লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: শুক্র, ০৮/০৬/২০০৭ - ৮:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
প্রথম বিয়ে কবে করেছিলাম ঠিক দিনতারিখ মনে নেই। তবে নাসরিনকে মনে আছে। বয়স 14/15। জড়সড় হয়ে বসে আছে বাসর ঘরে। আমি ঢোকামাত্র পা ছুঁয়ে সালাম করলো। কিছুটা অপ্রস্তুত হই। প্রাথমিক জড়তা কেটে গেলে দেখি কথাবার্তায় অনেক প্রাণবন্ত সে। আমাকে শোনাতে থাকে তার সংসার জীবনের স্বপ্নের কথা। একটু খারাপ লাগতে থাকে। তবে অচিরেই সামলে উঠি।
মা তাবিজ আর পানিপড়া দেয়। হাদিয়ার দাবী নেই। যে যা খুশি হয়ে দেয়। মেজোপার জিনের আছর হয় রাত্রি একটু গভীর হলে। পাবলিকের ভূত ভবিষ্যত বলে দেয়। চার্জ জনপ্রতি 2 টাকা। মা'র ভক্ত হয়েছে অনেক। মেজোপাকেও একটু সমীহের চোখে দেখে লোকজন। যশোরের এই চিকনকান্দি এলাকায় গত কয়েক বছর ধরেই ধানের মৌসুমে আসি আমরা। তবে এ পারিবারিক ব্যবসায় আমার এবারই প্রথম সরাসরি অংশগ্রহণ।
গয়নাগুলো খুলে আমার কাছে দিতে বলি নাসরিনকে। চারিদিকে চোরের উপদ্্রব। যৌতুক হিসেবে 10 হাজার টাকা পেয়েছি। ওটা গামছা দিয়ে বেঁধে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখি। টর্চলাইট ও পেয়েছি একটা। মাথার কাছে রেখে ঘুমিয়ে যাই।
পরদিন হাটবার। শ্বাশুড়ীকে বলি হাট করে আসি। নাসরিনের পিঠাপিঠি ভাই আমার বড় শালা জসিমকে সাথে নিয়ে সওদার থলে হাতে বেরিয়ে পড়ি। আমার ব্যাগপত্তর পড়ে থাকে শ্বশুর বাড়িতে। শুধু নাসরিনের গয়নাগুলো আর যৌতুকের টাকার বান্ডিলটা নিতে ভুলি না। বাজারে গিয়ে বড় দেখে দুইটা ইলিশ মাছ কিনি। এরপর জসিমের হাতে 500 টাকা দেই মিষ্টি কিনে আনতে। আমি একটু এদিক ওদিক চেয়ে কেটে পড়ি। বাজারের সাথেই বাসস্টেশন। বাসে উঠে পড়ি। মা আর মেজো পা দুপুরেই বাইরে বেরোনোর নাম করে এ এলাকা ছেড়ে গেছে। নাসরিন মেয়েটার জন্য একটু কেমন লাগে। যাক, ভাবি, 'বকুল' বলে বিয়ে; 'কবুল' বলে একটা মেয়ের সর্বনাশতো করি নাই!
গন্ডগোলের বছর আব্বা ঠিক রাজাকার ছিলোনা। তবে লুটপাট করেছে অনেক। আমার আর বয়স কত! 10/12 হবে। প্রতিদিন দেখতাম হিন্দুদের বাড়ি থেকে কত জিনিস আসছে। তার মধ্যে ছিলো ঘরের ভেংগে আনা দরজা থেকে মুড়ির টিন পর্যন্ত। এলাকায় আমাদের বংশের খুব দাপট তখন। কেউ কিছু বলতে সাহস পায় নাই। অবশ্য কে ই বা বলবে। যারা বলার তারাও সমানতালে অংশ নিয়েছে লুটপাটে।
একদিনের কথা আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে। আব্বা একজনের একটা গাইগরু ধরে এনেছে। লোকটা জানের মায়া ছেড়ে পিছনে পিছনে এসেছে। কাঁদছে। মজনু মিয়া, আপনি আমারে জবাই দেন। তবু আমার বাতাসীরে ছাইড়া দেন। ও যে আমার মায়ের মতন। ওর দুধ খেয়ে পুরো পরিবারা বাঁচে। মা দুর্গার দোহাই, আপনার আল্লার দোহাই ওরে ছাইড়া দেন। আব্বা লোকটাকে লাথি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বজলু চাচারা তখন সিমেন্টের পাটায় (স্থানীয় ভাষায়, কাচাবাইলা) ছুরি শান দিচ্ছে।
(শেষ করতে আরো কয়েকটি পর্ব লাগবে)
মন্তব্য
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
অজ্ঞাতবাস
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন