স্কুলজীবন: নকল

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: শুক্র, ১৭/০৮/২০০৭ - ২:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চার. (১)

"স্যার, আমার ভালো নাম কি?"

কামরুলের প্রশ্নের জবাবে মৎস্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নির্মল স্যার। আমিসহ আশেপাশের সবাই থ। পরীক্ষার হল। ইংরেজী পরীক্ষা। ক্লাস এইট। কামরুল হলো আমাদের মধ্যে যারা নকলকে শিল্পের কাছাকাছি রূপ দিয়েছে, তাদের একজন। হাতের তালু সাইজের শিল্পায়িত ভাঁজে ভাঁজযোগ্য কাগজে মাইস্ক্রোস্কোপিক ফন্টে লিখা থেকে শুরু করে ইকোনো বলপেনে সূঁচের আঁচড় - কি বাকি রেখেছে সে!

কিন্তু নির্মল স্যার তখন ত্রাস। তিনি কোনো হলে গার্ড পড়া মানে নকলবাজরা নির্ঘাত ফেল, সেইসাথে ধরা খেলে জোড়া ব্যাতের নির্দয় প্রহার। প্রহারের পরে অবশ্য তিনি নিজের পকেটে সার্বক্ষণিকভাবে বিরাজমান জামবাক বের করে দিতেন, অন্যেরা মালিশ করতো।

আমার নকল জীবন তেমন সমৃদ্ধ নয়। তবে ভালো ছাত্রের তকমা ঝুলিয়ে অনেক সময়ই নকল করেও সুবিধা পাওয়া গেছে। যতদূর মনে পড়ে নকল বলে কিছু আছে, এটা শিখি ক্লাস ওয়ানে। সেদিন নামতা পড়া ছিলো। ১ থেকে ২০ পর্যন্ত। স্যার এসে লিখতে দিবেন। ১৯এর নামতা আয়ত্বে নিয়ে এসেছি ২০ এর নামতার সাথে সংখ্যা বিয়োগ করে করে। কিন্তু ১৩ আর ১৭ কিছুতেই ম্যানেজ হচ্ছে না।

খুব ভোরবেলা স্কুলে গেছি। ক্লাস শুরু হতে আধাঘন্টার মত বাকি। একরাশ উদ্বেগ নিয়ে নামতা মুখস্ত করছি। বন্ধু শাফা ওরফে শাফায়েত আমার কষ্ট দেখে হাসছে।

: হাসোস ক্যান?
: আরে বোকা! এত কষ্ট কষ্ট করে মুখস্ত করতে হয় নাকি? এই দেখ।

শাফায়েত তার খাতা খুলে দেখায়। ভিন্ন ভিন্ন পাতায় ভিন্ন ভিন্ন ঘরের নামতা লিখা। স্যার যেটা লিখতে দিবেন, সেটাই সে জমা দিয়ে দিবে। তার এই আইডিয়ায় চমৎকৃত হই। কষ্ট করে পড়া বাদ দিয়ে শাফার আবিষ্কারকে অনুসরণ করে খাতার পৃষ্টায় কপি করতে থাকি নামতা বইয়ের দুর্বোধ্য হিসেবগুলো।

একটু কাঁপাকাপি হলেও সময়মতো ঠিকঠাক কাজে লাগে। ১০-এ ১০। কনফিডেন্স বাড়ে।

(চলবে)


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চলুক চলুক।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ভালো হচ্ছে। হাততালি
১৩র নামতা আর ১৭র নামতা আসলেই কঠিন লাগতো।
মনে পড়ছে - আমি ষোলোর নামতাটা খুব ভালো পারতাম। কোনো কারণ ছাড়া। হা হা।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ক্লাস ওয়ানেই ২০ পর্যন্ত !!
এই না হলে বলাইদা !! হাসি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আপনি তো অনেক ভালো স্কুলে পড়ালেখা করছেন।
আমি তো দশের উপরে নামতা শিখি নাই। ঘটনা কি?
আমার মতো আরো লোকজন আছে নিশ্চয়ই।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সৌরভ এর ছবি

আমিও ১০ এর উপরে শিখি নাই।
মা জোর কইরা ১১ আর ১২ শিখায় দিছিলো। ১৩ প্রশ্নই আসে না।

বলাইদা, এই পোস্টটারে "সববয়সী" করছেন ক্যান?
পিচ্চিপাচ্চি পুলাপাইনে নকল শিখবে।
আপাতত "PG" গ্রেড দেন।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অতিথি এর ছবি

ক্লাস নাইনে নকল করছিলাম। তারপর আর দরকার হয় নাই।

হিমু এর ছবি

আমি সাহসের অভাবে নকল করতে পারি নাই। তবে ক্লাস টেস্ট জাতীয় ব্যাপারস্যাপারে অন্যের খাতা দেখে অনেক বিদ্যার্জন করেছি। নটরডেমে একবার গ্যাব্রিয়েল মানিক গোমেজ আমার কীর্তি দেখে ঘুষি মারতে চেয়েছিলেন, জুত করতে পারেননি। বুয়েটে স্যাররা খ্যাল করতে পারেননাই। আমার "নকল" চর্চার সেরা স্মৃতি হচ্ছে ম্যাট্রিক্স এর একটা প্রবলেম শুনে শুনে লিখে দশে আট পাওয়া। যে বন্ধু এই ম্যাট্রিক্স জকি ছিলো, সে নিজেই পেয়েছিলো ছয়, হাতের লেখা খারাপ ছিলো বোধহয়। তবে MJ হিসেবে সে দশেদশ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। ১৩ আর ১৭র ঘরের নামতা ধরা আসলে স্যারের একটা কুটকৌশল ছিলো। পিটানোর অজুহাত, শেখাটেখা গৌণ ই্যাপার। হাসি

শিমুলের চোখ সবসময়ই ষোড়শীতে ছিলো বুঝা গেলো। চোখ টিপি
জ্বিনের বাদশা ভাইয়ের তো আর নামতা মুখস্ত করতে হতো না। সময় মতো জ্বিনেরাই নকল সাপলাই দিতো!
শোহেইল ভাইদের স্কুলে নিশ্চয়ই ক্যালকুলেটরের চল ছিলো ছোটবেলা থেকেই। আমার অজ পাড়া গাঁয়ের স্কুল। মুখস্ত (অথবা নকল) ছাড়া উপায় নাই।
তবে শৌরভের আশঙ্কা মনে হয় সত্য না। আজকালকার পোলাপাইন এই লিখা দেইখা 'আনস্মার্ট' কইয়া মুচকি হাসবে। তাদের টেকনোলজি আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অতিথি মহাশয়ের তারপরে নকল দরকার না হওয়ার কাহিনী বলেন। কারো কাছে প্রতিজ্ঞাট্রতিজ্ঞার ব্যাপার না তো! চোখ টিপি

শুনে লেখার ঘটনা সামনে আসতেছে। আমিও একসময় হিমুর মতই কার্যকরী বুদ্ধিমান ছিলাম। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

দিগন্ত এর ছবি

স্কুলজীবনে কোনোদিন নকল করার কথা ভাবিনি কারণ ভাল ছেলে সুনামটা যদি নষ্ট হয় ... সেই ভয়ে। কলেজেও অল্পই করেছি, অভ্যাসটা তৈরী হয়নি বলে ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হুম,মজাদার।দেখি আমি আমাদের রাধা রাসেলের নকল কাহিনী নিয়ে একটি লেখা দিব নে।(যদি হাসান মোরশেদের আপত্তি না থাকে)

১৩,১৭ আর ১৯ এর নামতা জানে এমন মানুষও আছে নাকি?
জানতাম না তো!

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

মৃন্ময় আহমেদ এর ছবি

জব্বর।

'

=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা

ঝরাপাতা এর ছবি

ভয়ের জন্য নকল করা হয়ে ওঠেনি। স্কুলে কিছু করলে বিকেল হওয়ার আগেই বাবার কানে চলে যেত। একবার ক্লাশ সেভেনে ১ম সাময়িক পরীক্ষায় ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র খাতা স্টাপল না করার কারণে এক্সট্রা শিট সব হারিয়ে গিয়েছিলো। সেবার ৪৫ পেয়েছিলাম। সেইদিন তো একটা ঝড় বয়ে গেলোই, তারপর থেকে এস.এস.সি. পর্যন্ত আমাকে প্রতি পরীক্ষায় স্টাপলার সাথে করে নিয়ে যেতে হয়েছিলো। বাবাকে ভয় করার কারণে দু:সাহস দেখানোর সুযোগ ঘটেনি। তাই আর কলেজে গিয়েও নকল হয়ে ওঠেনি।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।