গত দুদিনে মিডিয়ার কল্যাণে বাংলাদেশের আকাশে সবচেয়ে দুর্যোগের ঘনঘটা নিয়ে হাজির হয়েছে আইসিসিকে কাটাকুটি করে নোতুন করে সাজানো গোছানোর একটা থ্রিস্টুজেস আইডিয়ার ড্রাফট প্রস্তাব। ২৪শে জানুআরি প্রথম আলো ঘোষণা দিয়েছে ‘জমিদার’দের পক্ষে বিসিবি! আর একই তারিখে ডেইলি স্টার সরাসরি ঘোষণা দিয়েছে টেস্ট না খেলার সিদ্ধান্ত নিলো বিসিবি। বাঁশের কেল্লা ঠিক কিভাবে নিউজটার শিরোনাম করেছে, আমার জানা নেই। তবে এই নিউজগুলোয় জনমনে যে 'স্বাভাবিক' প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, তার সারসংক্ষেপ করলে দাঁড়ায় বিসিবি ইচ্ছা করেই বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। সাবেক বিসিবি সভাপতি লোটাস কামাল যেমন দেশের ক্রিকেটের সর্বনাশ করতে পাকিস্তানের দালালি করে সে দেশে দল পাঠাতে চেয়েছিলো, বর্তমান সভাপতি পাপনও বিসিসিআইয়ের দালালি করে বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ খেলার দুয়ার বন্ধ করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় পাপন পদত্যাগ করে সাবের হোসেন চৌধুরীর হাতে ক্ষমতা অর্পণ করলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বাঁচবে। এ প্রক্রিয়ায় যে নিউজটা সামনে আসে নি, তাহলো বিসিবি অন্যান্য বোর্ডের জবাবের ওপর ভিত্তি করেই তাদের সিদ্ধান্ত নিবে (২৩শে জানুআরি, ক্রিকইনফো)।
যাহোক, বিষয়টা নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
কি আছে প্রস্তাবে?
প্রস্তাবে মূলত আইসিসির ওপর এখন যে অলিখিত সর্বময় কর্তৃত্ব আছে বিসিসিআই (ভারত), ইসিবি (যুক্তরাজ্য) ও সিএ (অস্ট্রেলিয়া)র, তাকে মোটামুটিভাবে কাগজে-কলমে আরো লিখিত আকারে প্রতিষ্ঠিত করাই মূল কথা। প্রস্তাবের বিষয়গুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যায়: ১)ক্ষমতা, ২)টাকা-পয়সা, ৩)ক্রিকেট ট্যুর ও ম্যাচের স্ট্রাকচার।
১)ক্ষমতা: প্রস্তাব অনুসারে আইসিসির সর্বময় ক্ষমতা থাকবে থ্রিস্টুজেসের হাতে। প্রায় সবকিছুতেই একমাত্র তাদের কথামতোই চলবে আইসিসি। একটা এক্সিকিউটিভ কমিটি থাকবে, যাতে এই তিন দেশের প্রতিনিধি ছাড়াও বাকি ৭ দেশ থেকে মাত্র ১ জন প্রতিনিধি থাকবে। অবশ্য আইসিসির চেয়ারম্যান হতে পারবেন পালাক্রমে শুধুমাত্র ওই দেশের প্রতিনিধিরাই। এখন তারা যেভাবে বিশ্বক্রিকেটকে ধর্ষণ করেন, সেটা আরেকটু বেশি মাত্রায় করবেন এবং কাগজে-কলমে বৈধভাবে।
২) টাকা-পয়সা: বর্তমানে আইসিসির উদ্বৃত্ত আয়ের (আয় মাইনাস ব্যয়) ৭৫% কে দশটা ফুলমেম্বার দেশের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া হয়। বাকি ২৫% দেয়া হয় অ্যাসোসিয়েট মেম্বারদের। প্রস্তাব অনুসারে কোন দেশ কি পরিমাণ কন্ট্রিবিউট করছে মোট আয়ে, সেই হিসাবটা বিবেচনা করতে হবে, যাতে মোটামুটিভাবে বলা যায়, থ্রিস্টুজেসের টেকা-পয়সার পরিমাণ বাড়বে, বাকিদের কমবে।
৩)এফটিপির দায়িত্ব আইসিসির হাতে থাকবে না, সেটা হবে সংশ্লিষ্ট দুই/ততোধিক দেশের পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ, আইসিসি কাউকে বাধ্য করতে পারবে না অন্যের সাথে খেলার কন্ট্রাক্ট করতে। কন্ট্রাক্ট করা হয়ে গেলে আইসিসি সেটা এনফোর্স করতে পারবে প্রাকৃতি দুর্যোগ, শর্তভঙ্গ ইত্যাদি সিরিয়াস অজুহাত না থাকলে। টেস্ট ক্রিকেটকে দুই (তিন?) স্তরবিশিষ্ট করা হবে। থ্রিস্টুজেস এলিট গ্রুপে থাকবে, বাকি ৫ দল কাবিখা গ্রুপে, এবং নিচের ২দল খাইটা খা গ্রুপে। খাইটা খা গ্রুপ এলিট ও কাবিখাদের সাথে খেলার সুযোগ পাবে কিনা, এটা কোথাও স্পষ্ট করে দেখি নাই, অন্তত ক্রিকইনফোতে। তবে খাইটা খা গ্রুপকে অ্যাসোসিয়েটস মেম্বারদের সাথে খেলতে হবে, ৪ বছর পরপর তাদের টপ টীম কাবিখা গ্রুপের বটম টীমের সাথে খেলার সুযোগ পাবে, এবং তাদেরকে হারাতে পারলে তাদেরকে রিপ্লেস করে কাবিখা গ্রুপে ঢুকে যাবে।
বাংলাদেশের কি কি ক্ষতি?
এই প্রস্তাব কোনোরকম পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংকোচনছাড়া পাস হলে উপরিউক্ত ৩টি বিষয়ে বাংলাদেশ কমবেশি প্রত্যেকটায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
আইসিসি এখন যদিও অলিখিতভাবে এই থ্রিস্টুজেসদের কথায়ই চলে, তাদের যে কোনো স্বার্থই আইসিসির আইনে পরিণত হয়ে যায় (উদাহরণ, আইসিএলে অংশ নেয়া খেলোয়াড়রা ভারতের জাতীয় দলে খেলতে না পারার একসময়কার আইন), তবুও এখন সেটা পুরোপুরি অফিশিয়াল হবে। ফলে কাগজে-কলমে বাংলাদেশের যে অধিকার ছিলো, বা লোটাস কামালের ঢাল-তলোয়ারহীন আইসিসি সহ-সভাপতি পদ, সেগুলো থেকেও বঞ্চিত হবে। আমার বিবেচনায় মূল ক্ষতি হবে ক্ষমতার সমীকরণে বাংলাদেশের ১ ভোটের প্রয়োজনীয়তা না থাকা। বর্তমান সিস্টেমে থ্রিস্টুজেসদের মধ্যেও ক্ষমতার লড়াই আছে। বাংলাদেশের ভোট এই লড়াইয়ে বিসিসিআইকে যে সমর্থন দেয়, সেটার প্রয়োজনীয়তা ফুরাবে। সুতরাং বিসিসিআইয়ের কাছে বাংলাদেশ আরো কমগুরুত্বপূর্ণ হবে। নেগোশিয়েশনের জন্য এটা অসুবিধাজনক অবস্থা।
টাকা-পয়সার হিসাবটা টু দ্য পয়েন্টে জানি না। তবে 'ধরে নেয়া' যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফ্যানবেইজ ভালো থাকায়, আমাদের ক্রিকেট ইনকাম খুব খারাপ না। সুতরাং ইনকামের ভিত্তিতে রুটি ভাগাভাগি হলে আমরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো না। তবে ক্রিকেট ডেভেলাপমেন্ট খাতে টেকাটুকা কি পরিমাণ পাওয়া যাবে, তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নাই।
এফটিপির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য এখনই বিরাজমান। ১৩ বছর ধরে আমরা থ্রিস্টুজেদের দেশে টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি সাকুল্যে ৬ টা: ইংল্যান্ড ৪, অস্ট্রেলিয়া ২, ইন্ডিয়া ০। অন্যান্য দেশের সাথে খেলায়ও সংখ্যাটা আশাপ্রদ নয়। (মাইনাস জিম্বাবুয়ে) সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৩তে ৪ পিস, ২০১২তে নিজেদের মাঠে ২ পিস, ২০১১তে নিজেদের মাঠে ৪ পিস টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি, যেখানে ২০১০টা তুলনামূলকভাবে ভালো ছিলো (৭টা টেস্ট)। ওডিআই, টি-২০তেও কাছাকাছি অবস্থা। এজন্য দেখা যায়, ভারত-শ্রীলংকা-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা যেখানে খেলে খেলে হয়রান, সেখানে আমাদের সাকিব-তামিমরা খ্যাপ মারতে যায় আর মাশরাফি চপ্পল পায়ে মোটর সাইকেলে চড়ে পোজ দেয়। বাংলাদেশই আইসিসি এফটিপির একমাত্র সৎছেলে নয়। জিম্বাবুয়ের টেস্ট স্ট্যাটাসই স্থগিত করা হয়েছিলো। ২০১২তে পাকিস্তানও টেস্ট খেলেছে মাত্র ৩টা। আর গত ২/৩ বছরে সাউথ আফ্রিকারও ক্রিকেটসূচিতে বিরাট গ্যাপ ছিলো।
আমার ধারণামতে, এফটিপির বাধ্যবাধকতা না থাকলে থ্রিস্টুজেসরা (অন্তত ভারত) পুরোপুরিভাবে টি-২০তে মনোযোগ দিবে। কারণ, এটা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। সুতরাং অন্যান্য দেশ তাদের সাথে খেলার সুযোগ খুব কম পাবে। ওডিআই ও টি-২০র ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এটা একটা সুযোগ হতে পারে, কারণ, বাংলাদেশে খেলা আর্থিকভাবে লাভজনক। টেস্টের ক্ষেত্রেও এটা বেশি ম্যাচ পেতে সহায়তা করবে, যদিও বিষয়টা বিসিবির নেগোসিয়েশনের ওপর নির্ভরশীল। সমস্যা হলো, বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস থাকলেও বাংলাদেশ এই সময়ে (২০১৫পর পর থেকে) টেস্ট ম্যাচ খেলার পারমিশন পাবে কিনা, এটা পরিস্কার না। টেস্ট ম্যাচ খেলার পারমিশন না থাকলে এলিট ৩দল তো বাদ, কাবিখা গ্রুপের ৫ দেশ চাইলেও বাংলাদেশের সাথে খেলতে পারবে না। তখন বিষয়টা চরম ক্ষতিকর হবে।
অন্যান্য দেশের প্রকৃত অবস্থান কি?
আইসিসিতে থ্রিস্টুজেসের এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের অবস্থান কি হওয়া উচিত, তার আগে দেখা যাক, অন্যান্য দেশগুলো এ সম্পর্কে কি বলে। কারণ, প্রস্তাবটা কোনো দ্বিপাক্ষিক প্রস্তাব না। এটা পুরো ক্রিকেট বিশ্বের সাথে সম্পর্কিত। এবং অন্যান্য দেশও বাংলাদেশের মতো সমান বা তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ বিষয়ে ছাগু ও সুশীলদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সংবাদ উৎস বাঁশের কেল্লা ক্রিকইনফোর রেফারেন্সে (যদিও ক্রিকইনফোতে এরকম কিছু খুঁজে পাইনি) জানিয়েছে, "ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো জানিয়েছে, এরই মধ্যে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ওয়েস্টইন্ডিজ।" একই জিনিস বিবিসি বাংলায়ও এসেছে। ক্রিকইনফো থেকে আলাদা আলাদা দেশের অবস্থান সম্পর্কে যা পেলাম, এখানে তালিকা করি:
১) নিউজিল্যান্ড: থ্রিস্টুজেস আইসিসির পাওয়ার নিয়ে নিলে নিউজিল্যান্ডের তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
"Do we [NZC] have power at the ICC table? No, not a hell of a lot. Do we have the ability to influence and persuade? A little bit. The critical thing is to identify the things most important to us. That means ensuring the stability of our playing programme and revenue generation," Snedden told the New Zealand Herald.
২) দক্ষিণ আফ্রিকা: দক্ষিণ আফ্রিকা প্রস্তাবের বিপক্ষে, তারা চায় প্রস্তাব তুলে নেয়া হোক।
৩) জিম্বাবুয়ে: টেস্ট স্ট্যাটাস কেসে জিম্বাবুয়ের অবস্থাও বাংলাদেশের মতো। এই প্রস্তাব নিয়ে তারা অফিশিয়ালি কিছুই বলে নাই। ক্রিকইনফোর ফিরদৌসি মুন্ডার মতে, তারা বিসিসিআইয়ের পক্ষে মত দিতে পারে।
ZC have made no comment on the proposal but are understood to traditionally vote in favour of the BCCI.
৪) পাকিস্তান অফিশিয়ালি ডিক্লেয়ার করে নাই, তারা প্রস্তাবের পক্ষে, নাকি বিপক্ষে। এহসান মানি জোরেশোরেই প্রস্তাবের বিপক্ষে বলেছে; কিন্তু সে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কেউ না। পিসিবির একজন নাম প্রকাশ না করা মেম্বার বলেছে, পিসিবি মিটিং করেছে, এবং তাদের গভর্নিং বোর্ড জাকা আশরাফকে বলেছে প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিতে।
"The governing board was firm that this was a very sensitive issue for Pakistan and the PCB should go to the ICC meeting well-prepared to give strong arguments against the proposed changes," the member said.
৫) শ্রীলংকা: শ্রীলংকার অবস্থান মোটামুটি স্পষ্ট। তারা প্রস্তাবের পক্ষে, নাকি বিপক্ষে ভোট দিবে, তা বলে নাই। তারা আইসিসিকে অনুরোধ করবে প্রস্তাবটা নিয়ে আলোচনা আপাতত স্থগিত করতে।
৬) ওয়েস্ট ইন্ডিজ: এ বিষয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজও স্পষ্ট করে কিছু বলে নাই।
৭) বাংলাদেশ: আইসিসির মিটিংয়ে গিয়ে বিসিবি অন্যান্য বোর্ডের জবাবের ওপর ভিত্তি করেই তাদের সিদ্ধান্ত নিবে।
দেখা যাচ্ছে, একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাই এ প্রস্তাবের 'বিপক্ষে' তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বাকি কেউই অফিশিয়ালি নিশ্চিত করে নাই যে, তারা এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিবে।
প্রসঙ্গত, প্রস্তাবটি পাস হতে ১০ টি ফুল মেম্বারের মধ্যে অন্ততপক্ষে ৮টিরই সমর্থন থাকতে হবে; অর্থাৎ ৩টি বোর্ড প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলেই প্রস্তাবটা পাস হবে না।
To get a special resolution passed, eight out of the 10 Full Members will need to back the proposal according to the ICC Constitution. Article 6.12 a)3)b) in the constitution, which deals with voting on a special resolution, reads: "Resolution proposed at Conference or at a Special Meeting shall be deemed to have been carried as a Special Resolution only if not less than three-quarters of the aggregate number of votes exercisable by all the Full Members shall have been cast in favour of the Resolution, irrespective of whether or not all of the Full Members shall have actually been present in person or by proxy."
বিসিবির করণীয় কি?
সাদা চোখে বিষয়টা দেখে বলা যায়, যেহেতু প্রস্তাবটা কার্যকর হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট তথা বিশ্ব ক্রিকেটের ওভারঅল ক্ষতি হবে, সেহেতু বাংলাদেশের উচিত চোখ বুজে এর বিপক্ষে ভোট দেয়া। কিন্তু চোখটা খুললে আরো বেশ কয়েকটা বিষয় এসে পড়ে, যা সিদ্ধান্ত নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানে একটা প্যারালেল উদাহরণ টানা যাক। ধরেন আপনি কোনো পণ্য ১০ টাকা দরে কিনলেন; কিন্তু বিক্রয় করার সময় বাজার পড়ে গেলো। বিক্রয় করলে পার পিস ৮ টাকা। এ অবস্থায় আপনি পণ্যটা ২টাকা ক্ষতিতে বিক্রয় করবেন কিনা, তা নির্ধারিত হবে বিক্রয় না করলে আপনি লাভবান হচ্ছেন কিনা, তার ওপর। যদি শাকসবজির বিজনেস করেন, তাইলে ৮টাকায়ই বিক্রয় করে ফেলতে হবে, নাহলে ৮টাকাই লস।
থ্রিস্টুজেসের এই প্রস্তাব সম্পর্কে বিসিবির অবস্থানে এই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। কয়েকটা সিনারিও দেখা যাক:
১) বাংলাদেশ এখন আগেভাগেই ঘোষণা দিলো তারা এই প্রস্তাবের বিপক্ষে। ঘোষণার সাথে সাথেই আইসিসির শক্তিশালী বোর্ডগুলোর শত্রু হওয়া অবধারিত। এরপর ভোটাভুটির সময় দেখা গেলো, আমরা আর দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া আর কেউ বিপক্ষে নাই। সুতরাং প্রস্তাব পাস হয়ে গেলো। তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থা আসলে কি হবে? আইসিসির ভিনডিক্টিভ নিয়মকানুন এখনই ওপেন। তখন সর্বময় ক্ষমতা পেয়ে গেলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অস্তিত্ব থাকবে বলে মনে হয় না। ইনফ্যাক্ট, দক্ষিণ আফ্রিকাও যে ভোটের সময় পল্টি নিবে না, তারও নিশ্চয়তা নেই। এই প্রস্তাবে থ্রিস্টুজেস না হয়ে তাদেরকে নিয়ে ফোর স্টুজেস হলে তারাও এর পক্ষে থাকতো।
২) আফ্রিকার সাথে শ্রীলংকা/পাকিস্তান/জিম্বাবুয়ের ১টা এবং আমরা বিপক্ষে ভোট দিলাম। তখন ওই প্রস্তাব পাস হওয়া ঠেকানো যাবে। কিন্তু তাতে আইসিসিতে আমাদের অবস্থানে কি তেমন কোনো হেরফের হবে? এফটিপি এনফোর্স করার ক্ষমতা আমাদের এখনও নেই। বিষয়টা শুনতে খারাপ শোনালেও এটাই বাস্তবতা যে, অন্যান্য দেশের ওপরই নির্ভর করে আমাদের ম্যাচ পাওয়া বা না পাওয়া। বর্তমানে আইসিসিতে আমাদের (সমর্থনের বিনিময়ে) প্রোটেকশন দেয় বলা যায় বিসিসিআই একাই। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী 'ব্রিটিশ'রা আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাসের বিপক্ষে ছিলো, পারলে যে কোনো সময়ই স্ট্যাটাস বাতিল করে দিবে। পাকিস্তান আছে যে কোনো উছিলায় আমাদের ক্ষতি করার ধান্দায়। সম্প্রতি এশিয়া কাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ যাতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত না হয়, তার জন্য পাকিস্তান জোর লবিং চালিয়েছে, শ্রীলংকা আমাদের বিকল্প হিসেবে নিজেদের নাম প্রস্তাব করেছে। সে সমস্যাটা প্রায় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া গেছে বিসিসিআই পক্ষে থাকায়। বিসিসিআইকে শত্রু বানানোতে আপত্তি নাই; কিন্তু সেই শত্রু বানানোর বিনিময়ে আমরা বন্ধু পাচ্ছি কাকে?
৩) যদি আইসিসি ভেঙ্গে যায় এবং থ্রি স্টুজেসকে বাদ দিয়ে নোতুন কমিটি হয়, তাইলে বাংলাদেশ কিছুটা লাভবান হতে পারে। পুরোটা ডিপেন্ড করে নেগোশিয়েশনের ওপর। এক্ষেত্রে সাউথ আফ্রিকা বস, পাকিস্তান সেকেন্ড বস হবে। তারপর শ্রীলংকা আছে। সুতরাং আমাদের পাওয়ার তারপরও সীমিত থাকবে। আইডিয়াল কেসে লাভ হলো, আমরা সম্ভবত বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবো। প্র্যাকটিক্যালি, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভালো না হওয়ার খেসারত দিতে হবে।
সুতরাং, আমার মতে এক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি ছাড়া বিসিবির উপায় নাই। বটমলাইন হলো, এই প্রস্তাব পাস হোক বা নাহোক বিশ্বক্রিকেটের কর্তৃত্ব থ্রিস্টুজেসের হাতেই থাকছে আপাতত। সেক্ষেত্রে তাদের বিরাগভাজন হওয়া মানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পায়ে কুঁড়াল মারা - এটা কনফার্ম, প্রস্তাব পাস হোক বা না হোক, বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস থাক বা না থাক। যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত অন্যরাও হবে, সেহেতু অন্যরাই বিপক্ষে বলে এর উদ্যোগ নিকে, এটা মোটামুটি সেইফ অবস্থান।
আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে ওঠানো মানে ওই প্রস্তাবের সব ধারাই টু দ্য পয়েন্টে বাস্তবায়িত হবে, এমন না। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয়গুলো যাতে প্রস্তাব থেকে বাদ যায়, সেটার জন্য লবিং করাটা কাজে লাগবে, বিশেষ করে "প্রস্তাবের পক্ষে আছি; কিন্তু এইগুলা মডিফাই করতে হবে বা বাদ দিতে হবে" এরকম অবস্থানে। এখনই যদি ঘোষণা দিয়ে প্রস্তাবের বিপক্ষে যায় বিসিবি, তাইলে এই নেগোসিয়েশনের ক্ষমতাটা আগেই হারাবে।
আইসিসি পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষমতা এতোই সীমিত যে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশি কিছু হারাবে না। নিউজিল্যান্ডের মতোই অবস্থা বাংলাদেশের। যারা ক্ষমতায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারাই এ বিষয়ে বেশি কনসার্নড হবে। টেকাটুকার ক্ষেত্রেও (মনে হয়) আমরা খুব বেশি কিছু হারাবো না। কারণ, আমাদের ক্রিকেট দর্শক আছে। তবে প্রস্তাবের পক্ষে থাকার বিনিময়ে এ বিষয়টা নেগোসিয়েশনে আনা যেতে পারে।
আমাদের ক্ষতি টেস্ট ম্যাচ খেলা নিয়া (স্ট্যাটাস যদিও থাকবে, এবং স্ট্যাটাসের জন্য ফিনান্সিয়াল বেনেফিটও অব্যাহত থাকবে)।
It will be introduced on the "no disadvantage" condition that none of the current ICC Full Member nations would lose that status and its financial advantages.
সুতরাং এই পয়েন্টে আমরা নেগোসিয়েশনে আসতে পারি যে, আমাদেরকেও খাইটা খা গ্রুপে না দিয়া কাবিখা গ্রুপে দিতে হবে। এই পয়েন্টে থ্রিস্টুজেসের খুব একটা আপত্তি থাকার কথা না। তাদের সমস্যা হলো অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক ট্যুর আয়োজন করা। যেটা আইসিসির এফটিপি থাকলে তারা কিছুটা চাপে থাকে। তাদের পুরা ফোকাস টাকা পয়সা। বাংলাদেশ যদি কাবিখা গ্রুপের অন্যদের সাথে টেস্ট ম্যাচ খেলে, তাতে থ্রিস্টুজেস টাকা পয়সা লস করে না।
বিশ্বক্রিকেট এমনিতেই চলছে বেড়াছেঁড়া অবস্থায়। নোতুন কোনো শক্তিশালী দল আসার পথ বন্ধ। পুরোনো দলগুলোও এক এক করে শক্তি হারাচ্ছে, ক্রিকেটের কোয়ালিটি দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। ক্রিকেট দর্শক হিসেবে আমরা এই স্বৈরাচারকে কাগজেকলমে বৈধ করার প্রতিবাদ অবশ্যই করবো, যেটা অনেক ইন্ডিয়ান ও 'সাদা' সাংবাদিকও করছে। কিন্তু বিসিবিকে দেখতে হবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অপটিমাইজড অপশন কিভাবে আদায় করা যায়।
এদিক দিয়ে দেখলে আগেভাগেই লাফ দিয়ে মাঠে নেমে না পড়ে আইসিসি মিটিংয়ে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়াই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত, এবং তারা ঠিক সে-ই কাজটিই করেছে। বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে বেস্ট প্র্যাকটিক্যাল অপশন: বাংলাদেশ প্রস্তাবের পক্ষে থাকার পরেও প্রস্তাবটা বাতিল হয়ে যাওয়া, এবং পক্ষে থাকার বিনিময়ে যতোটা সম্ভব সুবিধা আদায় করা।
পাপন ইকুয়াল টু লোটা?
মতি-মাহফুজ-বাঁশের কেল্লা গং যে কাজটি করেছে, তাহলো এই পুরো বিষয়টাকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে, যাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশা ও ক্ষোভকে পাপন তথা সরকারের বিরুদ্ধে চ্যানেল করা যায়। যারা "বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ধংসের জন্য" পাপনকে গালি দিচ্ছে, তারা একবারও ভেবে দেখছে না, এই বিষয়ে পাপনের বাস্তবে ক্ষমতা কতোটুকু।
অনেকে পাপনকে লোটাস কামালের সাথে তুলনা করছে। লোটাস কামাল শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য, আইসিসি সহ-সভাপতির ঢাল-তলোয়ারহীন পদের জন্য একক সিদ্ধান্তে ক্রিকেটারদেরকে পাকিস্তানে পাঠাতে চেয়েছিলো। বাংলাদেশে ছাগু পলিটিক্স হলো, পাকিস্তানপ্রেমীদের বিপরীতে ভারতপ্রেমী দাঁড়া না করালে ঘটনায় টেশ নাই। এজন্য লোটাসের পাকিস্তানপ্রেমের বিপক্ষে পাপনকে ভারতপ্রেমী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যদিও পাপন একা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। ব্যক্তিগতভাবে সেও এই প্রস্তাবের খারাপ-ভালো দুইটা নিয়েই কথা বলছে। এবং অবশ্যই পাপনের নিজের পকেটে কোনো টাকা পয়সা বা পদও ঢুকছে না। তাদের একমাত্র কনসার্ন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা অপটিমাল সলিউশন। তারপরেও "দোষ" বিসিবি কেন এখনই ঘোষণা দিয়ে প্রস্তাবের বিপক্ষে নামছে না।
বিসিবি যদিও অফিশিয়ালি বলেছে, তারা আইসিসির মিটিংয়েই সিদ্ধান্ত নিবে পরিস্থিতি বুঝে। উপরের আলোচনা ফলো করলে বুঝা যায়, অন্যবোর্ডগুলোর অধিকাংশই এ ব্যাপারে একইভাবে বা আরো বেশিমাত্রায় চুপ। তবুও আমাদেরকে ধোলাই করতে হবে পাপনকে!
বিষয়টা আওয়ামী লীগ সরকারকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার না করার সন্দেহে "রাজাকারের পাহারাদার" ট্যাগ দেয়ার মতো। যারা বাংলাদেশের জন্য আন্তরিকভাবেই কাজ করছে, তাদেরকে সমর্থন দিন। তাদেরকে হুদাকামে চাপে ফেলে কোনো ফায়দা নাই। অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। ফোকাস হোক থ্রিস্টুজেস। বিসিবি না।
পুনশ্চ:
বাংলাদেশী মিডিয়ার প্রোপাগান্ডার ফলে বিসিবি আজ বাধ্য হয়ে তাদের অবস্থান নিয়ে আরো বিস্তারিত বলেছে। কালেরকণ্ঠের মতো কেউ কেউ আবার এটাকে প্রচার করছে "অবস্থান বদলেছে বিসিবি" বলে। ফ্যাক্ট হলো, বিসিবির অবস্থান মোটেই বদল হয় নাই, তারা আগেও যে অবস্থানে ছিলো, অর্থাৎ আইসিসির সভায় গিয়েই সিদ্ধান্ত নিবে পক্ষে ভোট দিবে, নাকি বিপক্ষে। ২৩ তারিখের ক্রিকইনফোর নিউজটা পড়লেই এটা স্পষ্ট।
মন্তব্য
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আইডিয়াল কেসে সেটা করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে করা সম্ভব না। কেন সম্ভব না, সেটা অন্য বোর্ডগুলোর কাজ দেখলে বুঝা যায়। ক্রিকেট চলে নির্লজ্জভাবে বুলিং করে। আইসিসির ওপরে কেউ নাই। আর ৩ দেশের কথাই আইসিসি।
সাবের হোসেনকে ইন জেনারেল লোকজন পছন্দ করে, বিশেষ করে তার সময়ে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ায়। সেটা সাবেরের ক্রেডিট, যদিও ইন্ডিয়ার পক্ষে ১ ভোট হিসেবেই বাংলাদেশের এই স্ট্যাটাসপ্রাপ্তি।
(ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া আর ওয়েস্টইন্ডিজ (সম্ভবত) আমাদের টেস্টস্ট্যাটাসপ্রাপ্তির বিপক্ষে ছিলো।)
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এটা খুবই সম্ভব। মিটিঙে বহুত ধরণের আলোচনা হয়। সবকিছু প্রকাশ করার দরকার নাই। সভাশেষে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো জানানো যায়।
যেকোন ইস্যুতে ভারত থাকলে সেখানে বাঁশেরকেল্লা গ্রুপ, আলুপেপার এরা সুযোগ খোঁজার চেষ্টা নেয়। তাদের শুরুতেই হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেয়া দরকার।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এই সচেতনতা স্বাধীনতার পক্ষেরই ৮০%+ লোকের নাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমার কাছে বিসিবি-র অবস্থানটাই যথার্থ মনে হয়েছে। কারণ, প্রস্তাবের বিরোধীতা করছে এমন বড় দেশগুলোর আপত্তি মূলতঃ টেকাটুকার ভাগ আর ক্ষমতা নিয়ে, যেখানে বাংলাদেশের লাভক্ষতি খুব বেশী প্রভাব রাখবে না।
বাংলাদেশের তৎপরতা দেখানো উচিত 'দ্বি-স্তরবিন্যাসের' ফলে যে রেলিগেশনের ঝুঁকিতে পড়বে, সেটার বিরুদ্ধে। আশ্চর্য কথা হইল- নাখোশ দেশগুলোর কেউই কিন্তু দ্বিস্তর কাঠামো নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছুই বলছে না। অর্থাৎ এই ইস্যুতে বাংলাদেশ সম্ভবতঃ একা এবং একমাত্র বিরোধী।
জিম্বাবুয়ের রেলিগেশনের ঝুঁকিতে থাকলেও বড়দের সাথে ম্যাচ খেলা না খেলা নিয়া চিন্তা করার কথা না, তাদের স্ট্যাটাস আর টেকাটুকা নিশ্চয়তা পাইলেই তারা সন্তুষ্ট থাকবে বোধহয়। কারণ, তাদের ধার দেনা পরিশোধের জন্য তারা ভারতীয় স্পন্সরের কাছেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
তাছাড়া, ক্ষমতা, টেকাটুকা কিংবা FTP নিয়ে প্রস্তাবের ধারাগুলোর নিষ্পত্তি না হলেও আগামী মিটিংয়ে দ্বি-স্তর কাঠামো অনুমোদন হয়ে যেতে পারে। কারণ, অন্য ধারাগুলো নিয়ে আইসিসির ভাবনা ছিল না কিন্তু দ্বিস্তর কাঠামো নিয়ে বছর কয়েক ধরেই নিরীক্ষা চলছে।
প্রথমে, হারুন লরগাতের সময়(২০১১ সালে) বর্তমান থ্রি-স্টুজেসের সাথে দক্ষিন আফ্রিকাকে নিয়ে ফোর স্টুজেস প্রস্তাব ছিল। কিন্তু পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার আপত্তির কারণে ওই প্রস্তাব আর আলোর মুখ দেখে নি।
আর এখন নতুন যে স্তরবিন্যাসের আইডিয়া দেওয়া হয়েছে এই কাঠামোও কিন্তু বছরখানেক আগে থিকা শুরু হয়েছে।
টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এই লেখাটা থেকেই কাহিনীর শুরু। আইডিয়া যেহেতু হুবুহু মাইকেল ভনের সুতরাং এটাতে অন্য দুই স্টুজেসের চাইতে ইংল্যান্ডের আগ্রহ বেশী থাকারই আভাস পাওয়া যায়।
এখন, আইসিসি যদি বিরোধিতার কারণে প্রস্তাবের বাকী ধারাগুলো পেন্ডিং রেখে শুধুমাত্র দ্বিস্তর চালু করার ব্যাপারেই প্রস্তাব উত্থাপন করে, তাহলে বাংলাদেশের পাশে তো কেউই নাই।
ভারতের যেহেতু ক্ষমতা আর টেকাটুকা বিষয়ক ধারাগুলো নিয়েই আগ্রহ বেশি, তাই দ্বি-স্তরবিন্যাস নিয়া তাদের সাথে আপসরফা সম্ভব।
তাই, ভারতকে সাপোর্ট দেওয়ার বিনিময়ে নিজেদের রেলিগেশন ঠেকানোর আইডিয়াটাই বিসিবির জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। জমিদারী প্রস্তাব পাশ হইলেও তাতে অন্ততঃ নিজেদের একটা স্বার্থ রক্ষা হবে, এই যা ।
সোহান হাসনাত
এই সাপোর্টের বিনিময়ে রেলিগেশন থেকে মুক্তি মিলবে বলে কোন লক্ষণ দেখছি না।
পৃথিবীতে আর কোনন স্পোর্টসের সর্বোচ্চ কাউন্সিলে এরকম তুঘলকি
মার্কা প্রস্তাব আসে কি না জানি না।
আর, এই প্রস্তাবের আউটকামে যদি থ্রিস্টুজেস এর বিজয় হয়েই যায়, সেখানে বাংলাদেশের জন্য কোন পজিটিভ রেজাল্ট নিয়ে আসা খুবই কঠিন।
শুভেচ্ছা
[মেঘলা মানুষ]
এই বিষয়ে আমিও সেরকম কোনো লক্ষণ দেখছি না। তবে আমি বলছিলাম, ভারত যেহেতু বেশ জোরেশোরেই মাঠে নামছে, সেহেতু বিসিবির ভোট তারা ফাও ফাও পেয়ে যাবে ক্যান?
বিসিবি যদি শেষ পর্যন্ত সাপোর্ট দেওয়ার বিনিময়ে কাবিখা গ্রুপে চান্স নেওয়ার একটা অফার দিতে পারে, তাহলে মন্দ হয় না!
এদিকে, আইসিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলাম আরেক খড়গের পূর্বাভাস। আইসিসি নাকি ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটেও রেলিগেশন চালু করার কথা ভাবছে।
ভবিষ্যৎ তো দেখি পুরাই অন্ধকার !
কোয়ালিফায়ার খেলার কথা কিন্তু অনেক আগে থেকেই প্রস্তাবিত। এর থেকে আলাদা কিছু প্রস্তাব হয়েছে নাকি?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এক্সাক্টলি। আমার ধারণা, এটা বিসিবি করবে এবং সফলও হবে।
প্রত্যেকেরই ১০০% ফোকাস নিজের স্বার্থ। নিজে ক্ষতির সম্মুখীন না হয়ে লাভে থাকলে যে কোনো দেশ যেকোন পল্টি মারবে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে সুপার পাওয়ার হিসেবে বিবেচনায় নিলে তারাও প্রস্তাবের পক্ষে বলতো। সম্ভবত ইন্ডিয়ার সাথে শীতল সম্পর্কের কারণে তারা বাদ গেছে।
স্পন্সরের ব্যাপারটা লেখার আগে মাথায় ছিলো, লেখার সময় বাদ গেছে। বাংলাদেশেও ভারতের স্পন্সরের বড়ো ভূমিকা আছে। এটাও আরেকটা কারণ, যার জন্য বাংলাদেশ বিসিসিআইয়ের সরাসরি বিরোধিতা করা কঠিন।
দ্বিস্তর কাঠামোর ইতিহাসেও আপনার বক্তব্য স্পট অন। এটা পুরোনো আইডিয়া। পেছনের কারণ টাকাপয়সা। যে সময়টা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা টেস্ট সিরিজ খেলা হয়, সে সময়টায় ৫/৭টা টি-২০ ম্যাচ খেলা সম্ভব। দলগুলোর কোয়ালিটি আসলে তেমন কোনো সমস্যা না। আইসিসি এবং ক্রিকেটের স্বঘোষিত এলিট দলগুলা চাইলেই নোতুন টেস্ট টীম বাড়ানো সম্ভব, এবং তারা সার্ভাইভ করাও সম্ভব। বাংলাদেশ সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে যে ২টা ম্যাচ হেরেছে, সেখানে আমাদের একমাত্র অভিজ্ঞতার অভাব ছিলো, ম্যাচ না খেলার পরেও খেলোয়াড় কোয়ালিটিতে আমরা পিছিয়ে না। রেগুলার খেলা ছাড়া এক্ষেত্রে শর্টকাট কোনো উপায় নাই। কিন্তু নিজেদের কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার শঙ্কা এবং আর্থিকভাবে অলাভজনক হওয়ায় টেস্টটীম বাড়বে না। আইসিসির টাকার ভাগও তখন আবার বেশি দেয়া লাগে।
ঠিক। বিসিবি এটাই করবে।
আমার ধারণা, প্রস্তাব পুরোটা পাস হবে না। ক্ষমতা ভাগাভাগিটা আংশিক পাস হবে। এফটিপির বিষয়টা পাস হবে। টাকা পয়সার প্রস্তাব আংশিক (রেট নিয়া আলোচনা হবে) আর টেস্টের দ্বিস্তর সিস্টেম বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ খেলার অপশন রেখে পাস হতে পারে। সাউথ আফ্রিকা ছাড়া অলআউট বিরোধিতা করা কাউকে দেখছি না। পাকিস্তান ৫০-৫০।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
কিন্তু ভাগাভাগি করে পাঁচটা প্রস্তাব যদি আলাদা ভাবে ভোটাভুটি হয় তাহলে বিসিবির পক্ষে কিছু করার শক্ত। প্রস্তাব পাশ হবে না বুঝলে ত্রয়ী কই করে সেটা একটা দেখার বিষয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বাংলাদেশ আর জিম্বাবোয়ে কিছু কিছু পাল্টা প্রস্তাব দিতেই পারে। যেমন এফ-টি-পির আট বছরের সাইকেলে সব দেশের বিরুদ্ধে ন্যূনতম সংখ্যক টেস্ট ম্যাচের প্রস্তাব, বিনিময়ে ইন্টারকন্টিনেন্টালের টপ দুটো দলের সাথে কিছু রেগুলার খেলার প্রস্তাব। বিসিবি বিসিসিআই এর সাথে ভোটের বিনিময়ে দ্বিস্তর-প্রস্তবের বিরোধিতার ডিলে-এ আসতে পারে। সেটাতে আবার অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ড রাজী হবে কিনা সেটা দেখার বিষয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
৫ তারা
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
প্রথমেই একটা ধন্যবাদ দেই, এরকম একটা বিশ্লেষণী লেখার জন্য। আমি নিজে বিষয়টার পুরা কন্সিকোয়েন্স বুঝতেছিলাম না, আবার নিজে পরিশ্রম কইরা বোঝারও ইচ্ছা হইতেছিল না। চমৎকার একটা অ্যানালাইসিস করছেন এইখানে।
আমাদের সমস্যা হইল, আমরা যথেষ্ট হোমওয়ার্ক না কইরা যে কোন বিষয়ে মতামত দিতে আগ্রহী। আবেগী হইয়া রাস্তায় নামলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয় না, অনেক বিষয়ে প্রয়োজনের খাতিতে স্ট্র্যাটেজিক হওনের দরকার আছে, এই মেন্টালিটি আমাদের মধ্যে এখনও তৈরি হয় নাই। এইজন্য আমরা রাজনীতি ঘৃণা করি, কারণ রাজনীতিতে স্ট্র্যাটেজিক হওয়া ছাড়া সাফল্যের অন্য কোন পথ নাই।
আমাদের দেশের কিছু লোকের মেন্টালিটি এখন কল্লোল মোস্তফা আর আনু মোহাম্মদ টাইপ হয়ে গেছে, কিছু হইলেই একটা লংমার্চ কইরা ফেসবুকে ছবি আপ্লোডের ধান্ধা।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আপনাকে ধন্যবাদ বিশ্লেষণধর্মী লিখাটার জন্য।
আসলে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ঠিকমত বুঝতে পারছিলাম না, এখন একটা পরিস্কার চিত্র পেলাম।
এখন অপেক্ষা, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
বিষয়টা আবেগের। এবং এর ব্যাপকতা এতো বেশি যে, টুইস্টেড নিউজ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম বিসিবি ও পাপন এবার চরম ফলস পজিশনে। ধোলাই খাওয়া মাস্ট। তারা তড়িঘড়ি বক্তব্য রিপিট করে আপাতত কিছু লোকজনকে শান্ত করেছে। ২৯ তারিখের মিটিংয়ে ভারতের বিরোধিতা না করার কারণে আবার কোপে পড়বে। তবে টেস্ট খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা না থাকলে এ যাত্রায় সাবের হোসেন চৌধুরী বিসিবিতে আসছেন না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এইটা আমারই কথা - ত্রিমাত্রিক লিখে ফেলেছে
এক্ষেত্রে বিসিবি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিরে অনুসরন করলেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যেটা আপনি আলোচনায় সুন্দরভাবেই বলেছেন। আর অতি অবশ্যই
কারণ বাংলাদেশের পরিস্হিতি ক্রিকেট আসরের জন্য নিরাপদ না এই অজুহাত(পাকিস্তানে এই ইস্যুতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটটীম সফরে যায়নি, এই ক্ষতটা ভুলতে পারা কঠ্ঠিন খুউব) দিয়ে পাকিস্তানের কলকাঠি নাড়ানোর পরও ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ানকাপ, মার্চে টি ২০কাপ এমন কী শ্রীলঙ্কানদলের সফর ঠেকানো গেলোনা পাপনের লবিং/ উপস্হিতির জন্যই। কাজেই সব দোষ পাপনের তো বটেই। কাজেই তাঁর কল্লা চাই, দিতে হবে
আমি ক্রিকেট যতোটুকু ফলো করি, তাতে পাপনের সময়টাকে আন্তরিক মনে হয়েছে। লোটাস পাকিপ্রেম দেখাইতে গিয়া যে সর্বনাশ করতেছিলো, সেখান থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন উনি।
এশিয়া কাপ
টি-২০
শ্রীলংকার সফর
তিনটাই বাতিল হতে পারতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাসে ঢিল দেয়াতেই তারা ফিরে যায়, আর এখন তো ওপেনে জ্বালাও-পোঁড়াও চলতেছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
লেখককে ধন্যবাদ। সচলে এরকম মোসাহেবি টাইপের লেখা অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে আশা করিনি।
টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে আমরা ১০ এ থাকলেও ক্রিকেট খেলা দেশ হিসেবে আমরা ৩য় জনবহুল দেশ। টাকার প্রয়োজন আমাদের থাকতেই পারে তারমানে এইনা যে জাতি হিসেবে আত্মসন্মান বিসর্জন দিয়ে অন্যায্য আবদার নিয়ে আসা ৩ ‘মোড়লের’ পা চাটতে হবে।
ইফতেখার রনি
কেন ও কার মোসাহেবি করলাম বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করা যাবে? পোস্টের কোন কোন অংশে আপনার আপত্তি এবং কেন সেটা বিশদে বললে আমার জন্য বুঝতে সুবিধা হতো।
ফ্যান হিসেবে এটা আমারও কথা। ফ্যান হিসেবে আমার আত্মসন্মানবোধের গুরুত্ব টাকা কেন জীবনের চাইতেও বেশি। বিসিবি তো ক্রিকেট ফ্যান না, বিসিবি হলো বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড। তাদের কাছে আত্মসন্মানের মতো বায়বীয় জিনিসের চাইতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অস্তিত্বটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আলুগোত্রীয় সংবাদ সন্ত্রাসের শেষ কোথায় ??
রাজর্ষি
যতোদিন বাংলাদেশে সুশীল থাকবে, ততোদিন আলুও বেঁচে থাকবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
গতকাল একাত্তর টিভির টক-শো 'একাত্তর সংযোগ'-এ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন দেখলাম খুব চিল্লাচিল্লি করলেন - একদম ধুয়ে দিলেন পাপনকে। পাপনের "অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা" কথাটাকে কোট করে বহু কথাই বললেন, বললেন এসবের পিছনে নাকি পাপনদের "লেনদেনের" স্বার্থ জড়িত - তাই নাকি দেশের পক্ষ নিতে তাদের এত কুণ্ঠা। সাবের ছিলেন ঐ একই অনুষ্ঠানে - খুব একচোট হাসলেন মোবাশ্বেরের কথায় পাপনের এক্সপেন্সে।
****************************************
এইটার প্রমাণ চাইতে গেলেও ভারতীয় দালাল হিসেবে ট্যাগ খেতে হবে।
(আনঅফিশিয়াল কমেন্ট) সাবের হোসেন এটার পিছনে গুটি চালানোতে আছে বলে ধারণা। যেমন, ডেইলি স্টারে লেখা তার কলাম। এরকম একটা সেনসিটিভ বিষয়ে বিসিবির বিরুদ্ধে অলআউট অ্যাটাকে যাওয়া তার উচিত হয় নাই। সে নিজেও ভালো করে জানে, থ্রিস্টুজেসের টার্গেট যখন টাকা-পয়সা ও ক্ষমতা, তখন বিসিবি একটা ব্ল্যাকবক্স, তার ভিতরে পাপনও যা, সাবেরও তা। সংস্কারপন্থী, মাইনাস টুর লোক হওয়ায় দলের মধ্যে সাবের হোসেনের বেইল একটু কম। সুতরাং লীগ ক্ষমতায় থাকলে সাবেরের বিসিবিতে আসার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। পাপন গেলে অন্য কেউ আসবে, সাবের আসবে না। সুতরাং, সে চান্সে থাকবেই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বিশ্লেষনধর্মী এই চমৎকার লেখাটির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। আরও একটা বিষয় এখানে উল্লেখ্য- ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নিজেই এখন আর টেষ্ট ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়, এর বিস্তার রোধ করে যতটুকু সম্ভব সীমিত আকারে নিয়ে এসে ওডিআই আর টি-টুয়েন্টিকে মেইন ষ্ট্রীমে নিয়ে যাওয়াই তাদের লক্ষ। তার সংগে আর্থিক প্রস্তাবনাটা যদি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে তাদের বোর্ডের হাতে আরও বেশী টাকা আসবে এবং রাজ্য স্তরের বোর্ডগুলির জন্য আরো বেশী টাকা বরাদ্দ করা যাবে, যা আখেরে বোর্ড সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা বড় নিয়ামক হয়ে দেখা দিবে।
আর তিন ফর্মাটের ক্রিকেটে টেষ্টের যে কি অবস্থান তা তো আর নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। পৃথিবীর কোন দেশেই টেষ্টে এখন আর গ্যালারী পূর্ন হয় না। এমতাবস্থায় টেষ্ট ক্রিকেট আর কতদিন টিকে থাকবে সেটাও একটা প্রশ্ন।
হ্যাঁ, টেস্টের চেয়ে শর্ট ফর্ম্যাট বেশি আকর্ষণীয়। এজন্য তারা টেস্ট কমাতে চাইবে। টেস্ট রেংকিংয়ে টপে থাকার জন্য আইসিসি অবশ্য মোটামুটি ভালো অঙ্কের টাকা দেয়। ভারত এটা ইতিমধ্যে পেয়েছে, ইংল্যান্ডও পেয়েছে, বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা আছে পাইপলাইনে, এরপর সম্ভবত অস্ট্রেলিয়া ১-এ যাবে। ইন্ডিয়ার সিরিয়াল আসতে সময় লাগবে।
পুরাটাই টাকার হিসাব।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
রেভিনিউ ভাগবাটোয়ারা ছাড়া বাকি সব আমার মনে হয় সাবজেক্ট টু বার্গেন, মানে ওগুলো বার্গেন করার জন্যই রাখা। জিম্বাবোয়ে আর বাংলাদেশকে প্রথম স্তরে রেখে দেবার কথা বলে তাদের থেকে ভোট আদায় করবে, চার মেম্বারের এক্সকোর (সর্বোচ্চ কমিটি) কথা বলা হয়েছে, যাতে চতুর্থ কোন দলকে ওই পদটা দিয়ে তাদের ভোট আদায় করা যায়। আসল সমস্যার মূল হল মিডিয়া রেভিনিউ। দ্বিপাক্ষিক ম্যাচের মিডিয়া রেভিনিউ যায় স্বাগতিক দলের বোর্ড-এর পকেটে কিন্তু আইসিসি টুর্ণামেন্টের মিডিয়া রেভিনিউ-এর ৭৫% সমান ভাবে ভাগ করে দেওয়া হয় দশ টেস্ট দলের কাছে, বাকি ২৫% যায় এসোসিয়েটদের কাছে। শুধু মাত্র জাতীয় দলের খেলার সত্ত্ব বিক্রি করে বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশী আয় করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত (ডোমেস্টিক ক্রিকেট ছাড়াই) । আবার অন্য দেশগুলোর রেভিনিউ নির্ভর করে এই তিন দেশ তাদের দেশে খেলতে আসে কিনা তার ওপর। শ্রীলঙ্কার বোর্ড টেন স্পোর্টস কে বিক্রি করে মিডিয়া রাইটস বছরে ১০ মিলিয়ন ডলারে যার মধ্যে একা ভারতের সফরের জন্যই ৪০% টাকা। বাংলাদেশ বোর্ড চার বছরের মিডিয়া রাইটস বিক্রি করার সর্বোচ্চ প্রস্তাব পেয়েছে ১৫ মিলিয়ন ডলারের - অর্থাৎ বছরে ৩-৪ মিলিয়ন ডলারের। অন্যদিকে আইসিসির মিডিয়া রাইটস থেকে আট বছরের সাইকেলে আগের বারে এক বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশী টাকা এসেছে। এখনকার মত করে চললে পরের সাইকেলের আট বছরের জন্য আসা টাকা থেকে টেস্ট দলগুলো সাড়ে সাত পার্সেন্ট করে পাবে। প্রস্তাবিত সিস্টেমে বিসি-সি-আই, সি-এ আর ই-সি-বি নিজেদের সমান ভাগ্যের থেকে কিছু বেশী পাবে। বি-সি-সি-আই পাবে সর্বাধিক ১০-৩০% (যত বেশী রেভিনিউ বি-সি-সি-আই ও অন্যেদের এর ভাগও তত বাড়বে) । আইসিসি থেকে বেশী টাকা পাবার জন্য এরা জিম্মি করছে এফ-টি-পি-কে। অর্থাৎ আইসিসি থেকে বেশী রেভিনিউ না দিলে তারা অন্য দেশগুলোতে ট্যুর করতে যাবে না। সেই ক্ষেত্রে সেই দেশের বোর্ড-এর রেভিনিউ এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বি-সি-সি-আই যদিও বলছে টাকা না পেলে তারা বিশ্বকাপে খেলবে না, কিন্তু সেরকম কিছু বাস্তবে হবার সম্ভাবনা কম। বরং তারা চার-দেশীয় কোন টুর্নামেন্ট নিজেদের মধ্যে চালু করতে পারে। বিশ্বকাপে ম্যাচের সংখ্যা কমাতে পারে। বিশ্বপকাপ চার বছরের স্থানে ছয় বছর অন্তর করার কথা বলতে পারে (ওইটা সিদ্ধান্তটা সর্বসম্মতিক্রমে হয় )। উলটোদিকে নিজেদের চার-দেশীয় টুর্নামেন্টের প্রমোশন করতে পারে। খুব ওয়ার্স্ট কেস ধরলে আইসিসি দুভাগ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এই তিন দল সাথে আরও কিছু দলকে নিয়ে আলাদা বোর্ড বানাতে পারে। তবে সেরকম কিছু হবার সম্ভাবনা কম। শেষবার এই পরিস্থিতি হয়েছিল যখন ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলংকা-দক্ষিণ আফ্রিকা একত্রে অস্ট্রেলিয়া-ইংলন্ডের ভেটো অধিকার তুলে নিতে বলেছিল। ১৩ ঘণ্টা টানা মিটিং চলার পরে ভেটো অধিকার তুলে নিতে তারা সম্মত হয়। আইসিসি দুভাগ হয়ে যায়নি।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
টাকা পয়সার হিসাবটা ডিটেলসে খুব চমৎকারভাবে বলেছেন। এরকম পলিটিক্যাল বিষয়ে টু দ্য পয়েন্ট ইনফো পাওয়া মানে সমস্যা ৮০% সমাধান হয়ে যাওয়া।
বার্গেনের জন্য ওপেন রাখা বিষয়গুলো নিয়ে আমারও একইরকম মতামত। সুতরাং বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যানদের প্রধান যে কনসার্ন; অর্থাৎ বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ খেলা বন্ধ হওয়া, সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এটা হলো পণ্যের মূল্য বেশি লিখে রেখে তারপর বাট্টা দিয়ে খুশি করার সিস্টেম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
টু টিয়ার টেস্ট প্রস্তাব বাস্তবায়িত হচ্ছে না, খবর ক্রিকইনফোর।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দরকার ছিল লেখাটার।
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ধন্যবাদ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
গত কয়েকদিন ফেবুতে মায়া কান্নার ঝড় বইছে, আর সবদোষ গাড়ে চাপানো হলো পাপনের। কি আছে প্রস্তাবে সেটা না পড়ে না বুঝে সবাই নেমে পড়েছে বাংলাদেশের টেষ্ট ক্রিকেট বাঁচাতে। আর তিন দেশের নাম নিলেও ভারতকে গালাগালি করে আর পুরোনো নাক সিটকানো ভারত তত্ত্ব নিয়ে পাকি প্রেমী থেকে শুরু করে হুজুগে সবাই উঠে পড়ে লাগলো। আপনার লেখা সেই হুজুগেদের জন্য সঠিক জবাব।
মাসুদ সজীব
কার কত লাভ ক্ষতি এক কথায় -
মাথায় রাখুন, এটা কিন্তু শুধুমাত্র আইসিসি থেকে পাওয়া টাকার পুনর্বিন্যাস। দ্বিপাক্ষিক সিরিজের টাকা স্বাগতিক দেশ পেয়ে থাকে - এবং অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারত কোন দেশে ট্যুর না করলে তাদের দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মিডিয়া রেভিনিউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই হিসাবটা আলাদা করে দুটো যোগ করে তবেই সামগ্রিক একটা চিত্র পাওয়া যাবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এই বিষয়ে আরো প্রফেশনাল পোস্ট বাবুবাংলা ভাইয়ের। লিংকটা রেকর্ডে থাকুক।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সময়োপযোগী লেখা।
____________________________
ঘ্যাচাং
****************************************
ভেবেছিলাম শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্টে ভাল পারফর্মেন্স দেখিয়ে বাংলাদেশ সমালোচকদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেবে; প্রমাণ করবে কেন আমরা টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম বিভাগে খেলার উপযুক্ত দাবীদার। কিয়ের কী?! শেষ পর্যন্ত যেই লাউ, সেই কদু!
Emran
ইন্ডিয়ার কাছে টেস্ট স্ট্যাটাস বিক্রয়ের বিনিময়ে বাংলাদেশে পরবর্তী ৮ বছরে ৬৪টা টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হলে এই সংখ্যা আরো বাড়তেও পারে। সুতরাং পাপনের পদত্যাগ ভিন্ন আর কোনো কথা নাই।
এক দফা, এক দাবী।
পাপন তুই কবে যাবি!
কবে আমরা একটু পাকিস্তান হবো!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
নতুন মন্তব্য করুন