মুক্তিযুদ্ধ করা রাজাকারের মিথ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: শুক্র, ১৭/০৪/২০০৯ - ৬:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘটনা ১:

খালেক বিশ্বাস সম্পর্কে আমার নানা; নানীর কাজিন। অবস্থাপন্ন মানুষ, এলাকার চেয়ারম্যান। একাত্তরে রাজাকার ছিলেন। তার বিশাল বাড়িতে ছিলো পাক আর্মির ক্যাম্প। আশেপাশের এলাকা থেকে মুক্তি সন্দেহে লোকজন ধরে ধরে আনা হতো, সেখানে রাখা হতো। কাউকে হত্যা করা হতো, কাউকে অন্যত্র চালান দেয়া হতো।

বারিক মোল্লা সম্পর্কে আমার মামা হন। মায়ের একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কাজিন। একাত্তরে ২০/২২ বছর বয়স। পড়াশুনা তেমন শিখেন নাই, তবে চালু লোক। তখন গ্রামাঞ্চলে সোশ্যাল গ্যাদারিংয়ের চরিত্র ভিন্ন ছিলো, চেহারায়ও ভিন্নতা ছিলো। আর এসবের একজন তুখোড় অর্গানাইজার ছিলেন এই বারিক মামা। তিনি পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন, তাকে নেয়া হয় খালেক বিশ্বাসের ক্যাম্পে।

বারিক মোল্লার মা তাদেরকে অনুনয় বিনয় করেন, কোনো কাজ হয় না। উপয়ান্তর না দেখে এসে আমার নানীকে ধরেন। আমার নানী তাকে নিয়ে সোজা চলে যান খালেক বিশ্বাসের ক্যাম্পে। খালেক বিশ্বাস বয়সে তার ছোট। বাপের বাড়ির সমস্ত জোর দেখিয়ে তিনি বারিক মোল্লাকে ছেড়ে দিতে বলেন। খালেক বিশ্বাস গাঁইগুঁই করলে তিনি বলেন, "তাইলে আমার মনোয়ারকে রেখে দে। তবু বারিককে ছাড়।" আমার নানীর একগুঁয়েমির কারণে ক্যাম্প থেকে ছাড়া পান বারিক মোল্লা।

ঘটনা ২:

এবারেও খালেক বিশ্বাসের কাহিনী। তিনি পাকি আর্মি নিয়ে পাশের গ্রামে গিয়েছেন মুক্তির খোঁজে। আর্মির লিস্টে ছিলেন স্কুলের হেডমাস্টার। হেড মাস্টার এলাকায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন, খালেক বিশ্বাসও তাকে পছন্দ করতেন। তাঁর বাড়ির কাছাকাছি এসে আর্মি জিজ্ঞেস করলেও খালেক বিশ্বাস তাদেরকে বলেন, "আগাড়ে হ্যায়।" তিনি হেডমাস্টারকে বাঁচিয়ে দেন। তবে আরেকটু সামনে এগিয়েই পাকি সেনারা পরবর্তী টার্গেট ঠিকই খুঁজে পায়। আর্মি আসার খবর শুনে অনেকে পালালেও মজিদ শিকদারের ঘাড়তেড়া ছেলে আজাদ বাড়ি ছাড়ে না। আর্মি তাকে ধরে, বাড়ির উঠানেই গুলি করে হত্যা করে। বাড়ির মেয়েদেরকে তারা কিছু বলে না। খালেক বিশ্বাস তাগাদা দেয়, আর্মি চলে যায়।

--------
উপরের দুটি ঘটনাই সত্য, শুধু নামধাম একটু পরিবর্তন করতে হয়েছে সঙ্গত কারণেই। দুটি ঘটনাই আমার নানীসহ আরো অনেক লোকের কাছে শোনা। ঘটনা দুটোর সারফেসে তাকালে রাজাকার খালেক বিশ্বাসকে ফেরেশতাটাইপ লোক মনে হতে পারে। তিনি নিজের হাতে কোনো লোককে হত্যা করেছেন তার কোনো প্রমাণ নেই; বরং তিনি প্রথম ঘটনায় বারিক মোল্লাকে ছেড়ে দিয়েছেন, দ্বিতীয় ঘটনায় হেডমাস্টারকে বাঁচিয়েছেন এবং সর্বোপরি তার উদ্যোগে সে যাত্রায় কোনো মেয়ের শ্লীলতাহানি হতে পারে নি। সুতরাং, দেখা যায় তিনি রাজাকার হয়ে মূলত দেশসেবা করেছেন, মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন।

সম্প্রতি মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ প্রতিমন্ত্রীর কথায়ও একইরকম সিনারিও দেখি আমরা, একই রকম সিদ্ধান্তের প্রতিধবনি শুনি,

"মুক্তিযুদ্ধে সবস্থানে রাজাকাররা খারাপ কাজ করে নি। আমার গফর গাঁওয়ে আমি যখন ব্রিজ ভাঙি, তখন রাজাকাররা আমাকে সহযোগিতা করেছে। সে ক্ষেত্রে অনেক স্থানে রাজাকাররা যেমন মুক্তিযুদ্ধে দেশবিরোধী কাজে জড়িত ছিলো, তেমনি অনেক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাও করেছে। আসলে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে।"
(সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ৪ঠা এপ্রিল, ২০০৯)

এখানে বিষয়টির আরেকটি নতুন ডাইমেনশন পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যায়, অনেক স্থানে রাজাকাররা প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাহায্যই করেছে। এটাকে আরেকটু এক্সট্রাপোলেট করলে বলা যায়, রাজাকারদের মধ্যে অনেকেই ছিলো আসলে ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা। এই পোস্টে বয়সে সিনিয়র নিজচোখে মুক্তিযুদ্ধ দেখা ব্লগার মুনিমও তেমনটাই বলেছেন,

"অনেক মুক্তি যুদ্ধা , দিনে রাজাকার গিরি করতেন রাতে মুক্তযুদ্ধা হয়ে পাকিদের উপর আক্রমণ চালাতেন।"

অর্থাৎ, এখানে একটা মিথ তৈরি হচ্ছে, আমরা একটা নতুন গোষ্ঠী পাচ্ছি, যাদের নাম দেয়া যেতে পারে, "মুক্তিযুদ্ধ করা রাজাকার"।

------
এবার আসা যাক, এই মিথ কতোটা বাস্তবসম্মত, সে আলোচনায়। একজন রাজাকার সে সময়ে নিয়মিত ভাতা পেতেন। ভাতার বিনিময়ে তাকে কাজও নিশ্চিতভাবেই করতে হতো। একদল রাজাকারের মধ্যে ধরে নিলাম দুয়েকজন আছেন ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা। তারপক্ষে কি সহ রাজাকারদের চোখ এড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা সম্ভব? অন্যরা যখন লুটপাটে যেত, তখন কি তিনি বসে বসে আঙুল চুষতেন? অন্যরা যখন কাউকে হত্যা করতো, তিনি কি বারবার এড়িয়ে যেতে পারতেন?

এবার ইনডিভিজুয়াল থেকে দলের দিকে চোখ দেই। মুক্তিযোদ্ধারা মূলত গেরিলা আক্রমণ করতেন। কিন্তু একদল মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকৌশল হিসেবে রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়ে তারপর মুক্তিযুদ্ধ করেছে, এটাকে অসম্ভব কল্পনা মনে হয়। কারণ, তাদেরকে অবশ্যই উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। নিজেদের পাহারায় থাকা ব্রীজটি নিজেরাই উড়িয়ে দিয়ে এরকম রিপোর্টিং কতোদিন চালানো যেতে পারে, তা সুস্থ মস্তিষ্কের লোকমাত্রই বুঝবে।

এবারে শুরুতেই উল্লিখিত ঘটনা দুটোর ওপরে আবার চোখ ফেরাই। ঘটনা ১ এ একজন রাজাকার দয়াপরবশ হয়ে বা আত্মীয়তার খাতিরে একজন নিরাপরাধ মানুষকে মুক্তি দিলে বা মুক্তি দিতে বাধ্য হলে সে কি মহা পুরুষ হয়ে যায়? গোলাম আযমের আত্মজীবনীতেও এরকম মহাপুরুষত্বের ক্রেডিট নিতে চাওয়ার প্রচেষ্টা খুব স্পষ্টভাবেই লক্ষণীয়। ঘটনা ২ এ পূর্বপরিচয়ের রেশ ধরে বা শ্রদ্ধার খাতিরে ১ জনকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু, ওই ১ জন মানুষের বিপরীতে যে আরো ১০০ টা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা কিংবা হত্যায় সহযোগিতার যে অপরাধ, তা কি ঢাকা পড়ে যাবে?

এর বাইরে অনেকে 'যুক্তি' নিয়ে আসেন, জান বাঁচানো ফরজ। তাই জান বাঁচাতে অনেকে রাজাকার হতে 'বাধ্য' হয়েছে। এটা নিশ্চিতভাবেই একটি অসত্য বক্তব্য। জান বাঁচানোর জন্য সাময়িকভাবে কেউ ছদ্মবেশ নিতে পারে; কিন্তু আশেপাশের আর ১০টা লোক যখন জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারে, সেখানে কেউ মাসের পর মাস ধরে রাজাকারি করে গেলে তার রাজাকারিত্ব ফরজ কেন নফলের মধ্যেও পড়ে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকেই কৌশলে 'ডান্ডি কার্ড' (পাকি সেনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত নিরাপত্তামূলক আইডেন্টিটি কার্ড) বাগিয়ে সোজা ভারতে পাড়ি জমিয়েছে, ট্রেনিং শেষে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারলে অন্য কারো জান বাঁচানোর ফতোয়া দেখিয়ে রাজাকারী করা কোনোভাবেই হালাল হয় না।

যুদ্ধাবস্থা, বিশেষ করে যখন যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয় একটি নিরস্ত্র জাতির ওপর, বেসামরিক মানুষের ওপর, তখন স্বাভাবিক অবস্থার আইন-কানুন খাটে না, তখন মধ্যপন্থা বলে কিছু থাকে না। তখন হয় এইদলে, নাহয় ওই দলে - এই সহজ সমীকরণটাই একমাত্র অবলম্বন হয়ে পড়ে। মধ্যপন্থা মানেই সবসময় ভালো পন্থা নয়। আজ যারা মধ্যপন্থী সেজে মুক্তিযুদ্ধ করা রাজাকারের মিথ ছড়াতে চান, তাদের উদ্দেশ্য কি সে বিষয়ে ভাবনার প্রয়োজন এখনই। নাহলে যুদ্ধাপরাধীর বিচারে আরেকটি টুইস্ট এসে পুরো বিষয়টিকেই কাঁচিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা খুবই প্রবল।


মন্তব্য

রেনেট এর ছবি

হতভাগ্য জাতি আমরা। নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস নিজেরাই বিকৃত করি, রাজাকারদের করি মন্ত্রী।
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ভাগ্যের দোষ দিয়ে লাভ নাই, ভাগ্যকে গড়তেও হবে আমাদেরকেই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তীরন্দাজ এর ছবি

খালেক বিশ্বাস অবশ্যই মহান কোন লোক নন। আর সব রাজাকারদের মতোই ঘৃন্য। শুধুমাত্র পরিচিতির খাতিরে তিনি কিছু মানুষকে বাঁচিয়েছেন মাত্র। এক্ষেত্রে বারিক মোল্লার পরিবারের সদস্যরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে পারেন, দেশবাসী নয়। দেশবাসীর কাছে খালেক বিশ্বাস অবশ্যই এক রাজাকার।

"রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা" ভার্সনে বিশ্বাস করি না। যদি কেউ থেকে থাকে, প্রমান সাপেক্ষে তাদের কথা মুক্তিযুদ্ধের পরই জানা গেছে। এক পাঠান পাকিস্তানী মুক্তাযোদ্ধার পক্ষ নিয়ে লড়েছিলেন। তার কথা যুদ্ধের পরপরই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এসব ঘটনা অজানা থাকে। সেসব অজানা রয়ে গেছে, সেসব ঘটনা তার চারিত্রিক বিশ্বাসহীনতার কারণেই জানতে পারে নি কেউ।

মুক্তিযুদ্ধে সবস্থানে রাজাকাররা খারাপ কাজ করে নি। আমার গফর গাঁওয়ে আমি যখন ব্রিজ ভাঙি, তখন রাজাকাররা আমাকে সহযোগিতা করেছে। সে ক্ষেত্রে অনেক স্থানে রাজাকাররা যেমন মুক্তিযুদ্ধে দেশবিরোধী কাজে জড়িত ছিলো, তেমনি অনেক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাও করেছে। আসলে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে।
"

এ ধরণের বক্তব্য ও বিবৃতির নিন্দা জানাই!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমি ওই বিবৃতি দেখে পুরা তাজ্জব হয়ে গেছিলাম।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হুমায়ুন আহমেদের একটা মঞ্চনাটক আছে ১৯৭১ নামে। সেই নাটকের মূল চরিত্র (নামটা ভুলে গেছি) ছিলো মুক্তিযুদ্ধ রাজাকার। যে পাক বাহিনীর ইনফর্মার হিসেবে কাজ করে কিন্তু ভুল ইনফর্মেশন দিয়ে সবসময় মুক্তিযুদ্ধাদের বাঁচিয়ে দেয়। আর হিন্দুদেরকে সাহায্য করে, পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।

রাজাকারেরা অনেক আগে থেকেই নিজেদের দোষ ঢাকতে এইসব বলে আসছে। আর আমরা ব্যতিক্রমি কাহিনীর চমকের লোভে সেইসবরে খুব আলোয় তুলছি।

মুক্তিযুদ্ধ প্রতিমন্ত্রীর কথাটা শুইনা বেদম হাসছিলাম সেদিন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

প্রচারেই প্রসার। ঠিকমতো প্রচার করতে পারলে একসময় মিথ্যেকেই সত্য মনে হতে পারে। প্রতিমন্ত্রীর ওই বক্তব্য পড়ে আমি আতঙ্কিত হয়েছি। যে সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যেই এমন লোক আছে, তারা অনেককে বাঁচাতে এসকেপ রুট করে দিলে অবাক হবো না। আর যুদ্ধাপরাধীর বিচার আওয়ামী লীগ না করলে বিকল্প হিসেবে অন্য কাউকেই চোখে পড়ছে না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

১.
ধন্যবাদ বলাই, একটা জটিল বিষয়ে আপনি অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে আলোচনা করেছেন। এটা অত্যন্ত উঁচু মানের লেখা - যে মানের আশা করে আমরা পত্র-পত্রিকা উল্টাই; কিন্তু তারা নানা চটকদার বিষয়ের একটা উপর-আলগা বিবরণ দিয়েই খালাস হয়ে যান -গভীরে যান না।

২.
আপনার এই লেখা একটা দলিল যা দেখায় যে, মাঠের অভিজ্ঞতা বা নিজ চোখে দেখার দৃশ্যকেও তত্ত্ব দিয়ে যাচাই করে নিতে হয় যে দেখাটা ভুল ছিল কিনা বা অভিজ্ঞতাটা মেকি কিনা। এটা একটা গভীর বিষয়। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় মাঠের অভিজ্ঞতায় যে ভুল সংকেত গ্রহণ করে মহাভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন আপনি তাত্ত্বিক বিবেচনাবোধ দিয়ে সংকেতগুলো ভেঙে সার্বিক সিদ্ধান্ত কী হওয়াটা যৌক্তিক তা স্পষ্ট করে তুলেছেন।

৩.
এই উদাহরণ ও বিশ্লেষণ দিয়ে আপনি পোস্টমডার্নিস্ট চিন্তা-ভাবনাকে যারা ভুলভাবে প্রয়োগ করে একধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ও নিজে তার মাঝে বসবাস করে তাদের জন্য একটা 'জেগে ওঠা'-র ডাক দিয়েছেন। তবে ব্যতিক্রম হতে পারার আনন্দে তারা নিজেরাই নিজেদের এত পিঠ চুলকায় যে তারা আপনার এই লেখার মধ্যে বরং শুধু সংকীর্ণতা খুজেঁ পাবে।

৪.
সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা লেখালেখি আমার চোখে পড়েনি। সংবাদটা যতটা চোখে পড়ার মত করে পরিবেশিত হয়েছে সেসব আলোচনা সেরকম করে আলোর মুখ দেখেনি। আপনার এই লেখা একটা উজ্জ্বল উদাহরণ কীভাবে ব্লগ প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া-মোগলদের তথ্যনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতায় আঁচড় কাটতে পারে। অভিনন্দন।

৫.
মন্তব্যের সবটুকু অংশই আপনার লেখার গুরুত্ব নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু বলার নাই। আমি সর্বাংশে আপনার সাথে সহমত।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হিমু এর ছবি
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হুম, গুল্লি মন্তব্য। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলুক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

শোহেইল ভাই,
অনেক ধন্যবাদ সুচিন্তিত ও উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য। নানান প্যাঁচে পড়ে উত্তর দিতে দেরি হলো।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমি বিভিন্ন ব্লগে যতোগুলো পোস্ট দেখেছি, তার একটি প্রধান সমস্যা হলো, হয় দলিলের ভারে বোঝাই, নাহয় চটকদার কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে পোস্টের সাহিত্যমানের ওপর বেশি ফোকাস করা। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, দলিলের / তথ্যের আধিক্য না ঘটিয়ে ঠিক যতোটুকু দরকার, ততোটুকু তথ্য দিলেই পাঠকের কাছে বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। পোস্টের সো-কলড সাহিত্যমানের চেয়ে বক্তব্যের দিকে ফোকাস দেয়াটাও আমার কাছে জরুরী মনে হয়। সত্য কথা সোজাসাপটা বলাই ভালো। হাসি

যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে একটা জিনিস আমি প্রায় সময়ই এড়িয়ে যেতে দেখি। তাহলো, সামষ্টিক বা সাংগঠনিক যুদ্ধাপরাধ। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই যে সংবিধান ছিলো, তাতে দেখা যায়, তারা এই বিষয়ের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে কিছু রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা যারা বলেন, তাদের অধিকাংশই সচেতনে বা অবচেতনে বিষয়টি এড়িয়ে যান। একটু সাধারণ খুনের ঘটনার কথা ধরা যাক। খুনটি যদি কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে করা হয় এবং সংগঠনের প্রধান ব্যক্তিটি খুনের হুকুম দিয়ে থাকে, তাইলে সে নিজের হাতে খুন করুক, না করুক, ঠিকই দোষী হয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচারে এ সম্পর্কিত আইনকানুন ভালো জানা কেউ বিষয়টার ওপরে আলোকপাত করতে পারলে ভালো হয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আরো কতো উদ্ভট কথা যে আমাদের শুনতে হবে, কে জানে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারটা বোধহয় আবারো হালকা হতে শুরু করেছে। এই রকম একটা মন্তবব্যের পরেও এটা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো আলোচনা না দেখে সত্যিই হতাশ হয়েছি আমিও।
বলাই'দাকে স্যালুট বিশ্লেষনের জন্য।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আসলে বিচারের জন্য সরকারকে সবসময় চাপে রাখতে হবে। এটা সরকারের কাজকেও সহজ করে দেয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তানভীর এর ছবি

বিষয়টা পোস্ট আকারে তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ। অন্য কোন দেশে হলে এই মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হতো। অথচ আমরা কত নির্লিপ্ত!

'রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা' আর 'কাঁঠালের আমসত্ত্ব' একই কথা। 'রাজাকার'- 'হানাদার' জাতীয় কোন বিশেষণ নয়। রীতিমত আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান আর্মির বেতনভুক সদস্য ছিল এরা। জেনারেল টিক্কা খান 'ইস্ট পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স'-এর মাধ্যমে এদেরকে পাকিস্তান আর্মির সদস্যভুক্ত করেন
[url=http://en.wikipedia.org/wiki/Razakars_(Pakistan)]উইকি নিবন্ধ। [/url]এখন পাকিস্তান আর্মির মধ্যে যদি দু'একটা ভাল কিসিমের থাকে, রাজাকারের মধ্যেও আছে। কিন্তু তাই বলে তাতে পাক বাহিনীর কাজ যেমন জাস্টিফাই হয় না, রাজাকারও তাই।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আপনার মন্তব্য থেকে একটা ভালো জিনিস জানলাম। রাজাকারদেরকে একটা নখদন্তহীন নিরীহ ঢোঁড়া সাপের রূপ দেয়ার চেষ্টাটা ইদানিং খুব চোখে পড়ে। পাকিস্তান আর্মির হাতে ট্রেনিং নেয়া এরা যে ঢোঁড়া সাপ নয়, বরং কেউটে তা আপনার মন্তব্য থেকে পরিষ্কার।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নিবিড় এর ছবি

দারুন পোষ্ট চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

পলাশ দত্ত এর ছবি

লেখাটা খুবই ভালো লাগছে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

পুতুল এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধে সবস্থানে রাজাকাররা খারাপ কাজ করে নি। আমার গফর গাঁওয়ে আমি যখন ব্রিজ ভাঙি, তখন রাজাকাররা আমাকে সহযোগিতা করেছে। সে ক্ষেত্রে অনেক স্থানে রাজাকাররা যেমন মুক্তিযুদ্ধে দেশবিরোধী কাজে জড়িত ছিলো, তেমনি অনেক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাও করেছে। আসলে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে।

এই ধরনের বক্তব্যগুলো শুনলে রাজাকার নামক বারাহ নন্দনদের স্মৃতিচারণ মনে পড়ে।
দুর্ভগ্যক্রমে আমার চাচা রাজাকার ছিলেন। তবে একটা মাত্র অপারেশনের পর তিনি পালিয়েছিলেন। গ্রামের মুক্তিযুদ্ধ নামে আমার একটা পোস্ট আছে। সেখানে বিস্তারিত পাবেন।
কিন্তু দুই ফুফাত ভাই এবং এক চাচাত এবং খালাত ভাই মুক্তিযোদ্ধা। পরিবার বলে কথা।
তো তাদের দেখা সাখ্যাত এবং আলাপ সালাপ শুনেছি। কিন্তু আমার চাচার পাকি প্রীতি ছিল লজ্জা জনক।
তার মতে; মুক্তি বাহিনী যদি গেরিলা হামলার কৌশল না করতো, তাহলে তারা কচুকাটা হতো। এমন নিখুত ছিল পাকিদের নিশানা।
পাকিতের অন্যায় অত্যাচারে রাজাকার বাহিনী থেকে পালিয়ে যাওয়া এক রাজাকারের উক্তি।
এমন কমপক্ষে আরো একজনের উদাহরণ জানি। যিনি মনে করেন পাকিরা খুব উচু মানের সৈন্য।
এই কথাগুলো বলেন তারা তাদের মনে পাকিদের প্রতি অতিরিক্ত সমীহ থেকে। এবং তারা এখনো পাকি সমর্থক।
সাধারণ ক্ষমায় তাদের অনেককেই রক্ষা করেছে। কারণ তারা কোন বড় ধরনের রাজাকার ছিলেন না।
তাদের কাছে পাকিপ্রিতী একটা আদর্শ। সে আদর্ম নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বা তাতে সহায়তা করা যায় না। কেউ করেনি। আমার বাবাকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায় এবং মারধোর করে। যাতে রাজাকার থেকে পালিয়ে যাওয়া আমার চাচা কোথায় লুকিয়ে আছে, তা বলে দেন। তখন বাবাকে ছেড়ে দিতে আরেক রাজাকার পাকিদের কাছে আমার মায়ের ক্রন্দনে বাধ্য হয়ে সুপারিশ করেন। তিনি আমার মায়ের মামাতো ভাই। এই উপকারকে সূচক ধরে আমি তাকে বলতে পারভ না যে, তিনি রাজাকার হয়ে মানুষের উপকার করেছেন। কারণ; ওনার তথ্যমতে এবং ওনাকে সাথে নিয়ে আমাদের এলাকার কমপক্ষে দশটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার তাদের আপনজন সহ সর্বস্ব হারিছে। লাইনে দার করিয়ে শত শত হিন্দুকে গুলি করে মেরেছে। দোকান পাট ঘর-বাড়ি জালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। হিন্দু যুবতী মেয়েদের ধরে পাকি ক্যাম্পে নিয়ে গেছে।
রাজাকার ন্যাসিদের মত একটা দর্শণ। যার কোন সংস্কার সম্ভব নয়। একমাত্র মৃত্যুর পরেই তাদের পাকিপ্রিতীর অবশান ঘটবে।
কাজেই তাদের এই ধরনের চিপায় পরে আত্মীয় স্বজনের দুএকজনের উপকারের কারণে রাজাকারদের মহান করে দেখার কোন কারণ নেই।
একবার রাজাকার আজীবন রাজাকার।
রাজাকার রাজাকারেদের চাটুকার নিপাত যাক।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

একবার রাজাকার আসলেই আজীবন রাজাকার। মানুষের মৌলিক ব্যক্তিত্ব কখনো বদলায় না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সচল জাহিদ এর ছবি

চমৎকার একটি বিষয়কে তুলে ধরেছেন। অনেক ধন্যবাদ সেইজন্য।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীর ঐ কথা শুনে আমিও স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি তার অভিজ্ঞতা বলেছেন ধরে নিচ্ছি তাই বলে মিডিয়ার সামনে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও কি তিনি জানেননা ? তিনি কি জানেননা কি অসম্ভব ঘৃনার দৃষ্টিতে তাকায় এই দেশের জনগন রাজাকারদের প্রতি যারা এই দেশটাকে জন্মের জময় গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছিল !

এই সব মানুষদের মন্ত্রীত্ত্ব করার কোন অধিকার নেই।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এরা হলো ঘরের শত্রু বিভীষণ। হাসিনা প্যাঁচে পড়লে খুশি হওয়ার মতো লোক আওয়ামী লীগের ভেতরেই আছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অসাধারণ বিশ্লেষন। আশা করি মন্ত্রী মহোদয়ের মত লোকদের কথায় যে সব সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছিলেন তারা এখন সত্যটা অনুধাবন করতে পারবেন যে কাঁঠালের আমসত্ত্ব হয়না। এসমস্ত "মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার"দের গত ৩৭/৩৮ বৎসরের ইতিহাস দেখলে তারা আসলে কী তা আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তবে এধরণের প্রচারনা ভুলবশতঃ বা অজ্ঞতাপ্রসূত নয়। বরং অনেক চিন্তা-ভাবনা-পরিকল্পনা করেই করা। এর উদ্দেশ্য বোঝার জন্য পণ্ডিত হবার দরকার নেই। সুতরাং আমাদের আরো হুঁশিয়ার হতে হবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এটা ঠিক বলেছেন। যারা রাজনীতি করতে করতে মন্ত্রী হয়, তাদেরকে 'আবুল' আখ্যা দেয়ার কোনো স্কোপ নেই, মন্ত্রীর বক্তব্যটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অমিত এর ছবি

চলুকচলুকচলুক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমাদের তো এখনো যুদ্ধদিন শেষই হলোনা ।
যুদ্ধদিন শেষ হোক পুরোপুরি । তারপর কোন একদিন অবসরে এইসব ব্যক্তিগত ব্যতিক্রম নিয়ে ভাবা যাবে, যদি আদৌ এরকম কিছু থেকে থাকে ।

এইসময় এইসবের জন্য উপযুক্ত নয়, মোটে ও নয় ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

যুদ্ধাবস্থা ভালো লাগে না। এসপার ওসপার হয়ে যাওয়াই ভালো। কথার ফুলঝুরির চেয়ে সরকার যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে, ততোই দেশের জন্য মঙ্গল।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

সংক্ষেপে ব্যাপারটা হলো, জাতীয় ঐক্য প্রচেষ্টা।

মুক্তিযুদ্ধ রাজাকার মিশিয়ে ভালোবাসার সিরাপ তৈরীর যে মহান প্রক্রিয়া বিএনপি জামাত জোট সরকার শুরু করে গিয়েছিলেন, সম্ভবতঃ সেই অসমাপ্ত মিশনকে আওয়ামী সৌরভে নতুন ব্র্যান্ডে সহানুভুতি আদায়ের নতুন কায়দা।

মন্ত্রী মহোদয় হয় অতি সরল নয়তো অতি চালাক।

প্রাসঙ্গিক বলে আমার ঘনিষ্ট আত্মীয়ের কথা বলছি। তিনি ঘোরতর এবং সক্রিয় আওয়ামী লীগ ছিলেন পাকিস্তানী আমলে। ঢাকায় একটা নামকরা দোকানে চাকরী করতেন যার মালিক পশ্চিম পাকিস্তানী। যুদ্ধের আগে আগে মালিক পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায় তাঁর উপর দোকানের দায়িত্ব দিয়ে। তিনি দোকানের বেচাবিক্রি চালাতে থাকেন। যুদ্ধ লাগলে দোকান বন্ধ করে তিনি গ্রামে চলে আসেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর ঢাকায় ফিরে গিয়ে দোকানের সবকিছু বিক্রি করে টাকা পয়সা নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন চিরতরে।

নিজ জেলায় ফিরে ব্যবসা শুরু করেন পাশাপাশি রাজনীতি। দুটোই সমানতালে চলে। কোটিপতি হওয়া সময়ে ব্যাপার ছিল। আওয়ামী রাজনীতির সুবাদে মুক্তিযুদ্ধের মহান সৈনিক হয়ে ওঠেন তিনি। সর্বমহলে মুক্তিযোদ্ধা ও শেখ মুজিবের সহচরদের একজন হিসেবে সুপরিচিত। জাতীয় পর্যায়ে সব দলের সাথে দহরম মহরম। শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।

যুদ্ধের সুফল এরকম 'মুক্তিযোদ্ধা'রাই বেশী পেয়েছে। পাকিস্তানীদের সম্পদের ধনী হওয়া মুক্তিযোদ্ধা দেশপ্রেমিক নিশ্চয়ই আরো অনেকে আছে। অথচ এরা যুদ্ধের ধারে কাছেও ছিল না। পালিয়ে গিয়েই এরা মুক্তিযোদ্ধা।

ঘনিষ্ট বলেই এরকম সুবিধাবাদীদের বিরূদ্ধে মুখ খুলতে পারিনি। মাঝে মাঝে অপরাধী লাগে নিজেকে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

একটা জিনিস স্পষ্ট, আওয়ামী লীগার মানেই কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা নয়। এই সুযোগসন্ধানী দলটি যে কাজ করে, তাহলো যথাসময়ে ক্রেডিট ছিনতাই। প্রত্যেক সরকারের আমলেই এরকম কিছু খাই-খাই পার্টি থাকে। এরা দেশটাকে খায়, পারলে দলটাকেও খায়।

মুক্তিযুদ্ধ আর রাজাকার কখনো মেশে না, যারা কাঁধে কাঁধ মিলানোর ফতোয়া দেয়, তারা এই সুবিধাবাদী দলেরই অংশ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধ করা রাজাকারের মিথে বিশ্বাস করি না।

অর্জুন মান্না [অতিথি] এর ছবি

সহজ কথা- রাজাকারদের বিচার করতে হবে। অন্যকিছু খোঁজার অবকাশ নাই।

তারেক এর ছবি

একটু দেরীতে পড়া হলো।

আমাদের তো এখনো যুদ্ধদিন শেষই হলোনা ।
যুদ্ধদিন শেষ হোক পুরোপুরি । তারপর কোন একদিন অবসরে এইসব ব্যক্তিগত ব্যতিক্রম নিয়ে ভাবা যাবে, যদি আদৌ এরকম কিছু থেকে থাকে ।

এইসময় এইসবের জন্য উপযুক্ত নয়, মোটে ও নয় ।

... মোরশেদ ভাইয়ের অভিমতটা আমারো।

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

"জ্যোছনা ও জননীর গল্পে" এক পাক-পাচাটা রাজাকারকে কোন এক পাকি কমান্ডার বলেছিলো
"এ দেশের মানুষ একসময় আমাদের হয়তো ক্ষমা করে দেবে, কিন্তু তোমাদের তারা কখনোই ক্ষমা করবে না..."

...দিন মনে হয় পালটে গেছে, তাদের এখন মুক্তিযোদ্ধাও বলা হয়...

---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ গঠন করতে দেয়া হয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রানা মেহের এর ছবি

সেই প্রতিমন্ত্রী কি দিন রাত চব্বিশ ঘন্টাই মাতাল থাকেন?
লেখার জন্য উত্তম জাঝা!
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জাতে মাতাল হলেও তালে নিশ্চিতভাবেই ধান্দাবাজ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার, কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।
- হুমায়ুন আজাদ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

রায়হান আবীর এর ছবি

দারুন পোস্ট। চলুক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মন্তব্যের জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।