সংবাদ শিরোনাম

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: বুধ, ২৮/০৩/২০১২ - ৩:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা খবরের স্যাম্পল দেখা যাক:

"জামায়াতে ইসলামের বর্ষীয়ান নেতা সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম গতকাল ২৬ শে মার্চ রাতে কারাকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে কারাবন্দীদের মুহুর্মুহু 'জয় বাংলা' শ্লোগানই এই অসুস্থতার মূল কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ফুডপয়জনিংয়ের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক বর্ষীয়ান এই নেতা কারাগারে সরবরাহকৃত খাদ্যকে উপভোগ করলেও পরিবার ও জামায়াতের রাজনৈতিক চাপে বাসা থেকে সরবরাহকৃত খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন।

খাদ্যে বিষ মিশিয়ে তাকে মেরে ফেলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে আশঙ্কায় তিনি এমনিতেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তার মধ্যে মাঝ রাতে 'জয় বাংলা' শ্লোগান তাকে ৪১ বছর আগের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ায় তিনি ব্যাপক হিসুর চাপ অনুভব করেন ও বুক ধড়ফড়ানির শিকার হন। তড়িঘড়ি করে বাথরুমে গিয়ে পা পিছলে পড়েন। তার পড়ার ধপাস শব্দ শুনে সহবন্দী কারারক্ষীকে খবর দিলে তাকে অতিসত্বর হাসপাতালে নেয়া হয়। বাথরুমে পড়ে গেলেও তিনি কোথাও গুরুতর কোনো আঘাতপ্রাপ্ত হন নাই, অক্ষত আছেন। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়াকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন।"

- এই খবরটার শিরোনাম কি হওয়া উচিত? খবরের মূল কথা হলো গোলাম আযম মারা গেছে। কিন্তু আলু পত্রিকার ভার্সনে শিরোনাম হিসেবে আপনি যদি পান 'গোলাম আযম অক্ষত আছেন', তাহলে অবাক হবেন না। কারণ, খবরের ভিতরেই আছে, বাথরুমে পড়ে গেলেও গোআ 'কোথাও গুরুতর কোনো আঘাতপ্রাপ্ত হন নাই, অক্ষত আছেন'! বদলে দেয়ার মূলমন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের সর্বাধিক বিক্রিত টাকায় বিক্রি হওয়া পত্রিকাটি সবকিছুই এভাবে বদলে দিতে পারে।

তবে বদলানোর এই মিছিলে আমরা মহামান্য আলু থেকেই খবরের নমুনা নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে লেখা খবরে তারা শিরোনাম দিয়েছে, বাধা নয় নিরাপত্তা প্রতিবেদন! এই খবর পড়ে আপনার মনে হতে পারে নিরাপত্তা প্রতিবেদনে পাকিস্তানের নিরাপত্তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে, কোনো প্রবলেমই নাই। কিন্তু আপনি ভুল। কারণ, খবরের ভিতরেই আছে,

প্রতিবেদনে ভেন্যু হিসেবে করাচিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হলেও লাহোরকে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সম্ভাব্য ভেন‌্যুর মধ্যে করাচি ঝুঁকিপূর্ণ আর লাহোর কম ঝুঁকিপূর্ণ। তার অর্থ ঝুঁকি দুই ভেনুতেই আছে। এবং এই ঝুঁকিটা খেলোয়াড়দের জীবনের ঝুঁকি, যেক্ষেত্রে সামান্যতম ঝুঁকি নেয়ারও কোনো যৌক্তিকতা নেই। এখন কথা হলো, এইরকম জীবনের ঝুঁকি থাকলেও নিরাপত্তা প্রতিবেদন পাকিস্তান সফরে বাধা হয় না কেমনে?

তার সাথে যোগ করেন,

আমরা বিশেষ ব্যবস্থা চাই না। বিশেষ ব্যবস্থায় অনিরপেক্ষ আম্পায়ার দিয়ে খেলা চালানো মানে আইসিসিও পাকিস্তানকে নিরাপদ মনে করছে না। সে ক্ষেত্রে আমরা কেন যাব?

তার অর্থ আইসিসিও পাকিস্তানকে নিরাপদ মনে করছে না। যে খবরে নিরাপত্তা নিয়ে এতো ক্যাচাল থাকে, সে খবরের শিরোনামে নিরাপত্তা বাধা নয় স্টেটমেন্ট দেয়া কখন সম্ভব? একমাত্র তখনই যখন সংবাদের অর্থ বদলে দেয়ার প্রয়াস থাকে।

তবে এই সংবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো,

এই সফরটি সংযুক্ত আরব আমিরাত বা অন্য কোনো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছে পিসিবি।

যা অন্যান্য পত্রিকায় আরো বড়ো আকারে এসেছে, সরাসরি হেডলাইন হয়ে, "বাংলাদেশের বিপক্ষে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলবে না পাকিস্তান"
এটা নিউজ। কারণ, আগের বিষয়গুলা, অর্থাৎ মোস্তফা কামালের অবস্থান আর আইসিসির নিরাপত্তা বিষয়ক অবস্থান, ইতিমধ্যেই কমবেশি জানা। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিব্রাদাররা যে পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোথাও খেলবেন না, এটা গত কয়েকমাসের মধ্যে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন এই প্রথম।

এই নিউজটা বেশ কয়েকটা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বাংলাদেশকে হোস্ট করার পেছনে ক্রিকেটীয় কোনো কারণ নেই; বরং আমাদের খেলোয়াড়দেরকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানের স্বার্থোদ্ধারই তাদের মূলকথা ছিলো, এটা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হলো। রোটেশনাল সিস্টেমে বাংলাদেশের ন্যায্য নমিনি নির্বাচনের মধ্যে আবার শর্ত হিসেবে এই সফর ঢুকিয়ে দেয়াই ব্যাড এনাফ স্টেপ ছিলো। কিন্তু সেটাও যাদের চোখে স্পষ্ট হয় নি, তাদের অনেকেরই চোখ এবার খুলবে।

দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের সাথে যে আমাদের ভাই-ভাই সম্পর্ক না, সেটা হাজারবার প্রমাণের পরেও যেসব গোল্ডফিশ ভুলে যায়, তাদের ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিতে এটা কিছুটা দাগ কাটতে পারে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার সাথে তারা যে 'হোম সিরিজ' খেলবে, সেটার জন্য বাংলাদেশ ব্যাবসায়ীক দিক দিয়ে সবচেয়ে লাভজনক (থ্যাংক্স টু বাংপাকিস) হলেও পাকিস্তান সেটা শ্রীলংকায় আয়োজন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ পাকিস্তানে খেলতে যাবে না। অন্য কোনো বড়ো দলও যাবে না। পাকিস্তানকে খেলতে হলে দেশের বাইরেই খেলতে হবে। এজন্য তারা এখন বাংলাদেশের বিকল্পও খুঁজছে,

সফরের ব্যাপারে বিসিবি এখনো নিশ্চিত করে কিছু না বলায় বাংলাদেশের বিকল্প খোঁজা শুরু করেছে পিসিবি। পিসিবির প্রধান জাকা আশরাফ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি কোনো দেশের নাম বলব না। তবে আমরা অন্তত দুটি ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করছি। বাংলাদেশ “না” করে দিলেও আমাদের পথ খোলা থাকবে।

এর সাথে সদ্যসমাপ্ত বিপিএল কেস যোগ করা যায়। বিপিএলে খেলার পারমিশন নিয়ে পাকিস্তান আগেই গড়িমসি করেছিলো। শেষতক লোটাসের বদান্যতায় বিপিএলটা মূলত পাকিস্তানী খেলোয়াড়দের বাজার হয়ে ওঠে। আইপিএলে অপাঙ্ক্তেয় হওয়া আর ফিক্সিং কেলেঙ্কারির শাস্তির কারণে পাকিস্তানী খেলোয়াড়দের আয় যখন সংকুচিত হয়ে এসেছে, তখন বিপিএল তাদের জন্য ছিলো আশীর্বাদস্বরূপ। তবে শোনা যাচ্ছে, ভ্রাতৃপ্রতিম পাকিস্তানী ক্রিকেট বোর্ড আমাদের ওপর বেজায় নাখোশ হয়ে এখন বিপিএলেও তাদের খেলোয়াড় পাঠানো বন্ধ করে দিবে।

এটা অবশ্য পাকিদেরকে যারা ভাই মনে করে না, তাদের জন্য সুখবর। কিন্তু ভাই-ভাই রব তোলা খেলার সাথে রাজনীতি না মেশানো বাংপাকিদের জন্য সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। আলু পত্রিকা সংবাদ বদলে দেয়ার পারঙ্গমতা দিয়ে বাংপাকিদের এই কষ্টের বোঝা লাঘব করতে কতোটা সমর্থ হবে, নিকট ভবিষ্যতই তা বলে দিবে। আপাতত আমাদের খেলোয়াড়দেরকে যে বোমার মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না, এটা জেনেই পরম স্বস্ত্বি।


মন্তব্য

আবুল এর ছবি

বাধা নয় নিরাপত্তা প্রতিবেদন! - আমার মনে হয় আপনি শিরোনামটিকে একদম সাদা অর‌্থে নিয়েছেন।
‌তবে বাকি অংশের সাথে একমত। চলুক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

একটা খবরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তার শিরোনাম। শিরোনাম দেখেই সাধারণত লোকে সিদ্ধান্ত নেয় সেই খবর পড়ে দেখবে কিনা। শিরোনাম থেকেই খবরের ফোকাস কি, তা সম্পর্কে একটা বায়াস তৈরি হয়ে যায়। ভিতরে কি আছে, তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে খুব কম লোকই এবং এসব খবর খুঁটিয়ে না পড়লে প্যাচ ধরা যায় না। এই খবর পড়ে সাদা প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, তার একটা উদাহরণ দেখেন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুপ্রিয় দেব শান্ত এর ছবি

লোটা কামালকে দলের অধিনায়ক করে তার সাথে আরো ১৪ জন বাংপাকি মিলে একটা দল গঠন করা যেতে পারে। পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা সেই সিরিজের নাম হবে "বাংপাকি ভাই ভাই সিরিজ"।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পত্রিকা পড়ার কাজটাকে আর্টের পর্যায়ে নিয়া গেছে আলুঅলারা। সাম্বাদিকের চেয়ে বেশি পরিশ্রম কৈরা খবর খুঁইজা/বুইঝা নিতে হয়। আর মার্খোরগো নিয়া নতুন কিছু বলার নাই।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সরাসরি কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারেন আলুর বাংপাকিগুলারে, তাদের অ্যাতো পীরিত ক্যান পাকিস্তানের প্রতি! কী দিছে পাকিস্তান অগোরে!!!

বাংলাদেশ যাচ্ছে না এটা শুনেই আসলেই মন ভালো হয়ে গেছিল!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তারেক অণু এর ছবি
স্যাম এর ছবি

চলুক

অনিন্দ্য এর ছবি

রিপোর্টিং এর আরেক নমুনা দেখেনঃ

বিপিএলে আফ্রিদিদের খেলতে দেবে না পিসিবি!

"সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) মূল আকর্ষণ ছিলেন শহীদ আফ্রিদি, সাঈদ আজমল, ইমরান নাজির, আজহার মেহমুদ, মোহাম্মদ সামি কিংবা আবদুল রাজ্জাকের মতো পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা।"

যেখানে পাকিস্তান এই রকম একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেই রিপোর্টের প্রথম লাইন এটা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) মূল আকর্ষণ কারা ছিলেন, সেটা নির্ধারণ করে দিয়েই বাকি রিপোর্ট লিখেছেন প্রতিবেদক। মানুষের মন্তব্যগুলো দেখলে অবশ্য তার বোঝা উচিত, এই নির্লজ্জ পাকিতোষণ শেষ পর্যন্ত তেমন পাত্তা পায় নি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কমেন্টে পাবলিক পুরা শোয়াইয়া দিছে। মডারেশন করেও ঠেকাতে পারছে না। গড়াগড়ি দিয়া হাসি

পাইক্যারা খেলতে না আসলে শাপে বর হবে। বিপিএলের টাইমিং হিসাব করে ফেললে আন্তর্জাতিক মানের ভালো ক্রিকেটার পাওয়া কঠিন হবে না। আর বাংলাদেশের পাবলিক যে পরিমাণ ক্রিকেট-ক্রেজি, তাতে দর্শকের অভাব হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। সাথে পাইক্যাদের দেখায়া দেওয়ার একটা মানসিকতা কাজ করবে। বাঙালি ইন জেনারেল প্রো-৭১।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাফি এর ছবি

বাংলাদেশ পাকিস্তানে না যাওয়ায় দেখি লাভের পরে লাভ আমাদের দেঁতো হাসি

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

আমগো খেলোয়ারেরা ফাক-স্তানে যাওনের দরকার নাই।

হেরাও আমগো বিপিএল খেলনের দরকার নাই।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
(হেগোরে থামায়া দিলাম দাড়ি বেশি দিয়া চোখ টিপি )

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমি চাই বিদেশী (বিশেষত পাকি) ছাড়াই আমাদের লীগ হোক। যারা খেলতে পারবে কেবল তারাই আসুক।

কল্যাণ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।