প্র্যাকটিস ম্যাচ ও আমাদের ব্যাটিং-বোলিং

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: বুধ, ১৬/০২/২০১১ - ১২:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক্রিকেট 'অবুঝ'দের জন্য ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করতে আইসিসি যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, তার বেশির ভাগই বোলারদের জীবনকে দুর্বিসহ করেছে। টি২০র প্রচলন, ফ্ল্যাট উইকেট - আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ, একদিনের ম্যাচে ৪০% ওভারেই ব্যাটসম্যানের পেশীশক্তি প্রদর্শনের অভয়ারণ্য সৃষ্টি, বাউন্সারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ, নো-বল করলেই পরের বলে যেমন খুশি মারো - সবকিছুই বোলারদের বিপক্ষে যায়। ক্রিকেটে দিনকে দিন বোলাররা হচ্ছেন পাঞ্চিং ব্যাগ। তারা সাধারণত 'অবুঝ' দর্শকদের হিরো হন না, যদিও ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে তাদের অবদান ব্যাটসম্যানদের চেয়ে কোনো অংশেই কম না।

বোলারদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে। জল্পনা-কল্পনা, প্ল্যান-পরিকল্লনা, হিরো-জিরো আলোচনা প্রায় সবকিছুই ব্যাটসম্যানকেন্দ্রিক। আমাদের চায়ের টেবিলে তামিম ফাটিয়ে ফেলে, মুশফিক ক্ল্যাসিক ক্রিকেট খেলে, জুনায়েদ মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারী পেটায়, অলোক কাপালি আইসিএলে সেঞ্চুরি করে, ইমরুল কায়েস কি চমৎকার ধরে খেলে, ছক্কা নাইম উড়িয়ে মারে, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ পাওয়ারপ্লে স্পেশলিস্ট হয় আর চির তরুণ স্যার আশরাফুল মতিন আমাদের জীবনে ঈদ এনে দেয়। রফিককে দর্শক যতোটা পছন্দ করে, তার ৮০% ক্রেডিট তার স্লগিংয়ের, বাকি ২০% নিঁখুত বোলিংয়ের। আমাদের মাশরাফি, শফিউল, রুবেল, রাজ্জাকদের কদর থাকে ম্যাচ জয়ের পরে বড়জোর এক ঘন্টা, তারপরেই আবার 'হালায় ফালতু'।

পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে অবশ্য দেখা যায়, বড় দলগুলোর বিপক্ষে আমাদের জয়ে প্রায় সবসময়ই প্রধান ভূমিকা বোলারদের। আজকের ওয়ানডে ক্রিকেটে পার স্কোর ২৮০-৩২০, যদিও ৩৫০ রান করা দলকেও সেই রান ডিফেন্ড করতে দৌড়ের ওপরে থাকতে হয়। ক্রিকেট 'অবুঝ'দের মতে, আসন্ন বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আমাদের অমিত সম্ভাবনার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হলো ইন্ডিয়ার 'দুর্বল' বোলিং লাইনআপ। যদিও মাত্র ২ দিন আগে এই 'দুর্বল' বোলিংই অস্ট্রেলিয়াকে ২০০ রান করতে দেয় নি, তবুও আমাদের তামিম-রহিমরা তাদেরকে হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দিবে - এই আশা অনেকের কাছেই শুধু আশা নয়, নিশ্চয়তা। বাস্তবে ধর্মঘটী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাদ দিলে বড় দলগুলোর বিপক্ষে আমরা কখনোই বিধবংসী ব্যাটিং করতে পারি নি, মোটামুটি ভালো ব্যাটিং করে জিতেছি অস্ট্রেলিয়ার সাথে আশারাফুল-বাশারের সেই ম্যাচ। গত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের জয়েও আমরা ভালো ব্যাটিং করেছি, সাথে বোলারদের নিপুণতায় ২৫২ রানের টার্গেটকেও ডিফেন্ড করা গেছে। এর বাইরে বড় দলের বিপক্ষে প্রত্যেকটা জয়েরই প্রায় একক কৃতিত্ব বোলার-ফিলডারদের। সাম্পর্তিককালে নিউজিল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ করা আর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়েও ব্যাটসম্যানদের পা কাঁপাকাপিকে পাত্তা না দিয়ে বোলারদের পারফর্ম্যান্সই প্রধান। তবুও হিরো? সেই তামিম-আশরাফুল-মুশফিকুর রহিমরাই, শফিউল-রুবেল-মাশরাফি-রাজ্জাকরা নয়।

সমস্যা হলো এতো হিরোর মর্যাদা পেয়েও আমাদের ব্যাটসম্যানদের অবস্থা দিনকে দিন অতি আদরে নষ্ট গোপালের মতোই হচ্ছে। বিশ্বকাপের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে টস জয় করেও দুর্বল ক্যানাডার বিপক্ষে আমরা প্রথমে বল করলাম, ১০০র মতো রানে তাদেরকে অলআউট করার পর আমাদের আলাল-দুলালদেরকে আর খুব বেশি সময় ক্রিজে কাটাতে হলো না, আর্লি ব্রেক পেয়ে সুইমিং পুলে ফিরে গেলেন। মুসা ইব্রাহীমের কনসালটেন্সি ছাড়াই ব্যাটসম্যানদের ওপরে দলের ম্যানেজমেন্টের আত্মবিশ্বাস এভারেস্টকে ছাড়িয়ে গেছে নিশ্চয়; তারা হয়তো ভেবেছেন উনাদের আর ব্যাটিং প্র্যাকটিস দরকার নেই, উনারা এমনতেই হিরো!

ঘর সামলাতে হিমশিম খাওয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবশ্য সেই আয়েশের সুযোগটা আর এলো না। বোলাররা একটা দীর্ঘ সময় ধরে পাকি ব্যাটসম্যানদেরকে চাপের মুখে রাখলেও ফিলডিং বদান্যতায় তারা ২৮৫ রান করে ফেললো। অবশ্য বদান্যতার হিসেবে শুধু ফিলডিং না, টীম ম্যানেজমেন্টের চমকের ক্রেডিটও কম না। মাঠে যেহেতু ১১ জনই খেলে সেহেতু ১৫ জনের বিশাল দলকে মেইনটেইন করা নিশ্চিতভাবেই তাদের মিতব্যয়ী চরিত্রের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইরত। কিন্তু বেয়াদব আইসিসি আবার ১৫ জনের কম রাখলে বরাদ্দ কেটে রাখবে। সুতরাং শাহরিয়ার নাফিস, নাজমুল, রকিব, রিয়াদের মতো অপ্রয়োজনীয়, অপদার্থকেও দলে টেনে বেড়াতে হয়। আইসিসির রক্তচক্ষুর ভয়ে এদেরকে দলে টানতে হলেও আসল খেলার সময় সুযোগ দেয়া - না দেয়ার ওপর খবরদারী করার এক্তিয়ার আইসিসির বাপেরও নেই। এজন্যই স্পেশলিস্ট বোলার নাজমুল হোসেন প্র্যাটিস ম্যাচে ৯ নম্বরে এসে ২ ওভার বল করার সুযোগ পান, ৫ ওভার বল করার পরে শফিউলকেও আর দরকার হয় না, সে ওভারগুলো পার্টটাইমার 'স্লো' বোলাররা প্রক্সি দেন।

আমাদের এত বদান্যতার পরেও ২৮৫ রান তাড়া করে জয় বা জয়ের কাছাকাছি যাওয়া আজকের দিনের ওয়ান ডেতে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। দিনের অপর ম্যাচগুলোর দিকে চোখ বুলালেই তা প্রমাণিত হবে। শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড দলগুলো তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ২৪৫ থেকে ২৮২ রান তাড়া করে জিতেছে। আমাদের ব্যাটিং হিরো লর্ডসের মাঠে নাম লেখানো তামিম গোল্ডেন ডাক মারেন। সোনার হাঁস জিনিসটা ক্রিকেটে খুব সুখকর কিছু না; কিন্তু পরের কয়েকটা ওভার মেরে খেলে জুনায়েদ তামিমের অভাব ভুলিয়ে দেন। সমস্যা হলো জুনায়েদটাইপ খেলোয়াড়ের অভাব আমাদের কখনোই ছিলো না এবং তাদের মধ্যে সফলতম হলেন মোহাম্মদ আল-শাহরিয়ার রোকন, যিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সে এখন নিজে না খেলে কোচ হিসেবে পোলাপাইনদেরকে খেলান। জুনায়েদও যথারীতি ৩০ এর ঘরে আউট। এরপরে শুরু হলো দুই কচ্ছপের দৌঁড় প্রতিযোগিতা। ইমরুল কায়েস অনেক রিজিড পেলেয়ার। আস্কিং রেটকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে সদ্য ক্রিকেট-মরহুম গুল্লু ভাইয়ের আদর্শের সৈনিক, জেমি সিডন্সের একনিষ্ঠ ছাত্র একইভাবে ব্যাটিং করে যাবেন, জানা কথা। সেই সাথে ক্ল্যাসিক মুশফিকুর রহিম মিলে ম্যাচটাকে 'জান দেবো, তবু রান নেবো না' বানিয়ে ফেললেন।

তবে এই ম্যাচের আলোচনায় তারা আর আসবেন না। কারণ, এরপরে যা হলো তা আরো মর্মান্তিক, আরো হৃদয়-বিদারক। সাকিব-আশরাফুল ব্যাট করতে এলেন এবং ফিরে গেলেন। রিয়াদ-নাঈমরা এলেন, চিরচেনা উইকেটকে আরো ভালো করে চিনলেন, পরবর্তী টেস্ট ম্যাচ কিভাবে ড্র করতে হবে তার প্রাকটিস করলেন, এরপর খুশিমনে সাজঘরে ফিরে গেলেন। স্পেশলিস্ট ব্যাটসম্যান রকিবুল ৯ নম্বরে নেমে ব্যাটেবলের মধুর স্পর্শ পেলেন, ছক্কা মারলেন। শাহরিয়ার নাফিসেরও প্র্যাকটিস হলো, তবে সেটা ব্যাটিংয়ের নয়, সামনে অপেক্ষমান বিশ্বকাপের দীর্ঘ সময় কিভাবে সাইডলাইনে বসে ধৈর্য্যের সাথে খেলা দেখতে হবে, তার।

প্র্যাকটিস ম্যাচের বর্ণনা শেষ। এবার আলোচনার বিষয়বস্তু আমরা এই দুই ম্যাচ থেকে কি শিখলাম। অন্যরা কি শিখেছেন, জানি না। তবে আমি শিখলাম বিশ্বকাপে আমাদের জন্য চমক অপেক্ষা করছে। এবং বিশ্বকাপের পরে ২ মাস পেইড ভ্যাকেশনসহ হেড-কোচ ব্যাটিং স্পেশলিস্ট জেমি সিডন্সের বেতনবৃদ্ধি আন্দোলনের এখনই সময়, নাহলে খুব বেশি দেরি হয়ে যেতে পারে।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দুঃখে চোখে অন্ধকার দেখতেছি! বলার কিছু নাই মন খারাপ

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও দুঃখে চোখে অন্ধকার দেখতেছি! বলার কিছু নাই মন খারাপ ।
-----------------------------

Sad Quote
Sad Poems

সাইদ এর ছবি

শাহরিয়ার নাফিসকে কেন ব্যাটিং করতে দিল না বুঝলাম না?? ওকে নাইবা নিত প্রথম একাদশে ,কিন্তু তাই বলে এই সুযোগটা কি ছাড়া ঠিক হল...বুঝিনা কেন

স্বপ্নহারা এর ছবি

প্রত্যেকটা কথায় সহমত!

ভালৈছে, বাংলাদেশ টিম যে পুরাই ফাউল বুঝা গেছে। এক্সপেক্টেশন ৯৯ বিশ্বকাপের মত রাখতে হবে, যদি কিছু হয় তাইলে প্লাস...

ফালতু দুইটা টিমরে নিজের পাড়ায় হারাইয়া বড় বড় কথা কয়! ৯ জন বোলার ব্যবহার! আমরা তিন বাঁহাতি স্পিনারের সাক্সেসফুল টিম!--ওইসব ফুটানি ফুইটা যাইবো! বিশ্বকাপ কোন পাড়ার টুর্নামেন্ট না, সবাই প্রিপেয়ার হইয়াই আসে...ছাগলের পাল রে বাঘ ডাকার কোন মানে নাই!

সত্যি কথা বলতে, নাফিসকে আমি বলব, ধংস করে দেয়া হচ্ছে! বেচারার দুর্ভাগ্য, অল্প বয়সে ক্যাপ্টেন হইছিল...ম্যাটেরিয়াল ছিল, সেকারণে আশ্রাফুল থেকে সাকিব ওরে শত্রু ভাবে। ওরে কোনভাবেই নামাবে না...
জুনায়েদ-তামিম-রোকন-আশরাফুল একই ধরণের প্লেয়ার...সবার ভাব, "আমি এমনেই খেলি"; পুরা টিমের কথা..."আমরা এমনই!" সবকিছু কেমন যেন ফাটকা খেলার মত, সবকিছুই লটারী-উদ্দেশ্যবিহীন-যদি লাইগা যায় টাইপ! অন্যদিকে, টিম নিয়ে সিডন্সের চ্যাপেলপনা ভাল ঠেকতেছে না!

আমি আসলেই জানিনা বাংলাদেশের আদৌ কোন প্ল্যান আছে কিনা?! অন্য সব টিম, বিপক্ষের প্রতিটা প্লেয়ারকে নিয়া প্ল্যান থাকে! সেই প্ল্যান যদি হয়, তিন বাঁহাতি স্পিনার দিয়ে স্পিনের বিশ্বসেরা-বাঁহাতি তে ভরা ভারত টিমকে হারানো...থুক্কু, মনে হয় খেলা না দেখাই ভাল হবে!

আমি কখনো মনে করি না, পাড়ার টিমের বিপক্ষেও বাংলাদেশ টিম ৩০০ এর কাছাকাছি স্কোর করতে পারবে...তাড়া করা ত দূরের কথা! যে দুয়েকবার করেছে, কপাল গুণে...দুইজন বিগ ইনিংস না খেললে স্বপ্নেও হবে না...যে টিমের প্লেয়ারদের লক্ষ্য হয় "২০ বলে ৫০ করুম নাইলে ৭০ বলে ২০ করে পরে পুষাইয়া দিমু", তাদের নিয়ে বিন্দুমাত্র আশা না করাই উচিত...

আমি বলব, ম্যাচ জেতায় বোলাররা...এই টিমে তারা সতীনের পোলা, বিশেষত পেসাররা!...এতটা অবহেলা মনে হয় না তাদের প্রাপ্য!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

এবং বিশ্বকাপের পরে ২ মাস পেইড ভ্যাকেশনসহ হেড-কোচ ব্যাটিং স্পেশলিস্ট জেমি সিডন্সের বেতনবৃদ্ধি আন্দোলনের এখনই সময়, নাহলে খুব বেশি দেরি হয়ে যেতে পারে।

ক্যান যে কিরিকেট কোচ হইলাম না মন খারাপ

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

হাসিব এর ছবি

আন্তর্জাতিক কোন টিমের সাথে খেলা থাকলে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটা লক্ষ্য থাকে কোনভাবে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রশংসাসূচক কোন কথা আদায় করা। পোস্ট ম্যাচ, প্রি ম্যাচ কোন সংবাদ সম্মেলনে যাবার অভিজ্ঞতা কয়েকবার হয়েছে। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন "হাউ হ্যাভ ইউ ওয়াচেড বাংলাদেশ? ডু দে হ্যাভ এ্যানি প্রগ্রেস?"× উত্তরে অতিথিরা দুই একটা সান্তনাবোধক প্রশংসা করলেও সেইটাই পরদিন পত্রিকায় হেডিং হয়। সাথে স্বমেহনী গদ গদ নিউজ(?)। খেলার নিউজ পড়েন এরকম যেকেউ গত কয়েকদিনের নিউজ পড়লেই একথার সত্যতা বুঝবেন। কোন টিম বাংলাদেশকে ভয়ংকর ভাবছে, কোন টিম বাংলাদেশকে কী কী ভালো বলছে সেগুলো হেডিং করে নিউজ। কোন নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ কখনো না করার ফলে আশার গাড়ি সবসময়ই আকাশে উড়িয়ে বসে থাকে জনগণ।

× এই বিকট ইংলিশে প্রশ্ন একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বললাম হাসি

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

'নিরপেক্ষতা' এবং 'বিশ্লেষণ' পাঠকপ্রিয় করা অনেক কঠিন কাজ। তার তুলনায় আনিসুল হকের 'বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপ জিতবে' সহজপাচ্য।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

টেস্ট

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

মূল শক্তি অবশ্যই বোলিং।

...... ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ক্লিক না করলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলগুলোও ঝামেলায় ফেলতে পারে। প্রস্তুতি ম্যাচ এই বার্তাই দিলো। ব্যাটসম্যানেদের - বিশেষ করে মিডল অর্ডার- সময় আসছে নিয়মিত হবার।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস অতো দুর্বল দল না। তবে আমাদের মাঠে তাদের সাথে অনায়াসেই জিতবো আশাকরি। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রেশনুভা এর ছবি

লেখা ভালো লাগলো না। যেমন লাগেনি আজ বাংলাদেশের খেলা।
একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খারাপ খেললেই সব শেষ হয়ে যায় না।

Pial এর ছবি

চলুক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

লেখা ভালো না লাগায় সরি।

আমার ফোকাস এক ম্যাচ হারা-জেতায় না, কিভাবে হারলো সেই প্রোসেসে। এই প্রোসেসের সমস্যা জেতা ম্যাচেও থাকে। ম্যাচ জয়ের আনন্দে তখন সেগুলোকে টীম পাত্তা দেয় না। যেমন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাওয়াশের ফলে সেই সিরিজে আমাদের ব্যাটিংয়ের সমস্যা নিয়ে কোথাও আলোচনা দেখেছি বলে মনে পড়ে না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

বাবুবাংলা এর ছবি

বিশ্বকাপ আমাদের এক অভিযান, হৃদয়ের রক্তপাত কিছু তো হবেই।
তবুও সাথে আছি।

জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

দ্রোহী এর ছবি

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাছ থেকে দুয়েকটা ঝড়ে বক ছাড়া নিয়মিত ভিত্তিতে কখনোই বড় কিছু আশা করি না। সুতারাং, আক্ষেপের পরিমাণ ও কম।

বাংলাদেশ দল খারাপ খেললে দুয়েকটা কড়া মাপের গালি দিয়ে ঘুমাতে চলে যাই। পর পর কয়েকদিন খারাপ খেললে মাস কয়েক খেলা দেখা বাদ দিয়ে বসে থাকি। মাঝে মাঝে ক্রিকইনফোতে আপডেট চেক করি। তারপর যখন ঝড়ে বক মরে হঠাৎ জয়ের মুখ দেখি তখন আবার নির্লজ্জের মত ফের শুরু করি খেলা দেখতে।

এই লুপ থেকে কোন মুক্তি নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

পোস্টের মূল বক্তব্যের সাথে সহমত- বাংলাদেশের মূল শক্তি বোলিং। অন্তত এখন পর্যন্ত এমন কিছু ঘটেনি যাতে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়া যায়।

তবে কিছু কিছু জায়গায় বক্তব্য খানিকটা অসংলগ্ন ও অপূর্ণাঙ্গ মনে হলো, অনেকটা বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের মতোই। মন খারাপ

সুতরাং শাহরিয়ার নাফিস, নাজমুল, রকিব, রিয়াদের মতো অপ্রয়োজনীয়, অপদার্থকেও দলে টেনে বেড়াতে হয়।

শাহরিয়ার নাফিস এবং রকিব অপ্রয়োজনীয় বা অপদার্থ কোনোটাই নয়। স্ট্রাইক রেট এবং রান গড় বিবেচনায় তামিম-সাকিবের পরই এ দুজনের অবস্থান। পাকিস্তানের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচে নাফিস কেন মাঠের বাইরে থাকল এবং রকিব নামল নয় নম্বরে- এই প্রশ্ন উঠতেই পারে, ওঠা উচিতও।

ইমরুল কায়েস অনেক রিজিড পেলেয়ার। আস্কিং রেটকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে সদ্য ক্রিকেট-মরহুম গুল্লু ভাইয়ের আদর্শের সৈনিক, জেমি সিডন্সের একনিষ্ঠ ছাত্র একইভাবে ব্যাটিং করে যাবেন, জানা কথা।

ইমরুল হয়তো বাংলাদেশের 'গাভাস্কার' হতে পারবেন, তবে 'টেন্ডুলকার' যে হতে পারবেন না এটা নিশ্চয় করেই বলা যায়। মারকাটারি ব্যাটিং তার কাছ থেকে আশা করা যায় না, সেটা তার কাজও নয়। তার কাজ ক্রিজের এক প্রান্ত আগলে রাখা, তামিম-জুনায়েদ-আশ্রাফুল-সাকিব এরা তো রয়েছেনই মারার জন্য।

সেই সাথে ক্ল্যাসিক মুশফিকুর রহিম মিলে ম্যাচটাকে 'জান দেবো, তবু রান নেবো না' বানিয়ে ফেললেন।

মাখনযুক্ত পিচ্ছিল গ্লাভসের কারণে এমনিতেই মুশফিকুরের খ্যাতি রয়েছে, লোয়ার মিডল অর্ডারে তার ব্যাটিং কিছুটা কার্যকরও হয়তো- কিন্তু ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হিসেবে তাকে ট্রিট করাটা কতখানি যুক্তিযুক্ত? ক্রিজে নামার পর তার প্রথম দায়িত্ব কিছু বল চিবানো, এই ম্যাচেও সে যথারীতি নিষ্ঠার সাথেই সেই কাজটি করছিল (তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাওয়ায় সেই কাজটিও ঠিকমতো করতে পারেনি, আহা বেচারা)। কাজেই দোষ যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা আর যারই হোক, অন্তত মুশফিকুরের নয়, নাকি বলেন?

কুটুমবাড়ি

Jonoiko এর ছবি

ভাই আপনি মনে হয় একটু ভুল বুঝে নিয়ে কমেনট করলেন । আমার মনে হল লেখক এই অংশ গুলো ব্যঙগ করে লিখেএছন । আমার তাই মনে হল ।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জনৈক ঠিক ধরেছেন। হাসি

ইমরুলের আসলে সামর্থ্য আছে রানের গতি বাড়ানোর; কিন্তু ম্যানেজমেন্টের ওই একপ্রান্ত আগলে রাখা নীতিকে সুবোধ ছাত্রের মতো ফলো করতে গিয়ে (ফলো না করলে টীম থেকে আউট) সে কোনো রিস্কে যায় না। ফলে অন্য প্রান্তে তামিম ক্লিক না করলে ম্যাচ ওখানেই খতম। বর্তমান পাওয়ার প্লের ওডিআইতে একপ্রান্তে গুল্লুটাইপ কাউকে খেলানো মানে অন্যপ্রান্তের ওপর চাপ বাড়ানো এবং বিপক্ষের কাজটা সহজ করে দেয়া। তামিমকে ১ রান দিয়ে ননস্ট্রাইকে পাঠিয়ে বাকি ৫ বল ডট।

মুশফিক ব্যাটসম্যান হিসেবে ওভাররেটেড। ২৮৫ রান করে জিততে গেলে সবসময়ই রানের চাকা সচল রাখতে হয়। কায়েসের সাথে তার কম্বিনেশনে এই কাজটা সম্ভব না। তামিম থাকলে হয়তো সে সেট হওয়ার জন্য কিছুটা সময় পেতো। সে ৪ নম্বরে খেলা সমস্যা না, সমস্যা কম্বিনেশনে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

গুল্লুটাইপ কে নয়? ইমরুলের স্ট্রাইক রেট তাও মুশফিকের চেয়ে বেশি, জুনায়েদের চেয়ে সামান্য কম। আসলে আমাদের ব্যাটিং অর্ডারের অবস্থা হলো গরিবের কাঁথার মতো- মাথা ঢাকতে গেলে পা বেরিয়ে যায়, পা ঢাকতে গেলে মাথা। ইয়ে, মানে...

মুশফিক ব্যাটসম্যান হিসেবে ওভাররেটেড।

বলছেন? তার পরেও তাকে ৪ নম্বরে খেলাতে হবে! অ্যাঁ বিশ্বকাপের আগে এই ম্যাচটাই ছিল শেষ সুযোগ, এইসব ফালতু পরীক্ষা-নিরীক্ষা আরও আগে বা বিশ্বকাপের পরে করলেই ভালো হতো না?

কুটুমবাড়ি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি চিরকাল ধরেই বাংলাদেশের বোলারদের বেশি ক্রেডিট দেই খেলায় ভালো ফলাফলের জন্য। বৈমাত্রেয় সন্তানগুলাই আমাদের আনন্দের উৎস দিয়ে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। ব্যাটিং-এর বরাতে বড় মাপের আনন্দ খুব সহসা পেয়েছি বলে মনে পড়ে না।

আমি মনে করি প্রস্তুতি ম্যাচের এই ফলাফলই ঠিক ছিলো। খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সমর্থক... সবাই অনেকটাই "টেকেন ফর গ্র্যান্টেড" হিসাবেই নিয়েছেন যে আমরা বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দলকে প্রথম খেলায় হারাচ্ছি। জায়ান্ট-কিলিং এর আশা রাখা ভালো, দলকে সমর্থন দেওয়া ভালো, কিন্তু তাই বলে প্রস্তুতিতে ঢিল দিয়ে ফেলা ভালো না। এই ধারণা ক্রমেই বদ্ধমূল হচ্ছিলো যে তামিম-সাকিব-আশরাফুলরা প্রতি ম্যাচেই ভালো খেলবে, স্কুপ শট খেলে ম্যাচ জিতাবে। এই আত্মপ্রসাদের বর্মে চিড় ধরাটা খুব জরুরী ছিলো। এই ধরণের ফলাফল বিশ্বকাপের খেলায় হলে আমাদের ঘাটতিগুলো অনেক দেরিতে চোখে পড়তো। ভালো হয়েছে এই ভাবে হেরে। এতে করে যদি প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার উন্নতি হয়।

আরেকটা ব্যাপার হলো, যাদের পা মাটিতে নেমে আসা প্রয়োজন ছিলো, ঠিক তারাই খারাপ করেছে ব্যাট হাতে। তামিম, সাকিব, আশরাফুল, মুশফিক... এদের প্রত্যেকের সমস্যা অতি-আত্মবিশ্বাস। প্রতিভাবান ত্রয়ী (তামিম-সাকিব-আশরাফুল) এর বাইরে মাঝারি সামর্থ্যের ব্যাটসম্যানদের জন্য রানের মধ্যে থাকা প্রয়োজন বেশি। সেই দিক থেকে দেখলে জুনায়েদ-ইমরুল-রকিবুলরা খুচরা কিছু ইনিংস খেলতে পারাও ভালো প্র্যাকটিস।

আরেকটা "তামিম ধোলাই" দেখলেই বরং আমি ভয় পেতাম বেশি। সেই তুলনায় এই ফলাফল অনেক ভালো। টিম ম্যানেজমেন্ট, বিশেষ করে নাফিসকে নিয়ে যা করা হচ্ছে, তা নিয়ে মন্তব্যের কিছু নাই। এটাই বাংলাদেশ। যত বড়ই হই, আর যত উপরেই উঠি, কিছু ভিলেইজ্যা পলিটিক্স বাঙালির চিরকালই থাকবে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

তামিমের ডাক মারা বড়ো কোনো সমস্যা না। একজন খেলোয়াড়ের ব্যাড ডে আসতেই পারে। তাছাড়া জুনায়েদের স্টার্ট তামিমের আউটকে প্রায় পুষিয়ে দিয়েছিলো। জুনায়েদ যথারীতি কনটিনিউ করতে পারে নাই এবং এরপরের ব্যাটিংয়ে কোনো পরিকল্পনার ছাপই ছিলো না।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আজকের ম্যাচের চেয়ে ভালো করবে। তবে এই ম্যাচ থেকে দল কিছু শিখবে না। ক্রিকেট একটা প্রোসেস, হঠাৎ করে এক ম্যাচ থেকে কিছু শেখা কঠিন আর আমরা শিক্ষার জন্য উন্মুখও না। সবকিছু সবসময়ই অন্যের দোষ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

এখানে সব বোলারকে টেস্ট করা হইছে, ব্যাটসম্যানরা ক্লিক করে নাই। কিন্তু এটাই যে আমাদের এই মুহুর্তের সেরা দল তাতে সন্দেহ নাই, তাদের সামর্থ্য কতটুকু তাও আমরা জানি। আমরা স্বপ্ন দেখি। কিন্তু কেউ যদি মনে-প্রাণে সেই স্বপ্ন বিশ্বাস করে আর পরে আঘাত পায়, তাইলে তারই ভুল।

----------------------------
মৌন কথক

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
পুরোপুরি একমত, এখন ল অব প্রোব্যাবিলিটি অনুসারে ভারতের সাথে ম্যাচে সাকিব-তামিমদের ভালো খেলার কথা। দেঁতো হাসি

টিম ম্যানেজমেন্ট, বিশেষ করে নাফিসকে নিয়ে যা করা হচ্ছে, তা নিয়ে মন্তব্যের কিছু নাই। এটাই বাংলাদেশ। যত বড়ই হই, আর যত উপরেই উঠি, কিছু ভিলেইজ্যা পলিটিক্স বাঙালির চিরকালই থাকবে।

প্রাক্টিস ম্যাচ বলে এতে চৌদ্দ জন খেলোয়ারকে খেলানোর সুযোগ ছিল, তাই খেলানো হয়েছে। আশরাফুল খারাপ করায় রকিবুলরে টেস্ট করেছে মনে হয়। আর নাফীস টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, ১ম তিনটা পজিশনে তামিম, ইমরুল, জুনায়েদরা বেশ ধারাবাহিক, নাফীস এর ইন করা একটু মুশকিল-ই। এটাই বাস্তবতা।

-----------------------
মৌন কথক

অতিথি লেখক এর ছবি

জবাব দিলাম ইশতিয়াক রউফ ভাইএর কমেন্টে, এইখানে আসলো কেম্নে? চিন্তিত

-----------------------------
মৌন কথক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ক্রিকইনফো অনুসারে ১৫ জনকেই খেলানোর সুযোগ ছিলো।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সনাতন পাঠক এর ছবি

বেশ কিছুদিন ধরে আপনার ক্রিকেট বিষয়ে মন্তব্য লক্ষ্য করছি।

আপনি ক্রিকেটের সবকিছু এত বেশী বোঝেন যে আপনাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বময় কর্তৃত্ব দিলে আমাদের ক্রিকেট খুব দ্রুত উন্নতি লাভ করবে বলে মনে হতে থাকে। একটা উদাহরন দেই। দুনিয়ার বাঘা-বাঘা ক্রিকেটবোদ্ধা যখন তামিমের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা শুরু করেন, তখনো আপনার মন্তব্যে উল্লেখ থাকতো, তামিম কোনো ব্যাটসম্যান হল! আপনার তামিম বিদ্বেষ এখনো যায় নি। আজো সুযোগ পেয়ে খোঁচা মারলেন। যেন লর্ডসে সেঞ্চুরি করলে শূন্য রানে আউট হওয়া যাবে না। লর্ডসে সেঞ্চুরি করা কোনো ভাল ব্যাটসম্যান পরে কখনও শূন্য রানে আউট হয় না।

শুধু তামিমের কথা কেন, আপনি প্রত্যেক ক্রিকেটার, কোচ, নির্বাচকদের নাড়িনক্ষত্র এত ভাল করে জানেন যে বলতে ইচ্ছে করছে, ক্রিকেটে আপনাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আপনাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বময় কর্তৃত্ব দিলে আমাদের ক্রিকেট খুব দ্রুত উন্নতি লাভ করবে বলে মনে হতে থাকে।

একেবারে ঠিক ধরেছেন। বিসিবিতে কোনো পোস্ট খালি হইলে খবর দিয়েন, আপনার প্রশংসাপত্র কাজে লাগবে।

তামিমের ব্যাপারটা "তামিম কোনো ব্যাটসম্যান হল!" না, তার সমস্যা সামর্থ্য অনুসারে না খেলা এবং দলের প্রয়োজন নিয়ে মাথা না ঘামানো। ডাক মারা কোনো সমস্যা না, আউটের কারণ এবং ধরনে সমস্যা। নিজস্ব ল্যান্ডমার্কে পৌঁছেই সে উইকেট থ্রো করে দেয়। অথচ তার সামর্থ্য আছে দলকে জেতানোর (যেমন, জিম্বাবুয়ের ৩১৩ রান চেইজ), সে সেটা নিয়মিতভাবে করুক, এটা চাই বলেই দুনিয়ার বাঘা-ছাগোল ক্রিকেট বোদ্ধার ট্যাবলেট গিলে বসে থাকি না।

এটা কোনো খেলোয়াড়ের প্রতি বিদ্বেষ না; বরং একটা ফিফটি মেরে উইকেট থ্রো করে আসার পরে যারা তার পিঠ চাপড়ে দেয়, তাদের চেয়ে আমি অনেক বেশি শুভাকাঙ্ক্ষী।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অদ্রোহ এর ছবি

এখন যেটা সবচেয়ে জরুরি সেটা হল ম্যাচ বাই ম্যাচ অ্যানালাইসিস করে সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নেওয়া। ভারতের সাথে তিন বাঁহাতি স্পিনার নিয়ে খেলাটা কতটুকু আত্মঘাতী সেটা নিশ্চয় আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সমস্যা একটাই, উপযুক্ত বিকল্পের অভাব। কালকে নাজমুল আর নাইমকে ওভাবে বাজিয়ে না দেখানোয় তিন বাঁহাতি স্পিনার খেলানোর সন্দেহটা আরো বদ্ধমূল হল। তবে কালকের ম্যাচ নিয়ে আমার খেদ আছে, কিন্তু এখনি দলের পিণ্ডি না চটকিয়ে আরেকটু অপেক্ষা করাই যায়। কাওল্কের দুই সেঞ্চুরিয়ান মিসবাহ-শেহজাদ কিন্তু নিউজিল্যান্ডেও ভাল ফর্মে ছিল। কাজেই এই উইকেটে তারা রানের তুবড়ি ছোটাবে সেটা আমি আগেই ভেবেছিলাম। উলটো ভয় হচ্ছিল, আফ্রিদি-উমর আকমলরা আবার শেষের পাওয়ারপ্লেতে ঝড় তোলে কিনা। সেটা হয়নি যা হোক, কিন্তু সব কিছুর পরে দেখা গেল, ব্যাটিং এ আসলে কেউ বাহবা পাওয়ার মত খেলেননি। কেউ গোড়াতেই আউট হয়েছে আর কেউ সেট হয়েও উইকেট দিয়ে এসেছে (খেলা দেখিন বলে উইকেট দিয়েছে না আউট হয়েছে সেটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছিনা) । আর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এসব গিনিপিগের খেলা ঠিক পছন্দ হচ্ছেনা। দেখা যাক, সামনে কি হয়...

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গতকাল বোলিং খুব একটা খারাপ হয়নি। রুবেলের কন্ট্রোল ভালো ছিলো না। এছাড়া মূল বোলাররা সবাই ভালো বল করেছে। বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে বোলাররা ভুগেছে সবচেয়ে বেশি। ব্যাটিং ছিলো পুরো পরিকল্পনাহীন। ভারতের বিপক্ষে সম্ভবত আপনার সাজেস্টেড ৩ পেসার স্ট্রাটেজিই ভালো হবে, তবে পিচ অনুসারে আমাদের স্পিনাররাও ভালো বল করার কথা।

দলের পিন্ডি চটকানো কখনোই ভালো না। কিন্তু সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে। এবং সেটা রিয়েলটাইমে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

গতকালকের ব্যাটিং তড়িকা অব্যহত রাখলে পরিস্থিতি ২০০৩ হওয়া বিচিত্র কিছু না।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

মেইন দুশ্চিন্তা ৪ নং পজিশন নিয়া। এই পজিশন নিয়া গত এক দেড় বছর নানান পরীক্ষানিরীক্ষা করেও থিতু হতে পারেনাই বাংলাদেশ। এটার একটা ফল ভোগ করতেই হবে দলকে। রকিবুলের উপর আরেকটু আস্থা রাখা উচিত ছিলো।

তবে, বস্, বাংলাদেশের বোলাররা অতটা সেলিব্রেটেড না হবার কারণ মনে হয় কন্সিস্টেন্সীর অভাব। দেখেন মাশরাফি, রাজ্জাক আর সাকিব কিন্তু ঠিকই সেলিব্রেটেড বোলার। রফিকও তাউড়া বাড়ির জন্য হাততালি পাইলেও, টেস্টে রেগুলার উইকেট পাওয়াটাই তাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিশেষ স্থান দিছে।
আমার মতে আমাদের বোলিং সাইডের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হইলো বাংলাদেশ দলে এখনও অমন বোলার নাই যাকে প্রতিপক্ষের (বড় দলগুলা) ব্যাটসম্যানরা সমীহ করবে, যেটা আমরা টের পাই টেস্ট খেলতে গেলে। আমাদের ২০ উইকেট নেওয়ার মতো বোলিংশক্তি নাই (সাকিবকে কিছুটা সমীহ করে হয়তো)।

আসল পরিসংখ্যানটা কি জানিনা, তবে আমার একটা ইম্প্রেশন হইলো, বড় দলগুলার সাথে বাংলাদেশ রান চেজ করে বেশী ম্যাচ জেতে। আমি ব্যাটসম্যানদের ক্রেডিট দিতে চাই। দেখেন, সাকিব-তামিম-ইমরুলদের আগের জেনারেশন ছিলো আশরাফুল-আফতাব-নাফিস-সুমনদের জেনারেশন। আমরা প্রায়ই দেখতাম ৩০ থেকে ৫০ রানের মধ্যে বাংলাদেশের ৫/৬টা উইকেট পড়ে গেছে। এখন সেই ঘটনাটা বেশ বিরল হয়ে উঠছে। আমি তামিম-ইমরুল-জুনায়েদদের এই ক্রেডিটটা দেবোই। চার নম্বর পজিশনটা মোটামুটি রেগুলার ভালো খেললে (চার নাম্বারে আমার মতে ৬০-৭০ পার্সেন্ট ইনিংসে ৩০ এর বেশী রান করতে পারবে এমন একজন বেশী দরকার) আমাদের ব্যাটিং নিয়া চিন্তিত হতে হতোনা।

আমার মতে, কালকের খেলায় মূল দুর্ঘটনা হইছে সাকিবের আউট হওয়াটা। আমাদের একটা বড় পার্টনারশীপ দরকার ছিলো, যেটা মূলত সাকিবই লিড দেয় অধিকাংশ ম্যাচে। ইমরুলকে নিয়ে সাকিব একটা ভালো পার্টনারশীপ (ধরেন ১২৫ রান ২০--২৫ ওভারে) খেললে ম্যাচ আমাদের হয়ে যেত। ওদের কিন্তু এই ক্ষমতাটা ছিলো, পাকিস্তান তাদের বেস্ট বোলিং ব্যবহার করেনাই। সাকিবের আউটটাই মূল দুর্ঘটনা।

যাই হোক অত চিন্তিত না। ভারতের সাথে এবার জিতবেনা। দে আর জাস্ট ফ্লাইং ঠু হাই। আমরা বরং ইংল্যান্ড বা উইন্ডিজরে টার্গেট করি। আর আয়ার/নেদারের সাথে এ্যালার্ট থাকি। বাকীটা ফী আমানিল্লাহ। চোখ টিপি

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার একটা ইম্প্রেশন হইলো, বড় দলগুলার সাথে বাংলাদেশ রান চেজ করে বেশী ম্যাচ জেতে। আমি ব্যাটসম্যানদের ক্রেডিট দিতে চাই।

এই ইম্প্রেশনটাই সাধারণত বেশি লোকের। ব্যাটসম্যানদের অবশ‌্যই ভূমিকা আছে। কিন্তু তুলনামূলক বিচারের ম্যাচ জয়ে বোলারদের অবদান বেশি। জিএইটের বিপক্ষের জয়গুলোর প্রায় অর্ধেকে একক কৃতিত্ব বোলারদের, ব্যাটিং-বোলিং ফিফটি-ফিফটি ২৫% ম্যাচে, ১০% এ (ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ম্যাচ) বোলিং-ব্যাটিং ৬০-৪০ আর ১৫% এ বোলিং-ব্যাটিং ৭০-৩০।

বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের জয়সমূহ:

আগে ব্যাট করে -
১। ১৯৯৯ পাকিস্তান: বাংলাদেশ ২২৩/৯ (কোন ফিফটি নেই), পাকিস্তান অলআউট ১৬১, সুজন ৩/৩১ ম্যান অফ দ্য ম্যাচ

২। ২০০৭ সাউথ আফ্রিকা: বাংলাদেশ ২৫১/৮ (আশরাফুল ৮৭ ম্যান অফ দ্য ম্যাচ), আফ্রিকা ১৮৪ অলআউট, রফিক ১০ ওভারে ২২ রান, রাজ্জাক ৯.৪ ওভারে ২৫ রান।

৩। ২০১০ ইংল্যান্ড: বাংলাদেশ ২৩৬/৭ (কায়েস ৭৬), ইংল্যান্ড অলআউট ২৩১, প্রত্যেক বোলারই ২টা করে উইকেট, মাশরাফি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ

৪। ২০১০ নিউজিল্যান্ড: বাংলাদেশ ২২৮/১০ (সাকিব ৫৮), নিউজিল্যান্ড ২০০/৮, সাকিব ৪ উইকেট, নাইম ২ উইকেট, রাজ্জাক ইকোনোমিক্যাল। সাকিব ম্যান অফ দ্য ম্যাচ

৫। ২০১০ নিউজিল্যান্ড: বাংলাদেশ ২৪১ (সাকিব সেঞ্চুরি), নিউজিল্যান্ড ২৩২, সাকিব ৩ উইকেট, শফিউল ২ উইকেট। সাকিব ম্যান অফ দ্য ম্যাচ

৬। ২০০৪ ইন্ডিয়া: বাংলাদেশ ২২৯/৯ (আফতাব ৬৭), ভারত ২১৪ অলআউট, মাশরাফি (ম্যান অফ দ্য ম্যাচ), তাপস, সুজন রফিক প্রত্যেকে ২ উইকেট

৭। ২০০৬ শ্রীলংকা: লংকা ২১২ অলআউট (নাজমুল বাদে বাকি সবাই ভালো বোলিং), বাংলাদেশ ৪৭ ওভারে ২১৩, আশরাফুল ৫১, ম্যান অফ দ্য ম্যাচ আফতাব ২১ বলে ৩২ রান ও ৬ ওভারে ২৪ রানে ১ উইকেট

৮। ২০০৫ অস্ট্রেলিয়া: বোলাররা ২৪৯ এ বেঁধে রাখার পরে আশরাফুল-বাশারের পার্টনারশীপ, আফতাবের কুইক রান

৯। ২০০৭ ইন্ডিয়া: ইন্ডিয়া ১৯১ অলআউট (ম্যান অফ দ্য ম্যাচ মাশরাফি ৪ উইকেট, রাজ্জাক, রফিক ৩ উইকেট করে, রাসেল ও সাকিব উইকেট না পেলেও মিতব্যয়ী বোলিং), বাংলাদেশ ৪৮.৩ ওভারে ১৯২ (তামিম, রহিম ও সাকিব ফিফটি)

১০। ২০০৯ শ্রীলংকা: তারা ১৪৭ রানে অলআউট (রুবেল ডেব্যু ম্যাচে ৪ উইকেট, মাশরাফি ৩ উইকেট), বাংলাদেশ ২৪ ওভারে ১৫১ (ম্যান অফ দ্য ম্যাচ সাকিব ৬৯ বলে ৯২)

১১। ২০১০ নিউজিল্যান্ড ১৭৩ রানে অলআউট, বাংলাদেশ ৪০ ওভারে ১৭৭/৩ (কায়েস ৫০, নাফিস ৭৩), শুভ ৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ

উপরের পরিসংখ্যানে প্রত্যেকটা ম্যাচেই বোলাররা ভালো করেছে। ২ এবং ৫ এ ব্যাটসম্যানরা পার স্কোরের কাছাকাছি রান করেছে, ৮ এর রান চেজটা সুপার্ব ছিলো। ১, ৩, ৪, ৬, ৭ এ বিলো পার রান করার পরেও বোলাররা ম্যাচ জিতিয়েছে। ৯, ১০, ১১ গুড চেজিং; কিন্তু প্রত্যেকটাই ২০০র নিচে টার্গেট, অর্থাৎ বোলাররা আসল কাজটা আগেই করে দিয়েছে। এর মধ্যে ৯ নম্বরটা আন্ডার প্রেসার, ১০ এবং ১১ ইজি ভিক্টরী।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

যা হবার হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পরবর্তী খেলাগুলোয় ভালো করুক; সেই আশা রইল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।