লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: বুধ, ১৩/০৬/২০০৭ - ৭:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
গতকাল অনলাইনে এক কাজিনের রেজাল্ট দেখতে গিয়ে শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকলাম। ও 5 পেয়েছে। গোলডেন! জব ওয়েল ডান!
কৌতুহলবশত আশেপাশের আরো কয়েকটা রোল নাম্বার নিয়ে টেরাই দিলাম। সবাই 5! রোল নাম্বারের ব্যবধান কয়েক শ'তে বাড়িয়ে দিলাম। তারপরেও যে নাম্বার চেক করি, সে-ই 5। আমি ততোক্ষণে মোটামুটি হতভম্ব। 5-এর নিচে কি কেউই পায়নি? অন্য কয়েকটি বোর্ডে গিয়ে আরো কয়েকটা টেরাই মারার পরে একজন পাওয়া গেলো 4.88, এরপরে একজন 4.96, আরেকজন 4.66। এতসব সার্চের মধ্যে মাত্র 1 জনকেই পেয়েছি যে 2 সাবজেক্টে ফেল করেছে।
পত্রিকায় দেখলাম জিপিএ 5 পেয়েছে 25732 জন। ভালো রেজাল্টের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের স্কুলের মধ্যে ব্যবধান আরো বেড়েছে। জিপিএ 5 এড় সংখ্যাকে সরকার তাদের উন্নয়নের জোয়ারী হিসেবে একটি সূচক হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ প্রকৃত প্রস্তাবে শিক্ষার মান তাতে কতোটা বাড়ছে, আদৌ বাড়ছে কি না, তা ভাবনার বিষয়।
মার্কিং সিস্টেমে যে সীমাবদ্ধতা হাইলাইট করা হয়েছিলো, তাহলো মেধাতালিকায় স্থানপ্রাপ্তদের হাসিমুখের ছবি নাকি অন্যদেরকে নিরুৎসাহিত করে, একটি বিভাজন সৃষ্টি করে। গ্রেডিং পদ্ধতিতে নাকি এই সমস্যা থাকবে না।
আমার ধারণা, সমস্যা দূর তো হয়ই নি; বরং তার ব্যপ্তি বেড়েছে আরো অনেক। আজকাল জিপিএ 5-এর আবার গোলডেন, সিলভার, ব্রোঞ্জ ভার্সন বেরিয়েছে। এক্সট্রা সাবজেক্টের গ্রেড নরমালাইজ না করেই প্রাপ্ত জিপিএর সাথে যোগ করে দেয়া হচ্ছে জিপিএকে গায়েগতরে মোটাতাজা দেখাতে। আজ সামহোয়্যারইনে দেখলাম একজন পোস্ট দিয়েছে 4.88 পেয়ে তার মন প্রচন্ড খারাপ। মন খারাপ হতেই পারে। 26 হাজারের একজন না হতে পারলে খারাপ লাগবেই। কিন্তু 5-এ 4.88 তো চমৎকার একটি রেজাল্ট হওয়ার কথা। সেই বিভাজন, সেই খারাপ লাগা অনুভূতি তাহলে এখনো থাকে কি করে?
আসলে এই অনুভূতিটা আসবে পরবর্তী পর্যায় চিন্তা করে। এই 26 হাজার স্টুডেন্টের বাইরেও আরো অন্তত লাখ খানেক, কম করে হলেও 50 হাজার, স্টুডেন্ট থাকার কথা, যারা অল্পের জন্য 5 মিস করেছে। এদের সবাই চাইবে দেশের টপ কলেজগুলোতে ভর্তি হতে। কিন্তু টপ কলেজগুলোর সংখ্যা হাতের আঙুলে গোণা যায়। ভর্তির ক্রাইটেরিয়া কি হবে? গত বছর 5 পাওয়াদের মধ্য থেকেও আবার যাদের বয়স বেশি, তাদেরকে অ্যাডমিশন দেয়া হয়েছে, সর্বোচ্চ রেজাল্ট করেও এবং কোনোরকম প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ বঞ্চিত হয়েও শুধুমাত্র বয়স কম থাকায় ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারে নি অনেক অনেক শিক্ষার্থী। কি দোষ ছিলো তাদের? অনেক বড় হতাশা গ্রাস করবে এইসব মেধাবী স্টুডেন্টদের। এর দায়িত্ব কেউ নেন না; আমাদের সেলুকাস বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা অস্ট্রিচ অ্যালগোরিদম অ্যাপলাই করে যান বছরের পর বছর।
সিস্টেম হিসেবে গ্রেডিং খারাপ নয়। সমস্যা হলো সেটা কোথায় এবং কিভাবে অ্যাপলাই করা হচ্ছে।
ক. এটা এমনভাবে অ্যাপলাই করতে হবে, যাতে কোনোকারণে এক পরীক্ষা খারাপ করলেও ক্যারিয়ার দৌড়ে কারো ফিরে আসার চান্স ভালোমতোই থাকে। একটা 4 পাওয়া স্টুডেন্টও যেন ভালো কলেজে ভর্তির জন্য ন্যায্যভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।
খ. এটা এমনভাবে অ্যাপলাই করতে হবে, যাতে যে মানুষগুলো এটায় প্রভাবিত হবে, সেই মানুষগুলো সিস্টেমকে ভালো করে বুঝতে পারে। শহর আর গ্রামের স্কুলগুলোয় রেজাল্টের ব্যবধান এই সিস্টেমের সাথে অভিযোজিত হওয়ার ব্যবধানকে অনেকাংশেই নির্দেশ করে।
গ. শিক্ষা একটি জাতির উন্নয়নের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। জিপিএ 5 এর সংখ্যার চেয়ে ওভারঅল শিক্ষার মানের ব্যাপারেই নীতিনির্ধারকদের সচেষ্ট হওয়া উচিৎ।
ঘ. ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি কমনসেন্সযুক্ত গাইডলাইন ঠিক করা উচিত। বয়সকে ভর্তির মাপকাঠি করার মত হাস্যকর ভাবনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না।
ঙ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল করাটা আরো কড়াকড়িভাবে জরুরী। তাহলে ভালো কলেজগুলোর সাথে অন্যদের ব্যবধান ধীরে ধীরে কমে আসবে।
মন্তব্য
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
নতুন মন্তব্য করুন