আদমের কপিরাইট আইন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৫/২০১০ - ৪:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তথ্যসূত্র: কাগুর দেয়াল

দুপুরবেলার ভাতঘুম নষ্ট হইলে মিউ মিউ ডাকা নিরীহ বিলাইয়েরও মাথায় রক্ত চড়ে যায়, ফোঁস ফোঁস ঘোঁত ঘোঁত করে; আর এ তো মহাপরাক্রমশালী ঈশ্বর। দরজায় ঠক ঠক করে নক করা জিবরীলকে তিনি প্রথমেই বজ্রনিনাদে ধমক দিলেন 'জানের মায়া থাকলে সরে যা'। জিবরীলের জানের মায়া আছে; কিন্তু এটাও জানে কিয়ামতের আগে তার মৃত্যু নাই আর তার মতো বেগার খাটা কর্মদক্ষ ফেরেশতা আরেকটা বানাইতে ঈশ্বরকেই আরেকবার জন্মাইতে হবে। তবে ঈশ্বরকে ঠ্যাক দেওয়ার এতোসব সূক্ষ্ম হিসাবে না গিয়ে সে সরেই যেত, তার দয়ার শরীর; কিন্তু পেছন থেকে আদমের ঠ্যালা সামলানো যে দায়! ঈশ্বর আবার এই অকর্মণ্য অপদার্থটিকে সবচেয়ে স্নেহ করেন, তার অন্যায় আবদার মেনে নেন; অন্যদিকে জিবরীলকে পান থেকে চুন খসার আগেই ধমকের ওপরে রাখেন। খোদার দুনিয়ায় কোনো ন্যায়বিচার নাই। ঈশ্বরের সাথে বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্টেও আদমের এই সাক্ষাতের ব্যবস্থা না করে দিলে এই হারামজাদা যে ফার্স্ট চান্সেই তার নামে ঈশ্বরের কান ভারী করবে, জিবরীল তা ভালোমতোই জানেন আর এজন্যই নকের পরে নক করে ঈশ্বরের ভাত ঘুমের দফারফা করতে হয়।

চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ নিয়েও ঈশ্বর আদমের সাথে স্নেহের সুরে কথা বলেন,

"কী রে ব্যাটা, এই অসময়ে আবার আমারে জ্বালাইতে আইছোস ক্যান?"

"আমি জ্বালাতেই আসি, না? আপনের লগে একটা এসপার-ওসপার হয়েই যাবে আজ!" আদমের স্বর বেশ রূক্ষ্ম।

ঈশ্বর এই আদমকে নিয়ে ইদানিং মহা ঝামেলায় আছেন। ঝামেলার মূল কারণ হাওয়া। যৌবনেই সে আদমকে তেমন পাত্তা দেয় নাই আর এখন তো প্রৌঢ় বয়স। আদমকে সে লোকের সামনেই মুখ ঝামটা দেয় আর লোকের অগোচরে পারলে মারে, দুয়েকবার গায়ে গরম খুন্তিও তুলে ফেলেছে, লোকলজ্জার ভয়ে আদম সে কথা বাইরে না বললেও ঈশ্বরের কাছে গিয়ে নালিশ জানিয়ে এসেছে। ঈশ্বর তাকে সুন্দরী রমণী বশীকরনের যে সব টিপস দিয়েছেন, কোনোটাই কাজে আসে নাই। এ বিষয়ে তার নিজেরই অভিজ্ঞতা নাই বললে চলে। তবে ঈশ্বর দূরের কথা, হুমু এরশাদের আত্মার কনসালটেন্সিও আদমের জন্য কোনো কামে লাগে নাই। তার একটাই কথা, নীল বড়ি খাইতে পারুম না, মিষ্টি কথাও কইতে পারুম না। হাড্ডি যার, কপিরাইট তার। সুতরাং হাওয়াকে আজীবন তার ইচ্ছামাফিক চলতেই হইবো। অবশ্য হাওয়ার শরীর থিকা তার হাড্ডি খুইলা ফেললে সে বিবেচনা করতে রাজি আছে আর ক্যাচাল করবে কিনা।

ঈশ্বর তখন আকাশ-পাতাল চিন্তা করছেন, তার এই অবুঝ সন্তানটিকে আজ কোন মুলা ঝুলিয়ে বিদায় করবেন, হয়তো প্রটোকল ভেঙ্গে তার জন্য একটা হুরেরই বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। তার চিন্তায় ছেদ টানে আবার আদমের অসহিষ্ঞু কণ্ঠস্বর,

"কি হলো চুপ করে আছেন যে! কীসব আবাইল্যা আইন বানাইয়া রাখছেন লোকজন সব আকাম-কুকাম করে বেড়াচ্ছে, আর আপনি এদিকে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন!"

ঈশ্বরের আইন নিয়ে কেউ এযাবত প্রশ্ন তোলে নাই। তিনি আদমের ব্যাপারে একটু উদ্বিগ্ন হন, শেষতক হাওয়ার অবহেলা তার মাথা খারাপ করে দিলো না তো! স্নেহের স্বরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, "কি হয়েছে খুলে বলবি তো।"

মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে তার হাত সরিয়ে দিয়ে আদম সোজাসাপটা বলে, "কপিরাইট আইন নোতুন করে লিখতে হইবো। মিনিমাম ১৪ বছরের জেল চাই!"

ঈশ্বরের ভুরু একটু কুঞ্চিত হয়। তিনি নিজেই সৃষ্টি করেন আর সবকিছুর কপিরাইট তো তার নিজেরই। তিনিই যদি বর্তমান আইনে তুষ্ট থাকেন, তাইলে এই আদমের পোর সমস্যাটা কোথায়! তিনি সহসা আদমের ওপর বিরক্ত হন না, তবে বিরক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, "ক্যান রে আদম, কপিরাইট আইন নিয়া তোর আবার কি প্রবলেম হইলো?"

"প্রবলেম মানে! আপনি কোন দুনিয়ায় আছেন? বলি, আমার হাড্ডি দিয়া হাওয়া সৃষ্টি হইলো। আর তারপর আমাগো থিকা হইলো তেত্রিশ ডজন।"

আদমের হিসাব-নিকাশে ঈশ্বর মোটামুটি মুগ্ধ হয়ে যান। আদম বলে চলে,

"তারপর থিকা এই চেইন রিঅ্যাকশন চলতাছে তো চলতাছেই।"

"ভালোই তো", ঈশ্বর তাল দেন।

"ভালোই তো মানে! গতকাল একটা মাইয়া মনে ধরলো, ভাবলাম বুড়ি হাওয়ারে আর পুছুম না। তারে গিয়া প্রস্তাব দিতেই তার বাপে মুখের ওপর বুইড়া ভাম কইয়া গাইল দিলো।"

"নিজের বয়সটা দেখছোস? গালি দিবো না কি আদর করবো?" ঈশ্বর চোখ টিপে ঠাট্টার স্বরে বলেন।

আদমের এখন ঠাট্টা-তামাশার মুড নাই। সে সোজাসাপটা বলে, "আমি ওই মাইয়ার বাপের নামে কপিরাইটের মামলা করুম! হাড্ডি যার, কপিরাইট তার!"

ঈশ্বরের কাছে এখন সবকিছু ফকফকা। এইজন্যই আদমের পো কপিরাইট আইনে কড়াকড়ি চায়। তিনি ভাবেন, কপিরাইট আইন কড়াকড়ি হইলে আসলেই মন্দ হয় না। তবে এই ফাঁকে তার মনে একটা কুবুদ্ধিও খেলে যায়। হাড্ডি তো হাড্ডি, আদম তার নিজের জন্মের জন্যই তো বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে নাই।

ঈশ্বরের মনটা ফুরফুরা লাগছে। একটা স্টার ফিলটার ধরাইয়া তিন তলার ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই তার চোখে পড়ে আদমের ছাগুটা বাইরে একটা প্লাকার্ড হাতে দাঁড়ানো। তাতে লেখা, "আদম আর কপিরাইটবিরোধীদের সন্তান জন্মদান ভুলে যাওয়া উচিত।"

(এই পোস্টের কোনো ধারাবাহিকতা নাই। সুতরাং মুখার আদমচরিতের কপিরাইট অক্ষুণ্ণই রইলো)


মন্তব্য

জুনেব [অতিথি] এর ছবি

প্রথমে মুখফোড় এখন আপনিও বেচারা আদমকে একটু শান্তিও দিবেন না চোখ টিপি
লেখা অনেক ভালো হইছে .....
কপিরাইট জিন্দাবাদ খাইছে খাইছে

তারানা_শব্দ এর ছবি

দেঁতো হাসি :D

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

খ্যা খ্যা খ্যা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

খেকশিয়াল এর ছবি

আমারতে কপি করছে! ( খ্যা খ্যা হাসি)

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তারাপ কোয়াস [অতিথি] এর ছবি

ছেঁচা হইছে! হাসি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মানুষের পুরা কপিরাইট আদমের?
এদ্দিন বাদে নিজেরে পাইরেটেড মানব হিসেবে আবিষ্কার করিনু? দিক্কার দিলাম..........

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ছ্যাঁচা!

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

যাচিত বিবেক [অতিথি] এর ছবি

হেহেহে ! আমি ভাবছি আমার হাড্ডি থেকে কাকে কাকে বানানো হইছে, ...।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।