আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায়োরিটি লিস্ট ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার শেষ, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কাজ শুরুর নমুনা হিসেবে ২/৩ জন আল-বদরকে হাজতে পুরে বিচার প্রক্রিয়াকে কচ্ছপের পিঠে তুলে দেয়া হয়েছে, আর মহা সমারোহে পরিবর্তন এসেছে সংবিধানে। ৭২ এর সংবিধানে ফেরত যাওয়া নিয়ে মাঠ গরম করলেও আওয়ামী লীগের প্রায়োরিটি লিস্টে তত্ত্ব সরকার বাতিলই সম্ভবত এক নাম্বারে ছিলো। বাংলাদেশে আইওয়াশ নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় পোক্ত হয়ে থাকার নজির সামরিক সরকারগুলো দেখিয়েছে, খালেদা আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন, আওয়ামী লীগ সামনের নির্বাচনে কাজটি করে সামরিক সরকারদের কৃতিত্বে ভাগ বসাতে পারবে কিনা, সময়ই তা বলে দিবে। আমার মতে, প্রায়োরিটি লিস্টে ৭২ এর সংবিধানের যে জিনিসটি সর্মপ্রথমে ফিরিয়ে আনার দরকার ছিলো, তা হলো ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
৭২ এর সংবিধানে ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে ছিলো:
"জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সঙঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সঙ্ঘ কিংবা অনুরূপ উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক অন্য কোনো সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্য কোনো প্রকারে তাহার তৎপরতায় অংশ গ্রহণ করিবার অধিকার কোন ব্যক্তির থাকিবে না।"
স্বাধীনতাযুদ্ধের অভিজ্ঞতাই সংবিধানে স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে সংগঠন করার অধিকারকে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বীকার করে নাই। সেই অভিজ্ঞতা ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানের অভিজ্ঞতা, ৪/৫ লাখ মা-বোনের নৃশংসভাবে ধর্ষিত হওয়ার অভিজ্ঞতা। স্বাধীনতাযুদ্ধের বিপরীতে শত্রুপক্ষের প্রোপাগান্ডা মেশিনে যে শ্লোগানটি সবচেয়ে বেশি ধ্বনিত হয়েছে, তাহলো বাঙালিকে 'সাচ্চা মুসলমান' বানানোর উদ্দেশ্যেই তাদের এ অভিযান। হিন্দুরাষ্ট্রের উষ্কানিতে ইসলামী পাকিস্তানকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করা দুষ্কৃতকারীদের খতম ও হিন্দুত্ব থেকে পুরোপুরি মুসলমান না হয়ে উঠতে পারা বাঙালিকে ধর্ষণের মাধ্যমে পাঠান সাচ্চা পাকিস্তানী পয়দা করাই তাদের মিশন। স্পষ্টতই তাদের মিশনে ইসলাম ছিলো না, মানবতা ছিলো না, ছিলো ধর্মের নামে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অত্যাচার। এ জ্বলজ্বলে অভিজ্ঞতাই ধারন করেছে ৭২ এর সংবিধানের ৩৮ নং অনুচ্ছেদ।
আমাদের রক্তে পাওয়া সংবিধানকে এরপর কমবেশি ধর্ষণ করেছেন আমাদের প্রত্যেক শাসকই। এই ধর্ষণের প্রেক্ষিতেই আজ স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হতে হলে আমাদেরকে ধর্মের নামে রাজনীতি করতে দেয়ার ছাড়পত্রধারী সংবিধানের প্রতি আস্থা আনতে হয়! মূলত যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার খায়েশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে জনগণ যে সরকারকে ক্ষমতায় পাঠিয়েছে, তাদের একটা সুযোগ ছিলো জাতিকে সেই কলঙ্ক থেকে মুক্তি দেয়ার। সেই মুক্তিটা দেয়া হয় নি। কারণ, এতে আমাদের কলঙ্কমুক্তির পাশাপাশি স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করা মানুষদের প্রতি সুবিচার করা হলেও কয়েকটি পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষগুলো:
ক। ধর্মের নামে রাজনীতি করা দলগুলো:
ইনাদের ক্ষতিটা সহজেই অনুমেয়। ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ করা মানে এদের পেটে লাথি মারা। ইনারা ধর্মকে ট্রেড করে খাবেন এবং এই প্রক্রিয়ায় ধর্মে প্রকৃতপক্ষে কি আছে কি নেই, তাও বিবেচ্য না। ইনারা নিজেদের স্বার্থে যা কিছু দরকার, সবকিছুই ধর্মে আমদানি করবেন। আল্লাহর কোরআনে রাজনীতি না করলে মুসলমানিত্ব খারিজ হয়ে যাবে বলে কোনো কথা নেই, 'সুষ্পষ্ট' কোরআনে আল্লাহ এটাকে কোথাও আইনের বই বলে উল্লেখ করেন নি, কোরআন মুমিনদের জন্য উপদেশ। ইনারা সেই আল্লাহর নামে শরীয়াহ আমদানি করেছেন, যার প্রায় পুরোটাই মানুষের দেয়া ফতোয়ামাত্র।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলাদেশের সিংহভাগ (৯৫% + ?) মানুষই ধার্মিক এবং ধর্মের নামে রাজনীতি করা দলগুলো জনসমর্থন বিচারে নিতান্তই সংখ্যালঘু। ধর্মের নামে রাজনীতি ধর্মের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হলে এক্ষেত্রে দুইটামাত্র অপশন:
১) বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু ধর্মের নামে রাজনীতিকে ভোট দেয় না, সেহেতু তারা ধার্মিক না,
২) বাংলাদেশের মানুষ যে হিসেবে ধার্মিক, ধর্মের নামে রাজনীতিকরা সেই হিসেবে ধার্মিক না, তাদের ধর্মের হিসেব-নিকেশ আলাদা।
১ নম্বর অপশন বাঙালির বিরুদ্ধে একাত্তরে ব্যবহার করা হয়েছিলো। ধর্মের নামে রাজনীতি করা দলগুলো বাংলাদেশের মানুষকে এখনও ধার্মিক মনে করে না; কিন্তু পাকিসৈন্যদের অনুপস্থিতিতে সেটা সামনা-সামনি বলা এখন আর সহজ কাজ নয়। ২ নম্বর অপশন সত্য হলে ধর্মের নামে রাজনীতি করা দলগুলোই আসলে আর ধার্মিক থাকে না। এই দুই অপশনের সমন্বয় করে বলা যায়, ধর্মের কনসেপ্ট বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও ধর্মের নামে রাজনীতি করা দলগুলোর কাছে আলাদা। রাষ্ট্র যেহেতু 'মানুষের', সেহেতু বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ বনাম ধর্মের নামে রাজনীতি করা দলগুলোর মধ্যে কার ধর্ম সহী, সেই তত্ত্বীয় হিসাবেরই দরকার নেই, মানুষের কনসেপ্টেই দেশ চলা উচিত।
খ। ধর্মকে মানবতার অন্তরায় মনে করা তত্ত্বীয় মানবতাবাদীরা:
ইনারা ধনুকভাঙা পণ করেছেন, দুনিয়ার সবকিছুরই স্বাধীনতা দিতে হবে। এই স্বাধীনতা আবার কোনো কনটেক্স নির্ভর না, ভালোমন্দ বাছ-বিচারহীনভাবেই একদম সবকিছুর স্বাধীনতা। যেমন ধরেন, আপনাকে আমার খুন করতে ইচ্ছা হলো, আপনি আমাকে সেই খুনটা করতে না দিলে আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হলো!
ইনারা নিশ্চিতভাবেই ভালো মানুষ, তবে একটু বেশি ভালো। ইনারা যে সর্বাঙ্গ সুনিপুণ পৃথিবীতে বাস করেন, সেখানে সবকিছু একদম সুনিপুণভাবে চলে, সেই পৃথিবীতে কেউ হাগুমুতু করে না, সবাই ফিটবাবু ক্লিনশেভড। সমস্যা হলো, এই পৃথিবীর বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে কিছু পাবলিককে হুদাই গুঁড়াক্রিমিতে কামড়ায়, সেই কামড়কে ছড়িয়ে দিতে তারা আরো কিছু পাবলিকের মলদ্বারে অঙুলি প্রবেশ করান। ফলাফল, যুদ্ধবিগ্রহ, খুন, হত্যা, ধর্ষণ। বাস্তবের পৃথিবীতে এগুলোর বিচার হতে হয়, এগুলোকে প্রতিরোধ করতে হয়। সিরিয়াল কিলারকে সবসময় ফাদারের কাছে পাঠানোই সমাধান না, আন্দামানেও পাঠানোর দরকার হয়, যে মতবাদ স্পষ্টতই মানব সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর, তাকে যতো তাড়াতাড়ি নিষিদ্ধ করা যায়, ততোই মঙ্গল।
পৃথিবীতে নিষিদ্ধ সব মতবাদই ফিনিক্স পাখির মতো গায়েগতরে বেড়ে ওঠে না। পৃথিবীকে সূর্যের চারিদিকে ঘোরানো কোপার্নিকাস ফিনিক্স পাখি হোন তার সত্য মতবাদের জন্য, তার সত্যকে নাৎসি প্রোপাগান্ডার সাথে এক করে ফেলা ঠিক না। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ধর্মের নামে রাজনীতি একটি পরীক্ষিত আকাম। সেই আকামকে নিষিদ্ধ করলে সেটা ফিনিক্স পাখি হবে না; বরং সেটাকে বাড়তে দিলে বোমা-সন্ত্রাস-প্রোপাগান্ডা-ব্রেনওয়াশকে অভয়ারণ্য দেয়া হয়।
গ। আওয়ামী লীগ সরকার:
যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে কচ্ছপের পিঠে তুলে দেয়া আওয়ামী লীগ এখনো তাদেরকে আওয়ামী লীগের সরকার হিসেবে কল্পনা করেন, বাংলাদেশের সরকার হিসেবে কল্পনা করেন না। সংবিধানের খতনা করে গোঁজামিল রাখা নেত্রী মাথায় কালোপট্টির অভিনয় ছাড়লেও ধর্মের নামে উনার রাজনৈতিক ভক্তি এখনও উছলে পড়ে। রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্কে এখন শুধু নাসির বিড়িই চলে না, এখন প্রাইমিনিস্টারের গদগদ বক্তব্যে রেজিস্টার্ড মুফতিরা ধর্মের নামে ফতোয়া দেয়ার বৈধতা পান।
সংবিধানকে ধর্মনিরপেক্ষ না করার প্রশ্নে উনি গদগদ কণ্ঠে আবারও বঙ্গবন্ধুকে বিক্রয় করেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পিছনেও নাকি এই সংবিধানে বিসমিল্লাহ না থাকাই কারণ ছিলো, উনি বিসমিল্লাহ রেখে সেই হত্যা থেকে রেহাই পাবেন। ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ না করলে উনি আর গ্রেনেড হামলার শিকার হবেন না!
বাংলাদেশের জনগণের টাকায় তার সারা পরিবারের জন্য নিরাপত্তা কেনা হয়েছে। ধর্মের রাজনীতি তাকে নিরাপত্তা দিলে আমাদের টাকা ব্যয়ের কোনো দরকার আছে কিনা, প্রাইমিনিস্টার একবার ভেবে দেখবেন। ধর্মের নামে রাজনীতি বহাল রাখলে বঙ্গবন্ধু বাল্যকালে হিন্দুর ছেলে ছিলেন কিনা, সেই প্রোপাগান্ডা বন্ধ হবে কিনা, নিশ্চিত হউন। ফিরোজ মাহবুব কামাল কিংবা শর্মিলা বসুরা আপনার নামে বিজয়ধ্বনি দিবে কিনা, প্রিয় প্রাইমিনিস্টার খোঁজ নেন। খালেদা, সাকা, নিযামি, সাঈদি কুত্তারা আপনাকে বেহেশতের সার্টিফিকেট দিচ্ছে কিনা, তাও ডেবিট-ক্রেডিটে ফেলুন। তারপরে সিদ্ধান্ত নিন, আপনার ধর্মের নামে রাজনীতির রক্ষাকবচ হওয়ায় বাংলাদেশ কতোটুকু লাভবান হলো।
ঘ। "আম্রিকা, সৌদি এক্কেরে জানে মাইরা ফালাইবো"র সুশীল:
এই ফতোয়া হলো ধর্ষকের ভয়ে নিজের চোখের সামনে মা-কে ধর্ষিত হতে দেখে চুপ করে থাকার মতো দেশপ্রেমিকের। 'দেশের স্বার্থেই' ইনারা ধর্মের নামে রাজনীতির আকামকে ছাড়পত্র দেন। যে আম্রিকা পাকিস্তানকে উপ্তা করে দিচ্ছে, সেই আম্রিকা বাংলাদেশ থেকে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ফেলতে পারে! আজ ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ হলে আগামীকালই সৌদি আরব থেকে ৮০ লাখ বাংলাদেশী হাসিনায় এসে ল্যান্ড করবে!
কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় আম্রিকা-সৌদির নাক গলানো অস্বাভাবিক কিছু না; কিন্তু সেই নাক গলানোর পিছনে তাদের অবশ্যই স্বার্থ থাকতে হবে। বাংলাদেশে ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ হলে তাদের যদি কোনো স্বার্থ নষ্ট হয়, তাহলে সেটার সমাধান করতে হবে পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে। ধর্মের নামে রাজনীতি করা দলগুলোকে অকার্যকর করা গেলে আম্রিকা-সৌদি তাদেরকে সমর্থন কেন করবে, মাথায় আসে না। যার বেইল নাই, তারে কেউ পুছার কথা না। অন্যদিকে তাদেরকে যতো বেইল দেওয়া হবে, আম্রিকা-সৌদির কাছে তারা ততোই মূল্যবান হবে। লাভক্ষতির হিসেবে, বাংলাদেশের সস্তাশ্রমিক হারানোর বিনিময়ে জামায়াতের কাছ থিকা সৌদি শেখেরা বড়জোর কিছু শিবিরের গেলমান পেতে পারে, তার বাইরে তাদের লাভটা কি? ওবামার সেবা করার জন্য জামায়াত-বটগাছিদের তুলনায় হাসিনা তো কোনো অংশে কম না। গ্যাসের চুক্তি তো ঠিকই হচ্ছে। তাহলে ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধের কথা এলেই বিগব্রাদার জুজু আক্রান্ত হওয়ার মানে কি?
কাছাকাছি লাইনেরই আরেকটা সুশীল চিন্তা হলো, ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ করা হলে বোমা-টোমা মেরে দেশ অচল করে দেয়া হতে পারে। অতএব, সেই ভয়ে তাদেরকে ছাড়পত্র দিতে হবে! কারণটা হাস্যকর হলেও বাস্তবে হাস্যকর না। সুশীলদের একটা বিরাট অংশই এ ধারণা পোষণ করে। 'হুদাকামে' একটা অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়াই তাদের এ ধারণার পেছনে মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। কিন্তু, শেষ বিচারে সেই অস্থিরতা কি এড়ানো যায়? ধর্মের নামে রাজনীতির বৈধতা দেয়ায় তাদের আকাম কি থেমে আছে? এই বৈধতা থাকার পরেও তো ৬৪ জেলায় বোমা ফুটে, কোরআন শরীফ আর লাঠি হাতে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের নাগরিক অধিকারের সশস্ত্র বিরোধিতা করা হয়। একদম দেয়ালে পিঠ ঠেকার আগেই কি আপনি এই হিংস্র পশু থেকে মুক্তি চান না? দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তখন সময়টা নাও পেতে পারেন। একাত্তরের হিসেবটা তখন উলটেও যেতে পারে! সংবিধানের ধর্ষণকে শিল্পে পরিণত করা জিয়ার পত্নী সামনের টার্মে ক্ষমতায় এসে সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন, তখন হয়তো আপনার ট্যাঁফোঁ করার অধিকারটাও গায়েব হয়ে যাবে!
সুতরাং আপনি যদি মনে করেন, ধর্মের নামে রাজনীতির এই আপদ দূর হওয়া দরকার, তাহলে এখনই শক্ত অবস্থান নিন। সোচ্চার হউন। সরকারকে বাধ্য করুন এখনই এই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মূলোৎপাটনের। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুধু ব্যক্তির বিচার নয়; ব্যক্তিরও আগে দলের বিচার, ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা মতবাদের বিচার!
মন্তব্য
মনের কথাগুলি গুছিয়ে বললেন ধন্যবাদ।
আমি কি ঠিক বুঝলাম যে আপনি বলছেন যে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করলে ধর্মকে মানবতাবিরোধী মনে করা তাত্বিক মানবতাবাদীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন? কিভাবে - আরেকটু বিস্তারিত বললে উপকার হত।
বস, ইনারা নগদে লাভবান হয়ে মূলত ধর্মের নামে রাজনীতিকদের পক্ষে যায় এমন ফতোয়া দেন। যেমন, মেহেরজান কেসে এদের লেখালেখি, ত্যানা প্যাচানি দেখা গেছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
২-৩ দিন আগে বাংলাভিশনে রাতের ঠগ শোতে নুরুল কবিরের একটা চোস্ত ডায়ালগ মনে পড়ে গেল আপনার এই মন্তব্যে। আরও মজা লাগে যখন এই বলদগুলি বলে যে তারা ছাড়া আর কেউ লেখাপড়া জানে না।
****************************************
অন্যান্য সব পয়েন্টের সাথে একমত হলেও এই যায়গাটাতে হাসি লাগলো! কাদের ইঙ্গিত করছেন তা বুঝছি তবে যতদুর জানি এরকম দাবী পাগল ছাগল ছাড়া কেউ করেনা। যারা এরকম স্বাধীনতার কথা বলেন তাদের ইমিডিয়েট দ্বিতীয় লাইনটা থাকে, এরকম, ব্যক্তিস্বাধীনতা কারো পচ্ছাৎদেশে আঙ্গুলি না করিয়া। তাই কেউ আপনাকে খুন করতে চাইলে ওকে থাপড়াইয়া আন্দামানে পাঠাতে মনে হয়না কারো আপত্তি আছে, তবে এদের আপত্তি অন্যখানে, এদের আপত্তি কে প্যান্টি পরে ঘুরছে আর কে জুব্বা পরে ঘুরছে তাতে এদের মাথাব্যাথা নেই। কে বিষ্ণু সত্য আর সব হোকাস পোকাস, আর কে দাড়ি সত্য বাকি সব হোকাস পোকাস এসব নিয়েও কেয়ার করেনা, যার যা ইচ্ছা বলুকগে। এরা বলে মেটাল ভালো নাকি রবীন্দ্রগীতি সেটাও ব্যক্তির উপর ছেড়ে দিলেই চলে। মোদ্দা কথা হলো যা ইচ্ছা চেচাও কানের কাছে এসে না চিল্লালেই হলো, যা ইচ্ছা করো যতক্ষন না তা দ্বারা অন্যের ক্ষতি হচ্ছে।
এদের ব্যক্তি-স্বাধীনতার ধারণা মাছির উড়ার মতন, মাছি যত ইচ্ছা উড়ো কোন সমস্যা নেই, গায়ে এসে না বসলেই হলো।
অন্য পয়েন্টগুলোতে সহমত।
আপনি যে গ্রুপটার কথা বলছেন, তাদের নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। ধর্মের নামে রাজনীতির ক্ষেত্রে মাছি কিন্তু গায়ে এসেই বসছে। মাছি গায়ে এসে বসে হত্যা-ধর্ষণ করেছে, করে যাচ্ছে, গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছে, এই দেশের জন্মের বিরোধিতা করেও এই দেশের প্লট নিজের নামে লেখাচ্ছে। এদেরকে যারা ছাড়পত্র দেয়, তারা গায়ে এসে বসা মাছিকেই ভনভনের সুযোগ দেয়।
আমার পোস্টে যাদের কথা বলেছি, মেহেরজান কেসে তাদের কার্যকলাপ চোখে পড়েছিলো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমি আপনার মত এতটা আশাবাদী না...দুনিয়াটা পুরীষময়, আমাদের দেশটা আরও বেশি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপক্ষে খুব বেশি লোককে সরব হতে দেখি না, বরং নীরব সমর্থনই বেশি দেখি। তাই আপনার প্রথম পয়েন্টে সহমত নই। বাস্তবক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাকিস্তান হতে খুব বেশি বাকি দেখি না... শিক্ষিত সমাজ এখন মডার্ন জামাত...সবকিছুই করে কিন্তু ধর্মের নামে (যত অবান্তরই হোক) কোন কিছু সহ্য করে না! কার্টুনিস্ট আরিফের ঘটনা বা নারীনীতির ঘটনা সেটাই সাক্ষ্য দেয়। বাম দলগুলো বাদ দিলে বাংলাদেশের সব দলই মৌলবাদি...আওয়ামী লীগও ব্যতিক্রম নয়। বাম দলগুলোর নেতারাও একটু বড় হয়ে ডানপন্থী হয়ে যান। এরশাদ-বিএনপি-জামাত-এবং আওয়ামী লীগের ৯০ ভাগই এই মতবাদের...তাই দুঃখিত, আমি আশা দেখি না...
সংবিধানে বিসমিল্লাহ-রাষ্ট্রধর্ম থাকবে, আল্লাহর নাম ফিরে আসবে, প্রয়োজনে অন্য সব ধর্মালবম্বীদের জিজিয়া কর দিয়ে থাকতে হবে, আদিবাসীদের কোন অধিকার থাকবে না, আর বেশি দরকার হলে, অন্য সব ধর্মালবম্বীদের দেশে কোন নাগরিক অধিকার থাকতে দেয়া হবে না...এটাই হয়তো বাংলাদেশের ভবিষ্যত! পজিটিভ যেমন বাড়ছে, নেগেটিভ তার চেয়ে অনেক বেশি হারে বাড়ছে...তাই আপনাদের মত আউটলায়ারদের কথায় ভরসা পাই না...
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
সরাসরি সরব হওয়া-না হওয়া নির্ভর করে ইমেডিয়েট প্রয়োজনের ওপর। যেমন ধরেন, আমি রিক্সা চালাইয়া খাই। কিন্তু আমার বাপেরে একাত্তরে রাজাকারে মারছে। এ অবস্থায় আমি ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধের জন্য শ্লোগান না ধরেও রিক্সা চালাতেই যাবো; কিন্তু মনেপ্রাণে অবশ্যই চাইবো ওই আকামটা বন্ধ হোক।
বাংলাদেশে ধর্মের নামে রাজনীতি যতোদিন বন্ধ ছিলো, ততোদিন সেটা চালুর পক্ষেও কিন্তু কোনো মিছিল হয় নি জনগণের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম বড়ো কোনো ফ্যাক্টর না। প্রধান ফ্যাক্টর আওয়ামী লীগ-এন্টি আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে পাবলিকের মটো ছিলো জামায়াত রোখা। এজন্যই আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়। এবং এটা আওয়ামী লীগের ক্রেডিটের চাইতে ধর্মের নামে রাজনীতি করা ছাগুদের বিপক্ষে জনমতকে বেশি প্রকাশ করে।
শিক্ষিত সমাজের একটা বিরাট অংশ সুশীল। এরা পোস্টের ঘ-এর অংশ। বাকিরা তো প্রতিবাদ করছেই। ইন্টারনেটারদের বেশিরভাগই স্বচ্ছল এবং ঝামেলা এড়াতে পারলে ভালো পাবলিক। তার বাইরে প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে টেকনোলজির ব্যবহারে ছাগুদের সংঘবদ্ধতা চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনের বাস্তবতা ভিন্ন। একাত্তরে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের স্মৃতিতে দারিদ্রের ফাকে এখনো ৭১ বেশি জ্বলজ্বল করে। এজন্যই টাকার রাজনীতিতে চরমভাবে স্বচ্ছল হলেও ভোটের সময় ধর্মের নামে রাজনীতি করা দলগুলো জনসমর্থন পায় না।
ধর্মের অপব্যবহার করা 'নেগেটিভ' যাতে না বাড়ে, সেজন্য ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দরকার। বাঁচতে হলে এটা করতেই হবে। যতো দেরি, ততো লস।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
যতো দেরী ততো লস - লসটাযে কি সেটাই মানুষ ধরতে পারছেনা ঠিকমতো, আর পারলেও সবাই মনে করছে কেউ না কেউ এসে ঠিক করে ফেলবে, প্রয়োজন হলে যাব। যারা জামাত শিবি র এর তান্ডব নিজ চোখে দেখেনি তারা এমনিক ধারনাও করতে পারবেনা বিষয়টা কতখানি আমাদের ধ্বংস করে দিতে পারে।
খুব বেশী কিছু দরকার নেই, ধর্মের উপর ভিত্তি করে তালিবানরা কি করেছে তার চমৎকার নমুনা দেয়া আছে “দ্যা কাইট রানার্স” বইটির অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে, পড়ে দেখুন একাত্তরের ঘাতক দালালদের কর্মকাহিনী। বাংলাদেশের তাবৎ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে জামাত, জামাত এদের লেজে খেলায়।
তবে কীটনাশকের নীল বিষের মত যেদিন ঘরে ঘরে দরোজায় হানা দেবে “বাচলে শহীদ মরলে গাজীরা”” তখন বাংলাদেশের মানুষ তাদের যে তাদের মেনে নেবেনা এটা আমি বিলক্ষন জানি।
আমরা বরং পুরনো হয়ে যাওয়া কিছু দূর্লভ ছবি দেখি, তারপর সিদ্ধান্ত নেই, আমরা নিজেরাই কিছু করবো নাকি ছবির মানুষগুলোর হাতে পায়ে ধরে বসে থাকবো! ফেসবুকে মমতাজুল হক নামে এক বড় ভাইয়ের গতকাল আপলোড করা এলবাম থেকে দেয়া হলো
কালো পট্টি ইলেকশনের আগে আবার দেখতে পাবেন। এইটা মিস নাই।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোন ইচ্ছা হাসিনার আছে কিনা সন্দেহ হয় । ধর্ম ব্যবসায়ীরা যেমন ধর্ম বেচে খায় তেমনি হাসিনা ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে পাবলিক সেন্টিমেন্ট বেচে খায় । এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাবার জন্যই এখনো অনেকে হাসিনাকে ভোট দেয় । হাসিনা মানুষের সেই আবেগের মূল্য দিয়েছেন এরশাদের সাথে জোট বেঁধে দুইজন রাজাকারকে নমিনেশন দিয়ে , আর এবার দিলেন একটি হাইব্রীড প্রজাতির সংবিধানের জন্ম দিয়ে । একই সংবিধানে "বিসমিল্লাহ" , সমাজতন্ত্র কিভাবে থাকে বুঝি না ।
গোটা লেখার সাথে একমত। বিষদ আলোচনাই কাজ নেই।
তয় একখান প্রশ্ন আছে। খালেদা জিয়ারে যে কুত্তা ক'লেন, তালি মানুষ ক'বেন কারে? ওনার চেয়ে ভালোগুলোরে তো বড়জোর খাটাশ, ভোদড়, ম্যাক্সিমাম বান্দর কওয়া যায়। জানতি বড়ো মন চাতিছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আহমদ ছফা'র সেই কথাটা আবারো মনে হলো, অনেকটা এরকম- 'নির্বাচনে আওয়ামিলীগ জিতলে শুধু আওয়ামিলীগই জিতে, আর আওয়ামিলীগ হারলে গোটা বাংলাদেশ হারে।'
আমরা যে নির্বাচনে আওয়ামিলীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট দিয়েছি তা বাংলাদেশকে না-হারানোর জন্যেই, এ আশা নিয়ে। কিন্তু আওয়ামিলীগ জিতলেও যে বাংলাদেশ হেরে যায়, শেষপর্যন্ত এই সংবিধানের অদ্ভুত চেহারা দানই তার প্রমাণ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
লেখাটা চাবুকের মত। কিন্তু আমলাদের কথা বললেন না?
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সহমত।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন