১.
কিছু কিছু হার্ডকোর ফাইটার আছে, যারা ৫ বছর ধরে পিএল ফাইট দিয়েও 'ফাইট ঠিকমতো হইলো না' সিনড্রোমে ভোগে আর এর বাইরে আছে কিছু বহিরাগত, যাদের কাছে 'বুয়েটে পড়ি' বিশাল অর্থ বহন করে; তবে এই দুই প্রজাতি ছাড়া আদি বুয়েটি যারা মাস্টারে ভর্তি হয়, তাদের বিরাট অংশের কাছেই ডিগ্রী অর্জনের চেয়ে সময়ক্ষেপণই বোধহয় বেশি জরুরী। এদের কেউ কেউ এখনো বেকার, কারো কারো টিউশনি বাণিজ্য এখনো চাকুরীর চেয়ে লাভজনক; সুতরাং ছাত্রী পড়াও আর টোফেল জিআরই ফাইট দাও ফর্মূলায় দিনযাপন; আবার কেউ কেউ দেখেছি সাধারণ জ্ঞানের বই কিনে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় মার্কার দিয়ে দাগিয়ে দুগিয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নেয়। এই ক্যাটেগরীতে অবশ্য বুয়েটে জয়েন করা নতুন লেকচারারেরা পড়বেন না। কারণ, তারা তখন টীচারশ্রেণী। ছাত্র পড়াতে থাকবেন, কেউ কেউ নিজে স্টুডেন্ট লাইফে যে বাঁশ খেয়েছেন, ছাত্রদেরকে সেই বাঁশ না দিতে সচেষ্ট থাকবেন আবার কেউ কেউ সুদেআসলে ষোলগুণ বেশি বাঁশ ফ্রিতে প্রদান করিবেন, সাথে মাস্টার করে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হবেন, জব নিশ্চিত করে স্কলারশীপ নিয়ে পিএইচডি করতে আমেরিকা-কানাডা নিদেনপক্ষে জাপান-অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাবেন। উনাদের এইম ইন লাইফ অন্য স্তরের। তবে এইম-ইন-লাইফ যা-ই থাক না কেন, এসময় সবচেয়ে হট-টপিক হলো আবাসন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা। লেকচারারদের মতো সিঙ্গেল রুম হোক, আর আমপাবলিকের মত ডাবল রুম হোক, হলে সিট পেলে বাসা ভাড়া চাইতে গিয়ে উঠতি বয়সী মেয়ের বাপ কোনো বাড়িওয়ালার তাড়া খেতে হয় না।
আমারও এইম-ইন-মাস্টার তেমনই ছিলো। কিন্তু যথারীতি গোল বাঁধালো টাইম জট। হলে সিট পাওয়া যাবে। তবে তিন মাস পরে। উঠলাম মেসে। ২ রুমের মেস। থাকে তিন ব্যাচেলর মামা আর এক কাজিন। মামারা জব করে, কাজিন মালয়েশিয়া যাবে সিস্টেম করতেছে।
তখন একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়াই। সকালে নাস্তা না করে বেরোই। পাশেই রেস্টুরেন্ট। ক্লাস করানোর একফাঁকে টুকটাক খেয়ে নেই। দুপুরেও খেয়ে আসি সাধারণত বাইরে। অধিকাংশ সময়েই কলিগদের সাথে। তাদেরও অনেকেই ব্যাচেলর। বিকেলে কোনোদিন মাস্টারের ক্লাস থাকে বুয়েটে, কোনোদিন অন্য ভার্সিটিতে খ্যাপ মারতে যাই। কোনোদিন ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডাটাড্ডা মেরে রাত্রে ফিরি। ছন্নছাড়া জীবন।
২.
রাতের রান্না নিজেরাই করি, যদিও রান্না জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। বেশি কিছু রান্নাও হয় না। সারাদিনের পরিশ্রমের পরে খিঁচুড়ী আর মচমচে ইলিশ ভাজাই অমৃত, রান্নার ঝামেলাও কম। কম বেশি যা-ই হোক, অধিকাংশ দিনই কাজটা মামারা করে। মাঝে মাঝে বাজার করেই আমার দায়িত্ব শেষ।
বাসায় একটা পিচ্চি মেয়ে থাকে। বছর দশ এগারো। তার কাজ ঘর ঝাড়ু দিয়ে রাখা, বিছানা গুছানো, শার্টজাতীয় হালকা কাপড়চোপড় ধোয়া, বেশি হলে জেট দিয়ে ভিজিয়ে রাখা। আর এর বাইরে টিভি দেখা। কিছু বইপত্রও আছে, স্কুলে যায় না, তবে যখনই যে সময় পাই, পড়া দেখিয়ে দেই। পিচ্চির মাথা বেশি সুবিধার না। আমি এই কাজটা পারতপক্ষে এড়িয়েই চলি।
এক দুপুরে ইউনিতে পরীক্ষা নিয়েছি। উত্তরপত্রগুলো বগোলদাবা করে বাসায় এসেছি। বিকেলে আবার বুয়েটে মাস্টারের ক্লাস। এগুলো রেখে আবার বেরোতে হবে।
বাসায় কলিং বেল নাই। কড়া নাড়ি। দরজা খোলে না। আবারও। কোনো সাড়া নেই। কড়া নাড়ার বেগ বাড়তে থাকে, শব্দের মাত্রা বাড়তে থাকে। ভিতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। পিচ্চির আবার কোনো ঝামেলা হলো নাকি ভেবে আতঙ্কিত হই। দরজার ওপরে সর্বশক্তি প্রয়োগ চলতেই থাকে। টানা ৪৫ মিনিট পরে পিচ্চি চোখ ডলতে ডলতে এসে দরজা খোলে। সে ঘুমিয়েছিলো।
বাসায় ঢুকেই কেমন একটা টকটক গন্ধ পাই। গন্ধের তীব্রতা কিচেনের দিকেই বেশি। গ্যাস ছাড়া আছে। জানালা বন্ধ। আগুন নেই। চুলার ওপরে হাড়িতে পানি। শীতের দিনে গোসলে লাগে। ঘটনা বুঝতে বাকি থাকে না। হাড়িতে অল্পজ্বালে পানি গরম দিয়েই পিচ্চি ঘুমিয়ে পড়ে। আগুন সামহাউ নিভে গেলেও গ্যাসের নিঃসরণ বন্ধ হয় না।
জানালা খুলে দেই। দরজা খুলে দেই। চুলা বন্ধ করি। আর থম হয়ে বসে থেকে ভাবি, আমি আসার আগেই যদি পিচ্চি উঠে আবার চুলায় আগুন ধরাতে যেত, তাহলে?
মন্তব্য
আমি এখন বুয়েট শেষ করে সময় নষ্ট করায় মনোনিবেশ করেছি।
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সময় নষ্ট কইরেন না। বিদেশে এসে প্রথমে ধাক্কা খাই বয়সের। ৪ বছরের জুনিয়র ইন্ডিয়ান পোলাপান একই প্রোগ্রামে ভর্তি হয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ঠিক। ভর্তি আমিও হইছিলাম। ক্লাস ফালায় পটাপট জিআরই দিয়ে চলে আসছি। সময় নষ্ট করার মানে নাই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ভয়ংকর!
=============================
এইভাবে আসলে অনেকেই চুলা জ্বালিয়ে রাখে। গ্যাসের অপচয়, সাথে রিস্ক।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আসলেই ভয়ঙ্কর! বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারত ওইদিন। ভাগ্য ভাল তা হয়নি। এভাবে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা খুবই অনুচিত কাজ।
অন্য প্রসঙ্গে বলি, লেখার প্রথম অংশটুকু পড়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেল... থার্ড ইয়ার শেষে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ে গেছি ঘোড়াশালে। আমাদের টীমটাকে সুপারভাইজ করার দায়িত্ব ছিল যে অফিসারের, তার রুমে গিয়েছিলাম কী এক দরকারে। আমি ছিলাম টীম-লিডার। গিয়ে দেখি, উনি আরেক ভদ্রলোকের সাথে গল্প করছিলেন। সেই ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কোন ভার্সিটিতে পড়ি। বললাম। তখন তিনি বললেন, "আমার ছেলেও ইলেকট্রিক্যালেই পড়ে। বুয়েটে। বুয়েট- নাম শুনসো তো, না? বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়"- এই কথাটা শুনে গায়ে যেন আগুন ধরে গেল। আমি সাধারণত খেপি না কখনোই। কিন্তু তার অ্যাটিচ্যুড দেখে তখন পায়ের রক্ত মাথায় উঠেছিল।
A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?
বংশে গত তিনপুরুষে মনে হয় এই প্রথম কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে । এগুলো তো আসলে আমাদের দেশে হরহামেশাই ঘটে, এধরনের ঘটনায় কৌতূক অনুভব করার চর্চা রাখলে দেখবেন জীবন অনেক উপভোগ্য হয়ে উঠেছে ।
বুয়েট নিয়ে আমার নিজের একটা মজার অভিজ্ঞতা মনে পড়ল । বুয়েটে ভর্তি হয়েছি কিন্তু ক্লাস শুরু হয়নি - এরকম সময় পূর্ব পরিচিত এক মুরুব্বী ভদ্রমহিলার সাথে একদিন দেখা হল রাস্তায় । যথারীতি কুশল বিনিময়ের পর জিজ্ঞেস করলেন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব বা হচ্ছি । আমি বুয়েটে ভর্তি হয়েছি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, " ঢাকার বুয়েটে নাকি ঢাকার বাইরের বুয়েটে ? "
আমি প্রশ্ন শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম । তারপর সামলে উঠে বললাম, বুয়েট নামের জিনিসটা ঢাকাতেই অবস্থিত, ঢাকার বাইরে কোন বুয়েট বা বুয়েটের শাখা প্রশাখা কিছু নেই । তিনি কিছুতেই মানবেন না এই কথা । " না না তুমি জান না, ঢাকার বাইরেও অনেক গুলা বুয়েট আছে । রাজশাহী, চট্টগ্রাম আরো আছে এখন মনে পড়ছে না । "
আমি কি আর করতে পারি ? মেনে নিলাম যে ঢাকার বাইরেও এক গাদা বুয়েট আছে । তবে আমি ঢাকারটাতেই ভর্তি হয়েছি - এই ব্যাপারে গ্যারন্টি দিয়ে দিলাম । তিনিও খুশি হয়ে আমাকে আশীর্বাদ করে নিজের রাস্তায় চলে গেলেন ।
-----------------------------------------
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
- যে কোনো বিপদ এড়াতে রান্নাঘরের জানালাটা একটু ক্রীপ করে রাখাটাই মনেহয় শ্রেয়!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বিশাল বাঁচা বাঁচছো
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
এরকম গ্যাস জমে গেলে চুলা ধরানোর আগুন ছাড়াও আরও অনেক ভাবে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে । ঘরে কোন বাতি জ্বালাতে গিয়ে সুইচে চাপ দিলেও বিস্ফোরণ ঘটতে পারে সুইচের স্পার্ক থেকে । আবার ধুমপায়ী কেউ ঘরে থাকলে তো কথাই নেই ।
আপনি আপনার বাসার কাজের মেয়েটার লেখাপড়ায় মাঝে মাঝে সাহায্য করছেন জেনে ভাল লাগল ।
-----------------------------------------
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
খুবই মুচমুচে লেখা...
[restrict:সচল][/restrict]
নতুন মন্তব্য করুন