"বুদ্ধিবেশ্যা" শব্দটি যেভাবে মিথ্যাজীবিদের ভিত নাড়িয়ে দিলো

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/১০/২০১৪ - ৪:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম আলোর বান্ধা কলামিস্ট সোহরাব হাসান আজ "সিপি গ্যাং, গং এবং ‘নিষিদ্ধ শহীদ মিনার’" শিরোনামে একটি কলাম লিখেছে। তার লেখার বিষয়বস্তু টকশোজীবি পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার প্রতিবাদ ও তদরূপ ভাবধারার টকশোজীবিদেরকে প্রতিহত করার আহবান - এর সমালোচনা।

আমরা তার লেখাটি পড়তে থাকবো, এবং মাঝে মাঝে উদ্ধৃতি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করবো, তিনি আসলে কি বলতে চান, আর প্রকৃত সত্যের চেহারা কেমন। সোহরাব হাসান লিখেছে,

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কেবল ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মারক নয়, জাতীয় ঐক্য ও চেতনারও প্রতীক। যেমনটি হয়েছে একাত্তরের শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এই দুটি প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীর নয়; সমগ্র জাতির।

কনটেক্সবিহীন বক্তব্য হিসেবে এটা খুবই ন্যায্য কথা। সমস্যা হলো, বাংলাদেশের কনটেক্সটে "জাতীয় ঐক্য" "সমগ্র জাতি" প্রভৃতি শব্দমালার মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম জিনিস আছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের শহীদ মিনার, আমাদের স্মৃতিসৌধের চেতনা সবাই ধারণ করে না। যারা ১৯৭১ এ পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো, তারা আজও সুযোগ পেলেই শহীদ মিনার ভাঙ্গে। পিয়াস করিম, আসিফ নজরুলরা সেই শহীদ মিনার ভাঙ্গা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষের মিডিয়া রেপ্রেজেন্টেটিভ। তারা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকেও করায়ত্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরাম। এজন্যই গোলাম আযমকে ভাষা সৈনিক হিসেবে প্রচার করা হয়, যদিও সে নিজেই তার পদের দায়িত্ব থেকে বাংলার পক্ষে দেয়া স্মারকলিপির জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেছে। "বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ" নামে সংগঠন তৈরি করেছে বাংলাদেশবিরোধী জামায়াত, যেখানে আমান আলীর মতো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে লাথি মারার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

আজ "শহীদ মিনার সকলের" ফর্মূলায় পিয়াস করিমকে নিলে কাল গোলাম আযমকেও সেখানে নেয়ার পক্ষে রেফারেন্স সৃষ্টি হবে। পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে তাকে "দেশপ্রেমিক" ট্যাগ দেয়ার এই অশ্লীল আবদার ঠেকালে তাই জাতির ঐক্য বিনষ্ট হয় না, যেমনটা হয় নি "যুদ্ধাপরাধীর বিচার করলে জাতি বিভক্ত হবে" প্রোপাগান্ডার পরেও যুদ্ধাপরাধীর বিচার করায়। শহীদ মিনার রক্ত দিয়ে কেনা বাঙালির গর্বের ধন, সেটা পাকিস্তানপন্থীদেরকে সন্মান দেখানোর স্থান নয়।

সোহরাব হাসান এরপরে লিখেছে,

পিয়াস করিম যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করতেন, তার সঙ্গে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে; অনেকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের বিরোধিতা ও সমালোচনাও করতে পারেন। কিন্তু তাই বলে মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হবে কেন?

প্রথমেই প্রশ্ন আসে, পিয়াস করিমের রাজনৈতিক আদর্শ কি? সোহরাব হাসান এই বিষয়টি স্পষ্ট করে নাই। এবং অনলাইন অভিজ্ঞতায় বলে, তাকে প্রশ্ন করলেও সরাসরি উত্তর পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। পিয়াস করিমের রাজনৈতিক আদর্শ যদি বাংলাদেশ পরিপন্থী হয়, তাহলে তাকে শহীদ মিনারে নিয়ে সন্মান দেখালে বরং শহীদ মিনারেরই অসন্মান হবে।

সোহরাব হাসান লিখেছে,

পিয়াস করিমের প্রতি যদি কেউ শ্রদ্ধা জানাতে না চান, সে অধিকার তাঁর আছে। একজনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের সব মানুষ শোক প্রকাশ নাও করতে পারেন। যেখানে রাষ্ট্রের স্থপতির মৃত্যুদিবসে ঘটা করে কেক কাটা হয়, সেখানে এটি আশাও করা যায় না। কিন্তু তাই বলে অন্যের শোক প্রকাশে বাধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই।

পিয়াস করিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে কেউ বাধা দেয় নাই। তাকে শ্রদ্ধা জানাতেও কেউ বাধা দেয় নাই। পিয়াস করিম যাদের পক্ষে কথা বলতো, তারা সম্পূর্ণ বিনা বাধায়ই কাজটি করতে পেরেছে। এমনকি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও তার জানাজা করতে দেয়া হয়েছে। তাহলে এই প্রসঙ্গের অবতারণা কেন?

সোহরাবের পরের অংশের শব্দচয়ন কয়েকটি কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, "বঙ্গবন্ধু" শব্দটিকে উহ্য রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুকে "জাতির জনক" বলা হয়, "রাষ্ট্রের স্থপতি" নয়। সোহরাব হাসানের কাছে "যাহা জয় বাংলা, তাহাই বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" হলেও এই দুইটা টার্ম ব্যবহারিক দিক দিয়ে এক নয়। তৃতীয়ত, "মৃত্যুদিবস" শব্দের আড়ালে জাতির জনকের কুখ্যাত "হত্যাকাণ্ড"কে আড়াল করা হয়। আর সোহরাব হাসান যে ঘটা করে কেক কাটার কথা বলছে, সমসয়মতো সেটার দ্ব্যর্থহীন সমালোচনা কি তারা কখনো করেছে?

সোহরাব লিখেছে,

শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও সমাবেশ পালনকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, গণজাগরণ মঞ্চের একাংশ, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক প্লাটুন, সিপি গ্যাং প্রভৃতি। তারা কেবল প্রয়াত অধ্যাপক পিয়াস করিম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তির ছবিতে কাটা চিহ্নযুক্ত ব্যানার টানিয়ে তাঁদের শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।

পিয়াস করিমের বিষয়ে কোনটা কুৎসা, সোহরাব সেটা নির্দিষ্ট করে নি। উপরিউক্ত সংগঠনগুলো যা বলেছে, তার সারাংশ করলে দাঁড়ায়, পিয়াস করিমের বাপ ছিলো শান্তি কমিটির নেতা, বাংলাদেশবিরোধী। এবং পিয়াস করিমও জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বাংলাদেশবিরোধী শক্তির পক্ষে ওকালতি করেছে। এই স্টেটমেন্টের পক্ষে প্রমাণ দেখানো হয়েছে। আনিসুল মন্ত্রীকে দিয়ে সাজানো মিথ্যা কথা নয়, পিয়াস করিমের নিজের ভাষায় দেয়া তার বাবার পরিচয়কেই প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। একে "কুৎসা" বলে না, কুৎসা বলা হয় প্রমাণ ছাড়া "পারসেপশন" সৃষ্টি করার প্রয়াসে মিথ্যা প্রোপাগান্ডাকে।

নয়জন "বিশিষ্ট" ব্যক্তিকে "শহীদ মিনারে" অবাঞ্ছিত ঘোষণার কথাটা শাব্দিক ও ব্যবহারিকভাবে মিথ্যা। পিয়াস করীমের মতো এরাও জীবিতাবস্থায় শহীদ মিনারে যেতে খুব একটা ইচ্ছুক, এমনিতেই না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলো যা লিখেছে, তাহলো, "মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সুশীল নামধারী এসব মিথ্যাবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী বুদ্ধিবেশ্যাদের প্রতিহত করুন।" এদের বিচরণ প্রধানত মিডিয়ায়। সেখানে টক শোর বক্তা হিসেবে এরা অসত বুদ্ধি-ব্যবসায়ী হিসেবে স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে কথা বলে, ইতিহাসবিকৃতি করে। এদের সেই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করার আহবান জানানো হয়েছে। তারা শহীদ মিনারে কবে যাবে, সেজন্য কেউ বসে নেই। বাক-স্বাধীনতার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এরা যাতে দেশের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যা বলতে না পারে, সেটাই ফোকাস।

এই লোকগুলোকে "বিশিষ্ট" ট্যাগ দেয়ার মাজেজা অবশ্য বোধগম্য না। পিয়াস করিম ইস্যুতে ১০০ জন "বিশিষ্ট নাগরিক"-এর বিবৃতিও মজাদার ছিলো। একইভাবে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়ে ১৬ জন "বিশিষ্ট" সম্পাদকের বিবৃতিও আগ্রহোদ্দীপক ছিলো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এরা ঠিক কি কারণে "বিশিষ্ট"? "বাংলাদেশের পক্ষে" এদের অবদান কি, সোহরাব হাসান কি স্পষ্ট করে বলবে?

সোহরাব হাসান লিখেছে,

আজ সিপি গ্যাং ও তাদের সহযোগীরা ভিন্নমতের মানুষের টুঁটি চেপে ধরতে চাইছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি মেহেদী বলেছেন, শুধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নয়, দেশের সব শহীদ মিনারে তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। তাঁর দাবি, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ মিনারের চেতনা লালন ও ধারণ করে না, সেসব গণশত্রুর শহীদ মিনারে আসার কোনো অধিকার নেই।

এখানে ভুল কোথায়? যারা মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ মিনারের চেতনা লালন ও ধারণ করে না, তাদেরকে কেন শহীদ মিনারে নিয়ে গিয়ে সন্মান দেখাতে হবে?

সোহরাবের

প্রথমেই বলতে হয়, যাঁরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে টানানো ব্যানারে উচ্চারণ-অযোগ্য শব্দ লিখেছেন, তাঁরা কেবল শহীদ মিনারকে অপমান করেননি, অপমান করেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও। অপমান করেছেন দেশের নারীসমাজকেও।

- এই টুইস্টটা খুব উপভোগ করলাম! যে কোনো ইস্যুতে ধর্ম অবমাননা আর নারী অবমাননা ঢুকিয়ে দিতে পারলেই ইস্যুটা পারপেচুয়াল মেশিন হয়ে যায়। CP গ্যাংয়ের ব্যানারে ৯ জন টকশোজীবিকে "বুদ্ধিবেশ্যা" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সঙ্গত কারণেই। এটাকে দেশের নারীসমাজের অপমান হিসেবে বিবেচনা করতে হলে দেশের নারীসমাজকে "বেশ্যা" হিসেবে ধরে নিতে হবে, যেটা সত্য না। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো "বেশ্যা" জিনিসটা শাব্দিকভাবেই লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। এটাকে নারীসর্বস্ব হিসেবে ঘোষণা করাই বরং নারী সমাজের অপমান। আর পেশা হিসেবে দেশ-জাতি-মানুষের ক্ষতি না করে যে কোনো কাজই সন্মানের। অন্যদিকে যাদেরকে বুদ্ধিবেশ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের প্রধান কাজ বাংলাদেশবিরোধী শক্তির পক্ষে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো।

যাক, সোহরাব এই ৯ জন "বিশিষ্ট" ব্যক্তি কার্যকলাপের কিছুটা আবছা হলেও ধারণা দিলো,

বলা হতে পারে, তাঁরা লেখালেখি, টক শো ও সভা-সমাবেশে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের সমালোচনা করা কি অপরাধ? সরকারের সমালোচনা করলেই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হয়?

সমালোচনা করা কাকে বলে? নিন্দা এবং সমালোচনার প্রধান পার্থক্য হলো, নিন্দার উদ্দেশ্য থাকে যে কোনো কনটেক্সটেই কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের দোষ ধরা, দোষ আদতেই থাকুক বা না থাকুক। অন্যদিকে সমালোচনা হলো কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের ভালো কাজের প্রশংসা করে, আকামের দোষত্রুটি টু দ্য পয়েন্টে ধরিয়ে দেয়া, যাতে ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানটি সেই দোষত্রুটি মুক্ত হয়ে "প্রসঙ্গে" অবদান রাখতে পারে। আর যদি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন একেবারেই "প্রসঙ্গের" উলটা কাজ ইচ্ছাকৃতভাবেই করে তাহলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সেই "প্রসঙ্গ" থেকে বিচ্যুত করা।

এক্ষেত্রে "প্রসঙ্গ" হলো বাংলাদেশ, বাংলাদেশের উন্নতি, আর সমালোচনার বিষয়বস্তু/প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ সরকার। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ব্যবস্থা করেছে, দেশের অর্থনৈতিক খাতে উন্নতি করছে, সন্ত্রাসবাদের ছোবল থেকে দেশকে রক্ষার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। অর্থাৎ, এই সরকারকে বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী বলা যায় না। এর সমালোচনার জন্য এসব ভালো কাজেরও প্রশংসা দরকার, আর খারাপ কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেগুলোরও গঠনমূলক সমালোচনা করা দরকার। সোহরাব উল্লিখিত "বিশিষ্ট" ব্যক্তিবর্গ কি কখনো সেই কাজটা করেছে, কখনো সরকারের কোনো ভালো কাজের প্রশংসা করেছে, কখনো যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পক্ষে কথা বলেছে? না। তারা সমালোচনা করে নাই, সরকারের নিন্দা করেছে।

তবে এই নিন্দার চেয়েও বড়ো সমস্যা হলো, তারা সরকারের "সমালোচনা"র নামে যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করছে। সাম্প্রদায়িক উষ্কানির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সমালোচনার নামে বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা কথা বলার অধিকার কি কেউ সংরক্ষণ করে?

সোহরাবরা ইস্যু পেলেই বাক-স্বাধীনতার সংবিধান তুলে ধরে। দেখা যাক, সংবিধানে কি আছে,

৩৯। (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।

(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং

(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার

নিশ্চয়তা দান করা হইল।

স্পষ্টতই বাক-স্বাধীনতা অর্থ যা ইচ্ছা, তাই বলার স্বাধীনতা নয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা যাবে না, বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে ক্যাচাল লাগানো যাবে না, অপরাধ সংঘটনে ফুয়েল দেয়া যাবে না, মিথ্যা কথা বলে উষ্কানি দিয়ে জনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করা যাবে না - এসব প্রিকন্ডিশন মেনেই বাক-স্বাধীনতা। বাক-স্বাধীনতা অর্থ প্রোপাগান্ডার স্বাধীনতা নয়, ৭ই মার্চের ভাষণে "জিয়ে পাকিস্তান" ঢুকানো নয়, মুক্তিযুদ্ধে নিহতে সংখ্যা ৩০ লাখ না, ২৬ হাজার বলে ফতোয়া দেয়া নয়।

সোহরাব হাসানদের বাক-স্বাধীনতাও আসলে সিলেক্টিভ। এজন্য উল্লিখিত বুদ্ধিবেশ্যাদেরকে যাইচ্ছা তাই বলার অধিকার দিতে হবে; কিন্তু তাদেরকে প্রতিহত করার "মত"-এর ব্যাপারে আবার সরকারের "ব্যবস্থা" নেয়া কাম্য!

সোহরাব হাসানের পরবর্তী বক্তব্যটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এই বক্তব্যই আগের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়,

বর্তমান সরকারের অংশীদার জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া ও আলপনা আঁকাকে বিদায়াত বলে অভিহিত করেছিলেন। শহীদ মিনার তাঁর জন্য অবাঞ্ছিত হতে পারে, কেননা তিনি শহীদ মিনারের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন না। জাতীয় পার্টির নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে ছাত্র-জনতার হাতে লাঞ্ছিতও হয়েছিলেন।
কিন্তু যাঁরা শহীদ মিনারের চেতনা ও সংস্কৃতি ধারণ করেন, যাঁরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের সেখানে যেতে বাধা দেওয়া হবে কেন? তাঁরা ভিন্নমত প্রকাশ করেন বলে?

দেখা যাচ্ছে, আগে শহীদ মিনার "সকলের" বললেও যে শহীদ মিনারের সংস্কৃতি বিশ্বাস করে না, তার শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত হওয়া সোহরাবের কাছে জাস্টিফায়েড। এখন পিয়াস করিমসহ উল্লিখিত বুদ্ধিবেশ্যাদেরকে ইঙ্গিত করে সোহরাব পরবর্তী যে কথাগুলো বলেছে, সেটার পক্ষে স্পষ্ট কোনো প্রমাণ কি সোহরাব দেখাবে? পিয়াস করিম, মাহফুজুল্লাহ, দিলারা চৌধুরী, আসিফ নজরুলরা শহীদ মিনারের চেতনা ধারণ করে! তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারে জোরালো ভূমিকা রাখছে! হা ধরণী!! দ্বিধা হও!! ভাষা আন্দোলনকে "দুনিয়া কাঁপানো ৩০ মিনিট"- এর অশ্লীলতায় বেঁধে ফেলা অপচেষ্টার কুশীলবরাই আজ সবচেয়ে বড়ো দেশপ্রেমিক!

সোহরাব লিখেছে,

আমরা স্মরণ করতে পারি, ২০০৩ সালে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনারে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছিল, তাহলে সেই হামলাকারীদের সঙ্গে আজকের অবাঞ্ছিত ঘোষণাকারীদের পার্থক্য কী?

এই স্টেটমেন্টটা ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি হলো, সোহরাব এদেরকে আজ "দুর্বৃত্ত" না বলে "জামায়াত-শিবির" ক্যাডার বলছে। এই জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা শহীদ মিনারে হামলা চালানোর ব্যাপারে সোহরাব হাসান, ওই ৯ জন "বিশিষ্ট" ব্যক্তিবর্গ এবং প্রথম আলো ঠিক কিভাবে তাদের "সমালোচনা" করেছে, তার উদাহরণ কি সোহরাব হাসান দিবে? ২০০৩ পর্যন্তই বা যেতে হবে কেন? এই ২০১৪র ফেব্রুআরিতেও শহীদ মিনারে ভাঙচুর করেছে বাংলাদেশবিরোধী শক্তি জামায়াত শিবির। সোহরাব হাসানের প্রথম আলো সে নিউজেও ভাসুরের নাম মুখে নিতে পারে নি, তারা লিখেছে,

কুষ্টিয়ার কুমারখালী, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় তিনটি শহীদ মিনার ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা

যাহোক, সোহরাব হাসানের এই বক্তব্য ধরেই তার প্রাথমিক বক্তব্য অর্থাৎ "শহীদ মিনার সকলের" -এর ব্যতিক্রম সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া যায়। শহীদ মিনার সকলের না, শহীদ মিনার বাংলাদেশবিরোধী শক্তির জন্য নয়।

সোহরাব হাসানের পরবর্তী বক্তব্যটা খুবই খুবই মজার,

বোতলের সিপি আঁটা দৈত্যরা যে কত ভয়ংকর, তা আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে যুবলীগসহ সরকার সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনের ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়াই স্পষ্ট। তিনি একাত্তরে পিয়াস করিমের ও তাঁর বাবার প্রকৃত ভূমিকা তুলে ধরায় প্রেসক্লাবের সামনে তারা আইনমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা পর্যন্ত দাহ করেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সরকারের একজন মন্ত্রীকে সম্মান দেয় না, তাদের কাছে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অপমানিত হবেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

দেখে ভালো লাগছে যে, সোহরাব হাসানরা সরকারকে "মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী" সরকার বলে মেনে নিচ্ছে। এবং সোহরাবের "বিশিষ্ট" ব্যক্তিদের কাজই ছিলো এই "মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী" সরকারের সমালোচনার নামে নিন্দা করা। হাসি

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘটনায় আসলে "সমালোচনা" আর "নিন্দার" পার্থক্যটা সহজে বুঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি মুক্তিযুদ্ধের সরকারের পক্ষে বলে। আবার সরকারের কেউ কোনো আকাম করলে সেটারও সমালোচনা করতে ছাড়ে না। আনিসুল হক পিয়াস করিমকে যে সার্টিফিকেট দিয়েছে, তার দুর্ভাগ্য যে, পিয়াস করিমের নিজের ভাষ্যেই আনিসুল হকের বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এ কে খন্দকার যেমন "জিয়ে পাকিস্তান" বা "পাকিস্তান জিন্দাবাদ"কে ডিফেন্ড করতে পারে নাই, আনিসুল হকও তার পিয়াস করিমের বাপকে দেয়া "ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা" সার্টিফিকেট ডিফেন্ড করতে পারে নাই। পিয়াস করিম নিজেই বলেছে, তার বাপ শান্তি কমিটির লোক ছিলো, এবং তার বাপের (আকামের) দায় তার না।

সোহরাব হাসানরা দিনরাত ২৪ ঘন্টা আওয়ামী লীগ সরকারের নিন্দায় ব্যস্ত; কিন্তু একে খন্দকার, আনিসুল হকের মতো মিথ্যাবাদীদেরকে প্রোমোট করার ক্ষেত্রে আবার সবার আগে! আনিসুলের বক্তব্য সরকারের পক্ষ থেকে না, তার নিজের বক্তব্য। যুবলীগসহ সরকার সমর্থকরাই আনিসুল হককে মিথ্যা বলার জন্য বাঁশের ওপর রেখেছে; কিন্তু সোহরাবের কাছে এই ইস্যুতে আনিসুলের পরিচয় "মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সরকারের মন্ত্রী!"

সোহরাব হাসান যথারীতি উত্তরাধুনিক ভলতেয়ার ত্যানায় আরো কয়েকটা প্যাচ দিয়া প্রসব করেছে,

ফরাসি দার্শনিক ফ্রাঁসোয়া মারি আবুজে, যিনি ভলতেয়ার নামে অধিক পরিচিত, বলেছিলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারি। কিন্তু তোমাকে তোমার কথা বলতে দেওয়ার জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।’ আর শহীদ মিনারে মানববন্ধন পালনকারীরা তার উল্টোটাই করেছেন, তাঁরা ভিন্নমতের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চাইছেন।

ভিন্নমত মানে বাংলাদেশবিরোধী মত না। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাদেশবিরোধী মতকে "ভিন্নমত" হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয় না। ওয়ান্স এগেইন, ভিন্নমতের দোহাইয়ে বুদ্ধিবেশ্যাদেরকেও কথা বলতে দিতে হবে, জামায়াতের কথাও শুনতে হবে; আবার সেই বুদ্ধিবেশ্যাদেরকে প্রতিহত করার আহবান জানানো "মত"কে সরকারের হস্তক্ষেপে শাস্তি দিতে হবে!! আমরা কি এমন সিলেক্টিভ মত প্রকাশের স্বাধীনতা চেয়েছিলাম!

সোহরাব লেখা শেষ করেছে সরকারের প্রতি থ্রেটের বাণী দিয়ে,

তবে তাঁদের মনে রাখা উচিত, শেষেরও শেষ আছে। বর্তমান সরকারই বাংলাদেশের শেষ সরকার নয়।

একটু আগেই "মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী" হিসেবে রায় দিয়ে সে সরকারকেই এমন থ্রেট দেয়াকে কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায়, আমার বোধগম্য না। সোহরাবের এই থ্রেট থেকে বুঝা গেলো, "মাইনাস টু" এর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু মাইনাস টু-এর কুশীলবরা বসে নেই। তারা তাদের প্রোপাগান্ডা মেশিন ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। আশাকরি সরকার এদিকটায় একটু নজর দিবেন। আর সচেতন মানুষ মাইনাস টু-এর কুশীলবদের ব্যাপারে চোখ-কান খোলা রাখবেন।

এই দেশটাকে বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদ, আমাদের ৪ লক্ষ মা। তাদের রক্ত, তাদের আত্মত্যাগকে বিফলে যেতে দেয়া হবে না।

বাংলাদেশবিরোধী বুদ্ধিবেশ্যাদেরকে প্রতিহত করুন।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

আমি আধখানা লিখছিলুম ঠিক এই কলাম নিয়েই... কাজ কমে গেল। দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বাকি আধখানা পূর্ণ করেন। হাসি একই টপিকে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলে বিষয়টা আরো স্পষ্ট হবে সবার জন্য।

আমার লেখায় অনেক বিষয়ই সারফেসে রেখেছি। এমনিতেই লেখা হাতিসাইজ হয়ে গেছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

না, বলাই'দা
যা লিখেছেন তা আমার মতামতকে পুরো কভারই করেনি ছাড়িয়ে গেছে হাসি

আধা-অফটপিক (১)
সকালের পত্রিকা দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেছিল, ভেবেছি কেউ না লিখলে আমিই লিখে ফেলব, এখন সেটার আর প্রয়োজন নেই। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ প্রয়োজন ছিল, হয়েছে। (আমার ভোঁতা চোখে অনেক কিছুই এড়িয়ে গেছিল বুঝতে পারছি)। সচলের অন্য বিশ্লেষকদের আলোচনার অপেক্ষায় রইলাম

আধা-অফটপিক (২)
সৈয়দ আবুল মকসুদের একটি মিথ্যাচারসমৃদ্ধ লেখাও গত পরশু প্রকাশিত হয়েছিল। প্রাসঙ্গিক হিসেবে সেটির কাটাছেঁড়াও বোধহয় এই নিবন্ধের মন্তব্যেই চলতে পারে।

আধা-অফটপিক (৩)

সচলে এমন তাৎক্ষণিক প্রতিবাদগুলোর একটা সংরক্ষানাগার করে রাখা যায় কি?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আবুল মকসুদের লেখার প্রতিক্রিয়া অনেকেই ফেসবুকে দিয়েছে, যেমন এখানে। ব্লগে থাকলে খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।

হাসিবের নীড়পাতায় অনেক কিছুই আছে। তবে সচলে করতে পারলে পাঠক আরো বেশি পাওয়া যেতো।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বলাই'দা,

হঠাৎ প্রয়োজনের মুহূর্তে খুঁজে পাবার জন্য ফেসবুকের ওয়াল খুব ভালো জায়গা না। যার প্রতিবাদে লেখা, সেই অপলেখা গুলা বরং অনেক সহজে আলুর আর্কাইভে খুঁজে পাওয়া যায়। 'সিস্টেমেটিক আর্কাইভিং' করার জন্য ব্লগই উত্তম ক্ষেত্র।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলে এমন তাৎক্ষণিক প্রতিবাদগুলোর একটা সংরক্ষানাগার করে রাখা যায় কি?

এটা করা খুব বেশি দরকার।

হিমু এর ছবি

বুদ্ধিবেশ্যাদের বুদ্ধিবেশ্যা বললে বুদ্ধিখদ্দেরদের ফরমায়েশ খাটা বুদ্ধিফালতুরা রাগারাগি করে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বুদ্ধিফালতুরা বুদ্ধিবেশ্যা-জাতে ওঠার চেষ্টায় আছে। তবে সোহরাব আসলেই অনেক চালু জিনিস। আলুর ফরমায়েশ খাটা গ্রুপের সবচেয়ে দক্ষ লোক। বুদ্ধিবেশ্যা ট্যাগ খাওয়ার পরে এদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সোহরাবের লেখা সাধারণত আরো উন্নমানের প্রোপাগান্ডা হয়, এই লেখাটা খুব বেশি স্পষ্ট, দুর্বল স্ববিরোধিতায় ভরপুর।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বুদ্ধিবেশ্যা ট্যাগ খাওয়ার পরে এদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি কস্কি মমিন!

তবে সোহরাব হাসান কি নিজের অজান্তে শব্দটিকে ভাইরাল হয়ে ওঠার ব্যাবস্থা করলেন? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই শব্দটা আসলেই এদের গায়ে লেগেছে। শুধু পত্রিকা না, টিভি টক শোতেও এরা ভয়ে আছে। এরা নিজেরা তো নিজেদেরকে চিনে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমার একটি অফটপিক প্রশ্ন- তাদেরকে "বুদ্ধিবেশ্যা" নামে অভিহিত করাটা কি সঠিক কাজ হচ্ছে? রুপোপজীবী যারা, তাঁরা রুপের হাট বসান, দেহজীবি যারা, তাঁরা দৈহিক সুখ বিক্রি করেন। বুদ্ধিবেশ্যারা কি বিক্রি করেন? বুদ্ধি? তারা যা বিক্রি করেন তাতে বুদ্ধির কোন ছিটেফোঁটা কি আদৌ আছে? তারা যা বিক্রি করেন এবং মিডিয়াগুলো যা পন্য হিসেবে কিনে নেয়, সেখানে বুদ্ধি সংক্রান্ত কোন কিছুই তো নেই, সেগুলো তো কিছু পুঁতিগন্ধময় আবর্জনা ছাড়া আর কিছু নয়। মিথ্যচারে পরিপূর্ণ নোংরা, পচা, দুর্গন্ধময় আবর্জনা বিক্রিই যাদের পেশা, তাদের সাথে কি বুদ্ধি'র মত ইতিবাচক কোন শব্দ কি মানানসই হতে পারে? তাদেরকে "বর্জ্যজীবী" বলাটাই কি যুক্তিসংগত নয়?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দুর্বুদ্ধিও বুদ্ধিরই জাতভাই, দুর্বুদ্ধিজীবি বলা যায়।

বুদ্ধিবেশ্যা শব্দটা প্রথম উদ্ভাবন করেছিলেন কে?
তার মাথাটা সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দেয়া দরকার।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বুদ্ধিবেশ্যা শব্দের উদ্ভাবকের নাম ফাঁস করা কি ঠিক হবে? দেখি উদ্ভাবক নিজেই বলে কি না। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বাঘমার্কা দস্যুটা নাকি? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

দুই দুষ্টমতি বালক স্কুলে পেছনের বেঞ্চে বসে একজন আরেকজনকে পচাচ্ছে।

প্রথম জন ছন্দ মিলিয়ে বলছে, শোন ওরে আব্বাস, তোর পিছে গাবগাছ!

দ্বিতীয় জন কিছুক্ষণ চিন্তা করে ছন্দ মেলাতে না পেরে বলছে, শোন ওরে মক্সুদ, তোর পিছে কাঁঠাল গাছ!

প্রথম জন তখন বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলছে, মিলে নাই মিলে নাই!

দ্বিতীয় জন তখন বলছে, মিলে নাই, কিন্তু ছিলছে বেশি।

বুদ্ধিবেশ্যা বললে "ছিলে বেশি"। এতো সূক্ষ্ম চুলচেরা হিসাবের দরকার কি আছে? শাখামৃগকে কি মৃগের স্ট্যাণ্ডার্ডে মাপজোক করা জরুরি? নীলগাইয়ের দুধ কিংবা বনরুইয়ের কোফতা কি কেউ খেতে চায়?

আর যোগরূঢ় শব্দ মাঝেমধ্যে একটু রূঢ়তা যোগ করে বৈকি।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

স্যাম এর ছবি

দেঁতো হাসি চলুক হাততালি

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

বুদ্ধিবেশ্যা বললে "ছিলে বেশি"।

গুরু গুরু

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার একটি অফটপিক প্রশ্ন- তাদেরকে "বুদ্ধিবেশ্যা" নামে অভিহিত করাটা কি সঠিক কাজ হচ্ছে?

আমি এদেরকে আন্ডারএস্টিমেট করার পক্ষে না। এদের বুদ্ধি অবশ্যই অনেক। তা না হলে ধান্দাবাজি করে এত পরিচিত হওয়া আর টেকাটুকা কামানি সম্ভব হতো না। মিথ্যা সবাই ঠিকমতো বলতে পারে না। এরা পারে। প্রথম আলো এই কাজটা প্রায় সুনিপুণভাবে পারে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মরুদ্যান এর ছবি

কুবুদ্ধি ও এক ধরনের বুদ্ধি।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

চরম উদাস এর ছবি

"তবে তাঁদের মনে রাখা উচিত, শেষেরও শেষ আছে। বর্তমান সরকারই বাংলাদেশের শেষ সরকার নয়।" - সোহরাব হাসানের পুরা লেখা বেশ গম্ভীর মুখেই পড়ছিলাম। এই লাইনে এসে খ্যাঁক করে হেসে দিলাম।

এই দিন দিন না, আরও দিন আচে ... এই দিনেরে নিবে তারা (!) সেই দিনের কাচে এ এ এ এ এ এ ...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে শুধু চিহ্নিত রাজাকাররাই না, কিছু পাকিস্তান আমলে স্ট্যাবলিশড সুশীলও চরম বিপদে পড়েছিলো। এদেরকে লোকে আগে যে সালাম-নমস্কার দিতো, সেই বাড়তি খাতির না পাওয়ায় মনোক্ষুণ্ণ হয়। দিলারা চৌধুরিদেরকে এই ধারার উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে স্ট্যাবলিশড সুশীলরাও একইভাবে তত্ত্ব সরকার বিদায় হওয়ায় মনোক্ষুণ্ণ হয়। বিশেষ করে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে এরা মোটেই আশা করে নাই। হঠাৎ করে নির্বাচনটা হয়ে যাওয়ায় কেউ অবৈধ, কেউ অগ্রহণযোগ্য ট্যাগ দেয়, কেউ ভোটাধিকার চায়; কিন্তু এরা সবাই চমকে যায়। মনের ভিতরে ধরে রাখা "সেইসব দিনগুলি"র মধুর স্বপ্ন আর কল্পনা মাঝে মাঝে চাগাড় দিয়া উঠে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

স্যাম এর ছবি

পিয়াস করিম ইস্যুতে ১০০ জন "বিশিষ্ট নাগরিক"-এর বিবৃতিও মজাদার ছিলো।

ঐটাতে কিন্তু ১০০ জন ছিলনা, তবে নাম ছিল "শত নাগরিক কমিটি" । এই কমিটির কোন বিবৃতিতে নামের সংখ্যা পাশমার্কের উপরে যেতে দেখিনাই শয়তানী হাসি

যাইহোক এ প্রসঙ্গে রিটন ভাই এর চপেটাঘাতঃ

অতিথি লেখক এর ছবি

স্যাম ভাই আপনার এই ব্যনারটি কি ফেসবুকের প্রোফাইলে ব্যবহার করতে পারি??

সাইদ

স্যাম এর ছবি

আমিও পারমিশন নেইনি, আপ্নারো দরকার নেই দেঁতো হাসি

স্যাম এর ছবি
মাসুদ সজীব এর ছবি

চোর হোক, প্রোপাগান্ডা চালানো মিথ্যেবাদী হোক কিংবা হোক ইতিহাস বিকৃত উস্কানীদাতা, সাম্বাদিক ভায়েরা(সম্পাদক) তাদের পক্ষে দাঁড়াতে কোনদিন লজ্জা পান না! আবার শুনি এরাই নাকি জাতির বিবেক! এদের কে সকল প্রকার নিয়ম কানুন আর আইনের উর্ধে রাখার দাবি জানাই।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

এক্কেবারে জায়গামতো... গুরু গুরু
মজার ব্যাপার হইলো, বুদ্ধিবেশ্যাদের শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার আগুন খালি বুদ্ধিজিগোলো সমৃদ্ধ আলু পেপারেই না বরং অনেক টকরামানির ছুপা ল্যাঞ্জাতেও লাগছে।

সাম্য এর ছবি

১) সোহরাব লিখেছে,

আমরা স্মরণ করতে পারি, ২০০৩ সালে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনারে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছিল, তাহলে সেই হামলাকারীদের সঙ্গে আজকের অবাঞ্ছিত ঘোষণাকারীদের পার্থক্য কী?

- শহীদ মিনারে আক্ষরিক অর্থেই হামলাকারীদের সাথে কিছু মানববন্ধনকারীদের তুলনা কীভাবে করতে পারলেন উনি!

২) সোহরাব লিখেছে,

তবে তাঁদের মনে রাখা উচিত, শেষেরও শেষ আছে। বর্তমান সরকারই বাংলাদেশের শেষ সরকার নয়।

- এটা সরকারের প্রতি হুমকি যতটা, তার চেয়েও বেশি হুমকি ঐ প্রতিবাদকারীদের প্রতি বলে আমার মনে হয়েছে।

৩) পিয়াস করিমের মৃতদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঘটনায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান মনে হয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে, পাছে তার মৃত্যুর পর যদি এরকম কিছু করে বসে বেয়াদব লোকজন!

৪) 'বিশিষ্ট' ব্যক্তিদের পোস্টারে মক্সুদের নাম-ছবি না থাকায় বড় দুঃখ পেলাম মন খারাপ

--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

১। অবাক হওয়ার কিছু নাই। খবিশ মিডিয়া এখন ডরে আছে। তারা অ্যাটাকে যাবেই। তুলনা যে ভুল, এটা তারাও জানে।

২। এটা আসলে সরকারের প্রতি হুমকিই। সরকারের ইন্ধনে প্রতিবাদ হয়েছে বলে লিখেছে এর আগের প্যারায়।

৩। মতির টেনশন নিজেকে নিয়া না, যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নিয়া। কাল পিয়াস করিমকে নিতে পারলে আজ বিনা বাধায় যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকেও শহীদ মিনারে নিতো।

৪। মক্সুদ এত চেষ্টা করেও জাতে উঠতে পারলো না। মন খারাপ

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাম্য এর ছবি

৫) আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করলাম ওনার লেখায়,

পিয়াস করিমের স্ত্রী, বন্ধু, স্বজন ও সুহৃদেরা শহীদ মিনারে তাঁর মরদেহ নিয়ে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সেটি করতে দেওয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঠুনকো অজুহাতে পিয়াস করিমের মরদেহ সেখানে নিতে দেয়নি। বলেছে, যেহেতু কোনো কোনো সংগঠন পিয়াস করিমের মরদেহ নেওয়ার বিরোধিতা করেছে, তাই সেখানে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া গেল না। তাহলে তারা বিরোধিতাকারীদের কেন সেখানে সমাবেশ ও মানববন্ধন করার অনুমতি দিল? এ প্রশ্নের জবাব কে দেবেন?

[ইমেইজ ব্যাক্‌আপ]

- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এক হাত নেওয়ার চেষ্টা কেন করলেন জানি না। বিডিনিউজের খবর জানাচ্ছে,

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামের একটি সংগঠন বৃহস্পতি ও শুক্রবার শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান করার জন্য আগেই অনুমতি চেয়েছিল। কর্তৃপক্ষ তাদেরই অনুমতি দিয়েছে।

পিয়াস করিমের পরিবারের করা আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, “আমাদের অনুমোদন না নিয়েই তারা লাশ শহীদ মিনারে আনার কথা মিডিয়ায় জানিয়েছেন। এখানে অনুমোদন দেওয়ারও কিছু নেই, দায়-দায়িত্ব নেওয়ার কিছু নেই।"

[বিডিনিউজের খবরের ইমেইজ ব্যাক্‌আপ]

--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!

ফাইয়াজ জামাল এর ছবি

বাকস্বাধীনতা নিয়ে সোহরাব সাহেবের বিরাট আস্ফালন দেখে অনুপ্রানিত হয়ে লেখাটির নিচে অনলাইনে একটি মন্তব্য করেছিলাম। ভেবেছিলাম ভলতেয়ারের বাণীকে লালন করে ভিন্নমতের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত প্রথম আলো জীবন না দিলেও অন্তত মন্তব্যটিকে প্রকাশ করবে। বিধি বাম, প্রায় একশ মন্তব্য পার হয়ে গেল, মডারেশনের কাঁচি এড়িয়ে কত 'শাহবাগী' দের গুষ্টি উদ্ধার হলো কত বার, আমার মন্তব্য আলোর মুখ দেখল না! যা হোক, বর্তমান সরকার যেমন শেষ সরকার না, প্রথম আলো অনলাইনের মত প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম না। তাই সচলায়তনেই মন্তব্যটা পোস্ট করলাম।

"সিপি গ্যাং এর অনেক কার্যকলাপ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কথা সত্যি। একথাও ঠিক যে পিয়াস করিমের বাবার স্বাধীনতার পক্ষে বা বিপক্ষে কি অবস্থান ছিল, তা দিয়ে পিয়াস করিমকে মূল্যায়ন করা ভুল। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর নিজের অবস্থান ও অবদানের প্রেক্ষিতেই বিচার করতে হবে। কিন্তু এই লেখাটিতে সোহরাব সাহেব সিপি গ্যাং এর সমালোচনা করতে গিয়ে বেশ কিছু ভুল তথ্যকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস চালাচ্ছেন দেখে অবাক হলাম। প্রথমত আইনমন্ত্রীর সার্টিফিকেটকে বেদবাক্য হিসেবে ধরে নিয়ে তিনি পিয়াস করিমের বাবার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভূমিকাকে অস্বীকার করছেন, কিন্তু কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধাদের স্পষ্ট বয়ান অনুসারে পিয়াস করিমের বাবা শুধু একজন সাধারণ পাকিস্তানপন্থীই ছিলেন না বরং কুমিল্লাতে যে দুইজন বাঙালিকে পাকবাহিনীর দালাল হিসেবে সেক্টর ২ কমান্ডার মেজর হায়দার চিহ্নিত করে টার্গেট হিসেবে নিরুপন করেছিলেন,তাদেরই একজন ছিলেন এই এডভোকেট করিম সাহেব। দ্বিতীয়ত, পিয়াসের গত কয়েক বছরের কর্মকান্ডকে কেবল `সরকারবিরোধী' হিসেবেই দেখছেন সোহরাব সাহেব, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে তাঁর অবস্থান এবং শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধিতার যে ইতিহাস, তা পর্যালোচনা করেই যে তাঁকে সুশীল ছদ্মাবরণে যুদ্ধাপরাধী রক্ষক হিসেবে অনেকেই চিহ্নিত করছেন, সে বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন তিনি। তৃতীয়ত, সি পি গ্যাং এর `নিষিদ্ধ' ঘোষিত নয়জনকেই একই পাল্লায় নিয়ে এসে সবার পক্ষেই সাফাই গাইছেন, যেখানে এদের মধ্যে অনেকের জামাত বান্ধব অবস্থানকেই সরকারবিরোধী তকমার আড়ালে জায়েজ করা যায় না। বিশেষ করে ফরহাদ মজহার সাহেব তো জে এম বির গ্রেনেড হামলাকারী, বাস পোড়ানো ক্যাডার, হেফাজতের ঢাকা জিম্মিকারী, সকলের মাঝেই মুক্তিযোদ্ধাদের ছায়া দেখতে পান: মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যথার্থ সৈনিক বটে। "

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ভেবেছিলাম ভলতেয়ারের বাণীকে লালন করে ভিন্নমতের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত প্রথম আলো জীবন না দিলেও অন্তত মন্তব্যটিকে প্রকাশ করবে।

যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের নিউজগুলোয় মন্তব্যের অপশনই রাখে নাই। হাসি
যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নিয়া গত কয়েক বছরে যতগুলো নিউজ করেছে, তার ৮০% এ-ই মন্তব্য অপশন নাই। যেগুলোয় অপশন আছে, সাধারণত ৪/৫টার বেশি মন্তব্য ছাড়ে না।

সিপি গ্যাং এর অনেক কার্যকলাপ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কথা সত্যি।

সিপি গ্যাংয়ের কোনো "বিতর্কিত" কার্যকলাপ নাই। অনেকেই বিভিন্ন গ্রুপের প্রোপাগান্ডায় বিভিন্ন সময়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। যাদের বেসিক ঠিক আছে, তারা একটু চোখকান খোলা রাখলেই বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হবে বলে ধারণা করি।

প্রথমত আইনমন্ত্রীর সার্টিফিকেটকে বেদবাক্য হিসেবে ধরে নিয়ে তিনি পিয়াস করিমের বাবার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভূমিকাকে অস্বীকার করছেন, কিন্তু কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধাদের স্পষ্ট বয়ান অনুসারে পিয়াস করিমের বাবা শুধু একজন সাধারণ পাকিস্তানপন্থীই ছিলেন না বরং কুমিল্লাতে যে দুইজন বাঙালিকে পাকবাহিনীর দালাল হিসেবে সেক্টর ২ কমান্ডার মেজর হায়দার চিহ্নিত করে টার্গেট হিসেবে নিরুপন করেছিলেন,তাদেরই একজন ছিলেন এই এডভোকেট করিম সাহেব।

আইনমন্ত্রীকে "মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের আইনমন্ত্রী" হিসেবেও ট্যাগাইছে। কবে যেন গোলাম আযম / নিজামির মুখে "বঙ্গবন্ধু" শব্দটা শুনেছিলাম, সম্ভবত "সাধারণ ক্ষমা" ইস্যুতে। হাসি
তথ্য যেভাবে টুইস্ট করলে কাজে লাগে আর কি।

তৃতীয়ত, সি পি গ্যাং এর `নিষিদ্ধ' ঘোষিত নয়জনকেই একই পাল্লায় নিয়ে এসে সবার পক্ষেই সাফাই গাইছেন, যেখানে এদের মধ্যে অনেকের জামাত বান্ধব অবস্থানকেই সরকারবিরোধী তকমার আড়ালে জায়েজ করা যায় না।

চিহ্নিত ৯ জন আসলেই এক পাল্লার লোক। ৯জনই যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে ভাড়া খাটে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মনে মনে খালি একটা গানের লাইন বাজতেছে,
অভিমান করো না গো... হো হো হো

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার তো এটার প্যারোডি বাজতেছে:

টক শো করো না গো
ফিতে খুলে যেতে পারে দেঁতো হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মিজান, পিষে ফ্যালো তারিখ বিচারে এই পোস্ট একটা ইতিহাস হয়ে থাকলো বাঙালিকে দেখায়ো না আঙুল, হয়ে যাবে নিজেই ভন্ডুল

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আল্লার মাইর, দুনিয়ার বাইর!

২ বছর পরে সচলে পোস্ট দিলাম। সাথে সাথে যুদ্ধাপরাধী গোলাম অক্কা! দেঁতো হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কোলাকুলি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

প্রতিদিন একটা করে দেন ভাইয়া শয়তানী হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি
অন্যকেউ এর ছবি

বুদ্ধিবেশ্যাটার প্রোপাগান্ডার চমৎকার একটা বিশ্লেষণ এই লেখা।

কারও সংগ্রহে সোহরাব হাসানের ছবি আছে? আইটেমটার চেহারা চিনে রাখতে চাই।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

একটা টক শোতে আছে দেখলাম:
http://www.youtube.com/watch?v=SWessd3heHA

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক চলুক মিজান, পিষে ফ্যালো

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

শুয়োরের বাচ্চারে শুয়োরের বাচ্চা কইলে শুয়োরের বাচ্চার লাগে ক্যা?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হ্যালোইনের পোষাক পরা কাউকে আইডেন্টিফাই করে ফেললে তার জন্য তো ব্যাপারটা সুখকর না।

বাঘের ছদ্মবেশ ধইরা শুয়োরে ছাগোলকে সার্ভিস দিচ্ছে। বিশাল টেকাটুকার ব্যাপার। পেটে লাথি পড়লে শুয়োরের একটু তো লাগবেই!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আয়নামতি এর ছবি

সোহরাব হাসান, লোকটার মধ্যে ব্যাপক পরস্পর বিরোধী ভাব লক্ষ্যণীয়।

সাম্য এর ছবি

প্রথম আলোয় আজকে আবার পিয়াস করিমের মৃতদেহ শহীদ মিনারে নেওয়ার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এম সাখাওয়াত হোসেন [ইমেইজ ব্যাক্‌আপ]। সিপি গ্যাং সহ বর্তমান তরুণ সমাজের উপর খুব রাগ করেছেন দেখলাম। এটা নিয়ে আরেকটা লেখা দিতে পারেন বলাইদা (কিংবা, এখানেই এটার ব্যবচ্ছেদ যুক্ত করে দিতে পারেন)।

--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইস্যু যেহেতু অভিন্ন, এখানেই আলোচনা হোক। একসাথে থাকবে।
নিচে আমিই শুরু করলাম, আপনারাও যোগ দিন। হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

প্রথমালু প্রকাশিত ব্রিগেঃ অবঃ সাখাওয়াতের লেখায় যত আলুর দোষঃ

তরুণ ও ছাত্রদের সংগঠনগুলো দলের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির প্রতি অনুগত বেশি, যার প্রমাণ দৃশ্যমান হয়েছিল ২০০৭-০৮ সালের জরুরি অবস্থার সময়। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা, হাজতবাস ইত্যাদির সময় এসব ছাত্র তথা তরুণ সংগঠনকে টুঁ শব্দ করতে শোনা যায়নি

ইন্টারেস্টিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখি পাকিস্তান ফেরত (অবঃ) ব্রিগেডিয়ার সাহেব ইচ্ছে করেই ভুলে গেলেন।

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

বর্তমানের তরুণ সমাজের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দাবিদারেরা নিজস্ব উজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতিও যখন মোটেও সচেতন নন, সে ক্ষেত্রে জাতির ইতিহাস নিয়ে সচেতন কতখানি হতে পারে তা অনুমেয়। রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন নামে গড়ে ওঠা যুব সংগঠনগুলোও এখন বিভক্তির রাজনীতিতে এমনভাবে জড়িয়েছে, যেখানে নিজস্ব চিন্তাচেতনার কোনো অবকাশ নেই। হারিয়ে ফেলেছে স্বকীয়তা।

জাতির ইতিহাস সম্পর্কে সচেতনতার দায় থেকেই পিয়াস করিমের বিরোধিতা করা সাখাওয়াত সাহেব, এই কথাটা জাতি বুঝে গেলে আপনাদের ভাত মারা যাবে বেশ বুঝতে পারি।

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে প্রয়াত ড. পিয়াস করিমের আকস্মিক মৃত্যুর পর তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোকে ঘিরে কিছু কিছু যুব সংগঠন যে ধরনের পরিবেশ তৈরি করেছিল, তাতে সমূহ ক্ষতি হয়েছে আমাদের তরুণ প্রজন্মের এবং জাতির ভবিষ্যতের। কারণ, দুঃখজনক হলেও সত্য যে তরুণ সমাজ সেখানে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হওয়ার কথা, সেখানে আরও বিভাজনের সৃষ্টি করেছে। পা রেখেছে অপসংস্কৃতির পথে।

আচ্ছা, কালকে আমি যদি প্রেস ক্লাবে গিয়ে আহ্বান জানাইঃ "দেশের সকল দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী কে এক্ষণ ছেড়ে দেয়া হোক। কেননা জাতিকে জেলের ভেতরে ও বাইরে এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করে রাখা হচ্ছে।" তাহলে কি ব্যানার ধরার জন্য হোসেন ভাইয়াকে পাশে পাওয়া যাবে?

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * ** *

প্রয়াত পিয়াস করিমের বক্তব্যে বা মতামতের সঙ্গে অনেকের মতো আমিও সব ক্ষেত্রে একমত হতে পারিনি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাঁর মতকে বিভিন্ন রঙে রাঙানো উচিত

তার রঙিন মতকে নতুন করে কেউ রাঙ্গায়নি, ইতোমধ্যে উপস্থিত রঙ্গের কথাটা সাদা-কালো বিভাজনের মত চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আপনার সাদাকালো কালিতে ছাপানো কলামে সেই কালি ধুয়ে ফেলা দুস্কর।

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

এতে প্রয়াত অধ্যাপকের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়নি, বরং যারা না বুঝে এ ফাঁদে পা দিয়েছে তারা নিজেরাই অসম্মানিত হয়েছে। ড. পিয়াস করিম এখন আর কারও সনদের মুখাপেক্ষী নেই। তবে এ ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে কীভাবে তরুণ সমাজকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।

নাকি এ ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে মিথ্যার বেসাতি করা বড় বড় টকশোজীবিদের আর বিনা প্রশ্নে ছাড় দেয়া হবে না। নইলে এত ভয় কেন?

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

শহীদ মিনার জাতির গৌরবময় একটি প্রতীক। বিশ্বের কোনো দেশে জাতীয় প্রতীক কারও দখলে থাকে না। সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত। এ ধরনের নজির ভবিষ্যতের জন্য ভালো নয়। শহীদ মিনার কোনো দলের বা গোষ্ঠীর সম্পদ নয় যে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় পরিচালিত হবে এবং নির্ধারিত হবে ব্যক্তিবিশেষের শহীদ মিনারে গমনের স্বাধীনতা।

সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত... হুমম তা বেশ। সব নাগরিকের সমতা কি বাক স্বাধীনতার নামে যেকোন কিছু বলতে চাওয়ার দাবীর মত নিরঙ্কুশ?

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

তরুণেরাই রাষ্ট্রের শক্তি, এদের সঠিক পথে পরিচালিত না করতে পারলে তার খেসারত সমগ্র জাতিকেই দিতে হবে। পরিশেষে দেশের মুক্তচিন্তাশীলদের কাছে অনুরোধ, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে তাদের মতো করে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করুন। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।

সম্পুর্ণ একমত ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) সাহেব, তরুণ প্রজন্মকে যাতে বিভ্রান্ত করা না যায় সেজন্যই পিয়াস করিমের মত ব্যাক্তিকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন ছিল, সেটা হয়েছে। আপনি কি নিজের অবস্থান নিয়ে কোনও কারনে ভয় পাচ্ছেন? ছোটকালে জানতাম পুলিশের নাম শুনলে মুখ শুকিয়ে যায় একমাত্র চোরের।

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

নেতিবাচকবিভাজনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে তরুণ সমাজকে।

অবশ্যই, নেতিবাচকতা ত্যাগ করার প্রথম ধাপ হল নেতিবাচক এলিমেন্ট (এই যেমন ধরুন পিয়াস করিম) চিহ্নিত করণ। সেটাই তো হয়েছে। তাহলে ভয় কোথায়? বিভাজনের উর্ধ্বে উঠতে চাইলে আমার জিজ্ঞাস্য একটিইঃ “সত্য ও মিথ্যার মাঝেও কি আপনি বিভাজন না করার পক্ষপাতী?”

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

এক পিয়াস করিমের প্রস্থান আর মৃত্যুর পর তার প্রাপ্য অসম্মান যখন ফিরিয়ে দেওয়াতে সব বুদ্ধিবেশ্যার টনক নড়ে উঠলো। আর তাদের টনক নড়ার পবিত্র স্থান প্রথম আলু। সোহরাব-মাকসুদ-আনু-সাখাওয়াত সেই পথের পথিক বলেই এত মায়াকান্না জুড়ে দিয়েছে। সোহরারব-মাকসুদ-সাখাওয়াতদের এই ভুল যুক্তি আর অপ-ব্যাখার জবাবে জাহিদ নেওয়াজ ভাইয়ের একটি লেখাকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আর গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। লেখাটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনের পথ ধরেই না হয় শহীদ মিনার। সেই শহীদ মিনারের পথ ধরেই না হয় মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধের পথ ধরেই না হয় বাংলাদেশ। ড. পিয়াস করিম তো সেই বাংলাদেশেরই নাগরিক। তা হলে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নিতে সমস্যা কোথায়?

সমস্যাটা হচ্ছে চেতনাগত এবং দর্শনগত জায়গায়। নানা মতাদর্শের পথ মাড়িয়ে পিয়াস করিম শেষ পর্যন্ত যে দর্শন ফেরি করে গেছেন সেটা ওই শহীদ মিনারের মতাদর্শের পরিপন্থি। নানা ঘাটের জল খেলেও পিয়াস করিম তার বয়সের বিবেচনায় অপূর্ণ জীবনের শেষদিকে এসে তার প্রয়াত পিতার মতোই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরোধিতা করে গেছেন। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যে পাকিস্তানি মতাদর্শের ভিত্তিমূলে আঘাত করার কারণে পিয়াসের পিতা এম করিমদের শত্রু হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, সেই পাকিস্তানি আদর্শকেই বুকে ধারণ করেছেন পিয়াস করিম।

এখন পাকিস্তানি মতাদর্শকে লালন করা পিয়াস করিমের শেষ শ্রদ্ধার জায়গা কিভাবে হতে পারে শহীদ মিনার? পিয়াস করিম যে শুধু মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনার জয়গানই গেয়ে গেছেন, এমন নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির এ রাষ্ট্রকাঠামোর বিরুদ্ধে যে আধাঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে, সেটাকে তার প্রতিটি শব্দ এবং বাক্যে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা যখন এমনকি শহীদ মিনারও পুড়িয়ে দিয়েছে সেটাকেও সমর্থন করে গেছেন। একাত্তরে কামানের গোলা দিয়ে শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়া, হত্যা-গণহত্যা-ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ আর ওই অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নাশকতা এবং টেলিভিশনের পর্দায় বক্তৃতা একই চেতনা থেকে উৎসারিত।

এখন সেই অপচেতনার মানুষকে কেনো শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে হবে? তবে পিয়াস করিমের মরদেহ ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলে ফুলে ঢেকে দেওয়ার আয়োজনের বিরোধিতাকে কোনো কোনো সুশীল পরমতসহিষ্ণুতার অভাব বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এটা কি পরমতসহিষ্ণুতার অভাব? নাকি চেতনাগত অবস্থান? পরমত ছিলো সেটা যেটা তিনি দিনের পর দিন টেলিভিশনে বলে গেছেন। সেখানে বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু তার কণ্ঠ কি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে? না। তাই তার মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার বিরোধিতাকে যারা পরমতসহিষ্ণুতার অভাব বলার চেষ্টা করছেন, হয় তারা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে অথবা এটা তাদের ইচ্ছা করে এক শয়তানি।

আসলে পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণার মধ্যেই একটা শয়তানি আছে। যেটা তিনি শুরু করেছিলেন শাহবাগে গণজাগরণের পর। এবং তখনই প্রমাণ হয় যে, তিনি তার প্রয়াত পিতার শুধু রক্তেরই না; চেতনারও উত্তরাধিকার। সেই চেতনা হচ্ছে শহীদ মিনারের বিরুদ্ধে, সেই চেতনা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। তা হলে তাকে কেনো শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা? সেটা আসলে এজন্য যে গণজাগরণের পর মিথ্যা প্রচারে যেভাবে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে, হেফাজতকে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসার পথ করে দেওয়া হয়েছে; এখন একইভাবে তাকে শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। তাকে শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা যে বাধা দেখবে, এটা জেনেই এর উদ্যোক্তারা এরকম একটা ঘোষণা দিয়েছেন।

খেয়াল করলে দেখবেন, কারো মৃত্যুর পর বাঙালি মধ্যবিত্তের মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে তেমন একটা কথা না বলার যে মানসিকতা; সেটা কিন্তু প্রথমদিকে বজায়ই ছিলো। কিন্তু প্রতিবাদ শুরু হলো তখন যখন ঘোষণা আসলো যে পিয়াস করিমকে শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। ঘোষণার উদ্দেশ্যটাই ছিলো গোলমাল পাকানো। এবং সেই উত্তেজনাটা তারা এরইমধ্যে সৃষ্টি করতে পেরেছেন। এর মধ্যে সরকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জড়ানোর একটা চেষ্টাও হচ্ছে। সরকারকে জড়ানোর চেষ্টার কারণ, সরকারের জন্য বিব্রতকর এবং বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এর মধ্যে টেনে আনার কারণ যে, এ বিশ্ববিদ্যালয় সেই চেতনার উত্তরাধিকার যে চেতনার পথ ধরে শহীদ মিনার আর যে চেতনার বিরোধী পিয়াস করিম।

আরো একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। অন্য কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা সৃজনশীল কোনো কিছুর প্রমাণ না রেখে, শুধুই টক-শো করে আলোচিত পিয়াস করিমকে টক-শো করা অন্যদের কেউ কেউ এখন এমন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, যেনো তার নাম বলতে হবে পিয়াসটটল কিংবা পিয়াসটিস। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই তারা বিষয়টাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সবকিছুর মূলে কিন্তু গর্ত থেকে জামায়াতকে বের করে আনার ফন্দিফিকির, যেটা জীবনের শেষ পাঁচ বছর ভালোভাবেই করে গেছেন পিয়াস করিম।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।