সূচনা ও উপসংহার
ঘটনার শুরুটা জানতে ষষ্ঠ পান্ডব দার এই পোস্টটি পড়ে নিলে ভালো হয়। সংক্ষেপে, বুয়েট টীচারস অ্যাসোসিয়েশন তাদের ছেলে/মেয়ে বা পোষ্যদেরকে জন্য বুয়েটে আসন সংরক্ষণের দুইটি অপশন দিয়েছেন:
১। প্রতিবছরে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যে পরিমাণ ছাত্র নেয়া হয়, তার ২% অতিরিক্ত ছাত্র নেয়া হবে বুয়েট টীচারদের পোষ্যদের ভেতর থেকে।
২। বুয়েটে একটি ইভিনিং শিফট চালু করা হবে, যা টিউশন ফি প্রদান ও একটি আলাদা ভর্তি পরীক্ষা সাপেক্ষে প্রায় ৪০০ নতুন ছাত্র ভর্তি করতে পারবে। এই ৪০০ ছাত্রের মধ্যে ১০% হবেন বুয়েট টীচারদের পোষ্য। বাই এনি চান্স এরপরেও সিট খালি থাকলে বুয়েট কর্মচারীদের পোষ্যরা ভর্তির জন্য বিবেচিত হবেন। তবে এক্ষেত্রে তাকে কমপক্ষে ২৫ বছর বুয়েটে কর্মরত হতে হবে।
অপশন ১ নিয়ে ইতোমধ্যে সচলায়তনের বাইরেও বেশকিছু ফোরামে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। এবং আলোচনার গতিপ্রকৃতি ফলো করে বলা যায়, বুয়েটের শিক্ষকদেরও অধিকাংশই এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। অন্ততপক্ষে, কোটা সিস্টেমের পক্ষের শিক্ষকরা অনেকটাই নীরব। নীরবতা হিরণ্ময় কথাটা এক্ষেত্রে বোধহয় যায় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা আপাত একটা 'ইগনোর' পলিসি অবলম্বন করেছেন। এজন্যই আশঙ্কা করছি, বুয়েট টীচার্স অ্যাসোসিয়েশন পিছপা হবেন না; বরং প্রস্তাব বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবেন। ফলাফল হিসেবে, বুয়েটের বর্তমান ছাত্ররা মিছিলে নামবে, অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা পেছাবে। শিক্ষকরা আয়েশ করতে পারবেন। এমনিতেই ছাত্ররা না চাইলেও নির্বাচনের অজুহাতে একদফা পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। ছুটির পরপরই পরীক্ষার স্কেজিউল করা হয়েছে, যেটাকে পরীক্ষা পেছানো আন্দোলনের জন্য উষ্কানী হিসেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। তবে আমার ধারণা, অপশন ১ শেষ পর্যন্ত মাঠে মারা যাবে এবং ওই প্রস্তাবের খসড়াটি করার সময় বুয়েট চীটার্স অ্যাসোসিয়েশনও সেটা ধরে নিয়েছিলেন বলেই মনে হয়। তারা নির্বোধ নন।
অপশন ২ এসেছে অনেকটাই নিরীহ ভঙ্গিতে এবং এটা আশঙ্কা করা খুবই স্বাভাবিক যে, অপশন ১ নিয়ে ক্যাচালের সুযোগে অনেকটা 'ছাড় দেওয়া'র স্ট্যান্টবাজি দেখিয়ে অপশন ২ পাস করিয়ে নেয়া যেতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে অপশন ১ এর সাথে আমি আবেগের সম্পর্কটা বেশি দেখি, অন্যদিকে অপশন ২ কেই দেখি বুয়েট ধবংসের প্রকৃত নীলনকশা হিসেবে। কেন দেখি, নিচের আলোচনায় আশা করি পরিষ্কার হবে।
একটি ইউনিভার্সটির কাজ কি?
ইউনিভার্সিটিগুলো ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নয়, নয় কোনো কোচিং সেন্টারও। ইউনিভার্সিটিগুলোতে তাই জ্ঞানের স্টেইট অফ দি আর্টে পড়ে থাকলেই চলে না, জ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এজন্য চাই রিসার্চ। বুয়েটের টীচাররা উন্নত দেশসমূহ থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত, তারা উন্নত দেশসমূহের শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে অবগত। উন্নত দেশকে সবক্ষেত্রে কপিপেস্ট করা কাম্য নয়; তবে একটি ইউনিভার্সিটির এই বেসিক প্রয়োজনটির ব্যাপারে বুয়েটের পরিস্থিতি হতাশাজনক বলেই মনে হয়। টীচাররা কনসালটেন্সি করেন; কিন্তু কতগুলো প্রোজেক্টে ছাত্রদেরকেও সম্পৃক্ত করেন, অন্তত ৭/৮ বছর আগ পর্যন্ত সে চিত্র খুব হতাশার ছিলো। আমার থিসিস টীচার ছিলেন বুয়েটের স্মার্ট টীচারদের একজন (আমার পছন্দের লিস্টে তিনি ১ নম্বরে), তারপরেও থিসিসের প্রেজেন্টেশন পর্যন্ত দিতে হয় নি। এখন পরিস্থিতি খুব এগিয়েছে কি?
টাকা চাই, টাকা নেই
প্রস্তাবিত নাইট শিফটের মূল উদ্দেশ্য, আমার কাছে মনে হলো, অর্থসংস্থান। এই অর্থের ৬০% যদিও কোর্স টীচার পাবেন, একটা অংশ বুয়েটকেও দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। প্রথমেই বুয়েট প্রসঙ্গে আসি। বুয়েটের স্টুডেন্টরা বাংলাদেশের সাপেক্ষে অনেকটা রাজার হালেই থাকেন। হলগুলোতে বসবাস প্রায় ফ্রি, পানি এবং বিদ্যুতের সংস্থানে কখনো টান পড়ে না। বুয়েট টীচার্স কোয়ার্টারগুলোর ফ্যাসিলিটি ছাত্রদের তুলনায় উন্নত বলেই মনে হয়েছে (আমি সঠিক জানি না তাদেরকে কেমন পে করতে হয়), ছাত্ররা মৌজে আছেন, টীচাররা কষ্টে আছেন এরকম মনে হয় নি। একটি চমৎকার পরিবেশে পোলাপানের জন্য শিক্ষা ও খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত সুবিধাসহ তারা ভালো না থাকার কারণ নেই। তবে এটা ঠিক, অন্যান্য পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোর মত বুয়েট টীচারদের বেতনও কম। দেশের পরিস্থিতি, বাজেট সবকিছু বিবেচনা করে শুধু বুয়েট নয়, দেশের অন্যান্য পাবলিক ইউনির টীচারদের বেতনই বাড়ানো যেতে পরে। সেটা যতক্ষণ না হচ্ছে, ততোক্ষণে রাতারাতি বিএমডাব্লিউ কিনে ঢাকায় কয়েকটি বাড়ি করার ইচ্ছা থাকলে কারো বুয়েট কেন, অন্য কোনো পাবলিক ইউনিতেই যোগ দেয়া ঠিক না।
ব্যক্তিগত আর্থিক প্রয়োজনের বাইরে আসে বুয়েটের ল্যাব এবং অন্যান্য ফ্যাসিলিটির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ আছে কিনা। এক্ষেত্রে সরকারী অনুদানের পাশাপাশি আসে রিসার্চের প্রশ্ন। দেশি-বিদেশি কোম্পানীগুলোর সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর দায়িত্বটা বুয়েট অথোরিটির। বুয়েট ছাত্রদের মেধা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। আর উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে শ্রম এখনো অনেকগুণে সস্তা। সুতরাং এক্ষেত্রে মনোযোগী হলে প্রচুর ফান্ডিং পাওয়া সম্ভব বলেই মনে করি। তবে প্রথমেই দরকার অথোরিটির সদিচ্ছা, তারা কি গুটিকয়েক শিক্ষককে কনসাল্টেন্সিতে ইনভল্ভ করে থেমে থাকবেন, নাকি ছাত্রদের মেধাকেও ব্যবহার করবেন।
উপরিউক্ত বিষয়গুলোর সাথে তাল রেখে কয়েকটি প্রশ্ন অবধারিতভাবে এসে যায়।
বুয়েটের এত বাড়তি রিসোর্স?
আমি সরাসরি বিষয়টি জানি না, তবে কেউ কেউ বলেছেন, প্রতি বছর শেষে বুয়েট খরচ করার ক্ষেত্র না পেয়ে অনেক টাকাই নাকি সরকারকে ফেরত দেয়। প্রস্তাবিত কোটা পদ্ধতির ডকুমেন্টটি দেখেও সে কথার সত্যতা মেলে। তারা প্রতিবছর ৪০০ নতুন ছাত্র নিলেও বুয়েটের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফ্যাসিলিটির ওপরে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে উপসংহার টানা হয়েছে। বর্তমান ইনটেক ৮৭০ এর তুলনায় ৪০০ সংখ্যাটি অনেক বিশাল। তার মানে দাঁড়ায়, বুয়েটে এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত বা প্রয়োজনের চেয়েও বেশি ল্যাব, ক্লাসরুম, কম্পুটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি রয়েছে। টাকা পয়সা নিয়ে তাদের টানাটানি নেই।
টীচারদের এত বাড়তি সময়?
ইউনিভার্সিটি টীচারদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত গবেষণা, যার অনেকটাই টেকনিক্যাল কাজ, অনেকটাই আবার ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অন্তত এই মুহূর্তে গবেষণার কাজ খুবই কম, যদিও সেটা বাড়ানোর চেষ্টাই করা উচিত। কিন্তু গবেষণার বাইরে একজন শিক্ষক যে বিষয়ের ওপর ক্লাস নেন, সেই বিষয় সম্পর্কে আপ-টু-ডেট থাকা খুবই জরুরী। এজন্য প্রতিটি লেকচার প্রস্তুত করতে একজন অভিজ্ঞ শিক্ষককেও প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। এই সময়টা ব্যয় না করলে সিলেবাস আপ-টু-ডেট করা যায় না, ক্লাসে ঢুকে বোর্ডে চোথা তুলে দিতে হয়, অ্যান্টিক ভ্যালু পাওয়া স্লাইডগুলো হারিকেনের বেগে দেখিয়ে ক্লাস শেষ করতে হয়। বুয়েটের ছাত্ররা সার্বিকভাবে মেধাবী হওয়ায় তারা নিজেরাই বই পড়ে সিলেবাস শেষ করে। কিন্তু এতে বইয়ের বাইরে একজন শিক্ষকের কাছ থেকে যা তারা পেতে পারতো, তা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়।
বুয়েটের শিক্ষকরা এর পরেও টাকার জন্য প্রাইভেট ইউনিগুলোতে পড়ান। কেউ দায়িত্ব পালনের পর সেটা করতে পারলে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু বুয়েটে শর্টকাট মেরে প্রাইভেটে পড়িয়ে তারপর যদি সামার ভ্যাকেশন নেই না বলে ভাব নেয়, তাইলে মেজাজ বিলা লাগে। তারা সামার ভ্যাকেশন নিবেন না কেন? একজন মানুষ অনবরত মানসম্পন্ন কাজ করে যেতে পারে না। এজন্যই তো ছুটির দরকার। তারা ছুটিটা না নিলে তাদের কাজের কোয়ালিটি অবধারিতভাবে নেমে আসবে।
প্রস্তাবিত নাইট শিফটের জন্যও তারা উপসংহারে এসেছেন HUM ছাড়া আর কোনো বাড়তি ফ্যাকাল্টি মেম্বার নেয়া লাগবে না। অর্থাৎ বুয়েটে ক্লাস নিয়ে, প্রাইভেটে খ্যাপ মারার পরেও বুয়েট টীচারদের হাতে অফুরন্ত সময়!
মূল সমস্যাটা আসলে এখানে। তারা বুয়েটে পড়িয়ে ১০ টাকা পান, প্রাইভেটে পড়িয়ে পান ৫০ টাকা, প্রস্তাবিত নাইট শিফটে পড়িয়ে আরো ৫০ টাকা পেলে তখন সময়ের প্রায়োরিটির প্রশ্ন আসবে। ১ দিনে তো মাত্র ২৪ ঘন্টা। এটাকে যেহেতু টেনে বাড়ানো যাবে না, সেহেতু ৩টি দায়িত্বের মধ্যে কম্প্রোমাইজ করতে হবে। কম্প্রোমাইজের ক্ষেত্রে ১০ টাকার প্রায়োরিটি অবশ্যই ৫০+৫০ টাকার চেয়ে কম হবে। আলটিমেটলি তারা 'বুয়েট টীচার' ট্যাগটাকে ইউজ করে প্রাইভেটে (বাইরে বা বুয়েটে নাইট শিফটে) পড়াবেন, 'ফ্রি' পড়া বুয়েট ছাত্রদের জন্য সময় হবে খুব কম।
বাংলাদেশের এত ইঞ্জিনিয়ার দরকার?
তারা দাবী করেছেন, বর্তমানে নাকি বাংলাদেশের ডিমান্ডই হলো বিপুল সংখ্যক ইঞ্জিনিয়ার। সুতরাং এভাব নাইট শিফটের মাধ্যমে বাড়তি ছাত্রছাত্রি নিলে সে ডিমান্ডের প্রতি সুবিচার হবে। এই পরিসংখ্যান কিভাবে আসলো তা অবশ্য তারা উল্লেখ করেন নি। আমি যতদূর জানি, বাংলাদেশ প্রতিবছর যত ইঞ্জিনিয়ার প্রোডিউস করে, তার সিংহভাগই মূলত দেশ ছাড়ে। দেশ ত্যাগী ইঞ্জিনিয়ার বানানোর দরকার নেই, তা নয়। তবে এটা প্রধানত জনসম্পদ রপ্তানী কোটায় পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যে হোটেল বয়ের কাজ করা একজন বাংলাদেশী আর সাবেক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অছ্যুৎ বলাইয়ের দেশের প্রতি কনট্রিবিউশন একই আর তা হলো বৈদেশিক মুদ্রায়। এ অবস্থায় শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং খাত কেন, আরো অনেক খাতেই স্কিলড জনশক্তি ডেভেলাপ করার দায়িত্ব সরকারের। ইঞ্জিনিয়ারিং ফিলডে, বিশেষ করে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বুমে পর্যাপ্ত বা প্রয়োজনের অধিক ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যদি তা না হয়, সরকার চায় দেশে আরো বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার দরকার, তাহলে বুয়েটেই রেগুলার স্টুডেন্ট ৮০০র পরির্তে ১৫০০ নেয়া হোক। আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এই ডিমান্ডের নামে বুয়েটের মধ্যে আরেকটি প্রাইভেট ইউনিভার্সটি ক্রিয়েট করা কেন?
টাকার বিনিময়ে শিক্ষা, নাকি মেধাবীদের শিক্ষিত করে তোলা?
মাঝে মাঝে জাঙ্ক ইমেইল পাই। আমার কিছুই করতে হবে না। ঘরে বসেই বিএসএসি, এমএসসি, এমবিএ, বিবিএ, পিএইচডি ডিগ্রি পেতে পারি। তার জন্য একটা ফোনই করতে হবে শুধু। হটলাইন সপ্তাহে ৭ দিন, প্রতিদিনে ২৪ ঘন্টাই খোলা! হয়তো পুরোপুরি এক কাতারের ব্যাপার নয়, তবে বুয়েট টীচার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবটি পড়তে পড়তে আমার কেবলই ওই জাঙ্ক ইমেইলের কথা মনে পড়ছিলো।
শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এক ঝাঁক মিডিওকার মানুষ নিয়ে একটি দেশে কেরানীর কাজ চলতে পারে, রোজকার রুটিরুজির বন্দোবস্তও করা যেতে পারে। তবে দেশকে প্রকৃতভাবে এগিয়ে নিতে চাইলে দরকার স্পেশ্যলিস্ট। এজন্যই দরকার মেধার যথাযথ মূল্যায়ন, কোন কাজের জন্য কে উপযুক্ত তা নির্ধারণ। পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় বর্তমানের জিপিএ সিস্টেম এই মেধার মূল্যায়নকে বাধাগ্রস্ত করে আলুপটলের একদাম করে ফেলেছে। কলেজগুলো ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে না, বয়সের বিবেচনায় ছাত্র ভর্তি করতে হয়! পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোর ভর্তিপরীক্ষা পদ্ধতি, বিশেষ করে বুয়েটের, এখনো সেই আলুপটলে মিশে যাওয়া নষ্টস্রোতের ব্যতিক্রম। এখনো প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যারা টিকে থাকে, শুধু তারাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোয় ভর্তির ক্ষেত্রে বাপের যোগ্যতা, তা টাকায়ই হোক বা পদে বা শিক্ষায়, কোনো ফ্যাক্টর হওয়া উচিত নয়। দেশের সবচেয়ে মেধাবীদেরকে বাছাই করাই একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সুতরাং বুয়েট বা অন্য পাবলিক ইউনিগুলোতে এরকম কোনো শর্টকাট রুট নয়; বরং পরিপূর্ণভাবেই মেধার ভিত্তিতে ছাত্র নির্বাচিত করা উচিত। উন্নত দেশসমূহের সাথে এক্ষেত্রের আমাদের পরিস্থিতির পার্থক্য আছে। যেমন, জার্মানীতে কম্পুটার পড়ার জন্য অনেক ইউনিতেই পর্যাপ্ত ছাত্রে টান পড়ে, যেখানে আমাদের দেশে প্রত্যেকটা সিটের জন্য অন্তত শতাধিক আগ্রহী ছাত্র পাওয়া যায়।
শিক্ষায় টাকার প্রচলন নিয়ে আরেকটি অগভীর ভাবনা আছে, যা পরীক্ষা পেছানোর সাথে সম্পর্কিত। সে ভাবনায় ধরে নেয়া হয় যে, ছাত্ররা 'ফ্রি' পড়াশুনা করে, তাই পরীক্ষার ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতা নেই। সুতরাং, তাদের ওপর টিউশন ফি চাপিয়ে 'টাইট দেয়া' হোক। পরীক্ষা পেছানোর পিছনে নানান কারণ আছে। তাতে আলটিমেটলি লাভবান যেহেতু কিছু শিক্ষক হচ্ছেন, সেহেতু ছাত্রদের একার ঘাড়ে দায় চাপানোর প্রবণতা খুবই একপেশে। যাহোক, দোষ কার সেটা ভিন্ন আলোচনা। এই প্রসঙ্গে যেটা বলা দরকার, তা হলো রাষ্ট্রের প্রয়োজন মেধাবীদেরকে সুযোগ দেয়া, টাকার বিনিময়ে সেই সুযোগে কেউ ভাগ বসালে অন্য মেধাবীরাই বঞ্চিত হবে। বুয়েটের ইনফ্রাস্ট্রাকচার সাপোর্ট করলে সম্পূর্ণভাবে মেধার ভিত্তিতেই অতিরিক্ত ৪০০ স্টুডেন্ট নেয়া হোক। তা না করে টাকার বিনিময়ে আরেকটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং সেন্টার খোলা কি খুবই প্রয়োজন?
সে প্রয়োজনটা কার?
মন্তব্য
সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। টাকার গন্ধ পেলে কম্প্রোমাইজ ঐ ১০ টাকাতেই হবে, কোনো সন্দেহ নাই।
পোষ্যদের ঠ্যালায় এবার বুয়েটের মেধাবীরা কুপোকাত হতে যাচ্ছে।শাবাশ!
এমনিতেই হাজার হাজার জিপিএ ৫ পাওয়া ছেলেমেয়ে কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।সেখানে বাপ বুয়েটের টিচার হওয়ার কারণে হয়ত অনেক অযোগ্য ছেলে-মেয়ে ভর্তি হয়ে যাবে।সেলুকাস!
মহসীন রেজা
কিচ্ছু বলার নাই। এখনও হতাশা নিয়া মাথা চুলকাইতেছি।
______________________________________
লীন
সুন্দর বলেছেন।
এইটাই মর্মকথা।
সান্ধ্য শিফট প্রস্তাবটি মূলতঃ দুইটি মূলধন ব্যবহার করে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রস্তাব -- ১) বুয়েটের সুনাম বা ব্র্যান্ড ২) বুয়েটের অবকাঠামো।
লক্ষনীয়, এই বুয়েট প্রাইভেট লিমিটেডের কোম্পানীর যাবতীয় আয়ের ৬০% সরাসরি শিক্ষক/প্রশাসক দের 'বেতন' বাবদ 'ব্যয়' হবে (যেমনটা হয় কর্পোরেট ম্যানেজার দের জন্য)।
বাকী ৪০% আয় মূলধন হিসাবে জমা হবে (যদি এটা লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ধরা হয় এবং ঐ ৪০% আয় কোম্পানীর অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার হয়) অথবা বড়জোর বুয়েট অবকাঠামো থেকে যে ঋণ নেয়া হয়েছিল তা ফেরত দেয়া হবে।
তা সারা দেশে এবং দুনিয়ায় যখন বাজারের জয়জয়কার, তখন এইরকম আরেকটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললে আপত্তির কি আছে?
প্রথম আপত্তি ব্যবসার নিয়মানুযায়ী -- ১ম মূলধন সুনামের যারা অংশীদার, মানে বুয়েটের তামাম ছাত্র/শিক্ষক/এলামনাই, এবং দ্বিতীয় মূলধন অবকাঠামোর মালিক বাংলাদেশের সমস্ত করদাতা জনগন, ঐ মূলধন ব্যবহারের আগে তাদের সকলের সম্মতি নেয়া হয়েছে কি না। এবং, ব্যবসা খোলা হলে ঐ ব্যবসার লভ্যাংশের কত অংশ শেয়ারের যোগানদাতাদের কে পাবেন, তা পরিষ্কার হয়েছে কি না?
(আমি ব্যবসা বিশেষজ্ঞ নই, বিশেষজ্ঞ রা এই ব্যপারে মত দিতে পারেন)
দ্বিতীয় আপত্তিটি নৈতিক --এইরকম ভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার নজীর যদি তৈরী হয়, এবং দেশের তাবত্ পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঐ মহান নজীর অনুসরণ করেন, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত কি? মনে হয় শিক্ষাব্যবসায় শনৈ শনৈ উন্নতি করে আমরা এটাকে দেশের বৃহত্তম "শিল্পে" রূপান্তরিত করব!
আপনার গোছানো মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তাদের হিসাব অনুযায়ী, স্কলারশীপ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকে ২০% (ইউনিভার্সিটি ফান্ড ১০%, রিসার্চ ১০%)। এই ২০% এর জন্য ইউনিভার্সিটির সমস্ত ফ্যাসিলিটিজ ইউজ করা যাবে (আবাসিক হল বাদে) এবং 'বুয়েট' এর সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। এরকম একটি সার্টিফিকেটের জন্য একজন শিক্ষক পোষ্যের পকেট থেকে বুয়েট পাবে ৩২০০০ টাকা। তিনি স্কলারশীপ পেলে অবশ্য সে টাকাও তুলে আনতে পারবেন। বুয়েট পোষ্যদের ক্ষেত্রে অবশ্য আবাসিক ব্যবস্থা অটোমেটিক্যালিই (বাপ/মায়ের কোয়ার্টার) আছে।
বুয়েটের সুনাম বা যৌক্তিক ব্যবসায়ী দিক কোনোটারই চিন্তা তারা করেছেন বলে মনে হয় না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বুয়েটে ছোটখাটো কিছু প্রোগ্রামে ছাত্রদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিন্তু বেশ একটা পরিবর্তনের ছাপ আনা সম্ভব, কিন্তু এ ব্যাপারে সিনিয়র শিক্ষকরা বরাবরই উদাসীন।
তড়িৎকৌশলের ছাত্র হিসেবে আমি আমাদের সময়ে সহকারী অধ্যাপক জিয়া স্যারের অনুরাগী ছিলাম (স্যারের নাম পুরো মনে নেই, তিনি এখন উচ্চশিক্ষার্থে প্রবাসে আছেন বলে জানি)। একদিন তিনি পাবলিক বাসে আমাকে পাকড়াও করলেন। আমি তাঁর পাশের সীটটি দখল করে ফাও বসেছিলাম (এই কাজটিও কিন্তু অনেক সিনিয়র শিক্ষকের মতে চরম বেয়াদবি, যদিও আমি স্যারের আহ্বানেই সেখানে গিয়ে বসেছিলাম), তিনি শ্রোতা হিসেবে আমাকে পেয়ে তাঁর ভাবনাটি শেয়ার করেন। তাঁর প্রস্তাব ছিলো, কেন আমরা খামোকা টিউশনি করে সময় নষ্ট করি? তারচেয়ে ম্যাটল্যাব বা অরক্যাড ভালোমতো শিখে জুনিয়রদের জন্যে একটা কোর্স কেন চালু করি না? এর তত্ত্বাবধানে একজন শিক্ষক থাকবেন, সিনিয়র ছাত্ররা জুনিয়রদের শেখাতে পারবে, তাদেরও অ্যাকাডেমিক চর্চা বাড়বে, সময়টা কাজে লাগাতে পারবে, কোর্স ফি-র একটা অংশ তাদের ইনসেনটিভ হিসেবে দেয়া হবে। আমি তাঁর উৎসাহে জল ঢেলে দিয়ে বললাম, স্যার, আমি যদি অমুক স্যারের কাছে এই প্রস্তাব নিয়ে যাই, তিনি আমাকে প্রথমে যে প্রশ্নটা করবেন, সেটা হচ্ছে তোমার সিজিপিএ কতো? উত্তর জেনে নিয়ে আমাকে কানে ধরে বার করে দেবেন, ম্যাটল্যাব আমি কতোটা জানি তা একবারও জিজ্ঞাসা করবেন না। জিয়া স্যার একদম হতাশ হয়ে বললেন, হুমম।
এই উদ্যোগের ভালো খারাপ দিক নিয়ে তর্ক করা যায়, কিন্তু যা নিয়ে তর্ক করতে পারি না, তা হচ্ছে একজন ছাত্রকে অ্যাকাডেমিক কর্মকান্ডের একটি প্রায়োগিক দিকের সাথে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে জিয়া স্যারের ভাবনার কথা। এই কারণেই তিনি আমার শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকবেন। বুয়েটের সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে এ ধারার ভাবনার সঞ্চার ঘটুক, এই কামনা করি (যদিও দীর্ঘ ছয় বছরে এর নজির দেখিনি)। শুধু শিক্ষক দিয়েই বুয়েট চলে না, এর ছাত্ররা এর গৌরবের সমান অংশীদার। তাদের কথা যেন শিক্ষকরা মাথায় রাখেন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
জিয়া স্যারকে একবার দেখার খুব শখ হচ্ছে । ছাত্রদেরকে টিউশনি বাদ দিয়ে ম্যাটল্যাব ইত্যাদিতে মনোনিবেশ এবং তারপর জুনিয়রদের সেটা শেখানর ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন এমন শিক্ষক বুয়েটে কোনকালে অস্তিত্বশীল ছিল - এটা আমি জানতাম না । এখন মনে হচ্ছে এরকম কিছু পুন্যাত্না মানুষের কারনেই বুয়েটের উপর গজব পড়েনা । প্রতিবার কেমনে কেমনে জানি সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যায়, কখনো অল্প মূল্যে কখনো চড়া মূল্যে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
এইটা কি ৯২ ব্যাচের জিয়া (ফারসিম মান্নানদের ব্যাচ)? নটরডেমের গ্রুপ -৭ ছিল!
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
সম্ভবত। ছোটখাটো, মোটাসোটা, স্বল্পভাষী কিন্তু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ, কখনো কোন ছাত্রের সাথে দুর্ব্যবহার করতে দেখিনি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
জিয়া কি ফারসীম মান্নান -এর ডাক নাম?
পিপিদা, ফারসিম ভাই আলাদা। জিয়া ভাই ব্যবহারে মাইডিয়ার হলেও পড়ানোর সময় খুব সিরিয়াস।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
যতদূর জানি ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর ডাক নাম ইমন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি তো তাই জানি, সেজন্যই জিজ্ঞেস করা
ফারসিম স্যার বড়ই মস্তান ছিলেন । তবে তাঁকেও আমি বেশ পছন্দ করি। সোজাসাপ্টা কথা বলতেন, অযথা ভোগাতেন না।
আমার ডিপার্টমেন্টে গুটি কয়েক শিক্ষক বাদে সবার কাছ থেকেই খুব চমৎকার ব্যবহার পেয়েছি। মেকানিক্যালের একটা সেশন্যাল কোর্সে গিয়ে দেখি স্যাররা অযথাই ধমকধামক দেন শুধু। একদিন এক স্যারকে অতিষ্ঠ হয়ে বলেছিলাম, স্যার, কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, আমাকে দয়া করে বলুন, আমি মেনে চলবো। রোজ রোজ ধমক খেতে ভালো লাগে না। সেই প্রভাষক এই কথা শুনে রক্তচক্ষু নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ঠিক। তারপর বুঝিয়ে বললেন ডুজ অ্যান্ড ডোন্টস। এরপর আর সমস্যা হয়নি। তবে মাঝে মাঝেই তাঁরা খোঁচা দিতেন, এটা ইলেকট্রিক্যাল না, এটা মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট। "এইসব" এইখানে চলে না।
হাঁটুপানির জলদস্যু
"এইটা মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট। আমাদের একটা ঐতিহ্য আছে। এইখানে এইসব চলে না।" এই বিখ্যাত উক্তিটি একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের (সেই আমলে তিনি অ্যারোডিনামিক্স পড়াতেন)। পরবর্তীতে এটি ডিপার্টমেন্টের ট্রেডমার্ক হয়ে গিয়েছিল।
ইমন "বড়ই মস্তান" টাইপ!! কী জানি টীচার হবার পর ওর ডিলিংস কেমন হয়েছে বলতে পারবো না। আমি জানি ইমন হচ্ছে নিয়মিত পড়া-শোনা করা মানুষ (শুধু অ্যাকাডেমিক নয়) যা তার সহকর্মীদের অনেকের মধ্যে নেই, অসম্ভব নম্র, ভদ্র।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ফারসীম ভাই তো মনে হয় পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরে গেছে। তাইনা?
হু ... ইমন জয়েন করেছে। ক্যাম্পাসে একদিন ওর রূমে এট্টু আড্ডাও দিলাম ... ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
জিয়া ভাই চমৎকার মানুষ। আমাদের একটা সেশনাল নিতেন। আন্তরিকতার সাথে তার পড়ানোর কোয়ালিটিও অনেক ভালো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
জিয়া স্যারের পুরা নাম খেয়াল নাই, তবে উনি বাইরে যাওয়ার আগে ( কেমব্রিজ কিংবা হাভার্ড ) শেষ কোর্স নিয়েছিলেন আমাদের মেশিন - ১।
জিয়া স্যারের নামে এমনিতে অন এভারেজ বদনাম হচ্ছে ভদ্রলোক মারাত্মক কঠিন প্রশ্ন করেন। আমাদের ১-১ এ ডিসিতে ভরাডুবির কারণ তিনি, এক্সটার্নাল হিসেবে নোড মেশ-এর এমন অংক দিয়েছিলেন। তবে আমাদের ক্লাস নিতে আসার পর বুঝলাম এমন মানুষ, এমন শিক্ষক কিংবা এমন মেধাবী বিরলপ্রজ।
আমরা তাঁর এমনই ভক্ত হলাম, শেষ বেলা যাওয়ার আগে সবাই মিলে চাঁদা তুলে একটা হাতঘড়ি কিনে স্যারকে দিয়েছিলাম। এমনটা মোহাম্মদ আলী স্যার ছাড়া আর কারো জন্য আমরা অনুভব করি বলে মনে হয় না।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
বন্ধু হিসেবেও বেশ ভাল ছিল। বহুদিন দেখা নাই .... ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
প্রিয় বলাই, প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আপনার পোস্টটির জন্য। বুয়েট শিক্ষক সমিতির কর্মপত্রের দ্বিতীয় প্রস্তাবটি নিয়ে লেখার জন্য আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। সে লক্ষ্যে সান্ধ্যকালীন শিফটের ব্যাপারে রাগিব, আলমগীর, তানভীর, প্রকৃতিপ্রেমিকসহ আরো অনেককে আমার পোস্টে আলোচনা প্রথম প্রস্তাবে সীমাবদ্ধ রাখতে অনুরোধ করেছিলাম। সময় নষ্ট না করে আপনি দ্বিতীয় প্রস্তাবটি নিয়ে পোস্ট দেয়ায় আমরা সবাই এখন এখানে এনিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারবো বলে আশা রাখি।
যাদুকরের ডান হাত নাড়িয়ে দর্শকের চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বাম হাতে হাত সাফাই করার কথা আমরা জানি। বুয়েট শিক্ষক সমিতি এই ব্যাপারটি নিয়ে যে একই ধরণের পদ্ধতি অনুসরণ করছেন তা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
তবে আমি এখানে এ নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। আমি অত্যন্ত হতাশ যে আমার পোস্ট দেবার পর এগারো দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত এব্যাপারে কার্যতঃ কোন উন্নতি হয়নি। এর মধ্যে যা যা হয়েছে বলে আমার চোখে পড়েছে তা হচ্ছেঃ
১। আমার লেখাটা নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে (ইন্টারনেটভিত্তিক) আলোচনা হয়েছে। এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা থেকে শুরু করে কন্সট্রাকটিভ নানা আলোচনা, ব্যক্তিগত আক্রমণ সবই হয়েছে। কিন্তু যা হয়নি তা হচ্ছে এব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমাদের মতামত জানানোর কোন উদ্যোগ।
২। এই ব্যাপারটিতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন বর্তমান শিক্ষার্থীরা। অথচ এই ব্যাপারটিতে তারা প্রায় নীরব। আমি এমন অভিযোগও পেয়েছি (বিশেষতঃ লেভেল-৪ এর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে) একটা রিউমার ছড়িয়ে অহেতুক তাদের শিক্ষাজীবনকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমিসহ যারা এই কর্মপত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন, এর বিরোধীতা করেছেন তারা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এবং যার যার কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আমরা কোন গোষ্ঠী বা চক্র নই। আমাদের মধ্যকার সাধারণ ব্যাপার একটাই, তা হচ্ছে আমরা বুয়েটকে ভালোবাসি, এর মান ও মর্যাদা নিয়ে ভাবি এবং এর কোন ব্যতয় হতে দেখলে কষ্ট পাই। এখানে অনেক সচেতন মানুষও আছেন যারা কখনো বুয়েটের সাথে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু এই ঘটনায় এখানে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনৈতিকতার বা অনিয়মের আশংকা করেন। বুয়েট বা তার শিক্ষার্থীদের বিরূদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করে আমাদের কোন ফায়দা নেই।
৩। এ পর্যন্ত এই ব্যাপারটি নিয়ে বাংলাদেশে প্রকাশিত কোন সংবাদপত্র বা ম্যাগাজিনে কোন লেখা আমার চোখে পড়েনি। অনেকে আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন আমি যেন অমুক অমুককে ধরি তাদের পত্রিকায় এব্যাপারে লেখা বা রিপোর্ট প্রকাশ করার জন্য। আমি অবশ্য তা করার চেষ্টা করিনি। কারন,
(ক) আমার পোস্টটির পাঠকদের মধ্যে অবশ্যই একাধিক সাংবাদিক-কলামিস্ট আছেন। সম্ভবতঃ তারা বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধান করার বা এব্যাপারে কিছু লেখার প্রয়োজন বোধ করেন নি। অর্থাৎ তাদের কাছে এই ব্যাপারটির কোন নিউজ ভ্যালু নেই।
(খ) বিষয়টি ব্লগে প্রথম প্রকাশিত হওয়ায় এব্যাপারে পাব্লিশ মিডিয়ার মধ্যে উন্নাসিকতা থাকতে পারে। আমি ঠিক নিশ্চিত নই, তবু আমি সন্দিহান।
(গ) আমার জানা মতে বাংলাদেশের সংবাদপত্র-ম্যাগাজিনের জগতে অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষ আছেন যারা বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী। বুয়েটের ব্যাপারে তাদের ভালোবাসা আমাদের অনুরূপ হবে বলেই আশা করি। সেক্ষেত্রে এই দুর্দিনে তাদের কেউই কী স্বঊদ্যোগে এব্যাপারে কোন লেখা প্রকাশ করতে পারেন না! একই কথা কী ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে যারা আছেন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়? একই কথা কী যেকোন মিডিয়ার সচেতন বাংলাদেশী সাংবাদিকের (বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নন) জন্য প্রযোজ্য নয়?
আমরা কেউই কিন্তু বলিনি যে না এনিয়ে অহেতুক বুয়েট উত্তাল হোক, পরীক্ষা পিছাক, ক্লাশ বন্ধ হোক। আমরা চাই এনিয়ে সর্বমহল থেকে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে বলা হোক যে উদ্যোগ দুটির একটিও শুভ নয়, কাম্য নয়। তারা যেন অবিলম্বে যেন এধরনের উদ্যোগ বন্ধ করেন।
একটা পুরোনো গল্প বলে এই দীর্ঘ মন্তব্য শেষ করবো। সম্রাট আলেকজাণ্ডার যখন ভারত আক্রমণ করেন তখন ভারত বহু ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত, পরস্পর কলহে লিপ্ত। এক ক্ষুদ্র রাজ্য আলেকজাণ্ডার কর্তৃক আক্রান্ত হলে সেই রাজ্যের রাজা তার পূর্বতন শত্রু প্রতিবেশী রাজাদের সাহায্য কামনা করেন। কিন্তু প্রতিবেশী রাজারা এটি তাদের সমস্যা নয় বলে এড়িয়ে যান। বলাই বাহুল্য, আলেকজাণ্ডার প্রথমোক্ত রাজ্য দখল করার পর আশ-পাশের বাকী রাজ্যগুলোও দখল করে নেন।
আজ যারা এটি বুয়েটের অভ্যন্তরীন সমস্যা বলে চুপ করে আছেন আগামীতে বুয়েটের উদাহরণ দিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও যে একই ধরণের উদ্যোগ নেয়া হবে না তার কিন্তু নিশ্চয়তা নেই। বরং তার সম্ভাবনাই বেশি।
সবশেষে প্রিয় বলাই, দীর্ঘ মন্তব্য করার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ফেসবুকের গ্রুপে বুয়েটে পোস্টারিং করার ব্যাপারে আলাপ দেখেছিলাম।
বাস্তবায়ন করতে হলে প্রস্তাবটিকে দুইটি প্রধান স্তর অতিক্রম করতে হবে। প্রথমে একাডেমিক কাউন্সিল এবং তারপর সিন্ডিকেট। শিক্ষক সমিতিতে এটার প্রচার করা হয়েছে এবং শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে যে একাডেমিক কাউন্সিলে বেশিরভাগ শিক্ষকই এটার বিপক্ষে মত দেবেন।
কাজেই সেখানেই এটাতে ফুলস্টপ পড়তে পারে। যদি তা না হয় তাহলে বুয়েটে হলে হলে পোস্টার এবং মুভমেন্ট শুরু হবে এবং যেন এটা সিন্ডিকেটে পাশ না হয় সে জন্য চাপ সৃষ্টি করা হবে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আজকে শুনলাম বুয়েটে ছাত্রদের মিছিল হয়েছে। ছাত্ররা মিছিল করে কোটা এবং সান্ধ্য শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আমি হলে থাকি না। তাই সব খবর নিয়ে নিশ্চিত হতে পারি না। কিন্তু আমার ভয়, এই ইস্যু নিয়ে পরীক্ষা পেছানোর মত অনেক মুনি বুয়েটে আছে।
______________________________________
লীন
দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য ক্ষমা (ধন্যবাদ) করে দিলাম।
পত্রিকার সাথে কারো যোগাযোগ থাকলে বিষয়টি তোলা উচিত। বর্তমান ছাত্ররা এটা নিয়ে সোচ্চার হবে। কিন্তু তাদের পরীক্ষা পেছানো নিয়ে চিন্তিত। বুয়েট অথোরিটি পরীক্ষার আগেভাগে সবসময়ই এরকম এক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখে, যাতে ছাত্ররা বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়। এবার ছাত্রদের কোনো দাবী না থাকা সত্ত্বেও একদফা পরীক্ষা পেছানো হয়ে গেছে।
ছাত্রদের মধ্য থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কিভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। অনেক শিক্ষক প্রস্তাবের বিপক্ষে থাকলেও সামনে এসে সিনিয়র কলিগের বিরাগ ভাজন হওয়ার ঝঁকি কতোজন নেয়ার সে বিষয়ে সংশয় আছে। যা করার ছাত্রদেরকেই করতে হয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমি আই আই টির প্রাত্তন ছাত্র হিসাবে, বাংলাদেশী বন্ধুদের কিছু প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা ব্যাক্ত করতে চাই
[১] বুয়েটে শিক্ষকদের ছেলে/মেয়েদের জন্যে সংরক্ষন উত্তম প্রস্তাব। কারন ভাল শিক্ষক আনতে টাকা যখন নেই-কিছু ত তাদের দিতে হবে -এই সুবিধা ভাল শিক্ষক আনার জন্যে কার্যকরী। আই আই টি খরগপুরে, এটা চালু আছে।
[২] টিউশন ফি বাড়ানো উচিত না। আই আইটিতে টিউশন ফি বাড়িয়ে সেমিস্টারে ৫০,০০০/ টাকা করা হয়েছিল ২০০১ সালে। আর আমি যখন ১৯৯১ সালে ঢুকি তখন ছিল ৩০০ টাকা মাত্র। আমি নিজেই এর কুফল দেখেছি। আমাদের সময় মধ্যবিত্তরা পড়তে আসত। ১৯৯৬ সাল থেকে যখন টীউশন ফি ২০,০০০ টাকা হয়ে গেল-শুধু উচ্চ মধবিত্তের সন্তানরা সেখানে আসত। এটা ঠিক নয়। প্রতিভাবানরা দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকেই বেড়োয়।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। কোটা সিস্টেমের পক্ষের যুক্তিগুলো এভাবে শুনতে পারলে আলোচনা ভালো হতো, সবকিছু বেরিয়ে আসতো। এবার আপনার তোলা পয়েন্টদুটো নিয়ে বলি:
১। বুয়েটের জন্য 'ভালো শিক্ষক' আনতে টাকা নেই কথাটি সত্য নয়। বাংলাদেশের অবস্থা বিবেচনায় বুয়েট শিক্ষকরা খুব খারাপ অবস্থায় আছেন, এটা বলা যায় না। আবাসিক সুবিধা, হাসপাতাল, ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল এজাতীয় সুযোগ-সুবিধা অলরেডিই আছে। বেতনের ব্যাপারটা অন্যান্য পাবলিক ইউনির চেয়ে বুয়েটে কম না। বেতন কম মনে হলে বেতন বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দেওয়া উচিত, বেতন তারপরেও না বাড়লে যার পোষাবে না, তিনি চলে যেতে পারেন। এমন না যে, বুয়েট শিক্ষক সংকটে ভুগছে। বরং শিক্ষক সমিতির দাবী অনুযায়ী এই ফ্যাকাল্টি নিয়েই তারা আরো ৪০০ অতিরিক্ত ছাত্রকে পড়ানো কাভার করতে পারবেন! বেতনের সাথে ছেলেমেয়েদের কোটা এক্সচেঞ্জের সমীকরণ অন্তত বাংলাদেশে মানায় না, যেখানে ২৫০০০ ছেলেমেয়ে সমান রেজাল্ট করে আর বুয়েট নেয় মাত্র ৮৭০ জন।
২। একমত।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
চুটকি
অসৎ সরকারী কর্মচারী : আই যাই বেতন পাই । কাজের টাকা আলাদা।
অসৎ শিক্ষকঃ .........
চুটকির পরের অংশ ছাড়েন মিয়া।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
১। কোটা বের করা টা মেনে নেয়া যায় না। যোগ্্যতা থাকলে পড়বে, না থাকলে পড়বে না।
২। দ্বীতিয় শিফট চালু করা টা খারাপ দেখি না। তারা ও ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে আসবে । তাদের বাড়তি থাকবে টাকা। তারা হয়তো বুয়েটে ভর্তি হতে না পেরে প্রাইভেট এ পড়তো। তারা অযোগ্য এমন না। তারা ভর্তি পরিক্ষা টা ডে শিফটের সবার সাথে নিয়ে, মেধার ভিত্তিতে যারা ফ্রি পরতে পারবে পড়বে, বাকিদের মাঝ থেকে যারা পড়তে চায় পয়সা দিয়ে নাইট সিফটে পড়বে। বা মিক্সড করে দুই সিফটে পড়াবে।
এতে টিচার দের কামলা দিতে হবে না, যেহেতু পয়সা পাবে, এটে জবাবদিহিতা ও থাকবে, পড়াবে ও ভালো। যেই ৮৭০ জন আগে ফ্রি পরতো এখন ও ফ্রি পড়বে। যে এক্সট্রা িনকাম হবে তার একটা অংশ বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড ও রিসার্স ফান্ড এ যাবে। এখোন কত টিচার রা পাবে কত রিসার্স এ দিবে, তা নিয়ে নিগোসিয়েট করা উচিৎ।আর নিগোসিয়েট করা উচিৎ যাতে এক সাথে ভর্তি পরিক্ষা হয়। প্রথম ৮৭০ এ শুধু মেধাবি, এটা ভা বা ঠিক না। নেক্সট ৪০০ ও মেধাবি, এই খেত্রে পরিক্ষারথীর সংখ্্যা বাড়াতে হবে।
অনেকদিন পরে দেখলাম।
২এর ব্যাপারে, অনেকে এভাবে ভাববে। কারণ, এটা উপস্থাপিতই হয়েছে নিরীহভাবে। টীচারদের কামলা দেয়া বা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে খ্যাপ ঠেকানোর জন্য বুয়েটের একটা প্রাইভেট ইউনি শাখা খোলাটা কিভাবে যুক্তিসঙ্গত হয়? আর নাইট শিফট খুললেই বুয়েট টীচাররা প্রাইভেটে খ্যাপ মারবেন না, এটা তো কেউ বলছেন না। যদিও খ্যাপ মারুন আর না মারুন, বুয়েটে আরেকটি নাইট প্রাইভেট ইউনি খোলার কোনো যৌক্তিকটা দেখি না।
বুয়েট ইনফ্রাস্ট্রাকচার যদি ৮৭০ প্লাস ৪০০ ছাত্র নিতে পারে, তাহলে ১২৭০ই নিক। আরো কিছু মেধাবী ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পাবে।
পাবলিক ইউনির শিক্ষাকে বেচার আগে চিন্তা করতে হবে বেচার দরকার আছে কি না। বুয়েট কি অর্থসংকটে পড়েছে? বুয়েট টীচাররা হঠাৎ করে অর্থসংকটে পড়েছেন?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বুয়েটের টিচার দের বেতন কম মনে হয় না, তার একটা কারন তাদের বাইরে কামলা দেয়ার অনেক স্কোপ। সেটা ইউনি বা কোম্পানী।
তারা পুরা সময় টা ইউনি কে দিবে।
সবার ই মানোন্নয়ন হবে। আমার ব্যাক্তিগত অভিমত, সব বন্ধ না করে, নিগোসিয়েট করা। কত পেরচেনট, টিচার পাবে, কত পারসেন্ট বুয়েট এডমিনিস্ট্রেশন পাবে, আর কত পারসেন্ট রিসার্স সোর্স কে দিবে।
অপালা দি, এই পারসেন্টের হিসাবে গেলেই গন্ডগোল। বুয়েটের টাকার দরকার আছে কিনা - এটা হলো একেবারে প্রথম প্রশ্ন। আর টাকার দরকার থাকলে তার জন্য অন্য উপায় খোলা আছে। বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট ইউনি খোলার কোনো দরকার দেখি না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সবার মন্তব্যই দ্বিতীয় শিফট খোলার বিপক্ষে পড়েছে।
এটা একটা প্রচলিত ধারণা যে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থ সংকটে ভোগে। কেন এই সংকটে ভোগে তার নানা রকম কারণ দেখানো হয়। সরকার বলে এত টাকা দেয়া যাবেনা, সুশীল সমাজ বলে ১০টাকা বেতনে পড়ালে সংকট তো হবেই, কেউ কেউ বলে ১০টাকা ছাত্র-বেতন তুলতে যে প্রশাসন তার খরচ ওই প্রাপ্ত আদায়ের বহুগুন বেশী, ইত্যাদি। গরীব দেশে (মতান্তরে গরীব করে রাখা দেশে) এধরনের আরো নানা কারণ দেখানো সম্ভব। সমস্যা হলো এই অর্থ সংকট কিভাবে কাটানো যায় তা নিয়ে রাজনীতিবিদ শিক্ষকেরা, রাজনীতি সচেতন ছাত্ররা এবং তথাকথিত সুশীল সমাজ, কিংবা এ্যালামনাইদের (যদিও আমাদের দেশে এ্যালামনাই ব্যাপারটা তত শক্ত নয়) ততটা উচ্চকন্ঠ হতে দেখা যায়না।
পোষ্য কোটা হয়তো অর্থ সংকটের সাথে মিলানো যায়না, কিন্তু নাইট শিফট বা কোচিং সেন্টার যাই বলা হোক না কেন সেটার পেছনে অর্থই মূল ব্যাপার। এটা আমার পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য নয় যে পোষ্যদের ভর্তি করার জন্য নাইট শিফট খোলা হচ্ছে বা হবে (কেউ সে দাবী করেনি অবশ্য)। ফলে অর্থই মূল বিষয়।
বুয়েটে আর্থিক সংকট আছে কিনা তা জানিনা। ধারণা করি, আছে। শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো, গবেষণার উপকরণের যোগান অবশ্যই বাড়ানো দরকার। সেজন্য বাড়তি অর্থ হয় রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজে সংস্থান করতে হবে। নাইট শিফট খুলে আর্থিক সংকট মেটানো গ্রহণযোগ্য/কার্যকর কোন সমাধান নয়। তাহলে প্রশ্ন হল বাড়তি অর্থের যোগান হবে কিভাবে?
এপর্যায়ে এসে আমি ঠিক নিশ্চিত নই শিক্ষকরা আসলে কী চান? নাইট শিফটের উদ্দেশ্য কী?
গবেষণার উপকরন মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে সবসময় ঘাটতি থাকতে দেখেছি। মান্ধাতা আমলের কিছু ফ্লুয়ীড মেজারমেন্ট ডিভাইস ছিল যেগুলোতে কোন প্রকার ডাটা একুইজিশন সংযুক্ত ছিল না। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমান কম্পিউটার, প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের ঘাটতি সব সময়েই ছিল।
তবে একটা ঘটনা জানি। এক ছেলে আইবিএমে চাকুরী করত। সে তার ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বুয়েটে আইবিএম এর ল্যাব খুলতে চেয়েছিল। বুয়েটে "অমুক" ডিপার্টমেন্টে "কেউ" একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন আইবিএমকে এটা করতে দিলে "তার" কি লাভ? এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে?
আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমার কোম্পানী ANSYS, Inc. থেকে কিছু একাডেমিক লাইসেন্সের ব্যবস্থা করি বুয়েটে (অথবা বলা ভাল চেষ্টা করি)। তারপর নিজেই বাতিল করে দেই সিদ্ধান্তটা। কাউক যে কোন "লাভ" দিতে পারব না।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ভাই প্রকৃতিপ্রেমিক, আপনে তো গোড়ায় ধইরা টান দিসেন। এক্কেবারে খাটি কথা -- সমস্যাটা পুরাটাই অর্থনৈতিক।
আর বুয়েটের শিক্ষক সমিতির যে সিদ্ধান্তকে আপাততঃ নৈতিক অবক্ষয় বলে মনে হচ্ছে, সেটা আসলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বানিজ্যিকীকরণ, যেটা অনেকদিন আগেই থেকেই চলছে, তারই ধারাবাহিকতা।
এই জন্যই সান্ধ্য শাখার প্রাইভেট প্র্যাকটিস খোলার সপক্ষে একই যুক্তি দেখান হয়, যেটা ৯০ এর দশকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার সময়েও দেখানো হত --- তখন বলা হত দেশের মেধা দেশে থাকবেন, আর এখন বলা হয় বুয়েটের শিক্ষক বুয়েটেই থাকবেন! বলা বাহুল্য যুক্তিগুলা দুইটাই খোড়া।
এইটা শিক্ষার সুযোগকে শাসক শ্রেনী বা কতিপয় আশরাফ গোত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার যে আদিম আকাংখা, তারই বর্তমান রূপ। এই বাজারের যুগে টাকাওয়ালারাই হইল আশরাফ কাম শাসক।
আমাদের প্রাথমিক/মাধ্যমিক শিক্ষা এর মধ্যেই আশরাফদের কুক্ষিগত হয়েছে। ঐটা হইছে আমাদের চোখের সামনেই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেটা শুরু হইছে ৯১-৯৬ সরকারের আমলে, তখন মনে প্রাণে সবাই বাজারের পূজারী, প্রাইভেটাইজেশন মানেই এফিশিয়েন্সী, বিনিয়োগ মানেই উন্নয়ন। এর মাঝে উচ্চশিক্ষার ঐ বাজার গড়ে উঠেছে,অনেকটা প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির অবক্ষয়ের সুযোগে।
এখন যেমন সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ভাল শিক্ষক সচরাচর পাওয়া যায়না, সচ্ছল অভিভাবক যেমন বাচ্চাকে সরকারী প্রাইমারী স্কুলে পড়াতে চান না, কদিন বাদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রর্যায়ের দক্ষ শিক্ষকরাও সব কেবল টাকাওয়ালাদেরকেই পড়াবেন, সচ্ছল অভিভাবকরাও ক্রমে উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম নামে টাকাওয়ালাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ছুটবেন। এখানে শিক্ষকদের নৈতিক/অনৈতিক আচরন কোন মূখ্য বিষয় নয়।
তখন সুনাম নামের বিমূর্ত বস্তুটাও অর্থনীতির আপন নিয়মেই বুয়েট থেকে উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিমে ধাবিত হবে।
আমরা চাই এখন বুয়েটের এই ইস্যুর বিরোধিতা হোক, এবং এই আন্দোলনে সফলতার মাধ্যমে শিক্ষার বানিজ্যিকীকরন যে জাতির জন্য আখেরে অমঙ্গলের সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়ুক। এর জন্য ষষ্ঠপাণ্ডব যেমন বলেছেন, ইস্যুটির ব্যপক প্রচার প্রয়োজন।
অনেক বক্তব্যই যুক্তি যুক্ত, সহমত।
তবে একটা জিনিষ খুব খারাপ লাগছে। কিছু কিছু পোস্ট খুবই দৃষ্টি কটু। বলা হচ্ছে, "শিক্ষকরা কামলা দেন" -- এটা কী ধরণের কথা? আমরা আমাদের "আলমা মাটার" এর শিক্ষকদের কথাই বলছি, নাকি? কোন প্রস্তাবের সাথে আমাদের দ্বিমত থাকতেই পারে। তাই বলে কাউকে অসম্মান করা কেন। আমি অনেক শিক্ষকদের জানি, যারা বুয়েটকে তাদের জীবনের সেরা সেবাটাই দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, কোন প্রতিদানের আশা না করেই। আমরা হয়ত তাদের মতো কখনোই হতে পারব না। উনাদের কাজের ফলে অর্জিত সুনামের ভাগিদার আজ আমরা সবাই।
আমি কোটার বিপক্ষে, কারণ বিষয়টা পক্ষপাত হয়ে যায়। সেটাতে সবার জন্য সমান সুযোগ দেয়া হয় না, যেটা বুয়েট বহুদিন ধরে লালন করছে। লিমিটেট কোম্পানী করার যে প্যান সেটা আরো খারাপ হবে। বুয়েট একটা খারাপ বিষয়ের উদাহরণ হয়ে যাবে।
শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর দরকার, এটা সবাই স্বীকার করে। সেটা কিভাবে করা যেতে পারে, সেটা আসলেই একটা প্রশ্ন। এটা মুলত আমাদের দেশের একটা সামগ্রিক সমস্যা। কেউ কেউ সরকারের সাথে আলোচনার কথা বলেছেন। সরকারের ব্যাপারে আমি সন্ধিহান। হয়ত বলে বসবে, সবকিছু নিম্নগামী, আপনারা আবার উপরে উঠে বসে আছেন কেন? যেভাবে পারেন, সুবিধা নেন!
কেউ কেউ বর্তমান ছাত্রদের জড়িত হবার কথা বলছেন। দয়া করে এ কাজটা কেউ করবেন না। তারা জড়িয়ে গেলে বিষয়টা জটিল হয়ে যাবে। তাছাড়া তাদের নাকি সামনে পরীক্ষা। প্রাক্তন সিনিয়র ছাত্রদের কয়েকজন মিলে একটা পিটিশন দিতে পারেন। উপাচার্য মহোদয়ের সাথে কিংবা শিক্ষক সমিতির সাথে (যারা এ প্রস্তাব এনেছেন বলা হচ্ছে) বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে পারেন। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টার কিছুটা সুরাহা করা সম্ভব, ছাত্রদের ব্যবহার করে নয়।
বুয়েট আমাদের "পরিচয়ের গর্বিত অংশ"। তাই, শুধু এই ব্যাপারটিতে নয়, আরো বহু বিষয়ে এলামনিদের সাথে বুয়েটের সম্পর্ক আরো নিবিড় হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে এলামনি ও কর্তৃপক্ষ দুজনেরই এগিয়ে আসতে হবে। কিছু ঘটলো, আর আমরা কিছু ব্লগ পোষ্ট করে দায়িত্ব শেষ করলাম, এটাই যথেষ্ট নয়। একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে আমি এ রকমটাই মনে করি।
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। কামলা দেয়া বা খ্যাপ মারা কথাগুলো অসম্মানার্থে ব্যবহার করা হয় নি। এটা একটা কথার কথা। বুয়েটে যেমন 'বাণিজ্যে যাই' অর্থ টিউশনিতে যাই, এখানে কামলা দেওয়া মানে নিজের প্রফেশনের কাজ করা। উদাহরণস্বরূপ, আমি নিজে যখন অফিসে থাকি, কেউ ফোন করলে বলি 'কামলা দিতেছি', যদিও কাজটা করি রিসার্চের। সবকিছুই কামলা।
বর্তমান ছাত্রদেরকে কোটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রেক্ষিতে পরীক্ষা পিছালে ব্যাপারটা খারাপ হবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু শিক্ষক সমিতির প্রস্তাবনার টাইমিং দেখে তারাই এটা আশা করছেন ভাবলে খুব বেশি দোষ দেয়া যাবে না। বর্তমান ছাত্ররা অনেক সচেতন। আমাদের যেখানে ৭ বছর লাগতো, এখন বুয়েট পার হতে লাগে সাড়ে ৫ বছরের মত। কিন্তু ছাত্ররা না চাইতেই এক দফা পরীক্ষা পেছানো হয়ে গেছে।
শিক্ষক সমিতির সুমতি হোক। বুয়েট ধবংসের নীল নকশা থেকে তারা নিজেরাই বেরিয়ে আসুন। পরীক্ষা যথাসময়ে নেয়ার সদিচ্ছা তাদের পক্ষ থেকেও আসুক।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ছাত্রদের স্বার্থের কথা বলতে গিয়ে ছাত্রদের পরীক্ষা পেছানোর মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটুক এটা কেউ চান বলে মনে হয় না।
অনুমান থেকে বলতে পারি, অনেক জুনিয়র শিক্ষক নৈতিক বিবেচনায় এই দুই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন, তবে তারা সম্ভবত একাডেমিক কাউন্সিল বা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার অবস্থানে নাই। প্রভাবশালীদের কেউ যদি দৃঢ়চেতা হন, এবং এসব প্রস্তাব ঠেকাতে পারেন, তাহলে ভিন্ন কথা।
তবে, একটি সত্য হল, এই দুই প্রস্তাবে আখেরে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত যদি কেউ হবার থাকে, তা ছাত্ররাই। তাই তারাই সবচেয়ে তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করতে পারে।
তবে ছাত্ররা আন্দোলন করলেই একাডেমিক ক্ষতি করতে হবে এমন তো নয়, অনেক প্রকারে আন্দোলন হতে পারে, যেটা সংক্ষিপ্ত কিন্তু ফলপ্রসু। এব্যাপারে যারা ছাত্রদের নেতৃত্ব দেন, তাদেরই সাবধান হতে হবে যাতে আন্দোলনকে বেসামাল করে কোন সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী লাভের চেষ্টা না করে।
বলা হয় যে এবারের নির্বাচনে তারুন্যের জয় হয়েছে ।
কিন্তু সেই তরুণরাই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষা নামের মহা মূল্যবান বস্তুর( শুধু টাকার মূল্যেই )ক্রেতার মাধ্যম ছাড়া কিছুই নয় ,মাঝখান দিয়ে বাবার পকেট খালি ।
( জয়িতা )
নতুন মন্তব্য করুন