুক্ত আকাশে। সচেতনে শুদ্ধ বলা এই মোহময়ী মেয়েটি ভবিষ্যত আঁকে। সে ভবিষ্যতে আমি আছি কি নেই, ভাবি না। শুধু অবাক হয়ে শুনি। তার গল্প। তার স্বপ্ন। বড় হওয়ার স্বপ্ন, বেঁড়ে ওঠার স্বপ্ন, সাজানো সত্যের সাথে সুন্দরের মিশেলে গড়া স্বপ্নে রঙের টান পড়ে না, সম্ভব-অসম্ভবের উঠকো চিন্তা পথরোধ করে না। রাত গভীর হয়। চাঁদ সন্ন্যাসীর মতো আলো দিয়ে যায়। রাতে খাই না। অনেকবার ডাকাডাকি করে। যাই না। না আমি, না লিপি। আমাদের তখন গল্পে পেয়েছে, আমরা তখন রূপকথার রাজ্যে আগন্তুক।
পরদিন সকালে লিপি চলে যায়। আমাকে তার রুমালটি দিয়ে। ঠিকানা লেখা। মুখে তেমন কিছুই বলে না। চোখে এখনো সেই স্বপ্নের মোহ। আমি চোখ সরিয়ে নেই।
তার ২/৩ দিন পরে আমি ঢাকা ফিরি। স্মৃতি নিয়ে অদ্ভূত একটা স্বভাব আছে আমার। আমি স্মৃতি নষ্ট করি না, কষ্টের হোক, সুখের হোক, আমি স্মৃতি সংরক্ষণ করি। তবু কি মনে করে লিপির দেয়া রুমালটি বাসের জানালা দিয়ে উড়িয়ে দেই। হয়তো সব স্মৃতি বয়ে নিতে আমিও যথেষ্ট শক্তপোক্ত নই!
মন্তব্য
ঠিকাছে
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
কথাডায় জোশ আছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
দারুন লাগল।
তবে গল্প আর আত্মজীবনী এক ট্যাগে???
কোনটা ভেবে নেব।
আত্মজীবনী হলে বলব আপনি মানুষ ভাল না।
আর গল্প হলে বলব ভাল হইয়া যান, ভাল হইতে পয়সা লাগে না।
*****
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
অনেক ধন্যবাদ। আসলে অনেক সময় নিজেই ধন্দে পড়ে যাই, কোনটা আত্মজীবনী আর কোনটা গল্প। মানুষের জীবন হয়তো গল্পের চেয়েও বেশি বৈচিত্রময়। এই লেখাটা আসলে কোনোটাই না। কিছু শব্দসমষ্টি, যা হয়তো অন্য কারো ঘটনা, অন্য কারো আবেগ।
তবে পয়সা পাইলে আমি ভালো হইয়া যাইতেও রাজি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
উদ্ধৃতি
যেমন তেমন খালা, আল্লার নামে চালা
লেখায় আপনাকে জাঝা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
খালা-ভাগ্নে একটা মধুর সম্পর্ক।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ও লিপি ওলিপি তুমি কুতায় ?
দুষ্ট মিষ্ট লেখা। চালাইয়া যান।
--------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।
দৃশা
লিপিরে খুঁইজা আর কি হইবো রে বইন?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মিথ্যা বলাটা অনেকটা অভিনয়ের মত। অভিনয়ের চরিত্রের সাথে মিশে যেতে পারলে আর কিছু করতে হয় না।
তো দাদা যেই শিমু'র প্রেমের জন্য এই আত্মত্যাগ তিনি কি আপনার মাল্য পড়িয়াছেন শেষাবধি ?
টেকনিক্যাল প্রশ্ন।
আসলে সততা বা সতিত্বের কোনো মূল্য নাই। ১৫ বছর আগে যদি বুঝতাম!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
হাহাহাহাহাহাহা
আমিও টুকিটাকি সব কিছু রেখে দেই, যত সামান্যই হোক না কেন, স্মৃতি সংরক্ষণ করি। আমার মনেহয় সব কিছুর পেছনে একটা গল্প থাকে, অনেক দিনপর সেটা দেখলে খুশি বা কষ্ট যাই মনেপরে, ভাল লাগে, মনেহয় আমার আমার জীবনের এক টুকরো।
লেখা খুবি ভাল লাগল
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
এই ব্যাপারে আমার যুক্তি হলো, থাকলে যে কোনো সময় নষ্ট করা যাবে। কিন্তু একবার নষ্ট করে ফেললে আর পাওয়া যাবে না। সবকিছুই আলটিমেটলি অভিজ্ঞতার অংশ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
"আমি স্মৃতি নষ্ট করি না, কষ্টের হোক, সুখের হোক, আমি স্মৃতি সংরক্ষণ করি।"
কষ্টের স্মৃতিগুলো আমি সোজা ডাস্টবিনে ফেলে দিই। কষ্টবিলাস আমার নেই। কষ্ট পুষে রাখতে ভাল্লাগে না আমার।
দুইদিনের দুনিয়া। সহজভাবে হেসে-খেলে কাটাতে চাই।
"যেমন তেমন খালা, আল্লার নামে চালা"
লেখা বরাবরের মতোই রঙিলা হইছে...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আয় হায়! আপনার তো কালেকশনে কষ্ট নাই। লন আমার কালেকশন থিকা আপনাকে একদিন কষ্টের ভর্তা বানাইয়া খাওয়াই। তখন বুঝবেন, এটা কতো মজাদার জিনিস। সিগারেট ছাড়া যায়, কষ্টের নেশা ছাড়া যায় না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
- রুমাল যে উড়াইয়া দিলেন, সেইটাতে তে লিপি খালার ঠিকানালিপি বয়ান করা আছিলো তার কী হইবো? যদি আমার মতো কোনো 'ভালো' কারো হাতে পইড়া থাকে সেই রুমাল?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এত চিন্তা করতে গেলে কি আর রুমালটা ফেলা হইতো? ফেলা যাইতো?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
- সত্যিই ফেলছিলেন, নাকি ভাবীর ডরে...?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দারুন লাগলো এই কথাগুলো . . . .
থ্যাঙ্কু, ঝরু।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ভালো হয়েছে বস, আরো আসতে থাকুক।
অনিকেত ভাই, ধন্যবাদ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সেকেন্ড ইয়ারে উইঠা সেইভ! কয় কি?
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বেশি আগে হয়ে গ্যালো?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
স্মৃতি নিয়ে অদ্ভূত একটা স্বভাব আছে আমার।
উদ্ধৃত লাইনটির প্রতি আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
জুলিয়ান সিদ্দিকী ভাই, আপনার মন্তব্যের লাইন ধরতে পারি নাই।
বানান ভুল? (স্মৃতি/ স্মৃতিস্মারক, অদ্ভূত/অদ্ভুত/অদ্ভূদ/ অদ্ভুদ)
বাক্য ভুল? (কর্তা/কর্ম ওলোট-পালোট)
অন্য কিছু?
নাকি, যুগান্তকারী, ফাটাফাটি এক্সপ্রেশন?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এটা কী করলেন? এত তাড়াতাড়ি রুমাল উড়ায়ে দিলেন। ঠিক হইল না ভাইজান। মাত্র নড়েচড়ে বসছিলাম। আর আপনি? এত নির্দয় কেন?
গল্প লিখেন না কেন? নিয়মিত। মারাত্নক।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
রুমালটা উড়িয়ে তো দিলেন, কার হাতে পড়লো কে জানে!
লেখা ভালো হইছে।
ঐ যে ধুগোর হাতে নাকি পড়লো...!
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
হা হা।
একটা সিনেমার গান ছিলো 'রুমাল দিলে ঝগড়া হয়, চিঠি দিলে বন্ধু হয়, মাঝে মাঝে দেখা হয়, চোখে চোখে কথা হয়, ফুল দিলে কী হয় বলো না, । না না না না, হলো না...'
সুন্দর!!
রঙিলা হইসে
...........................
Every Picture Tells a Story
আমারও একটা খালা ছিল.....................
কী ব্লগার? ডরাইলা?
মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। দ্রোহী ভাইয়ের খালার গল্প শুনতে চাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
নতুন মন্তব্য করুন